#বন্ধুত্ব_নয়_অন্যকিছু
#পর্ব_০২
#লিখা_তৃষা_রহমান
এর পরের দিন গুলো আমার জীবনে পুরো স্বপ্নের মত করে কাটতে লাগলো। রবিনের বাবা -মা কে আমি বাবা আর মা বলেই ডাকতে শুরু করলাম। সকালে আম্মুর আদর মাখা ডাকে ঘুম ভাঙে। সারাদিন কলেজ, প্রাইভেট। বিকেলে বাবা,মায়ের সাথে আড্ডা মাঝে মাঝে মায়ের সাথে শপিং এই সব কিছু মিলে আমি ভুলেই গেলাম। আমি এ বাড়ির বউ। আমার মনে হতে লাগলো।আমি এবাড়ির মেয়ে। যেনো জন্ম থেকেই এখানে।
আমাদের বিয়ে হয়েছে দেড় মাসের মত, এর মাঝে রবিনের সাথে কথা হয়নি।বাবা-মা ই শুধু কথা বলেন।
একদিন সন্ধ্যায় রবিনের ফেসবুক আইডিতে দেখি। কিছু সময় আগেই রবিন একটা ছবি আপলোড দিয়েছে। একটা মেয়ের সাথে বসে কফি খাচ্ছে এমন একটা ছবি। আমি কি একটা ভেবে ছবিটা মা কে দেখালাম। মা কিছুসময় ছবিটা দেখে বল্ল,
এসব নিয়ে ভাবিসনা, দেখিস ই তো ভার্সিটিতে উঠলে কত বন্ধু হয়। কত জনের সাথে মিশতে হয়। সব সময় এত ছোট ছোট ব্যাপার গুলোতে মন খারাপ করলে চলে না।
মায়ের কথায় নিজেকে অনেকটা বোঝালাম। তারপরও কেনো যেনো চোখের পানি আটকাতে পারলাম নাহ। রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে অনেক সময় কান্না করলাম। রবিন আর আমি তো সেই ছোট বেলা থেকেই বন্ধু। কই , কখনও তো কলেজে ওঠার পরও একসাথে চা,কফি কিছু খাই নি। তাহলে ?
একটু পর বাইরে মায়ের চিৎকার শুনতে পেলাম। দরজা খুলে বাইরে এসে দেখি মা রবিনের সাথে ফোনে কথা বলছে।কথা বলার এক পর্যায়ে দুম করে মা ফোনটা আমার কাছে দিয়ে বলে। নে ওর সাথে কথা বল। আমি কি করবো না করবো ইতস্তত করেই ফোনটা ধরলাম। আমি এ পাশ থেকে হ্যালো বলতেই
রবিন চিল্লিয়ে উঠলো, তুই কি আমাকে একটুও শান্তি দিবিনা। কি চাস তুই বল তো ?
আমি নিজেকে শান্ত করে বল্লাম, আমি কি এমন করেছি। যার জন্য তুই আমার সাথে এমন ব্যাবহার করছিস।
বুশরার এমন কথায় আমার মাথায় যেনো আগুন ধরে গেলো। আমি তখন আরও চিল্লিয়ে বল্লাম, আমি কি ছোট বাচ্চা। যে আমার সমস্ত কিছু এখন বাবা-মা কে বলতে হবে। আর তুই কেন আমার মায়ের কাছে বলেছিস যে আমি রোজ মেয়েদের নিয়ে ঘুরতে যাই।
-বিশ্বাস কর, আমি এসব মাকে কিচ্ছু বলিনি। শুধু তোর আজকের ছবিটা মা কে দেখিয়েছি।
-ছবি দেখিয়েছিস, তাহলে বলতে আর কি বা বাকি রেখেছিস। আচ্ছা, বুশরা একটা কথা বলতো। আমি কি তোকে কখনও বলেছি যে আমার তোকে ভালো লাগে নাকি এটা কখনও বলেছি যে আমার এখন তোকে ভালো লাগে।
-নাহ্,এসব কিছুই কখনও বলিস নি।
তাহলে কেনো বার বার আমাকে এভাবে ঝামেলায় ফেলছিস বল তো ?
রবিনের কথা গুলো শুনে বুকের মধ্য থেকে একটা দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে এলো আমার, আমি খুব স্বাভাবিক ভাবে বল্লাম, রবিন! আমি এমনটা আর কখনও করবো না।
ওপাশ থেকে কোনো কিছু না বলেই কলটা কেটে গেলো।
সেদিন আর রাতে আমি রুম থেকে বের হয়নি। রাতে ও খায়নি। মা ও আমাকে আর ডাকতে আসেনি।
পরের দিন সকালে ডাইনিং এ দেখি বাবা- মা খাচ্ছে। আমাকে দেখেই তারা বসতে বল্লেন।
আমি চেয়ারে বসার পর প্রথম কথা বাবাই শুরু করলেন।
মা বুশরা আমি আর তোমার মা চাই। তুমি কিছু একটা করো। তাহলে তোমার সময় গুলো ভালো কাটবে।
আমি কথা গুলো বোঝার জন্য তাদের দিকে আবার তাকালাম, এবার মা বল্ল, আমার একটা পরিচিত মহিলা আছে সে তোমাকে হাতের কাজ শিখিয়ে দেবে। যেমন : টেইলার্সের কাজ, বিভিন্ন ধরনের রান্না। আমি ঠিকানাটা বলে দেবো। তুমি কলেজ ছুটির পর সেখানে চলে যাবে।
বুঝলে মা, মেয়েদের সবাই সব সময় পরগাছা মনে করে। তাইতো তাদের মূল্য কেউ দিতে চায় না। কথাটি বলেই মা হাত ধুয়ে উঠে গেলো।
আমি এই ব্যাপারটায় ভালো -মন্দ কিছুই বল্লাম না। তবে খুব অবাক হলাম এরা দুজন এত ভালো ব্যাবহার আমার সাথে কেনো করছে। গত দেড়মাস শুধু মাত্র আমার জন্য এদের নিজের ছেলের সাথে সম্পর্ক খারাপ যাচ্ছে।
এরপর আমার নতুন রুটিনে জীবন শুরু হলো। কলেজ থেকে মায়ের দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী আমি প্রতিদিন সেই বাসায় কাজ শিখতে যাই । আমাকে কাজ শেখায় মধ্য বয়স্ক একটা মহিলা। দেশী,বিদেশী বিভিন্ন ধরনের রান্না শেখায়। আর টেইলার্সের যাত যাবতীয় কাজ।
একদিন ভোরবেলা কাউকে কিছু না বলেই রবিন হুট করে বাসায় এসে হাজির।
#চলবে