বন্ধুত্ব_নয়_অন্যকিছু পর্ব ৪

#বন্ধুত্ব_নয়_অন্যকিছু

#পর্ব_০৪

#লিখা_তৃষা_রহমান
রবিন আর আমি সারা দিন ঘুরলাম। আমার পছন্দের খাবার খেলাম। সব মিলিয়ে মনে হলো আমাদের সম্পর্কটা আর পাঁচটা স্বাভাবিক সম্পর্কের মতই।

সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে সবার প্রথম দাদীকে ফোন দিলাম।
-কি ব্যাপার, আজ হঠাৎ আমার কথা মনে পড়লো ?

-উহ দাদী তোমার কথা মনে পড়বে কেনো। তুমি তো আমার মনের মধ্যে বসে থাকো সব সময়।
-থাক, মনের মধ্যে যে কে বসে থাকে সব সময় সেটা আমার ভালো করেই জানা আছে।

– দাদী আমি কিন্তুু তোমায় একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার জন্যই ফোন দিয়েছিলাম।তুমি কিন্তুুু শুনছো না। পরে কিন্তুু আমি আর বলবো না।

– ঠিক আছে। আগে তোমার গুরুত্বপূর্ণ কথা টা শুনি তারপর অন্য কিছু।

-দাদী রবিন আজ সকালেই বাসায় এসেছে। তারপর সারাদিন আমরা এক সাথে ঘুরেছি। অনেক, অনেক আনন্দ করেছি। এবার বোধহয় সব স্বাভাবিক হবে দাদী।।

-আলহামদুলিল্লাহ ! শুনে খুব ভালো লাগলো। তোকে অনেক দিন আগে একটা কথা বলেছিলাম মনে আছে।
-কি কথা দাদী?

-উহ,এত ভুলো মন কেন তোর। এই বয়সেই সব ভুলে যাস। এই যে যার জন্য দিন ভরে পাগলী হয়ে ঘুরে বেড়াস। আমার বয়সে এলে তো সেই প্রাণের রবিন এর নামটাও মনে রাখতে পারবি না।
-নাহ দাদী, এমন কিছু হবে না।রবিন কে আমি কোনো দিনও ভুলবো না। ওকে সব সময় মনে করে মনের মধ্যে রেখে দেবো। দেখে নিও।

– আচ্ছা ঠিক আছে রেখে দিস। তোকে আমি একদিন বলেছিলাম “যে সৃষ্টি কর্তা কখনও কারও পুরোটা খারাপ দেন না। একটা সময়ের পর খারাপ টা সরে গিয়ে ভালোটার দেখা মেলে”। তোর জীবনে যত টুকু কষ্ট ছিলো সেটা শেষ হয়ে গেছে। এবার তোর ভালো হবে। আর সেটা রবিন আর রবিনের বাবা – মায়ের হাত দিয়ে। তোর হারানো পরিবার এই পরিবারের মধ্য দিয়েই মিলিয়ে দিয়েছেন সৃষ্টিকর্তা।

-আচ্ছা দাদী, আমার মায়ের সাথে কি আমার কোনোদিনও দেখা হবে না। যদি দেখা হত তাহলে জানতে চাইতাম। কেনো সে এমন একটা সিদ্ধান্ত নিলো ? কথা গুলো বলেই আমি কান্না করে দিলাম।

– এটা ভেবে আর মন খারাপ করিস না। মনের মানুষের সাথে বিয়ে হয়েছে তোর। এখন তাকে নিয়ে , শ্বশুর -শ্বাশুড়ি নিয়ে সুন্দর ভাবে সংসার কর।

-হুম। তুমি একদিন সময় করে এ বাড়িতে এসে ঘুরে যাও। মা তোমায় কতবার সেদিন বল্ল, তুমি আসলেই না।

-আসবো সময় করে। তোরা সবাই ভালো থাকিস। আর সবার খেয়াল রাখিস।

-তুমিও ভালো থেকো। আল্লাহ হাফেজ ।

ফোন রাখতেই পিছনে তাকিয়ে দেখি। রবিন হাতে দুটো কফির মগ নিয়ে দাড়িয়ে আছে।

– কিরে ওই খানে দাড়িয়ে কেন তুই ?

– ভেবেছিলাম তোকে কফি বানাতে বলবো, তাই তোকে একবার ডাকতে এসেছিলাম। দেখি তুই কথা বলছিস ফোনে তাই আর ডাকিনি, পরে নিজেই দুজনের জন্য কফি বানিয়ে আনলাম।

– এই কফি তুই বানিয়েছিস ?
-হ্যা, কেন তোর বিশ্বাস হয় না!
– মা তো বল্ল,বাসায় থাকতে তুই কোনো দিন পানিটা ও ঢেলে খাসনি।
-ওটা তো যখন বাসায় ছিলাম তখন। এখন হলে থাকি অনেক কিছুই করতে শিখেছি। তিন বছর অনেক কিছু চেন্জ হওয়ার জন্য যথেষ্ট নয় কি ?
– হ্যা ঠিক বলেছিস। তিন বছর অনেক সময়।
– আচ্ছা, তুই কি কফিটা খাবি নাকি আমি নিজেই খাবো।
– না! দে আমাকে। এক চুমুক মুখে দিয়েই বুঝলাম । রবিন কফিটা ভালোই বানাতে পারে।

– আচ্ছা বুশরা, তুই আন্টি মানে তোর মাকে খুব মিস করিস তাই না ?

– আমি রবিন কে কি বলবো বুঝতে পারছি না। তাই কফিটা নিয়ে বেলকনিতে গিয়ে দাড়ালাম।

– আসলে তুই যখন দাদীর সাথে কথা বলছিলি। তখন আমি শুনতে পেয়েছিলাম। আন্টিকে নিয়ে কিছু একটা বলছিলি।তোর কোনো অসুবিধা থাকলে বলার দরকার নেই।

– আমি আমার মা কে মিস করি কি না জানিনা। যদি কোনোদিন ওই মানুষটার সাথে দেখা হয়। তবে ওই মানুষটাকে আমার অনেক কিছু বলার আছে এবং অনেক কিছু জানার আছে।

– আচ্ছা, ওই মানুষটার সাথে যদি আমি তোকে দেখা করিয়ে দেই। তাহলে আমাকে কি দিবি বল ?
– আমি বুঝতে শেখার পর থেকে ওই মানুষটার সাথে একবার দেখা করতে চাইছি। আর সেই মানুষটার সাথে কেউ যদি আমায় দেখা করিয়ে দেয় তবে, আমার সাধ্যের মধ্যে সে যা চাইবে আমি তাকে তাই দেবো।
– ওকে। তোর মনে থাকে যেনো।আমি যদি দেখা করিয়ে দেই। তাহলে, “আমি যা চাইবো তুই তাই দিবি “।
– হুম, মনে থাকবে৷

আচ্ছা বুশরা শোন, তোকে একটা কথা বলার দরকার ছিলো ।

– রবিনের এমন কথায় আমার হাত পা যেনো ঠান্ডা হতে লাগলো। এক সেকেন্ডের মধ্যে যেনো আমি আমার স্বপ্নে দেখা সেই ভালোবাসার জগতে পাড়ি জমালাম। তবে কি রবিন এখন আমাকে সেই কথাটা বলবে। যেই কথাটা শোনার জন্য আমি এত দিন ধরে অপেক্ষা করছি। আমি কিছুটা গলার স্বর নিচু করেই বল্লাম বল, “কি বলবি ”

– আসলে বুশরা তুই তো জানিস। বাবা- মা কেউ ছাত্র রাজনীতি পছন্দ করে না। আর পড়াশোনার মাঝখানে তো নাই। কিন্তুু আমি ভার্সিটিতে গিয়ে অল্প অল্প করে এখন অনেকটাই ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছি।ভার্সিটির সকলের ইচ্ছা সাথে আমারও ইচ্ছা সামনে নির্বাচন টা যেনো আমি করি। যেহেতু আমার শেষ বর্ষ আর অন্যদিকে আমার রেজাল্ট ভালো। সব দিক দিয়ে বিবেচনা করলে আমার হওয়ার চান্স একশোতে নিরানব্বই। কিন্তুু এই কথাটা আমি বলতে পারছিনা বাবা- মাকে। যেহেতু তোকে বাবা- মা অনেক ভরসা করেন। সুতরাং আমার ব্যাপারটা তুই বাবা- মা কে বুঝিয়ে বলবি। আমার বিশ্বাস বাবা- মা তোর কথা শুনবেন।

-রবিনের কথা শুনে আমার কি বলা উচিত। আমি নিজেই বুঝতে পারছিনা।

– এই যে ভাবনাবতী আবার কই হারালেন। শোনেন আপনি যদি ভেবে থাকেন, যে আমি হেরে যাবো তাহলে ভুল ভাবছেন। আমি কিন্তুু যথেষ্ট হ্যান্ডসাম। ভার্সিটিতে আমার সাথে মেয়েরা প্রেম করার জন্য লাইন দিয়ে আছে। সুতরাং নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য এটা কিন্তুু আমার জন্য একটা প্লাস পয়েন্ট।

কথা গুলো বলেই রবিন আমার সাথে হেলান দিয়ে দাড়ালো। আমার তখন ওকে বলতে ইচ্ছা করছিলো। তুই হেরে যাবী এটা আমি ভাবছিনা। আমি তোকে হারিয়ে ফেলবো বোধহয়। এটাই ভাবছি। কিন্তুু আমি কিছুই বলতে পারলাম না। আমার সমস্ত কথা যেনো গলার মধ্যে জমে রইলো।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here