বর্ষণের সেই রাতে পর্ব ২৮

#বর্ষণের সেই রাতে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ২৮
.
কিছুক্ষণ স্হির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার পর অনিমার মস্তিষ্ক ওকে ধীরে ধীরে জানান দিলো যে ওর চোখের সামনে ওর বাবার মৃতদেহ ঝুলছে। তখনি ধীরে ধীরে নিশ্বাস ভারী হয়ে উঠল ওর। ” আব্বু’ জোরে চিৎকার করে উঠল অনিমা। অনিমার আওয়াজ শুনে মিস্টার রঞ্জিত পেছন ঘুরে তাকালো। অনিমার একদৃষ্টিতে ঝুলন্ত লাশটার দিকে তাকিয়ে আছে, ওর শরীর অসার হয়ে উঠছে। বাইরে জোরে বজ্রপাত হচ্ছে, আকাশে মেঘেদের মধ্যে তান্ডব চলছে আর অনিমার মনেও, ওর কিশোরী মন এতোবড় ধাক্কা নেওয়ার জন্যে মোটেই তৈরী ছিলোনা। মিস্টার রঞ্জিত এগিয়ে এসে বাঁকা হেসে বললেন

— ” এই তাহলে ওর মেয়ে?”

অনিমার হাত ধরে রাখা লোকটা বলল

— ” জ্বী স্যার, পালানোর চেষ্টা করছিলো ভাগ্যিস আমারা পেছনের দিনটায় ছিলাম।”

— ” পালিয়ে আর যেতো কোথায়? আমাদের কাছ থেকে পালানো এতো সহজ নয়।”

ওদের মধ্যে একজন বলে উঠল,

— ” স্যার মেরে দেই একে? ”

রঞ্জিত চৌধুরী দৃঢ় কন্ঠে বললেন,

— ” নাহ এখানে নাহ। তাহলে সবাই বুঝে যাবে এটা মার্ডার। এখান থেকে নিয়ে যেতে হবে ওকে।”

মার্ডার শব্দটা শুনেই অনিমার মাথায় আবারো ধাক্কা লাগলো। ওর মস্তিষ্ক আবারো ওকে বলছে ওর সামনে ওর আব্বুর লাশ ঝুলছে, ওর আব্বুর। ওর আব্বু আর নেই। ও উঠে ওর হাসান কোতয়ালের দিকে যেতে চাইলো কিন্তু ওই লোকটা ওর হাত ছাড়লোনা। অনিমা কাদঁতে কাঁদতে বললো,

— ” আব্বুহ! আব্বুর কষ্ট হচ্ছে, প্লিজ নামিয়ে দিন আব্বুকে, আব্বু মরে যাবে।”

মিস্টার রঞ্জিত অনিমার কাছে এসে বলল,

— ” তোমার আব্বুর কোনো কষ্ট হচ্ছেনা। আর মরেও যাবেনা কারণ তোমার আব্বু মরেই গেছে, দেখো ভালো করে।”

অনিমা হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলল,

— ” মিথ্যে বলছেন আপনারা কিচ্ছু হয়নি আমার আব্বুর। আপনি মিথ্যে বলছেন। ছাড়ুন আমাকে প্লিজ।”

মিস্টার রঞ্জিত দুঃখ পাওয়ার ভান করে বলল,

— ” আহারে। খুব কষ্ট লাগে এই দৃশ্য দেখলে। কিন্তু আমরা কী করবো? এইসব লোকেরা বুঝতেই চায়না। এতোবার বললাম থেমে যান, থেমে যান। কিন্তু এরা শোনেই না। ওনার এই একরোখামী নিজের প্রাণটা তো দিলোই আর বাচ্চা মেয়েটাকেও এখন ভূগতে হবে।”

অনিমা এবার চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলল,

— ” প্লিজ আমাকে যেতে দিন আব্বুর কাছে, প্লিজ।”

মিস্টার রঞ্জিত অনিমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,

— ” চিন্তা করোনা মা। তোমাকে তোমার আব্বুর কাছে পাঠানোরই ব্যাবস্হা করছি আমরা, চলো।”

অনিমা চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলল,

— ” ছাড়ুন আমাকে, আব্বুহ।”

এবার রঞ্জিত চৌধুরীর ধমক দিয়ে বললেন,

— ” ঐ চুপ! ঘ্যান ঘ্যান করেই যাচ্ছে তখন থেকে। এই এটাকে নিয়ে বাইরে চল। আর দুজন এখানের ধস্তাধস্তি আর বাকি প্রমাণগুলো মিটিয়ে তারপর আয়।”

এরপর ঐ লোকগুলো অনিমাকে টেনে নিয়ে যেতে নিলেই অনিমা বলল,

— ” নাহ আমি আমার আব্বুকে ছেড়ে যাবোনা, আমাকে ছাড়ুন প্লিজ।”

কিন্তু অনিমার কোনো কথা না শুনেই ওকে নিয়ে বাইরে চলে এলো। বাইরে বৃষ্টি আর বজ্রপাত থামার নামই নিচ্ছেনা। অনিমা মাথায় এসব কোনো চিন্তা নেই যে ওর সাথে কী হতে চলেছে ওর মাথায় শুধু চলছে যে ওর আব্বুকে ও ভেতরে রেখে এসছে। আর সেইজন্যেই সমানে চিৎকার করে কেঁদে চলেছে ও মিস্টার রঞ্জিত এবার ওনার ছেলেগুলোকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

— ” একে গোডাউনে নিয়ে যা, যা খুশি কর কিন্তু কাল সকালে যেনো ও বেঁচে না থাকে। অনেককিছু যেনে গেছে ও, তাই ওকে বাঁচিয়ে রাখা যাবে না।”

ওরা সম্মতি জানিয়ে অনিমাকে টেনে গাড়িতে তুললো। অনিমার কান্নাকাটি, আকুতিমিনতি কোনোকিছুই ওর ওপর এফেক্ট ফেললো না। বেশি চিৎকার চেচামেচি করছিলো বলে ওর হাত মুখ বেধে দিলো। অনিমা নিঃশব্দে চোখের জল ফেলছে। নিজের চোখের সামনে নিজের বাবার মৃত্যু দেখার পর সন্তানের মানসিক পরিস্হিতি ধারণা করাও অসম্ভব। এই মুহূর্তে ছটফট করার মতোও মানসিক শক্তি নেই অনিমার মধ্যে। ওকে গোডাউনে নিয়ে এক কর্ণারে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো। অনিমা একটু গুটিয়ে বসে অসহায়ভাবে তাকিয়ে রইলো লোকগুলোর দিকে। ও ভাবতেও পারছেনা এদের মনে কী চলছে। ওদের মধ্যে একজন বললো,

— ” বহুত দিন পর এরকম জিনিস পেলাম ভাই। এতো পুরো এটম বোম।”

আরেকজন সায় দিয়ে বলল,

— “সত্যি ভাই আজ রাতে ফুলটু মাস্তি হবে।”

এদের কথার ধরণ শুনেই অনিমা খুব ভালোকরেই বুঝতে পারছে ওর সাথে কী হ‍তে চলেছে কিন্তু ওর মধ্যে কোনো অনুভূতি কাজ করছেনা। ওর চোখের সামনে শুধু ওর আব্বুর মুখটাই ভেসে উঠছে। ওর আব্বু আর নেই এই কথাটাই ওর মস্তিষ্কে বারবার বাড়ি মারছে। ওর মস্তিষ্ক আর এই চাপ সহ্য করে উঠতে পারলোনা। ধীরে ধীরে নেতিয়ে পরতে শুরু করলো আর একপর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে গেলো। অনিমাকে মাটিতে ঐভাবে লুটিয়ে পরতে দেখে ওদের মধ্যে একজন বলল,

— ” আরে এতো অজ্ঞান হয়ে গেলো।”

আরেকজন ভ্রু কুচকে অনিমাকে তুলে দেয়ালে হেলান দিয়ে শুইয়ে দিয়ে বলল,

— ” যা বাকেটে করে পানি নিয়ে আয়। দেখি কতোক্ষণ অজ্ঞান থাকে।”

লোকটা যেই পানি আনতে যাবে তার আগেই গাড়ির হর্নের আওয়াজ পেলো। ওরা অবাক হয়ে বলল,

— ” এখন আবার কে এলো?”

হঠাৎ ওদের মধ্যেই একজন এসে হাফাতে হাফাতে বলল,

— ” রিক স্যার এসছে।”

এটা শুনেই ওরা সবাই ছুটলো গেটের দিকে। গিয়ে দেখে রিক আসছে। ওদের একজন রিকের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,

— ” আরে স্যার আপনি এখানে?”

রিকের ওদের সবাইকে একজায়গায় দেখে ভ্রু কুচকে বলল,

— ” কী ব্যাপার? সব একজায়গায় যে? আজ আবার কোনো মেয়েকে তুলে নিয়ে এসছিস নাকি?”

লোকটা মাথা নিচু করে বলল,

— ” না আসলে রঞ্জিত স্যার একটা মেয়েকে মারতে বলেছে তাই..। স্যার মেয়েটা কিন্তু সেই আপনি চাইলে…”

রিক রাগী চোখে তাকাতেই লোকটা থেমে গেলো। রিক শক্ত গলায় বলল,

— ” আমার এসব ফালতু ইন্টারেস্ট নেই। হোয়াটএভার দুটো ড্রাগসের বস্তা বের করে রাখ সকালে ক্লাইন্ট আসবে।”

লোকটা ভীত হয়ে হকচকিয়ে বলল,

— ” জ্বী স্যার।”

বলেই ওরা বস্তা বার করতে চলে গেলো। রিক হেটে হেটে গোডাউনটা দেখতে লাগল। দেখতে দেখতে হঠাৎ অনিমাকে দেখলো, মেয়েটার পেছন সাইড দেখা যাচ্ছে। রিক বুঝলো এই সেই মেয়ে ও ইগনোর করে যেতে নিয়েও থেমে গেলো। কেনো জানিনা মেয়েটাকে পেছন থেকে দেখেই ওর মেয়েটার মুখ দেখার ইচ্ছে হলো। ও নিজের অজান্তেই ধীরপায়ে মেয়েটার দিকে এগিয়ে গেলো। মেয়েটার সামনে গিয়ে দেখে, মেয়েটার ভেজা চুলগুলো ওর মুখের ওপর পরে আছে। রিক এক হাটু ভেঙ্গে মেয়েটার সামনে বসে ওর মুখের চুলগুলো সরাতে গিয়েও থেমে গেলো। ও ভাবছে কী করছে ও এগুলো? কেনো করছে? পাগল টাগল হয়ে গেলো নাকি? এসব ভেবে উঠে যেতে নিয়েও আবার তাকালো মেয়েটার দিকে। মুখটাই তো দেখবে এতে ক্ষতি কী? এসব চিন্তা করে ও আলতো হাতে মেয়েটার মুখের ওপর থেকে চুলগুলো সরিয়ে দিলো। আর মেয়েটার মুখ দেখার সাথেসাথেই ওর চোখ স্হির হয়ে গেলো। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অনিমার দিকে, অনিমার সারামুখে বিন্দু বিন্দু পান জমে আছে, ওর হালকা গোলাপি ভেজা ঠোটগুলো ঠান্ডায় কাপছে, বড় বড় চোখের পাপড়িতে পানি জমে আছে, চুল বেয়ে বেয়ে পানি পরছে, হালকা কেঁপে কেঁপে উঠছে ও। রিক মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখছে মেয়েটাকে, এতোটা মায়ামাখানো কোনো মুখ হতে পারে? ওর চোখ সরাতেই ইচ্ছে করছেনা। কিছুক্ষণ পর ওই লোকগুলোর মধ্যে দুইজন এসে এইদৃশ্য দেখে থেমে গেলো। দুজনে দুজনের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে বলল,

— ” কীরে ভাই স্যার এর আবার কী হলো?”

আরেকজন দাঁত কেলিয়ে বলল,

— ” দেখ হয়তো আজ রাতের জন্যে নিয়ে যাওয়ার সখ হয়েছে।”

ওপর লোকটি ধমকির স্বরে বলল,

— “চুপ। স্যার শুনলে বারোটা বাজিয়ে দেবে। চল আয়।”

ওরা রিকের কাছে গিয়ে রিককে উদ্দেশ্য করে বলল,

— ” স্যার বস্তাগুলো নামিয়ে দিয়েছি।”

কিন্তু রিক একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অনিমার দিকে। একটু জোরে ডাকতেই রিকের হুস এলো, চমকে তাকিয়ে বলল,

— ” হ্ হ্যাঁ বল।”

লোকটা মাথা নিচু করে বলল,

— ” বস্তা নামিয়ে নিয়েছি।”

রিক নিজেকে সামলে একটু ইতস্তত করে বলল,

— ” অব্ হুম।”

ওরা যেতে নিলেই রিক থামিয়ে দিয়ে বলল,

— ” ঐ শোন।”

ওরা পেছন ঘুরে তাকালো, রিক অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” মেয়েটাকে কোথা থেকে এনেছিস বললি?”

ওরা একটু অবাক হলেও বলল,

— ” রঞ্জিত স্যার এর সব জানেন এর ব্যাপারে।”

রিক অনিমার দিকে তাকিয়েই বলল,

— ” তোরা এখন সবাই চলে যা এখান থেকে। আজ কাউকে এখানে থাকতে হবেনা।”

ওদের একজন হকচকিয়ে বলল,

— ” কিন্তু স্যার রঞ্জিত স্যার তো বলেছেন ওকে…”

রিক শক্ত গলায় বলল,

— “আমি যেতে বলেছি তোদের।”

ওরা জানে এখন আর কথা বাড়ালে রিক ওদের এখানেই মেরে পুতে দেবে তাই কথা না বাড়িয়ে সবাই চলে গেলো। ওরা চলে যেতেই রিক ওর ফোন বের করে রঞ্জিত চৌধুরীকে কল করল, কল রিসিভ করতেই রিক বলল,

— ” আজকে যেই মেয়েটাকে গোডাউনে পাঠিয়েছো ও কে?”

মিস্টার রঞ্জিত চৌধুরী ভ্রু কুচকে বললেন,

— ” কেনো? সেটা দিয়ে তোমার কী কাজ?”

রিক বিরক্ত হয়ে বলল,

— ” উফ ড্যাড। যেটা জিজ্ঞেস করছি বলো।”

মিস্টার বুঝতে পারলেন ছেলে সিরিয়াস মুডে আছে তাই বললেন,

— ” ঐ যে হাসান কোতয়াল এর কথা বলেছিলাম না তার মেয়ে।”

রিক সোজাসাপ্টা ভাবে বলল,

— ” ওকে মারার প্লানটা ক্যান্সেল। আর ওকে আমি ছেড়ে দিচ্ছি।”

মিস্টার রঞ্জিত অবাক হয়ে বলল,

— ” কী বলছো কী তুমি? হাসানের খুনের ওই একমাত্র সাক্ষি। ওকে বাঁচিয়ে রাখা যাবে না।”

রিক শক্ত গলায় বলল,

— ” শধু সাক্ষী থাকলেই হয়না প্রমাণও থাকতে হয়।”

মিস্টার রঞ্জিত বুঝতে পারলেন যে তার ছেলে কী বলতে চাইছে তবুও বললেন,

— ” কিন্তু..”

রিক মিস্টার রঞ্জিতকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,

— ” কোনো কিন্তু নয় ড্যাড। আমার যা বলার বলে দিয়েছি। বাকি খেলাটা তোমারা সাজাও।”

এটুকু বলে ফোন রেখে দিলো রিক। তারপর অনিমার দিকে তাকালো। তারপর বাকা হেসে বলল,

— ” সো স্যাড বেবি কী তুমি আমার নজরে পরে গেছো। এখন আমিও তোমাকে আমার হাত থেকে বাঁচাতে পারবো না।”

এদিকে ফোন রেখে রঞ্জিত চোধুরী কবির শেখকে সবটা খুলে বললেন। সবটা শুনে কবির শেখ কিছুক্ষণ ভাবলেন। তারপর ওনার সেই হাসি দিয়ে বললেন,

— ” আমার একটা পরিকল্পনা আছে জিজু।”

____________________

রোদের আলো চোখে লাগতেই ধীরে ধীরে চোখ খুলে তাকালো অনিমা। চোখ খুলে নিজেকে বন্ধ করে নিজেকে সেই গোডাউনে আবিস্কার করলো। মাথা চেপে ধরে উঠে বসতেই ওর কালকে রাতের সব কথা মনে পরলো। আর ওর আব্বুর কথা মনে পরতেই কেঁদে দিলো ও। ওকে এখানে তো মেরে ফেলতে এনেছিলো তাহলে ছেড়ে দিলো কেনো? আর ওরাই বা কোথায়? এসব ভাবার মানসিকতা নেই এখন অনিমার, হঠাৎ কিছু মনে হতেই ও দেয়াল ধরে উঠে দাড়ালো। তারপর অনেক কষ্টে বাইরে বেড়িয়ে রাস্তাটা খুব সহজেই চিন্তে পারলো কারণ এই রাস্তাটা দিয়েই ও কলেজ যেতো। শরীর খুব দুর্বল লাগছে ওর কিন্তু তবুও দৌড় লাগালো বাড়ির উদ্দেশ্যে ওর আব্বুর কাছে যে ওকে যেতেই হবে। ওর মন শুধু বলছে একটা জাস্ট একটা মিরাক্কেল হোক আর ও যাতে গিয়ে দেখে ওর বাবা একদম ঠিক আছে। দু তিনবার রাস্তায় হোচট খেয়ে পরেও গেছে তবুও দৌড়চ্ছে ও। পা কেটে রক্তও পরছে কিন্তু ওর হুস নেই। আধা ঘন্টারো বেশি সময় লেগেছে বাড়ি প‍ৌছতে। বাড়ির গেইটে ঢুকেই অনিমা চমকে গেলো কারণ বাড়িতে অনেক ভীর। প্রেস আর পুলিশ ও আছে। ওদের ঠেলে সরিয়ে ভেতরে গিয়ে অনিমা থমকে গেলো কারণ হাসান কোতয়ালের বডি নিচে শুইয়ে রাখা হয়েছে।অার তার পাশে ওর মামা, মামী আর অর্ক বসে আছে অনিমা তারচেয়েও বেশি অবাক হয়েছে রঞ্জিত চৌধুরীকে এখানে দেখে। তবুও ওর আব্বুর দিকে তাকিয়ে আছে। ওর মন এখোনো বলছে যে ওর আব্বু এক্ষুনি উঠে বলবে ‘মামনী সারারাত কোথায় ছিলে? জানো কতো টেনশন করেছি? এমন কেউ করে?” অনিমা ওর হাসান কোতয়াল এর সামনে বসে কাঁদতে কাঁদতে বলল,

— ” আব্বু? এই আব্বু? প্লিজ ওঠো! আমি না কাল রাত থেকে কিচ্ছু খাইনি জানো। তুমিতো জানো তুমি না খাইয়ে দিলে আমি খেতে পারিনা প্লিজ ওঠো, আমার খিদে পেয়েছে তো।”

এরকম নানা কথা বলার পরেও যখন উঠলোনা ইচ্ছেমতো ডাকতে লাগল ওর আব্বুকে, ওর মামা মামী ওকে বোঝাচ্ছে ওর আব্বু আর নেই, কিন্তু ও শুনছেই না। অনিমা পাগলের মতো চিৎকার করে কেঁদে যাচ্ছে। একপর্যায়ে ও নিজেই শান্ত হয়ে গেলো, একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ডেডবডিটার দিকে। কিছুক্ষণ পর এক অফিসার বলল,

— ” ইট’স মাইট বি সুইসাইড।”

সুসাইড শব্দটা শুনেই অনিমা চোখ মছে উঠে দাড়লো তারপর ঐ অফিসারের কাছে গিয়ে বলল,

— ” এটা সুইসাইড নয় অফিসার আমার আব্বুকে মার্ডার করা হয়েছে।”

অফিসার অবাক হয়ে বললেন,

— ” হোয়াট? বাট কে করেছে?”

অনিমা রঞ্জিত চৌধুরীর দিকে ইশারা করে বললেন,

— ” উনি! উনি খুন করেছে আমার আব্বুকে।”

মিস্টার রঞ্জিত অবাক হওয়ার ভান করে অনিমার কাছে এসে বলল,

— ” কী বলছো কী মামনী? আমি কেনো তোমার আব্বুকে মারতে যাবো?”

অনিমা মিস্টার রঞ্জিতকে কিছু বলভে তার আগেই অফিসার বললেন,

— ” আপনি কীসের ভিত্তিতে একজন মিনিস্টিরের বিরুদ্ধে এতোবড় এলিগেশন আনছেন? আপনার কাছে কোনো প্রমাণ আছে?”

অনিমা চোখ মুছে বলল,

— ” আমি নিজেই আব্বুর মৃত্যু নিয়ে মিথ্যে বলবো? আরে আমি নিজের চোখে দেখেছি। ওরা তো আমাকেও মারার জন্যে তুলে নিয়ে গেছিলো।”

পেছন থেকে অনিমার মামা বলে উঠলেন,

— ” কী বলছিস কী তুই অনিমা? তুই কীকরে দেখবি? তুইতো কাল রাতে আমাদের বাড়িতে ছিলি। মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি তোর?”

অনিমা অবাক হয়ে তাকালো ওর মামার দিকে। মামা এসব কী বলছে? কেনো বলছে? ও তো সারারাত গোডাউনেই পরে ছিলো, তাহলে মিথ্যে কেনো বলছে মামা? এদিকে মিস্টার রঞ্জিত আর কবির শেখ একে ওপরের দিকে তাকিয়ে রহস্যময় হাসি দিলো।
.
#চলবে…
.
(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here