বন্ধুত্ব_নয়_অন্যকিছু পর্ব ১

#বন্ধুত্ব_নয়_অন্যকিছু

#পর্ব_০১

#লিখা_তৃষা_রহমান

– একদম কান্না করবি না।কিসের জন্য কান্না করছিস তুই ?যেটা চেয়ে ছিলি সেটাই তো হয়েছে। সারাটা জীবন এই চোখের পানি দিয়ে।তোর সকল কাজ সহজে হাসিল করলি। কথা গুলো এক নিঃশ্বাসে বলে দম ছাড়লো রবিন।

-অন্যদিকে মাথা নিচু করে বসে চোখের পানি ফেলছি আমি। অথচ এই মুহূর্তে সব থেকে খুশি আমারই হওয়ার কথা ছিলো।

-ছোটোবেলা থেকে পিছে লেগেছিলি। আর আজ তো আমায় বিয়ে করে মাথায় চড়ে বসলি,চিল্লিয়ে কথাটা বল্ল রবিন।

আমি এবার চোখের পানি মুছে রবিনের দিকে তাকিয়ে বল্লাম ,তুই তো কখনও আমার সাথে এমন খারাপ ব্যাবহার করতি নাহ ? তাহলে আজ কেন? এমন খারাপ ব্যাবহার করছিস।

-রবিন আমার পাশের চেয়ারটা টেনে নিজে বসলো। একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বল্ল,কারণ স্কুলের প্রথম দিন থেকে দেখেছি। সকল টিচারের মনে তোর জন্য একটা সফট কর্নার।সবাই বলতো তোর সাথে ভালো ব্যাবহার করতে। ধীরে ধীরে জানতে পারলাম। তোর মা নেই। সে অন্য আর একজনের সাথে চলে গেছে। ছোট বেলায় এই ব্যাপারটা না বুঝলেও। বড় হওয়ার পর বুঝতে পেরেছিলাম। তুই লজ্জা পাবি দেখে। কোনো দিনও এই কথাটা নিয়ে তোকে কিছু বলি নি । বন্ধু মেনে ভালো ব্যাবহার করেছি। আর আজ তুই আমার বন্ধুত্বের সুযোগ নিলি। এখন তুই বল কি করে তোর সাথে আর ভালো ব্যাবহার করবো। বুশরা তোকে আমি একটা বুঝদার মেয়ে বলে জানতাম। কিন্তুু তুই আজ যেটা করলি এরপর আমার আর কিছুই বলার থাকে নাহ।

– এই কথা গুলো শোনার পর লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে আমার। তাহলে কি আমি রবিন কে বিয়ে করে ভুল করলাম ?

এসব ভাবতেই রুমের মধ্যে প্রবেশ করলো রবিনের মা-বাবা।রুম বলতে এত সময় আমরা কোর্টে এক রুমেই বসা ছিলাম। রবিনের মা-বাবা দুজনই আইনজীবী। আর আমাদের বিয়েটা রবিনের মা-বাবা দুজন উপস্থিত থেকেই দিয়েছেন।

-রবিন! তুমি এখন আমাদের সবার সাথে বাসায় যাবে? কথাটি রবিনের বাবা আরিফ আঙ্কেল রবিন কে উদ্দেশ্য করে বল্লেন।

-আমি এই মুহূর্তে রাজশাহী ফিরে যাবো। কথাটি বলেই রবিন তার কাপড়ের ব্যাগ টি নিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেলো।

তামিমা আন্টি অর্থাৎ রবিনের মা, আমার পাশে এসে, আমার মাথায় হাত রেখে বল্লেন, এখন বাসায় চলো। পরের টা পরে দেখা যাবে।

আমি তামিমা আন্টিকে জরিয়ে ধরে কেঁদে ফেল্লাম,আমার বাবা-মায়ের নেয়া একটা ভুল সিদ্ধান্তের কারণে সারাজীবন সবার দয়ার পাত্রী হয়ে থাকা লাগলো।

রবিনদের ফ্ল্যাটে চারটে রুম। একটায় আঙ্কেল -আন্টি থাকেন। একটায় রবিন। আর অন্য দুটোর মধ্যে একটা আমাকে দেওয়া হলো।

আন্টি রুম দেখিয়ে বল্লেন, এটা আজ থেকে নাকি আমার রুম। আমি আমার মন মত এই রুমটা সাজিয়ে নিতে পারি।আমার কুড়ি বছরের জীবনে এই প্রথম হয়তো আমার নিজের বলে একটা রুম হলো। রুমের মধ্যে একটা সিঙ্গেল খাট, একটা ড্রেসিং টেবিল, আর একটা ওয়ার ড্রপ। রুমের সাথেই একটা বেলকনি। আমি বেলকনি তে গিয়ে দাড়িয়ে আমার আর রবিনের স্কুল আর কলেজ জীবনের কথা গুলো ভাবতে শুরু করলাম। আমার মা কি কারনে অন্য একজন পুরুষের সাথে চলে গেছে। এটা আমি জানি না। মা চলে যাওয়ার পর আমি দাদীর কাছেই ছিলাম। প্রথম দিকে বাবা খোঁজ নিলেও পরবর্তীতে আর নেয় নি। হয়তো নতুন মা চায়নি আমার সাথে আমার বাবা আর যোগাযোগ করুক। দাদী আমায় নিয়ে চাচার সাথে থাকতেন। আমি দাদীর কাছেই বড় হয়েছি।আমি যখন ক্লাস ফোরে তখন রবিন এসে আমাদের স্কুলে ভর্তি হয়। রবিন আর আমার পরিচয় ক্লাস ফোরে থাকতে। আমার সাথে সবাই মোটামুটি ভালো ব্যাবহার করতো। ক্লাসের সব চেয়ে টেলেন্ট স্টুডেন্ট বলেই রবিন পরিচিত ছিলো। ধীরে ধীরে বয়স বাড়ার সাথে সাথে বুঝতে পারলাম রবিন কে আমি অন্য সকল বন্ধুর থেকে একটু বেশিই পছন্দ করি। স্কুল লাইফ শেষ হয়ে যাওয়ার পর। কলেজ লাইফে ও দুজন একসাথেই ছিলাম একই কলেজে। রবিন আমার সাথে সব সময় বন্ধুর মতই আচরণ করেছে। কিন্তুু ঝামেলা বাঁধে যখন রবিন এইচ, এস সি র পর রাজশাহী ভার্সিটিতে ফিজিক্স এ চান্স পায়। রবিন পড়াশোনার জন্য রাজশাহী তে চলে যায়।

ঠিক তখন আমি অনুভব করি রবিন কে আমি ভালোবাসি। রবিনের পুরো ফেসবুক জুড়ে তখন নিত্য নতুন মেয়েদের সাথে ছবি। এটা দেখে ভীষণ মন খারাপ হয় আমার। তখন আমি এস এম এস আর কল দিয়ে বিভিন্ন ভাবে রবিন কে বোঝাতে চাই আমার ভালোবাসার কথা। কিন্তুু এতে কোনো লাভ হয়নি। হুট করে কেনো জানি আমার প্রচন্ড জেদ তৈরি হয়। মনে হয় আমি কেন শুধু ভালোবাসা হারাবো।

ছোটোবেলা থেকে বাবা -মার ভালোবাসা পায় নি এখন যাকে ভালোবাসি তাকেও কি পাবো না। কষ্ট সহ্য করতে না পেরে দাদী র কাছে গিয়ে অনেক কান্না কাটি করি। তখন দাদী আমার কাছ থেকে রবিনের বাসার ঠিকানা নিয়ে। রবিনের বাবা- মায়ের সাথে দেখা করেন। তারপরই এভাবে বিয়ে। দাদী সেদিন রবিনের বাবা-মা কে কি বলেছিলেন আমি এখনও জানিনা।
তুমি এখনও ফ্রেশ হওনি ? কথাটি বলতে বলতে আন্টি আমার পাশে এসে দাড়ালেন।
আমি কোনো কথা না বলেই, আন্টি কে জড়িয়ে ধরে বল্লাম, আচ্ছা মায়েদের শরীরে আলাদা কোনো ঘ্রাণ আছে কি ? আমি তোমায় তখন জড়িয়ে ধরে একটা ঘ্রাণ পেয়েছি। আমি যেটা আগে কোথাও পায় নি। আচ্ছা, আমি যদি তোমায় মা বলি। তুমি কি খুব রাগ করবে ?
আমি অনুভব করলাম, আন্টির চোখ দিয়ে টুপটাপ পানি পড়ছে যা আমার কাঁধ ভিজিয়ে দিচ্ছে।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here