বড্ড ভালোবাসি পর্ব ২৯+৩০

গল্প :- বড্ড ভালোবাসি
পর্ব :- ২৯ এবং ৩০
লেখিকা :- Labiba Islam Roja
:
:
:
দেয়াল ঘেষে দাঁড়িয়ে আছি আমি।আর রিহান ভাইয়া দেয়ালে হাত দিয়ে আমার দিকে ঝুকে আছেন।উনাকে এভাবে দেখে ভয়ে চুপসে গেছি।উনার মটিভ কি বুঝতে পারছি না।উনি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে মুখে দুষ্টু হাসি।এরই মধ্যে আমার কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেছে।কথাগুলো গলায় আটকে গেছে।গলা দিয়ে কোনো শব্দ বের হচ্ছে না।তবুও অনেক কষ্টে বড় বড় কয়েকটা ঢোক গিলে বললাম…..
.
আআপনি?
.
হুম আমি।
.
এএভাবে আআমাকে এখানে আটকে রেখেছেন ককেন?
.
এত আমতা আমতা করছো কেন রেড রোজ।একটা বিশেষ প্রয়োজনে।প্রয়োজন মিটে গেলে চলে যাবে ব্যস সিম্পল।
.
কিসের প্রয়ো….হুশ কোনো কথা বলবে না।চুপ করে দেখতে থাকো বলেই আস্তে আস্তে আমার দিকে এগুতে লাগলেন।কোমড় জড়িয়ে একদম কাছাকাছি নিয়ে গেলেন।আমার বুকে ধুকপুক ধুকপুক করছে।উনি কি করবেন কিছু বুঝতে পারছিনা।উনার স্পর্শ শরীরে কম্পন সৃষ্টি করে দিয়েছে।নড়াচড়া করার শক্তিটুকুও পাচ্ছি না ঠায় দাঁড়িয়ে আছি।উনি কাছাকাছি আসতেই চোঁখ দুটো আপনাআপনি বন্ধ হয়ে গেলো। নিজের গাল দ্বারা আমার গাল স্পর্শ করলেন।উনার মুখের লেগে থাকা সব হলুদ আমার মুখে মাখালেন। আমার দিকে তাকিয়ে কেমন ঘোরের মধ্যে চলে গেছেন।কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে গলায় ঠোঁট ছুঁয়ালেন।ভয়ে উনাকে জড়িয়ে ধরলাম আর উনি সেই সুযোগে গলায় একটা কামড় বসিয়ে দিলেন।
.
আচচ! বলে উনাকে ছেড়ে গলায় হাত বুলাতে লাগলাম।লজ্জায় উনার দিকে তাকাতে পারছি না।একটু আগে কি হচ্ছিলো আমার সাথে।নিচের দিকে তাকিয়েই বললাম….এমন রাক্ষসেরর মতো কামড় বসালেন কেন?
.
আবার রাক্ষস! এটা শুধু ট্রেইলর ছিলো এরপর কখনও তোমার মুখে রাক্ষস শুনলে ক্লাইম্যাক্স দেখাবো।অবশ্য রাক্ষস ডাকলে আমারই লাভ(দুষ্টু হেসে)তাই শাস্তি ভোগ করতে পারলে ডেকো কেমন।
.
রাক্ষস! রাক্ষস! রাক্ষস!তুই রাক্ষসই না হলে কেউ এভাবে কামড়ে দেয়( মনে মনে)। আআপনি এটা কি করলেন?এই মাএ ওই বান্দরনীর দেওয়া হলুদ তুললাম এখন আবার ধুর।(বিরক্তি নিয়ে)
.
আমার গায়ের হলুদ তোমায় দিলাম।তখন তুমি আমায় হলুদ দিয়েছিলে কিন্তু সবার সামনে থাকায় তখন তোমায় দিতে পারিনি তাই এখন দিলাম।আমার ইচ্ছা ছিলো তুমি আমায় প্রথম হলুদ দাও তাই হয়েছে।সবার শেষে যাতে তোমার গায়ে আমার দেওয়া হলুদ থাকে তাই শেষে দিলাম বুঝেছো পিচ্চি।(নাক টিপে)।আমাদের দেরী হচ্ছে ফ্রেশ হয়ে এসো ওখানে সবাই ওয়েট করছে।নাহলে….
.
না না আপনি যান আমি এক্ষুণি আসছি।নাহলে আর কি কি হতে পারে আমার বুঝা হয়ে গেছে।
.
ওকে গুড গার্ল।
.
.
ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখি তিশা হলুদ মেখে ভূত হয়ে আছে আর মুখটা রাম গরুর ছানার মতো।ওকে দেখে আমার চোখ ছানাবড়া। আমার তো না হয় উনি আছেন তাই আবার হলুদ দিয়েছেন কিন্তু আমার জানা মতে ওর তো কেউ নেই তাহলে।ওর এই অবস্থা কে করলো জানতে হচ্ছে।গুটিগুটি পায়ে ওর সামনে দাঁড়ালাম।ওকে একদম জোকারের মতো লাগছে।নিজের হাসিটাকে কোনো মতে আটকে বললাম….
.
ওই বান্দরনী তোর এই অবস্থা কেন? এমনটা কে করলো?ও কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল…..
.
ওই বান্দর টা।(মুখ কালো করে)
.
কোন বান্দরটা।(অবাক হয়ে)
.
আরে ওই দিন যে খামচি দিয়েছিল সেই বান্দরটা।
.
এখানেও সেই বান্দর।কি করে কি হলো ডিটেলসে বল।
.
আমি আর তুই যখন ওয়াশরুম থেকে বেরিয়েছিলাম তারপর তুই কোথায় চলে গেলি তখন উনার মুখে লেগে থাকা সব হলুদ ইচ্ছামতো আমার গালে লাগিয়ে দিলো।
.
আর তুই কিছু না বলে লাগাতে দিলি?
.
ধুর না লোকটাকে আটকানোর চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি।তুই বল বান্দরের সাথে কি আর মানুষ পেরে উঠবে তাও আবার আমার মতো একটা মেয়ে।।(মুখ গোমরা করে)
.
ওর কথা শুনে হাই ভোল্টেজের শক খেলাম আমি।বার বার কোন বান্দর এমন করে।ঠিকই তো বলছে বেচারি আমি সামান্য রিহানের বাচ্চা রিহানকে আটকাতে পারিনা আর তুই বান্দরকে আটকাবি কি করে(বিরবির করে)।আচ্ছা আমি কি তাকে চিনি।একবার তাকে দেখাবি।
.
আই থিংক তুই ছিনিস।
.
আমি চিনি কে সে।(অবাক হয়ে)
.
আরে এই যে……
.
যেই বলতে যাবে এমন সময় আবির ভাইয়া এসে হাজির।কি দুই বান্ধবী মিলে কি কথা হচ্ছে।মিটিমিটি হেসে।
.
না ভাইয়া তেমন কিছু না।আসলে তিশাকে কেউ একজন হলুদ মাখিয়ে চলে গেছে আর ওর কথা মত লোকটা জাতে মানুষ তালে বান্দর হা হা।
.
আবিরঃতাই নাকি!শেষমেশ বাদর জুটলো তিশার কপালে।(মুচকি হেসে)
.
হ্যাঁ ভাইয়া আমি আগে জানতাম বাদরের গলায় মুক্তার মালা আর এখন দেখি বাদরের গলায় বান্দরনীর মালা হাহা….
.
আবিরঃঠিক বলেছো বলেই দুজনে হাসছি।এদিকে তিশা রেগে ফায়ার হয়ে আছে।ওর চোঁখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে এখন আমাকে আর আবির ভাইয়াকে ও গিলে খাবে।তখনই রিহান এসে হাজির।
.
একি তোমরা এই সঙটাকে কোথায় পেলে?কি চাই ভাই
.
উনার কথা শুনে আমি আর আবির ভাইয়া খিল খিল করে হাসছি।এদিকে আমাদের হাসতে দেখে উনি বোকা ভনে গেলেন।এবার সামনে থাকা সঙটাকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে বলে উঠলেন….
.
তিশা!ওহহ মাই গড
.
আমি আর আবির ভাইয়া হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালাম।আর তিশা করুন চোখে তাকিয়ে আছে।
.
একি তিশা তুমি এভাবে সঙ সেজে আছো কেন?
.
ভাইয়া আপনিও আমার সাথে এমন মজা করছেন।কাঁদো কাঁদো গলায়
.
সরি তিশা!আমি সত্যি তোমাকে চিনতে পারিনি।তা তোমার এই অবস্থা কে করলো।
.
আর বলবেন না ভাইয়া একটা বাদর।
.
কি বাদর!বাদর এখানে কোথা থেকে আসলো।রোজ এদিকে আসো তো!
.
হুম বলুন।(উনার সামনে গিয়ে)
.
তুমি এখন থেকে আমার সাথে সাথে থাকবে।(হাত ধরে)দেখেছো বাদর তিশার কি হাল করেছে।একদম এদিক ওদিক ছোটাছুটি করবে না।।আমি তোমাকে এভাবে দেখতে পারবো না।
.
উনার কথায় আমি আকাশ থেকে পরলাম।লোকটা কি পাগল নাকি! তখনই আবির ভাইয়া বলে উঠলো….
.
আজ বন্ধু বলে আমাকে এভাবে আগলে রাখলি না। আর বউকে দেখ কেমন বাচ্চাদের মতো বুকে আগলে রাখছে।।ওরে হাদা এটা সত্যি সত্যি বাদর না।
.
তাহলে!
.
ওটা মানুষ! তিশার ভাষায় বাদর বুঝলি।
.
কি বলছিস।
.
এরপর উনাকে প্রথম থেকে সবটা খুলে বললাম।কাহিনী শুনে উনি অবাক হলেন আর বললেন….শেষে কিনা তিশা বাদরের পাল্লায় পরলো বলেই সবাই হাসতে শুরু করলো।আর তিশা কাউকে কিছু না বলে মেজাজ দেখিয়ে হন হন করে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
.
কাপল ড্যান্স দেখার জন্য অধীর আগ্রহে বসে আছি।এত আগ্রহ থাকার কারন একটাই ভাইয়া আর ভাবির ক্যামেস্ট্রি দেখা।তিশা এখনও সেই গোমরা মুখ নিয়ে বসে আছে।প্রথমে সবাই একসাথে ড্যান্স করবে আর।।সবার শেষে ভাইয়া আর ভাবির পার্ফরমেন্স আছে।সবাই যার যার পার্টনার নিয়ে রেডি।বাকি আমি আর তিশা কিন্তু সমস্যা হলো তিশাকে নিয়ে ও পার্টনার পাবে কোথায়।এসব ভাবছি এমন সময় রিহান ভাইয়া এসে তিশা আর আবির ভাইয়াকে জোর করে স্টেজে পাঠিয়ে দিলেন আর উনার হাত আমার দিকে এগিয়ে দিলেন আমি হাতটা ধরার আগেই অন্য কেউ ধরে ফেলল।সেই মানুষটার দিকে তাকিয়ে আমি অবাক হলাম।
:
:
#Part_30
:
:
:
বাগানের একপাশে দাঁড়িয়ে আছি লক্ষ্য আকাশের দিকে।আকাশে মস্ত বড় একটা চাঁদ উঁকি দিচ্ছে।চারিদিকে শুনশান নীরবতা।ভিতরটা দুমরে মুচরে শেষ হয়ে যাচ্ছে।যেখানে ভালোবাসার মানুষের পাশে নিজের ছায়াকেও সহ্য করা যায় না সেখানে লিনা তো অন্য একটা মেয়ে কি করে সহ্য করবে।যাকে বড্ড ভালোবাসি তাকে কি করে অন্যের সাথে ভাগাভাগি করবো।পারবো না আমি উনার জন্য যে আমি বড্ড স্বার্থপর লোভী হয়ে গেছি।লিনা আপু ঠিকই বলেছে আমি লোভী হ্যাঁ আমি লোভী উনাকে পাওয়ার লোভে লোভী আমি। লিনার সাথে পারছিলাম না আমি উনাকে সহ্য করতে তাই তো চলে এলাম।এখন নিশ্চয় দিব্যি ড্যান্স করছেন লিনা আপুর সাথে ভালো তো তাতে আমার কি আমিই বা এত কাঁদছি কেন?সে ভালোই আছে তার লিনার সাথে থাকুক যেমন চায়।
.
কিছুক্ষণ আগে….
.
রিহান রোজের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলো ড্যান্স পারফর্ম করার জন্য তখন রোজ হাতটা ধরার আগেই লিনা খপ করে ধরে ফেলে।আর রিহানকে একরকম জোর করে নাচার জন্য কিন্তু রিহান রাজি নয়।
.
রিহানঃনা লিনা আমি তোর সাথে ড্যান্স করবো না।ড্যান্স করলে আমি রোজের সাথেই করবো আর কারো সাথে না।রোজ চলো তো।
.
কিন্তু লিনা ছাড়ার পাএী নয় তাই একপ্রকার জোর করেই স্টেজে পাঠিয়ে দেয় রিহানকে।রিহানও তখন আর কথা বাড়ায় না সিনক্রেট করবে বলে।রিহান ভেবোছিলো লিনা চলে যাওয়ার পর আবার রোজকে নিয়ে যাবে কিন্তু তা আর হলো না রোজ তার আগেই বেপাওা।রিহান চলে যাওয়ার পর লিনা রোজকে বলে…..
.
ওহ রোজ তুমি এখনও ছোট বড়দের মধ্যে আসার কি দরকার।আর যদি নাচার হয় তাহলে ওই যে শাওন আছে ওর সাথে ড্যান্স করো।আর এটা কেবল একটা ওকেশন যে যার ইচ্ছা মতো ড্যান্স করতেই পারে।আমি রিহানকে নিয়ে গেলাম তুমি অন্য কাউকে খুঁজে নাও।অবশ্য এতে তোমার প্রবলেম হওয়ার কথা না কারন তুমি তো এসবেই অভ্যস্ত একটা ছেড়ে আরেকটা ধরো এটা তোমার পেশায় পরিণত হয়েছে ।কলেজেও দেখেছি ওর সাথে আটার মতো লেগে থাকো সবসময় ওর পেছন ঘুর ঘুর করো। নির্লজ্জ মেয়ে দেখই তো রিহান তোমাকে কেন কোন মেয়েকেই পাওা দেয় তাহলে।এবার একটু ওর পিছু ছাড়ো রেহাই দাও ছেলেটাকে আর কতবার ট্রাই করবে বলো।এতবার ট্রাই করার পরও তুমি কি একটু হাঁপাও না।ওহহ সরি হাঁপাবেই বা কি করে তুমি তো ওকে নয় ওর সম্পওিটাকে আকড়ে ধরতে চাও কি ঠিক বললাম তো।তখনই কোথা থেকে আবির এসে বলল….
.
স্টপ লিনা অনেক বলে ফেলেছিস।রোজকে যা মুখে আসছে তাই বলে যাচ্ছিস তোর ভাগ্য ভালো এখানে রিহান নেই যদি থাকতো তাহলে তোর কি হাল হতো বুঝতেও পারছিস না।ভাইয়ার কথাগুলো যেন তার কানেই গেলো না কিছু না শোনার ভান করে চলে গেলো স্টেজের দিকে।
.
রোজ আর ইউ ওকে।চোখ দিয়ে অনবরত পানি পরছে আজকে এতটা নিচে নেমে গেলাম।আমি সম্পওির লোভে উনাকে ছিঃএকটা মেয়ে আর কত নিচে নামতে পারে।আমি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালাম। উনি আবারও বললেন….আমি জানি রোজ তুমি ঠিক নেই।আর থাকার কথাও নয়।তুমিই কেন এতগুলো কথা হজম করলে ওকে তো ডিরেক্ট বলে দিলেই পারতে রিহান তোমাকে ভালোবাসে।আর রিহানই বা কি বুঝতে পারি না লিনার সামনে তোমাকে একা ফেলে চলে গেলো।তুমি একটু দাঁড়াও আমি আসছি।আবির ভাইয়া চলে যাওয়ার পর স্টেজে চোখ যেতেই দেখলো লিনা আর রিহান পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে আর তা দেখেই রাগ ক্ষোভ আর অভিমানে ওখান থেকে বেরিয়ে আসে রোজ।
.
রিহান স্টেজে গিয়ে লিনাকে একটা বাহানা দিয়ে রেখে রোজের কাছে আসে।এসে রোজকে কোথাও দেখতে না পেয়ে চারিদিকে খুঁজতে থাকে রিহান কিন্তু কোথাও পাচ্ছে না।তখনই আবির এসে রিহানকে সবকিছু খুলে বলে তা শুনে রিহান শকড কি করবে বুঝতে পারছেনা। ও জানে ওর পিচ্চি বড় অভিমানি লিনার সাথে দেখে সহ্য করতে পারে নি।তার উপর এতগুলো কথা কি করে সহ্য করবে।তাই হয়তো কোথাও বসে চোঁখের পানি ফেলছে আর হচ্ছেও সেটা।খুঁজতে খুঁজতে বাগানের এক পাশে চোখ যায় রিহানে আর সেখানে একটা মেয়েকে দেখতে পায়।দৌড়ে তার কাছে যায় রিহান আর ওখানে থাকা মেয়েটা আর কেউ নয় তারই মায়াবতী।
.
.
রিহান রোজ পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে।রোজের চোখ আকাশের দিকে আর রিহানের চোখ জোড়া রোজকে দেখতে ব্যস্ত।রোজ বুঝতে পারছে কেউ তার পাশে আছে কিন্তু তাকে দেখার সামান্যতম ইচ্ছাও তার নাই।তাই তাকাচ্ছে না।রিহান বুঝতে পারছে রোজ কাঁদছে।কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর রিহান নীরবতা ভেঙে বলল…..
.
এই রেড রোজ (নিজের দিকে ঘুরিয়ে দু হাত দিয়ে গাল চেপে ধরে)কি হয়েছে এভাবে চলে আসলে কেন?জানো তোমাকে আমি কখন থেকে খুঁজচ্ছি।
.
কোনো কিছু না বলেই উনার বুকে ঝাঁপিয়ে পরলাম আমি।কাঁন্নার গতি আরো বাড়তে লাগলো।কিছুতেই নিজেকে শান্ত করতে পারছিনা।মনে হচ্ছে কেউ আমার থেকে আমার প্রাণটা নিয়ে গিয়েছিলো অনেক্ষন পর তা ফেরৎ পেয়েছি।
.
এই রোজ আর কেঁদো না আমি ভেবেছিলাম লিনা চলে যাওয়ার পর আবার তোমাকে নিয়ে যাব কিন্তু তার মধ্যে যে এতকিছু ঘটবে বুঝতে পারিনি।আমি যদি তখন না যেতাম তাহলে কিছুই হতো না।সরি পিচ্চি আর কেঁদো না প্লিজ। তুমি বুঝ না তোমার চোখের পানি আমার সহ্য হয়না।।(চোখের পানি মুছে)
.
আআমি পারবো না আপনাকে ছাড়া থাকতে।হ্যাঁ খুব স্বার্থপর লোভী একটা মেয়ে আমি।আপনার জন্য আমি স্বার্থপর লোভী হতে রাজি কিন্তু তবুও আপনাকে ছাড়তে রাজি নই।
.
কে বলেছে ছাড়তে।আমিও তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না পিচ্চি।কে কি বলল না বলল তা নিয়ে অযথা কষ্ট পেও না।আমি তো তোমাকে চাই এটাই কি যথেষ্ট নয় হুম।এবার আমার সাথে চলো।আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আমার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেলেন।
.
.
লিনা আপুর সামনে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছি আমি আর রিহান। উনি আমার হাতটা শক্ত করে ধরে আছেন।আমাদের একসাথে দেখে লিনা আপুর চোঁখ চরকগাছ।যেন উনি কোনো ভূত দেখছেন। লিনা আপুকে উদ্দেশ্য করে উনি বলে উঠলেন…..
.
দেখ লিনা এতদিন ধরে তুই রোজের সাথে অনেক উল্টা পাল্টা আচরণ করেছিস কিন্তু তখন তোকে আমি তেমন কিছু বলতে পারিনি কিন্তু আজ বলছি কান খুলে শোনে রাখ আমি রোজকে ভালোবাসি।ও আমার লাইফ লাইন আমার কলিজা(বুকের সাথে মিশিয়ে) আমার কলিজায় যদি কেউ হাত দেওয়ার চেষ্টাও করে তার কি হাল করবো বুঝতে পারছিস নিশ্চয়।সেদিনের ঘটনার পর আমি তোকে সতর্ক করেছিলাম কিন্তু তুই আমার কথা শুনিসনি আবার আজকে রোজকে অপমান করেছিস আফসোস মেয়ে বলে তোর গায়ে হাত তুলতে পারছিনা।যদি তোর জায়গায় কোনো ছেলে থাকতো তাহলে এতক্ষণে ওর হাত আমি ভেঙে দিতাম।তবে একটা কথা জেনে রাখিস এরপর যদি কিছু করার চেষ্টাও করেছিস তাহলে মেয়ে বলে ছাড় পাবি না কথাটা মাথায় ঢুকিয়েনে।তোকে এখন আমার বন্ধু ভাবতেও লজ্জা লাগছে।একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়েকে কিভাবে এত অপমান করলি।সেম অন লিনা।
.
লিনা চুপ হয়ে কথাগুলো শুনছে।কিছু বলছে না হয়তো ব্যাপারটা বুঝতে পারছে না বা কি রিয়েক্ট করা উচিৎ তাও বুঝতে পারছেনা।হঠাৎ লিনা আপু আমাদের অবাক করে দিয়ে বলে উঠলেন….রিহান সিরিয়াসলি তুই রোজকে ভালোবাসিস(খুশি হয়ে)।যাক এতদিনে আমাদের ক্রাশ বয়ের কাউকে তাহলে মনে ধরলো।ইউ নো আই’এম সো হ্যাপি।রোজ তুমি খুব লাকি(আমার দিকে এগিয়ে এসে)রিহানের মতো কাউকে পাশে পেয়েছে।রিহানের মতো কাউকে পেলে যে কোনো মেয়ের জীবন ধন্য হয়ে যাবে আমি জানি ও তোমাকে ভালো রাখবে।সরি রোজ আমি না বুঝে তোমাকে অনেক কিছু বলে ফেলেছি প্লিজ ক্ষমা করে দিও।আর রিহান তুইও পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিস।থ্যাংকস আমার ভুলটা ধরিয়ে দেওয়ার জন্য।তুই দেখিস আর কখনো এমন হবে না।
.
আমি অবাক হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে আছি এত রাতারাতি মানুষ পাল্টাতে পারে হয়তো নাহলে এই কিছুক্ষেণের ব্যবধানে লিনা আপু পাল্টালো কি করে।যাক আমাদের দ্বন্দ্ব মিটেছে।
.
আপু তোমাকে ক্ষমা চাইতে হবে না।যে নিজের ভুলগুলো বুঝতে পারে সেই মহান।আমরা না কখনও নিজেদের ভুলগুলো দেখতেই পাইনা আর সেখানে তুমি নিজের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চাইছো। তবে তোমাকে আমি ক্ষমা করতে পারি একটা শর্তে।
.
কি শর্ত তুমি যা বলবে আমি তাতেই রাজি।ভুল যখন করেছি তাহলে তার শাস্তিও পেতেও আমি রাজি।
.
তোমাকে আমায় ছোট বোনের মতো আদর করতে হবে।জানো আমার কোনো বোন নেই ছোট থেকেই খুব শখ ছিলো একটা বোনের তুমি হবে সেই বোন।
.
লিনা আপু খুশিতে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন কেন নয় বল আজ থেকে আমরা দুই বোন।রিহান আগে বলেছিলাম রোজ খুব লাকি এখন বলছি তুই খুব লাকি রোজের মতো কাউকে লাইফে পেয়েছিস। উনার কথার সবাই হাসলো।আর আমাকে আর রিহান ভাইয়া ঠেলে স্টেজে পাঠিয়ে দিলেন।আসলে সব মানুষের মধ্যেই ভালো মন্দ দুইটা দিক থাকে লিনা আপুরও তাই। একটা সুযোগ পেলে নিজের ভুলগুলোকে সুধরে নিতে পারে।
.
সকলের পারফরমেন্স শেষে ভাইয়া আর ভাবির পালা।কিন্তু দুজনে এখনও একইভাবে বসে আছে।আমাকেই কিছু একটা করতে হবে।তাই জোর করেরে ভাইয়াকে আগে স্টেজে পাঠিয়ে দিলাম।ভাবিকে নিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলাম আর ভাবি নিচে পরে যাওয়ার আগে ভাইয়া তাকে ধরে ফেলল।দুজনের পারফরমেন্স শেষে ভাবি লজ্জা রাঙা মুখ নিয়ে নেমে এলো।এদের দেখে আমি এটা বুঝিনা এরা এত লজ্জা পায় কোথায়।তখনই রিহান ভাইয়া ফিসফিস করে বলে….রোজ আমাদের বিয়ের সময় তুমি এত লজ্জা পেওনা।এভাবে লজ্জা পেলে আমি কিন্তু নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবো না তখন সবার সামনে উল্টা পাল্টা কিছু করে বসবো বলে দিলাম।
.
.
চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here