#বন্ধুত্ব_নয়_অন্যকিছু
#পর্ব_০৩
#লিখা_তৃষা_রহমান
একদিন ভোরবেলা কাউকে কিছু না বলেই রবিন বাসায় এসে হাজির।আমি, বাবা,মা, সকলে মিলে সকালের নাস্তা খাচ্ছিলাম তখন।
কলিং বেলের আওয়াজ শুনে মা নিজেই গেলেন দরজা খুলতে। দরজা খুলে রবিন কে দেখে মা যেনো আকাশের চাঁদ হাতে পেয়ে গেলেন।
-কি ব্যাপার মা, ভেতরে ঢুকতে দেবে না কি ?
– তুই সত্যিই এসেছিস।
-হ্যা। কেনো তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না। বিশ্বাস না হলে আমায় ছুয়ে দেখো।দাড়াও তোমাকে ছুতে হবেনা। আমি নিজেই তোমাকে জড়িয়ে ধরছি।বলেই মা কে জড়িয়ে ধরলাম। (রবিন)
-মা কিছুটা সংকোচ হয়ে বল্ল, আসলে সেদিন সন্ধ্যায় তোকে যেভাবে বকাবকি করলাম। আমি তো ধরেই নিয়েছিলাম। তুই বোধহয় আমার উপর রেগে আছিস ।
– মা, এসব ছোটো খাটো বিষয় মনে রাখলে চলে না। তাছাড়া এমন তো নয় যে, এই প্রথম তুমি আমায় রাগ করেছো। এর আগেও তো ভুল করলে রাগ করেছো, শাসন করেছো। আমি কিচ্ছু মনে রাখিনি। কথা গুলো বলেই রবিন আমার পাশের চেয়ারে বসে পড়লো।
এক ফাঁকে আমার কাছে ও জানতে চাইলো আমি কেমন আছি ? রবিনের কথায় তখন আমার মন ছুয়ে শরীরের প্রতিটা কণায় পৌঁছে গেছে রিন, রিন করা এক ভালোলাগার অনুভূতি।
– আমি লজ্জামিশ্রিত এক হাসি টেনে বল্লাম, আলহামদুলিল্লাহ ভালো, তুই ?
-ও,হাসি মুখে বল্ল ভালো।
মা, আজ তুমি আমায় খাইয়ে দিবে বলেই মায়ের পাশে গিয়ে বসলাম।( রবিন)
-পরীক্ষা গুলো কেমন দিলে রবিন ?
-জ্বি আলহামদুলিল্লাহ, ভালো বাবা।
-তা কয়দিন ছুটি তোমার।
-বাবা,ছুটি পনেরো দিন। কিন্তুু বাসায় থাকবো তিন দিন। আর বাকি দিন গুলো বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাবো।
– আচ্ছা,খাওয়া শেষ করো তারাতাড়ি। তোমার মাকে সাথে নিয়েই আমি কোর্টে যাবো।
বাবা-মা কোর্টে চলে যাওয়ার পর। রবিন ওর রুমে ঢুকেছে তো আর বের হয়নি। আমি আমার রুমের বেলকনিতে লাগানো গাছ গুলোতে পানি দিচ্ছি।
তবে কি আমার দেখা স্বপ্ন গুলো এবার সত্যি হবে। রবিন কি আমার সাথে তৈরি হওয়া সম্পর্ক টা নিয়ে এগোবে। আমি এগুলোই ভাবছি। ঠিক তখনই পিছন থেকে রবিন বলে উঠলো।
-“মাশাআল্লাহ, রুম তো একটা দখল করে নিয়ে বসছোস “।
-হ্যা, মা বলেছে “এটা এখন থেকে আমার রুম” তাই নিজের পছন্দ মত সাজিয়েছি। এই দেখ আমার পছন্দের বেলীফুলের গাছ ও লাগিয়েছি বলেই আমি রবিনের হাত টা ধরে টেনে বেলকনির কোণায় গাছের কাছে নিয়ে গেলাম।
যখন বুঝতে পারলাম রবিনের হাত ধরে আছি। এক রাশ জড়তা নিয়ে তারাতাড়ি হাতটি ছেড়ে দিলাম।
-শুধু তো হাতটাই ধরেছিস। অন্য কিছু তো আর ধরিস নি। এমন একটা মুখ করেছিস। যেনো কত গুরুত্বপূর্ণ জিনিসটাই না ধরেছিস। বলেই রবিন হো হো করে হাসতে শুরু করলো।
ইশ,কি সুন্দর হাসি।রবিন কে আমি শেষ হাসতে দেখেছিলাম। আমাদের কলেজের বিদায় অনুষ্ঠানের দিন। সেদিন ছেলে-মেয়ে সবার কাছ থেকেই রবিন হেসে বিদায় নিয়েছিলো।রবিনের সেদিনের সেই হাসিটা ছিলো সবার জন্য। আর আজকের হাসিটা শুধু মাত্র আমার জন্য। ভাবতেই কেমন একটা খুশি খুশি লাগছে।
-এই যে ভাবনাবতী কই হারিয়ে গেছেন ?
আমার ভাবনা ভাঙে রবিনের হাতের তুড়ির আওয়াজে। আচ্ছা, তোর মনে আছে আমি এরকম মাঝে মাঝেই ভাবনায় হারাতাম। আর তুই এভাবে আমায় ভাবনাবতী বলতি।
-আমার সব মনে আছে। কিচ্ছু ভুলি নেই আমি। না কোনোদিন আর ভুলবো। (রবিন)
– মানে!
-মানে কিছুই না। চল তো আজ ঘুরবো সারাদিন। তুই পাঁচ মিনিটের মধ্যে রেডি হবি।
-সত্যি আজ আমরা ঘুরতে যাবো। শোন, আজ আমরা সেখানেই ঘুরতে যাবো। যেখানে আমরা কলেজ ছুটির পরও ঘুরতে যেতাম।
-ওকে ভাবনাবতী, আপনি আজকে যেখানে চাইবেন। আপনাকে আজ আমি সেখানেই ঘুরতে নিয়ে যাবো।
#চলবে