#বর্ষার_এক_রাতে
#সাদিয়া
১৮
রান্নাবান্না শেষ করে তূবা যখন উপরে গেল তখন আহফিনের ঘরের দরজা বন্ধ ছিল। তূবা দরজায় ধাক্কা দিতে দিতে আহফিন কে ডাকতে লাগল রাতের খাবার খাওয়ার জন্যে।
“খেয়ে নিন। আমাকে আজকে বাসায় চলে যেতে হবে আমাকে। দরজা খুলে নিচে আসুন।”
তূবা কে আজ রাতে বাড়ি ফিরতে হবে শুনে আহফিনের রাগ বেড়ে গেল। দাঁত কিড়িমিড়ি করে সে দরজা খুলে বের হলো। লাল বড়বড় চোখ করে সে তূবা কে বলল
“এতদিন তো তোমার যেতে হয়নি রাতের বেলায়। এখন কেন যেতে হয়? নাকি রনি বাসায় পৌছে দিবে? ও তো আবার ভালো হয়ে গেছে।” বলে আহফিন অন্যদিকে মুখ ফিরাল।
“ছিঃ কি বলছেন আপনি এই গুলি আহফিন? আপনার চিন্তাভাবনা এমন কেন? কি হয়ে গেল আপনার?”
“আমার চিন্তা ভাবনা পাল্টাই নি তোমার টা পাল্টে গেছে তূবা। তাই রনি কে তোমার এখন মহৎ মনে হচ্ছে।”
“একটা মানুষ কি পরিবর্তন হয় না? ভালো হওয়া কি দোষের?”
আহফিন দ্বিগুণ রেগে গিয়ে বলল
“আরে দোষের কেন হবে? রনি তো এখন ধোয়া তুলসি হয়ে গেছে। তো যাও ভালো মহৎ মানুষের কাছেই যাও।”
আহফিনের মুখে এমন একটা কথা তূবা কখনো আশা করেনি। আহফিনের এমন নিকৃষ্ট রকমের কথাটা কি ইঙ্গিত করে তা জানে। বারবার তার কানে ভাসছে আর শরীর টা জ্বালিয়ে দিচ্ছে কথাটা। তূবা রেগে গিয়েছে খুব রকমের।
“আপনার মতো এমন নিচ মনমনোসিকতার মানুষ আমি আগে কোনো দিন দেখি নি। আপনার সাথে থাকা কোনো ভাবেই হবে না আমার। আমাকে নিয়ে এতটা বাজে মন্তব্য যে মনে পোষতে পারে তার সাথে আর যাই হোক সংসার হবে না।”
গড়গড় করে কথা গুলি বলে তূবা দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে শুরু করেছে।
আহফিন রেগে গিয়ে বলতে লাগল “হ্যাঁ যাও যাও আমি তো ভালো না। এখন আমি খারাপ হয়ে গেছি না? এখন তো রনি ভালো হয়ে গেছে। ওর কাছেই তো যাবে। যাও।”
আহফিন কপাল ডলতে ডলতে পাশ ফিরে তাকাল। একটু পর যখন দেখল তূবা সত্যি সত্যি ব্যাগ নিয়ে চলে যাচ্ছে তখন আহফিন তাকে পিছন থেকে ডাকল। তূবা আর পিছু না ফিরে বেড়িয়ে গেল। তার ডাক যখন তূবা শুনেনি রেগে মেগে সে দেওয়ালে একনাগাড়ে তিনটা ঘুষি মেরে ঘরে ঢুকে পরল। রাগ টা সে কিছুতেই লাগামে আনতে পারে না। সাপের মতো ফুসফুস করে নিশ্বাস ফালছে আহফিন।
তূবা বাড়ি থেকে বের হয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে হাউমাউ করে কাঁদছে। নীরব রাস্তায় তার কান্না বারবার শুনা যাচ্ছে। অবুঝের মতো কেঁদেই যাচ্ছে তূবা।
—–
এই দুই দিনের মাঝে না তূবা একবার আহফিন কে কল দিয়েছে। আর না আহফিন তূবা কে দিয়েছে। ২ দিনের মাঝে ১ টা মিনিট কেউ কারো সাথে কথা বলে নি আর না ১ বার দেখা হয়েছে। আহফিন কল দেয় নি বলে তূবা কল দেয় নি। তূবা দোষ করেও কল দেয় নি তাকে তাই সেও তূবা কে কল করে নি। অনেকবার ডায়ালে নাম্বার টা নিয়েও আহফিন কেটে দিয়েছে। ভেতরে তার একটা রাগ এখনো রয়েই গেছে। তূবা তো রাগে আহফিনের সাথে থাকতে পারবে না সিদ্ধান্ত নিয়েই নিয়েছে। কিন্তু তবুও মন সায় দিচ্ছে না। দম আটকে আটকে আসছে।
—-
তুসির ঔষধ নিতে ৩ দিনে আজ তূবা ঘর থেকে বের হয়েছে। মুখটা চিন্তায় একদম শুকনো হয়ে গেছে। তূবা কে অসুস্থ মনে করে রনি এগিয়ে গেল তার দিকে।
“কিরে তূবা তোর কি শইল (শরীর) ভালা না?”
“….
“তূবা রে?”
“ভালো আছি।”
“তাইলে মুখডা এমন লাগদাছে কেরে?”
“জানি না।”
“তোর আর তোর হবু জামাইয়ের মধ্যে কোনো ঝগড়া হইছে?”
“….
“কিরে?”
“না।”
“আমারে নিয়ে কাইঝা করছোস?”
“না।”
“তাইলে তোর কি হইছে কইবি তো।”
হঠাৎ রনির জোরে কথা বলায় তূবা ভয় পেয়ে গেল।
“আমি ভালো আছি। তুমি সরো।”
“….
“কি হলো?”
“তূবা আমি তোরে সুখি দেইবার চাই। এর লাইগা আমি নিজের ভালোবাসা রে কোরবান দিছি। তোরে অসুখি দেখবার লাইগা না। কথাডা মাথায় রাহিছ।”
রনির চলে যাওয়ার দিকে তূবা অপলক তাকিয়ে রইল। এ কোন চক্রে আটকে গেল সে?
বাসায় ফিরার পর তূবার ফোনে কল এলো। স্কিনে যখন “আহফিন” নাম টা ভেসে উঠল তা চোখে পড়তেই তূবার বুক টা ধুক করে উঠল। নিশ্বাসের গতি বেড়ে গিয়েছে। প্রথম প্রথম যে অনুভূতি হতো ঠিক সেই অনুভূতি হতে শুরু করেছে বুকের ভেতর। কাঁপা হাতে তূবা কল টা রিসিভ করল। ওপাশ থেকে গম্ভীর গলায় শুনা গেল।
“বাসায় এসো।”
তূবার ভেতরের অনুভূতি টা কেমন নির্জীব হতে শুরু করল রাগে। যেন তার ভেতরের অনুভূতি টা কে রাগ টবকে যেতে চাইছে। তবুও পদে পদে বাঁধা খাচ্ছে।
তূবা কঠিন গলায় জানাল।
“আমি আসতে পারবো না।”
আহফিন চিৎকার করে বলল “তুমি আসবে কি না বলো।”
তূবা ৫ সেকেন্ড ভেবে বলল “আচ্ছা।” বাড়তি আর কিছু না বলে কল টা কেটে দিল। একটু পর তৈরি হয়ে সে বাসা থেকে বের হলো।
আহফিন আর তূবা সামনাসামনি বসে আছে সোফায়। কিন্তু দুজনই চুপ। আহফিন নীরবতা ভেঙ্গে জিজ্ঞেস করল
“তুমি এখনো রনির সাথে দেখা করো কিংবা কথা বলো?”
“….
“কি হলো তূবা?” বেশ শান্ত গলায় বলল আহফিন।
তূবার ভেতরের রাগ টা আহফিন কে সামনাসামনি দেখে কেমন মিলিয়ে গিয়েছে। এই মানুষটার থেকে দূরে থাকা তার কিছুতেই সম্ভব না। যা এই লোকটার সংস্পর্শে এলেই বুঝা যায়। তূবা এত না ভেবেই বলে উঠল “না।”
“মিথ্যে কথা। তুমি মিথ্যে বলছো তূবা। তুমি আজ একটু আগেই রনির সাথে কথা বলছিলে। রনি চলে যাওয়ার পরও তুমি তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলে। আমি নিজ চোখে দেখেছি সেটা তোমার বাসায় যাওয়ার সময়। তুমি কি চাও কি তূবা? কেন আমার সাথে মিথ্যে বলছো তুমি? উত্তর দাও।” গলা ফাটিয়ে আহফিন কথা গুলি বলল। তূবা অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে বসে রইল। সে জানে না কেন এটা বলল। সত্যি টা বললেই বা কি হতো। চুপ করে বসে রইল সে। তূবা কে চুপ থাকতে দেখে আহফিন রাগে কাঁচের টিটেবিল টা উল্টে ফেলে দিয়ে চলে গেল। নিজেকে আর সংযত করতে পারছে না সে। তূবা ভাঙ্গা কাঁচের টুকরোর দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে। এই কাঁচ তো আর জোড়া দেওয়া সম্ভব হবে না। সম্পর্কের বেলাতেও কি এমন টাই হয়? ভাবতে লাগল তূবা। গভীর ভাবে চিন্তা করছে।
আহফিন দরজা বন্ধ করে বিধ্বস্ত অবস্থায় মাথায় হাত দিয়ে বসল। কি করবে সে বুঝতে পারছে না। তূবার এমন পরিবর্তন হেলাফেলা ভাব আর নিতে পারছে না সে। ভেতর থেকে প্রতি নিয়ত আঘাত পাচ্ছে। রনির প্রতি তূবার এমন করার কারণ টা কিছুতেই মাথায় খেলছে না তার। কি এমন কারণ? কেন তার তূবা এমন হয়ে গেছে সে জানে না। আহফিন আজ ভীষণ অসহায়। ভীষণ! আহফিনের চোখ গুলি হঠাৎ ঘোলাটে হয়ে আসল..
চলবে♥