বন্ধ দরজা পর্ব ৬

বন্ধ_দরজা
পর্ব-৬

-” আমার সমস্যা কোথায় মানে? ও মানুষের সামনে তোমাকে আব্বা বলে ডাকবে এটা কেমন দেখাবে? ও যে মিডেল ক্লাস ফ্যামিলি থেকে বিলং করে সেটাতো সবার সামনে বুঝানোর প্রয়োজন নেই।”
-” তুই বারবার মিডেল ক্লাস কথাটা বলে সুহায়লাকে ইনসাল্ট করছিস।”
-” মিডেল ক্লাস কে মিডেল ক্লাস বলবো না তো হাই ক্লাস বলবো নাকি?”
-” মুখে লাগাম লাগা তানভীর। সুহায়লা তোর ওয়াইফ। ওকে সম্মান দিয়ে কথা বল।”
-” দেখো বাবা, বিয়ে করতে জোর করেছো তাই বিয়ে করেছি। তাও এমন মেয়েকে বিয়ে করেছি যার সাথে আমার স্ট্যাটাস কোনো দিক দিয়েই যায় না। কেউ যখন আমাকে জিজ্ঞেস করবে তোমার শ্বশুড় কি করে তখন আমি কি বলবো? আমার শ্বশুড় এলাকার মাঝারি একটা দোকানে বসে বিস্কিট, চানাচুর বিক্রি করে। মেয়ের বড় ভাই করে? সে একটা প্রাইভেট ফার্মে ত্রিশ হাজার টাকার জব করে। প্রতিদিন লোকাল বাসে করে ঝুলতে ঝুলতে যায় আবার ঝুলতে ঝুলতে বাসায় ফিরে আসে। থাকে কোথায়? বাসাবো তে পয়ত্রিশ বছরের পুরোনো ভাঙা চোরা একটা বাড়িতে থাকে। মেয়ে কোথায় পড়াশোনা করে? ইডেনে। সে যদি ঢাকা ভার্সিটিতে পড়তো তবু নাহয় নিজের মনকে একটা বুঝ দিতে পারতাম যে বিদেশ থেকে গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করা একটা ছেলের সাথে ঢাকা ভার্সিটিতে পড়ুয়া একটা মেয়ে কিছুটা ম্যাচ হয়। এই মেয়ের সাথে আমার কোনোদিক দিয়েই ম্যাচ হয়না। জোর করে বিয়ে করিয়েছো , এখন দয়া করে আমি তাকে মিডেল ক্লাস বললাম না ইনসাল্ট করলাম এসব ব্যাপারে কোনো কথা বলতে এসো না। এই নয়ন, আমার নাস্তা উপরে বেড রুমে দিয়ে আসো। আমি ওখানেই খাবো।”
বলেই তানভীর হনহন করে চলে গেলো। নয়ন, আর বাকি কাজের মেয়ে দুটো বিস্ফোরিত চোখে একবার তানভীরের চলে যাওয়া দেখছে আবার সুহায়লার দিকে তাকাচ্ছে। ফরহাদ সাহেব প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে চেয়ারে বসে আছেন। সুহায়লার চোখের পানি আর বাঁধ মানছে না। সে ছুটে চলে গেলো দোতলায়। অন্য রুমে যেয়ে গেট আটকে দুহাতে মুখ ঢেকে চিৎকার করে কাঁদছে। এতটা অপমানিত তাকে হতে হবে এটা সে কল্পনাও করতে পারেনি। তার বাবা ভাইকে পর্যন্ত ছাড় দিয়ে কথা বলেনি তানভীর। নাহ্, এই বাড়িতে থাকা কোনো ভাবেই সম্ভব না যেখানে ওর পরিবারের লোকদের নূন্যতম সম্মান দেয়া হবে না। সে আজই ফিরে যাবে বাবার বাসায়।
দরজায় ধাক্কারআওয়াজ পাচ্ছে সুহায়লা। বাহির থেকে কারো গলার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে,
-” সুহায়লা গেটটা খুলো প্লিজ।”
চোখ মুছে ফ্লোর ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো সুহায়লা। গেট খুলে দেখে ফাহিমের বউ নিশাত এসেছে।
তানভীর বসে বসে ডিম সিদ্ধ খাচ্ছে। অনেক সময় নিয়ে আস্তে আস্তে ডিম চিবুচ্ছে তানভীর। ফাহিম বিরক্তভরা মুখ নিয়ে তানভীরের ডিম খাওয়া দেখছে।
-” আমি তোকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি তানভীর?”
-” নাস্তা করেছিস?”
-” তোর কি মনে হচ্ছে আমি তোর সাথে ফাযলামি করছি?”
-” হ্যাঁ তাই মনে হচ্ছে। কারন তুই একটা খারাপ মেয়ের সাপোর্ট টানছিস।”
-” তুই খারাপ মেয়ে কেনো বলছিস ওকে? কি খারাপ দেখলি তুই ওর মধ্যে?”
-” টাকার জন্য যে মেয়েরা বিয়ে করে তারা তো খারাপই। নষ্ট পাড়ার মেয়ে আর এদের মধ্যে পার্থক্য কি জানিস? নষ্ট পাড়ার মেয়েরা টাকার বিনিময়ে বিয়ে ছাড়াই অন্যপুরুষের সাথে রাত কাটায় আর সুহায়লার মতো মেয়েরা বিয়ে করে তাদের স্বামীর সাথে টাকার লেনদেন করে। আজকে আমি ফকির হয়ে যাই অথবা আমার চেয়ে পয়সাওয়ালা কাউকে পাক তখন দেখবি আমাকে ডিভোর্স দিতে এই মেয়ে দ্বিতীয়বার চিন্তা করবে না।”
-” সবাইকে একরকম কেনো ভাবছিস তানভীর?”
-” সবাই একরকমই।”
-” তোর মা এমন ছিলো দেখে কি তুই সুহায়লাকেও একইরকম মনে করবি?”
-” শুধু ঐ মহিলা কেনো? তোর এক্স গার্লফ্রেন্ড তমা, সেও তো একই কাজ করেছিলো।”
-” সেটা আরো দশ বছর আগের ঘটনা তানভীর। সেসব কিছু মন থেকে আমি কবেই মুছে ফেলেছি।”
-” কতটা কষ্ট পেয়েছিলি তুই তোর মনে আছে? কতদিন তুই ডিপ্রেশনে ছিলি।”
-” তুই আমার ব্যাপারটার সাথে তোর ব্যাপারটা কেনো মিলাচ্ছিস তানভীর? ঘটনা ঘটেছিলো আমার সাথে। সেই আমি সেসব ঘটনাবাদ দিয়ে দিয়েছি। আর তুই কিনা এখনও এগুলো মনে নিয়ে বসে আছিস? সুহায়লার সাথে একটাবার ভালো করে কথা বলে দেখ। তাহলেই তুই বুঝতে পারবি ও কেমন। শুধু শুধু তোর মা আর তমার কথা মাথায় রেখে নিজেদের রিলেশন কেনো কমপ্লিকেটেড করছিস?”
-” রিলেশন শুরু থেকেই কমপ্লিকেটেড। নতুন করে আর কি কমপ্লিকেট করবো?”
-” কেমন যুক্তি দেখাচ্ছিস তুই এসব? মেয়েটার জীবন তুই এভাবে নষ্ট করতে পারিস না।”
-” এ সমস্ত মেয়েদের জীবন কখনো নষ্ট হয় না। এদের জীবন সোনায় বাঁধানো থাকে। এসব বাজে মেয়েরা একজনকে ছাড়বে অন্যজনকে ধরবে এটাই তাদের রুলস।”
-” সেই কখন থেকে বাজে মেয়ে বাজে মেয়ে বলেই যাচ্ছিস । প্রস্টিটিউটদের সাথে তুই তোর ঘরের বউকে তুলনা করছিস কেনো? সুহায়লা তোর ওয়াইফ। ওকে রেসপেক্ট দিয়ে কথা বল তানভীর।”
-” ওর যা প্রয়োজন ওকে সেটাই দেয়াহবে। ওর টাকার দরকার ওকে টাকার উপরই আমি রাখবো।”
ফাহিমের মেজাজ প্রচন্ড খারাপ হয়ে গেছে তানভীরের উপর। আর কোনো কথা বলতে রুচি হচ্ছে না তার। সেখান থেকে উঠে চলে এলো ফাহিম। দোতালার শেষ মাথার রুমে এসেছে ফাহিম। এসে দেখে অঝোরে কাঁদছে সুহায়লা। নিশাত একহাতে সুহায়লার কাঁধ জড়িয়ে ধরে রেখেছে। নিশাতের মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে ভয়ানক ক্ষেপে আছে সে। ফাহিমকে দেখা মাত্রই তার হাত টেনে বের করে নিয়ে আসলো অন্যরুমে।
-” কি ব্যাপার? এমন টানাটানি করছো কেনো?”
-” তোমার বন্ধুএকটা জানোয়ার ফাহিম। এমন একটা জানোয়ারের সাথে এই ভালো মেয়েটাকে বেঁধে দিয়ে তুমিও জানোয়ারের মতই কাজ করেছো। তুমি জানো তোমার বন্ধু গতরাতে মেয়েটার উপর কেমন টর্চার করেছে? তারমধ্যে সে তার বউয়ের সাথে ডিল করেছে। সুহায়লা তার শারিরীক চাহিদা মেটাবে বিনিময়ে সে সুহায়লাকে টাকা দিবে। ওর যত টাকা প্রয়োজন সব দিবে।”
-” এসব বলেছে তানভীর?”
-” হ্যাঁ বলছে। তোমাকে আমি তখন না করেছিলাম এই লোককে জোর করে বিয়ে করিও না। এই লোক তার বউকে জীবনেও সম্মান দিবে না। দেখলে তো কি শুরু করেছে তোমার বন্ধু?”
ফাহিম কোনো উত্তর দিলো না। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো সে মাথা নিচু করে।
-” সুহায়লা তার বাবার বাড়ি ব্যাক করতে চাচ্ছে। তোমার বন্ধুকে ডিভোর্স দিবে ও।”
মুখ তুলে তাকালো ফাহিম।
-” ডিভোর্স দিবে মানে কি? গতকাল মাত্র বিয়ে হলো আর আজই ও ডিভোর্স দিতে চাচ্ছে?”
-” হ্যাঁ ঠিকই তো বলেছে। ওর জায়গায়আমি থাকলে গতরাতেই তোমার বন্ধুর মুখে থুঁতু মেরে চলে আসতাম। এই মেয়ে তো তবুও একরাত ছিলো। কতবড় সাহস জানোয়ারটার যে বাপ ভাই তুলে অপমান করে। মিডেল ক্লাস হয়েছে তো কি হয়েছে? উনারা কি মানুষ না? তোমার বন্ধু হাই সোসাইটির লোক। কই তার মধ্যে তো আমি নূন্যতম শিক্ষা বা মনুষ্যত্ব দেখতে পাইনা। ও চলে গেলেই ভালো হবে আর নয়তোসারাজীবন ধুঁকে ধুঁকে মরতে হবে।”
-” নিশাত তুমি জানো তানভীরের পাস্ট কতটা খারাপ ছিলো।”
-” এইএক পাস্টের দোহাই আর কত দিবে ফাহিম? ২০ বছর আগের পুরোনো ঘটনাকে আর কত এক্সকিউজ বানাবে তুমি?”-”
-” ও অনেক সাফার করেছে নিশাত।”
-” তমার সাথে ব্রেকআপ হওয়ার পর সাফার তো তুমিও করেছিলে। বলতে গেলে অনেকটা পাগল হয়ে গিয়েছিলে তুমি। কই তুমি তো তানভীর ভাইয়ের মত এমন আচরন করোনা।”
-” সবাই একরকম হয়না নিশাত। একেকজনের মেন্টালিটি একেক রকম।”
-” এক্স্যাকটলি ফাহিম। তোমার বন্ধুর মেন্টালিটিই খারাপ। শুধু খারাপ না। জঘন্য খারাপ।”
-” ফাহিম…..”
দরজায় দাঁড়িে ডাকলেন ফরহাদ সাহেব। ঘাড় ঘুরিয়ে ফাহিম বললো,
-” জ্বি আংকেল?”
-” সুহায়লার সাথে কথা হয়েছে?”
-” সুহায়লা তো চলে যাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
-” তানভীর সকালে যা করেছে তা তো তোমরা দেখেনি।”
-” গতকাল রাতে ওদের ঘরে কি হয়েছে সেটাও তো আপনি দেখেননি আংকেল।”
-” কি হয়েছে নিশাত?”
-” নিশ াত চুপ করো। আংকেল সেসব কথা বাদ দেন। আমার মনে হয় সুহায়লাকে তানভীরের অতীত সম্পর্কে বলে দেয়াটাই বেটার হবে।”
-” মাত্রই তো বিয়ে হলো। আর এখনই এসব কথা?”
-” এছাড়া কোনো উপায় দেখছি না আংকেল। সুহায়লা চলে গেলে নিশ্চয়ই ভালো হবে না ব্যাপারটা।”
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here