বস বর পর্ব ১৩+১৪

#বস_বর (পর্ব-১৩ ও ১৪)
পর্ব-১৩
Writer : Eti Chowdhury
.
টুং করে মেসেজ টোন বেজে উঠলো ইতির। ফোন হাতে নিয়ে তাকিয়ে রইলো সে।
রোদ ম্যাসেজ করেছে,
গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছি শুধু তোমার জন্য।
– তোমার বস_বর
ইতি কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। নিচে নামতেই দেখে রোদ গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে। ইতি কে দেখতেই গাড়ির দরজা খুলে দিলো সে। রোদ তার একটা হাত বাড়িয়ে দিলো ইতির দিকে। আর বলল, “আফটার ইউ মাই লেডি”।
ইতি রোদের হাতটা ধরা থেকে নিজেকে বঞ্চিত করতে পারলো না। তাই সে রোদের হাত ধরে গাড়িতে বসে পরলো। কেউ কোন কথা বলছে না। দুইজনেই নিশ্চুপ। রোদ ড্রাইভ করছে। গাড়ি যাচ্ছে কোন অজানা গন্তব্যে। আজ ইতি জানতেও চায় না রোদ তাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে। এই পথ যেখানে যাবে রোদের সাথেই ইতিও যাবে দূর অজানায়।
অনেক্ষণ কেউ কারো সাথে কোন কথা বলছে না। কি বলবে কেউ ভেবে পাচ্ছে। রোদ রেডিও ছেড়ে দিলো। রেডিওতে গান চলছিলো।


এ পথ যদি না শেষ হয়
তবে কেমন হতো তুমি বলোতো
যদি পৃথিবীটা স্বপ্নের দেশ হয়
তবে কেমন হতো তুমি বলোতো ।।

কোন রাখালের ওই ঘর ছাড়া বাঁশীতে,
সবুজের ওই দোল দোল হাসিতে ।।
মন আমার মিশে গেলে বেশ হয়
যদি পৃথিবীটা স্বপ্নের দেশ হয় ।।
তবে কেমন হতো তুমি বলোতো

নীল আকাশের ওই দূর সীমা ছাড়িয়ে,
এই গান যেন যায় আজ হারিয়ে
প্রাণে যদি এ গানের রেশ হয়,
পৃথিবীটা যদি স্বপ্নের দেশ হয় ।।
তবে কেমন হতো তুমি বলোতো

এ পথ যদি না শেষ হয়
তবে কেমন হতো তুমি বলোতো


গানটা যেনো ওদের জন্যই প্লে করা হয়েছে। কিছুক্ষণ পর গাড়ি একটা জায়গায় এসে থামলো।
গাড়ি থেকে নামতেই ইতির মন আরো ভালো হয়ে গেলো। এতো সুন্দর জায়গা। ঢাকার মাঝে এমন জায়গা আছে তা ইতি জানতই না। অবশ্য জায়গাটা ঢাকা নয় ঢাকার পাশেই। শহর থেকে কিছুটা দূরে। পরিবেশ দেখে আনমনে ইতির মুখে ফোসকে বেরিয়ে আসে,
– ওয়াওওওও
ইতির চোখে মুখে মুগ্ধতা দেখে রোদ বলে,
– আমাদের ফার্ম হাউজ।
– ওয়াট ? সত্যি আমাদের সরি মানে এটা আপনার ? রিয়েলি? ইটস সো বিউটিফুল।
– মায়ের অনেক শখের একটা জায়গাএটা। ছুটির দিনগুলো সে এখানেই কাটাতে পছন্দ করতেন। মা মারা যাওয়ার পর আর সেভাবে আসা হয়নি একা একা ভালো লাগতো না আসতে।
ইতি মুগ্ধ হয়ে দেখছে। অসম্ভব সুন্দর একটা জায়গা। ডুপলেক্স একটা বাড়ি। পাশে পুকুর। চারিদিকে জঙ্গলের মতো গাছ দিয়ে সাজানো। একপাশে একটা বিশাল গাছে ট্রি হাউজ বানানো। এতো শান্তি লাগছে দেখে ইতির। এতো সুন্দর যে ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। পুকুরে ঘাটলা করা। উফ ইতির মন চাইছে মন খুলে দৌড়া দৌড়ি করতে। পুকুরে নেমে যেতে।
রোদ বলে,
– চলো ভিতরে গিয়ে আগে ফ্রেস হয়ে নেই।
ইতি মাথা ঝুলিয়ে সম্মতি জানায়।
ডুপলেক্স বাড়িটাও খুব সুন্দর করে সাজানো। ইতি যত দেখছে ততই মুগ্ধ হচ্ছে। বাড়িটার দেয়ালে দেয়ালে সৌখিনতার ছাপ খুব সুন্দর ভাবে ফুটে উঠেছে। কেউ চোখ ফেরাতে পারবে না চারিদিকে এতো সৌন্দর্য্য।
দুজনেই ফ্রেস হয়ে নিলো। ইতি ফ্রেস হয়ে বের হয়ে দেখে রোদ নেই।
ইতির ফোনের টোন টা বেজে উঠে।
রোদ ম্যাসেজ পাঠিয়েছে।
-“ট্রি হাউজে অপেক্ষা করছি”।
ইতি ছুটে গেলো রোদের কাছে।
ট্রি হাউজে ডুকেই চোখে মুখে মুগ্ধতার ছাপ ফুটে উঠলো ইতি।
ছোট্ট একটা টেবিলে চারিদিকে মোম দিয়ে সাজানো। মাঝে ডিনার রাখা। রোদ একপাশে বসে আছে।
দুজনই একে অপরকে কিছু বলতে চাইছে কিন্তু পারছে না। ইতি বুঝতে পেরে নিজেই মুখ খুলে বলে,
– যা চলে গেছে তা না হয় পিছনেই থাক।
রোদ হাত সামনের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
– তাহলে কি বন্ধুত্বের হাতটা ধরা যায় না?
ইতি হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
– অবশিষ্ট পথটুকু বন্ধু হয়ে থাকাই যাক।
“সারাজীবনের জন্য থাকা যায় না”? মনে মনে বলছে রোদ। মুখে বলল না। অনেক কষ্ট দিয়েছে সে ইতিকে আর কষ্ট দিতে চায় না। তাই ইতি চলে গেলে রোদের অনেক কষ্ট হবে হয়ত সে থাকতে পারবে না তাকে ছাড়া তাও সে সহ্য করবে। আটকাবে না ইতিকে। কারণ সে আর কোন কষ্ট ইতিকে দিতে চায় না।
দুজনে ডিনার করে নিলো।
এই ট্রি হাউজটায় রোদদের ছোট বেলার অনেক স্মৃতি জরিয়ে আছে রোদ সব দেখালো ইতিকে। ছোট বেলার অনেক মজার মজার গল্প শুনালো। ইতি হাসতে হাসতে পরে যাচ্ছে। রোদ মুগ্ধ হয়ে দেখছে ইতিকে। অনেক দিন পর তার পাগলীটা মন খুলে হাসছে। এই হাসিটাই তো দেখার জন্য পাগল হয়ে ছিলো রোদের মন। এই হাসির জন্য সব করতে পারে রোদ। সারারাত গল্প করতে করতে কখন যে রোদের ঘারে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরেছে মেয়েটা খেয়ালই করেনি। দুজনই ঘুমিয়ে পরেছে। ঘুমের মধ্যেও দুজনের মুখে প্রশান্তির হাসি। আজ অনেক দিন পর প্রিয় মানুষটাকে হারিয়ে ফেলার ভয় ছাড়াই ঘুমাচ্ছে তারা একে অপরের বাহু ডোরে। তাই এ প্রশান্তির হাসি।
সকালে।
ইতি রোদের বুকের আষ্টে-পৃষ্টে লেগে আছে। কখন যে ঘুমের মাঝে এসে রোদকে জড়িয়ে ধরেছে সে নিজেও জানে না। আর রোদ ইতিকে পেয়ে নিজের বুকের মাঝে লুকিয়ে রাখার মতো করে আগলে ধরে রেখেছে। যেনো আর কখনও ছাড়বে না। দুজনই কিছুটা নড়ে উঠায় দুজনের ঘুম ভেংগে গেলো। একে অপরকে এমন অবস্থায় আবিষ্কার করে লজ্জায় ইতির যায় যায় অবস্থা। ইতি মনে মনে বলছে “আল্লাহ দড়ি ফালাও উঠে যাই। কি লজ্জা কি লজ্জা”। রোদও মাথা নিচু করে বসে আছে। কিছু বলতে পারছে না।
অবস্থা সামলানোর জন্য রোদ বলে,
– ফ্রেস হয়ে আসি অফিসে যাবো।
– আজ তো শুক্রবার অফিস বন্ধ।
– ওহ তাই তো। একদম মনে নেই। তাহলে বসায় যাই।
বলেই সামনে যেতে নেয় রোদ।
– আজ না হয় এখানেই থাকি ?
ইতির কথায় থেমে গিয়ে পিছন ফিরে তাকিয়ে রোদ বলে,
– থাকবে তুমি ?
– হুম, যদি আপনি অনুমতি দেন তো।
রোদ ইতির মাথায় হাত দিয়ে চুল নেড়ে দিয়ে বলল,
– ঠিক আছে।
দুজনেই ডুপলেক্স হাউজে ডুকলো। ইতিকে চিন্তিতো দেখাচ্ছে। তাই দেখে রোদ জিজ্ঞেস করে,
– কি হলো ? কিছু ভাবছো ? কোন সমস্যা ?
– না মানে ফ্রেস হয়ে পরবো কি?
– ওহ এই চিন্তা এসো আমার সাথে।
রোদ ইতির হাত ধরে টেনে অন্য একটা রুমে নিয়ে গেলো।
ইতি হা করে দেখছে রুমটাকে। এতো সুন্দর করে সাজানো। দেখে ইতির মনটাই ভালো ভরে গেলো।
রোদ সামনে গিয়ে আলমারি খুলে দিয়ে বলল,
– এখান থেকে যেটা ভালো লাগে পরে নাও।
আলমারির ভেতরের জিনিস দেখে ইতির চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো। সে হা করে দেখছে আর বলছে,
– এতো কিছু কার ? এতো এতো শাড়ি ?
– সব আমার মায়ের। মা হুট হাট চলে আসতেন তাই এখানেই সব রাখা থাকত যেনো কাপড় ছাড়া চলে এলে কোন সমস্যা না হয় তাই। তুমি মায়ের রুমের বাথরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে এখান থেকে যা ইচ্ছা হয় পরে নাও। আমিও ফ্রেস হয়ে আসি।
ইতি হা করে রইল। কোনটা রেখে কোনটা পরবে সে। তারপর চোখ আটকে গেলো একটা কালো তাঁতের শাড়িতে। ফ্রেস হয়ে শাড়ি পরছিলো ইতি। কুচি ঠিক করতে গিয়ে আঁচলটা বুক থেকে পরে গেছে।
– আমি ভাবছি কি…….
হুট করেই বিনা নক করে রুমে ডুকে হা হয়ে রইল রোদ।
– আআআআআ………
বলেই চিৎকার দিয়ে ঘুরে দাঁড়ালো ইতি।
রোদ নিজেও অন্য দিকে ঘুড়ে বলে,
– সরি সরি সরি আমি কিছু দেখিনি প্রমিজ।
“যে ভাবে হা করে তাকিয়ে ছিলো বলে কি না দেখেনি” মনে মনে বলছে ইতি। মুখে বলল,
– এভাবে কেউ রুমে আসে। আপনি জানেন না আমি চেন্জ করছি।
– আমি ভেবেছিলাম তুমি বাথরুমে আছো তাই চলে এসে ছিলাম।সরি।
– এখন যান দাড়িয়ে আছেন কেন? আমি না ডাকা পর্যন্ত আসবেন না একদম।
– ওকে সরি আমি বাইরে আছি। সরি।
– ইসসসস,,,,,যখনই উনি আমার আশে পাশে থাকে তখনিই এমন কিছু না কিছু ঘটে। শুধু লজ্জা আর লজ্জা।
শাড়ি পরা শেষ করে ইতি রোদকে ডাকল সে দরজার রাইরেই দাঁড়িয়ে আছে,
– এখন আসতে পারেন।
রোদ ভিতরে ডুকতেই যেই ইতি ঘুরে দাড়ালো হা করে তাকিয়ে রইল সে। ইতি তার মায়ের কালো তাঁতের শাড়িটা পরেছে। রোদের মায়ের সবচাইতে পছন্দের শাড়ি। মা যখন পরতেন রোদ তার মায়ের দিক থেকেও চোখ সরাতে পারত না। রোদের মা বলতেন এই শাড়িটা সে রোদের বউকে পরাবেন। রোদ নাকি দেখলে চোখ ফেরাতে পারবে না। রোদের মায়ের ইচ্ছেটা আজ পূরণ হলো রোদ সত্যি তার বউয়ের থেকে চোখ ফেরাতে পারছে না। কিন্তু….
রোদকে হা হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইতি বলে,
– কি দেখছে ওমন করে ?
– একটা কমতি আছে।
– কি ?
– পেয়েছি।
– মানে?
হুট করেই রোদ ইতির একদম কাছাকাছি চলে এলো। কাছে মানে একদম কাছে। যতটা কাছে গেলে নিঃশ্বাসও শুনা যায়। রোদ কাছে এলেই ইতির নিঃশ্বাস ভাড়ি হয়ে যায়। এখনও ঠিক তাই হলো। রোদ একপাশে হাত দিলো কিছু একটা নেবার জন্য। একটা টিপের পাতা। ছোট্ট একটা কালো টিপ ইতিকে পরিয়ে দিলো সে নিজ হাতে। দিয়ে বলল,
– ঠিক মা যেভাবে সাজতেন। হালকা কাজল, হালকা লিপস্টি আর ছোট্ট একটা টিপ। অপরুপ…
– কিহ ?
– নাহ কিছু না।
“অপরুপ লাগছে” মনে মনে বলল রোদ।
– আমায় কেমন লাগছে বললেন না ?
– বলতেই হবে ?
– হুম….
– সব সৌন্দয্যের প্রশংসা করা যায় না। তবুও চোখ ফেরানো দায়।
রোদের কথা শুনে ইতি লজ্জায় লালল হয়ে যাচ্ছে। ইতি বলে,
– আচ্ছা তখন কিছু বলতে চাইছিলেন।
– বলছিলাম বাইরে খাবার অর্ডার করে দেই। তুমি কি খাবে ?
– বাইরে কেনো অর্ডার করবেন?
– এখানের কাজের লোক ছুটিতে তাই রান্না করার কেউ নেই।
– কেন আপনার চোখের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এই আস্ত মানুষটা কি আপনার চোখে পরছে না ?
– তুমি রান্না করবে ?
– জ্বি……আমি রান্না করবো।
– তোমার শুধু শুধু কষ্ট করে….
– কোন কষ্ট হবে না। আপনাকে চা করে দিচ্ছি আপনি চা খান আমি রান্না সেরে নিবো।
রোদ এখন হাজার বারণ করলেও ইতি আর শুনবে না। তাই আর বারণ করলো না। উল্টো ভালোই হলো। বউয়ের হাতের রান্না খাওয়া যাবে।
রোদ চা খেতে খেতে অফিসের কিছু কাজ ও করে নিলো। মানুষটা পারেও এতো কাজ মানুষ কিভাবে করে।
ইতি রান্না শেষ করতে এসে দেখে রোদ বসে বসে টিভি দেখছে। বাচ্চাদের মতো কার্টুন দেখছে সে। দেখে হাসি পেলো ইতির।
হঠ্যাৎ করেই বাহিরে বাতাস শুরু হয়ে গেলো। আকাশটাও মেঘলা।
ইতি বলে,
– আমরা একটু পুকুর পাড়ে গিয়ে বসি ?
– এই ওয়েদারে ? বৃষ্টি হবে যে।
– প্লিজ….
মেয়েটার প্লিজ বলা শুনে রোদ আর না করতে পারে নি।
ওরা পুকুরের পাশি গিয়ে বসতেই। ইতি বলে,
– একটা আবদার করি ?
– হুম
– একটা গান শুনাবেন ?
– তুমি বসো আমি আসছি।
ইতির মন খারাপ হয়ে গেলো। হয়ত গান শুনতে চাওয়ায় রোদ চলে গেলো।
আচমকাই গিটারের আওয়াজে বিস্ময় চোখে ইতি ঘুরে তাকালো। রোদ গিটারের তারে সুর তুলেছে।


বাদলা দিনে মনে পড়ে ছেলেবেলার গান
বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর নদে এলো বান

যদি ডেকে বলি, এসো হাত ধরো
চলো ভিজি আজ বৃষ্টিতে
এসো গান করি মেঘ মল্লারে
করুনাধারা দৃষ্টিতে
আসবে না তুমি; জানি আমি জানি
অকারনে তবু কেন কাছে ডাকি
কেন মরে যাই তৃষ্ণাতে
এইই এসো না চলো জলে ভিজি
শ্রাবণ রাতের বৃষ্টিতে

কত না প্রণয়, ভালোবাসাবাসি
অশ্রু সজল কত হাসাহাসি
চোখে চোখ রাখা জলছবি আঁকা
বকুল কোন ধাগাতে
কাছে থেকেও তুমি কত দূরে
আমি মরে যাই তৃষ্ণাতে
চলো ভিজি আজ বৃষ্টিতে

যদি ডেকে বলি, এসো হাত ধরো
চলো ভিজি আজ বৃষ্টিতে
এসো গান করি মেঘো মল্লারে
করুনাধারা দৃষ্টিতে
আসবে না তুমি; জানি আমি জানি
অকারনে তবু কেন কাছে ডাকি
কেন মরে যাই তৃষ্ণাতে
এইই এসো না চলো জলে ভিজি
শ্রাবণ রাতের বৃষ্টিতে

বাদলা দিনে মনে পড়ে ছেলেবেলার গান
বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর নদে এলো বান



রোদের গান থামার সাথে সাথেই বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো। যেন বৃষ্টি গান থামার অপেক্ষায় ছিলো। গান থেমে গেলেই বৃষ্টি বর্ষণ শুরু হবে।
রোদ উঠে বারান্দায় চলে গেলো। পিছু ঘুড়ে দেখে ইতি নেই। পুকুর ঘাটে দাঁড়িয়ে ঘুরে ঘুরে বৃষ্টিতে ভিজছে মেয়েটা। অপূর্ব লাগছে তাকে দেখতে। রোদ অনেক্ষণ এভাবে ভিজতে দেখল ইতিকে। হুট করেই মনে হলো বেশি ভিজলে আবার অসুস্থ হয়ে যাবে মেয়েটা। তাই ইতিকে ডাক দেয়।
দ- এই চলে এসো ঠান্ডা লাগবে।
– কিইইই…..শুনতে পাই না।
বৃষ্টির জন্য দূর থেকে রোদের কথা কিছুই ইতি শুনতে পায় না। তাই অগত্য রোদকেই বেরিয়ে আসতে হলো। ইতি হাত ধরে টানতে লাগলো।
– না আমি ভিজবো।
– না আর ভিজা লাগবে না। শেষে জ্বর চলে আসবে।।
– না যাবো না।
– ওকে ফাইন।
বলেই রোদ ইতিকে কোলে তুলে নেয়।
– একিইইই,,,,,,পরে যাবো তো।
– পরলে পরো তাও ছাড়ছি না।
ইতি হাত পা ছটফটাতে লাগল। রোদ নামালই না। একেবারে রুমে নিয়ে নামিয়ে দাড়ালো।
রোদ নিজের ভেজা শার্টটা খুলে ফেলল নাহলে তার নিজেরই জর চলে আসবে।
ইতি পিছন ঘুড়তেই ওর ভেজা চুল গিয়ে রোদের মুখে লাগে।
শার্ট ছাড়া রোদের দিক থেকে ইতি যেন চোখ সরাতে পারছে না। লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রোদের দিকে।
সে এক অন্য রকম অনুভূতি। ভেজা কাপড়ে ইতির থেকে চোখই ফেরাতে পারছে না রোদ। ভিজে শাড়িটা যেন লেপটে আছে ইতি অঙ্গে। পৃথিবীর সব সুখ যেনো ইতির মাঝেই আল্লাহ দিয়ে দিয়েছে রোদের জন্য।
এই মুহুর্তে ইতিকে দেখে খুব লোভ হচ্ছে রোদের। খুব করে কাছে পেতে ইচ্ছে করছে বউটাকে তার। বউয়ের ভেজা শরীরটাকে নিজের উষ্ণতায় উষ্ণ করে দিতে ইচ্ছে করছে। রোদের ভিতরের পুরুষটা যেন তাকে বলছে যা নিজের বউকে একটু ছুয়ে দে। এক পা দু পা করে ইতির দিকে এগোতে লাগলো রোদ। রোদের আগানো দেখে ইতি পিছাতে লাগলো। পিছাতে পিছাতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলো ইতির। আর যাওয়ার জায়গা নেই তার। রোদ যেন থামছেই না। একেবারে ইতির কাছে চলে এলো। দু’হাত ইতির দু’পাশে দিয়ে দাড়ালো। ইতির নিঃশ্বাস ভারি হয়ে যাচ্ছে ক্রমশ। ইতির গরম নিঃশ্বাস গিয়ে রোদের বুকে লাগছে। বুকের ভেতর তোলপাড় চলছে দুজনার। একটু একটু করে মুখটা কাছে নিতে লাগলো রোড। ইতি চোখমুখ শক্ত করে দাড়িয়ে রইল। রোদের নিঃশ্বাসটা আরো কাছে অনুভব করতে পারছে ইতি।
.
চলবে……..
.
.
.
#বস_বর
পর্ব-14
Writer : Eti Chowdhury
.
শার্ট ছাড়া রোদের দিক থেকে ইতি যেন চোখ সরাতে পারছে না। লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রোদের দিকে।

সে এক অন্য রকম অনুভূতি। ভেজা কাপড়ে ইতির থেকে চোখই ফেরাতে পারছে না রোদ। ভিজে শাড়িটা যেন লেপটে আছে ইতি অঙ্গে। পৃথিবীর সব সুখ যেনো ইতির মাঝেই আল্লাহ দিয়ে দিয়েছে রোদের জন্য।

এই মুহুর্তে ইতিকে দেখে খুব লোভ হচ্ছে রোদের। খুব করে কাছে পেতে ইচ্ছে করছে বউটাকে তার। বউয়ের ভেজা শরীরটাকে নিজের উষ্ণতায় উষ্ণ করে দিতে ইচ্ছে করছে। রোদের ভিতরের পুরুষটা যেন তাকে বলছে যা নিজের বউকে একটু ছুয়ে দে। এক পা দু পা করে ইতির দিকে এগোতে লাগলো রোদ। রোদের আগানো দেখে ইতি পিছাতে লাগলো। পিছাতে পিছাতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলো ইতির। আর যাওয়ার জায়গা নেই তার। রোদ যেন থামছেই না। একেবারে ইতির কাছে চলে এলো। দু’হাত ইতির দু’পাশে দিয়ে দাড়ালো। ইতির নিঃশ্বাস ভারি হয়ে যাচ্ছে ক্রমশ। ইতির গরম নিঃশ্বাস গিয়ে রোদের বুকে লাগছে। বুকের ভেতর তোলপাড় চলছে দুজনার। একটু একটু করে মুখটা কাছে নিতে লাগলো রোড। ইতি চোখমুখ শক্ত করে দাড়িয়ে রইল। রোদের নিঃশ্বাসটা আরো কাছে অনুভব করতে পারছে ইতি।

রোদ ইতির একদম কাছে চলে এলো। ইতির নিঃশ্বাস গাঢ় হয়ে যাচ্ছে। বুকের ভিতর তোলপাড় করছে। মনে হচ্ছে কেউ হাতুড়ি দিয়ে বুকের মাঝে দিপ দিপ করে বারি দিচ্ছে। ইতি মাথা নিচু করে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রোদ তার হাত ইতির থুতুনিতে রেখে ইতির মুখ উপরে তুলল। এখনো ইতি চোখ বন্ধ করে আছে। রোদ ইতির কপালে হাত দিয়ে টিপটা ঠিক করে দিয়ে বলল,

– এখন ঠিক আছে।

ইতি বিস্ময় নিয়ে চোখ খুলে তাকালো রোদের দিকে। রোদ বলে,

– তোমার টিপটা সরে গিয়েছিলো। এখন ঠিক আছে।

ইতির এতো লজ্জা লাগছিলো। মনে মনে কত কি ভেয়ে নিয়ে ছিলো সে আর হলো কি। লজ্জায় রোদের বুকে দুহাত দিয়ে ধাক্কা দিলো ইতি।

– ইসসস আপনি না।

বলেই দৌড়ে চলে গেলো ইতি সেখান থেকে।

ফ্রেস হয়ে নিলো দুজনেই। ফ্রেস হয়ে রোদ বলে,

– খুব ক্ষুদা পেয়েছে।

– আসেন খাবার দিচ্ছি।

খেতে বসে রোদ বলে,

– তুমি কিভাবে বুঝলে আজ বৃষ্টি হবে।

– কেনো ?

– এই যে খিচুড় রান্না করলে।

– না খিচুড়ি তো আপনা…..

কথাটা শেষ না করেই থেমে গেলো ইতি। পুরোটা বলল না।

– কি হলো ?

– কিছু না। এমনি খেতে ইচ্ছে হলো তাই রান্না করলাম। কেনো ভালো হয়নি ?

– নাহ ভালো হয়েছে।

রোদ একটা হাসি দিয়ে খেতে লাগলো। মনে মনে ভাবছে রোদ, “শুধু কি খেতে মন চাইলো তাই রান্না করেছো নাকি আমি পছন্দ করি বলে”।

ইতি মনে মনে বলছে, “আপনি খিচুড়ি ভালোবাসেন বলেই রান্না করেছি”।

আজ রোদ অনেক দিন পর তৃপ্তি করে খেলো। খাওয়া শেষ হতেই রোদের মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি খেলে গেলো।

– আহ….কি ঝাল।

– ঝাল লেগেছে ?

বড় বড় চোখ করে রোদের দিকে তাকায় ইতি।

– হুম অনেক ঝাল একটু মিষ্টি হবে ?

বলেই মুচকি হাসি দিলো রোদ।

ইতি রোদের মুচকি হাসি দেখে বুঝে গেলো সে মজা করছে। লজ্জা পেয়ে ইতি বলে,

– দূর আপনি।

ইতি চলে যেতে নিলে রোদ পিছন থেকে হাত ধরে ফেলল। রোদ একটানে ইতিকে নিজের কাছে নিয়ে নিলো। ইতির পিঠটা রোদের বুকে এসে ঠেকলো। কাধ থেকে ইতির ভিজা চুল গুলো সরিয়ে দিলো রোদ। মুখটা কাধের কাছে নিলো রোদ।

রোদের নিঃশ্বাস এসে ইতির কাধে লাগছে। সহ্য হচ্ছে না ইতির। আবার বুকের ভিতর ধুকপুকানি শুরু হয়ে গেলো। রোদ ইতির কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,

– মিষ্টি খাওয়াবে না ?

ইতির মুখ দিয়ে কথা বের হতে চাচ্ছে না তাও বলল,

– হাত না ছাড়লে মিষ্টি আনবো কিভাবে।

– ওই মিষ্টি খাবো না।

– তাহলে ?

– তোমার মিষ্টি খাবো।

– ইসসস,,,,,আপনি না

বলেই নিজেকে রোদের কাছ থেকে ছাড়াবার চেষ্টা করতেই রোদ আরো শক্ত করে ইতিকে জড়িয়ে ধরে ইতির মুখে আঙ্গুল দিয়ে বলল,

– হুসসসস,,,,,,প্লিজ।

ইতি যেন আরো জমে যাচ্ছে। রোদের শার্টটাকে খামছে ধরল ইতি। নিজেকে সংযত রাখতে পারছে না ইতি। রোড হুট করেই ইতিকে কোলে তুলে নিয়ে উপরের দিকে পা বাঁড়ায়। ইতির চোখে চোখে রেখেই তাকে নিয়ে উপরে উঠে যায় রোদ। ইতিকে নিয়ে নিজের রুমে গিয়ে বিছানায় নামিয়ে দেয় রোদ ইতিকে। ইতির নিঃশ্বাসের সাথে বুকের কাঁপনটাও বেড়ে চলেছে। রোদ ইতি একপাশে বসতেই ইতি লজ্জায় অন্য পাশে ফিরে বালিশ খামচে ধরে। ইতি ঘুড়তেই তার উন্মুক্ত পিঠে নিজের ঠোঁটের স্পর্শে স্পর্শে ভরিয়ে দিতে লাগে রোদ। বালিশে খামচে ধরা ইতির হাতে হাত রেখে রোদ। নিজেকে অনেকটা ইতির সাথে মিশিয়ে নিচ্ছে রোদ। ইতির পিঠ রেখে উপরে উঠতে নিলেই থমকে যায় রোদ। ইতি বলা একটা কথা মনে পরে যায় তার। ইতি তার সাথে আর মাত্র ৭ মাস আছে। মুহুর্তেই রোদ ইতিকে ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। হুট করে রোদ ছেড়ে দেয়াতে ইতি নিজেও অবাক হয়।

– সরি।

বলে ইতিকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই রুম থেকে বেরিয়ে যায় রোদ। ইতি ফ্যালফ্যাক করে রোদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। তার চোখ জোড়া ছলছল করছে। বুকের ভিতর চিন চিনে একটা ব্যাথ্যা অনুভব করছে সে। কিন্তু কেন? রোদ কাছে টেনে নিলো না বলে কি? তা ইতির জানা নেই।


এখন অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে গেছে ওরা একে অপরের সাথে।

সারাদিন ভালোই কাটলো তাদের। অনেক গল্প করলো। একে অপরকে অনেকটা জানো তারা। ইতি ভাবছে মানুষটাকে যতটাও খারাপ ভেবেছে আসলে সে অতোটাও খারাপ নয়। নারিকেলের মতো বাহিরটা শক্ত ডাবের মত ভিতরটা একদম নরম।

রোদ ভাবছে মেয়েটা কি নিঃষ্পাপ একদম বাচ্চাদের মতো। আরো বেশি প্রেমে পরে গেলো সে তার বউটার।

সারাদিন অনেক হইচই করে দুজনেই ক্লান্ত কাল অফিস যেতে হবে তাই সন্ধ্যার পর বাসার জন্য রওনা দিলো। বাসায় আসতে আসতে রাত প্রায় ১০টা দুজন ফ্রেস হয়ে নিলো। ইতি রুম থেকে বের হতে নেয় রোদ আটকায় তাকে।

– কোথায় যাও ?

– ডিনার করা লাগবে না ? রান্না করে আসি ?

– নাহ। এখন কষ্ট করে রান্না করা লাগবে না। আমি খাবো না।

– কেনো ? আমার কষ্ট হবে না।

– বললাম তো লাগবে না।

– আচ্ছা তাহলে কফি করে আনি।

– হ্যাঁ, সেটা করতে পারো। আমি বারান্দায় বসছি।

ইতি কফি নিয়ে ডুকতেই গিটারের আওয়াজ পেলো। গিটারের সুরে ইতির ভালো মনটা আরও কয়েক হাজার গুন বেশি ভালো হয়ে গেলো। কফি নিয়ে বারান্দায় এসে দেখে রোদ ইতির জন্য রকিং চেয়ারটা রেখে সোফায় বসে আছে গিটার হাতে। ইতি কফি রেখে বসতে বসতেই রোদ গান ধরলো।



আমার প্রান ধরিয়া মারো টান, মনটা করে আনচান,

আমার প্রান ধরিয়া মারো টান, মনটা করে আনচান ।

জোয়ার নদীর উতল বুকে প্রেমের নৌকা উজান বায়, জোয়ার নদীর উতল বুকে প্রেমের নৌকা উজান বায় ।

বারে বারে বন্ধু তোমায় দেখিতে মন চায়,

বারে বারে বন্ধু তোমায় দেখিতে মন চায়।

আমার প্রান ধরিয়া মারো টান মনটা করে আনচান,

আমার প্রান ধরিয়া মারো টান মনটা করে আনচান ।

জোয়ার নদীর উতল বুকে প্রেমের নৌকা উজান বায় জোয়ার নদীর উতল বুকে প্রেমের নৌকা উজান বায় ।

বারে বারে বন্ধু তোমায় দেখিতে মন চায়

বারে বারে বন্ধু তোমায় দেখিতে মন চায়।

হো, আমি তোমার ইচ্ছে ঘুড়ি যেমন উড়াও তেমন উড়ি, স্বপ্নগুলো মুঠোয় নিয়ে কেমন লুকোচুরি।

বন্দিকরে রাখব তোমায় ভালোবাসার জেলখানায় বন্দিকরে রাখব তোমায় ভালোবাসার জেলখানায় ।

বারে বারে বন্ধু তোমায় দেখিতে মন চায়,

বারে বারে বন্ধু তোমায় দেখিতে মন চায়।

আমার প্রান ধরিয়া মারো টান মনটা করে আনচান,

আমার প্রান ধরিয়া মারো টান মনটা করে আনচান ।

জোয়ার নদীর উতল বুকে প্রেমের নৌকা উজান বায়, জোয়ার নদীর উতল বুকে প্রেমের নৌকা উজান বায়।

বারে বারে বন্ধু তোমায় দেখিতে মন চায়

বারে বারে বন্ধু তোমায় দেখিতে মন চায়।



গান শেষ করেই ইতির দিকে তাকায় রোদ। ইতি একটা প্রশান্তির হাসি দেয় তা দেখে রোদের মনটা জুরিয়ে যায়।


ঘুমানোর সময়। ইতি বলে,

– একটা কথা বলি ?

– হুম, বলো।

– আমি না হয় অন্য রুমে ঘুমাই।

রোদ অবাক দৃষ্টিতে তাকায় ইতির দিকে। ইতির একটা হাত ধরে তাকে কাছে টেনে নিলো রোদ। একদম কাছে। ইতির কপালে কপালে লাগিয়ে চোখে চোখ রেখে রোদ বলে,

– থাকো না প্লিজ আমার পাশে।

ইতি রোদের চোখের দিকে তাকিয়ে রইল। রোদ ইতিকে নিজের একদম কাছে টেনে নিয়েছে। রোদের মাঝে এক অস্থিরতা দেখল ইতি। কিছু হারিয়ে ফেলার ভয় দেখল তার চোখে। ইতি বলল,

– থাকবো।

রোদ ইতির কপালে একটা চুমু খেয়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরল মাঝে অনেকটা দূরত্ব রেখে।

রোদ মনে মনে বলছে, “ওর কপালে একটা চুমু খেয়েই শুয়ে পরলাম। এর বেশি যে কিছুই চাইতে পারবো না। পাগলীটাকে কষ্ট দিতে চাই না যে আর”।

ইতি নিজেও শুয়ে পরল। ঘুম আসছে না তার। রোদ কি ঘুয়েছেন। ছটফট লাগছে ইতির। মন চাইছে রোদের কাছে যেতে। লজ্জাও করছে মেয়েটার। কি ভাবেন সে। ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরল ইতি। রোদের ভাবনাগুলোও ইতিকে আরাম দেয়।


সকালে।

ইতি আজ রোদের আগে উঠে গেলো। রোদ ঘুমের মধ্যে ইতির কাছে এসে একটা হাত ইতির পেটে উপর দিয়ে রেখেছে। আলতো করে ইতি রোদের হাতটা সরিয়ে দিলো। রোদ আরো শক্ত করে ধরল ইতিকে। ইতি তাও ছাড়িয়ে নিলো নিজেকে। উঠে ফ্রেস হয়ে রেডি হয়ে নিলো, নাস্তাও রেডি করে ফেলল। রোদকে ডাকতে এসে দেখে সে ঘুম থেকে উঠে বসে বসে কি যেন ভাবছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। ইতিকে দেখে থেমে গেলো। নাস্তা করে অফিসে চলে এলো ওরা।


অফিসে।

ইতিকে হাসিখুশি দেখে রাফসান বলে,

– কি মেডাম আজ খুব হাসি খুশি লাগছে। কারণটা কি?

– কই না তো ?

– হুম বুঝতে পেরেছি।

– কি ?

– কিছু তো হয়েছে।

– কিছুই হয়নি।

– হ্যাঁ, আসলেই কিছু হয়নি তাই তো স্যার এ নিয়ে পাঁচ বার কেবিন থেকে বেরিয়ে এলেন তোমাকে দেখতে কিছু হলে তো…..

ইতি অবাক হয়ে হা করে রাফসানের দিকে তাকায় মাথা তুলে।

– আমাকে না দেখে মাথাটা ঘুরি পিছনে তাকাও বেচারে কে একটু দর্শন দাও। এখন না দেখলে হয়ত পাগল টাগলই হয়ে যাবে।

ইতি পিছনে ঘুরতেই দেখে স্যার দাঁড়িয়ে আছে। রোদ সত্যি সত্যি ইতিকে দেখছে। রোদের চোখে চোখ পরতেই লজ্জায় লাল হয়ে গেলো ইতি। রোদ একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো।

রোদ যেতেই রাফসান বলে,

– কবে বলছো ?

– কি ?

– উনাকে মনের কথা ?

– উহু….

বলে মাথা নারলো ইতি।

– কেনো ?

– উনাকে বলতে হবে।

– যদি না বলে ?

– আরে বলবে বলবে না বলে যাবে কই আমার কাছেই আসতে হবে।

– ইতি ডোন্ট বি ফানি। আমি সিরিয়সলি বলছি যদি কোন কারণে স্যার না বলে তাহলে কি হবে ?

– হারিয়ে যাবো।

– মানে ?

– উনাকে কথা দিয়েছি কাজটা হলেই চলে যাব অনেক দূরে। তাই এর মধ্যে উনি না বললে চলে যাবো।

বলেই চলে এলো ইতি রাফসানকে আর কিছু বলার সুযোগ দিলাম না।

– আপনার কি হলো ? আপনি এমন করছেন কেনো ?

রিমির প্রশ্নে টেরা উত্তর দিয়ে রাফসান বলে,

– তো কি করবো ? দুজন দুজন কে ভালোবাসা সাফ দেখা যাচ্ছে কিন্তু একে অপরের সুখের কথা ভেবে কেউ কাউকে কিছুই বলছে না।

ব্যভা চেকা খেয়ে রাফসানের দিকে তাকিয়ে রইল রিমি। রাফসান বলে,

– এই মেয়ে সবাই কি আমার মতো যে বলে দিবে মনের কথা।

– আপনিও কি কম নাকি ? স্যারের জন্য বলেছেন। নিজে থেকে বলেছেন নাকি হুহ…..

ভেংচি দিয়ে চলে গেলো রিমি।

– ওমা এখন দেখিও এ ও আমায় খেচি দিয়ে চলে গেলো।

রাফসান আর রিমি অনেক চিন্তা করল কি করবে। শেষে ভেবে বের করল আসলে স্যারের মনে কি চলছে তা জানা লাগবে। কিন্তু কে যাবে তা জানতে ? রাফসানের সাথে ইতির সর্ম্পক ভালো তা স্যার জানে। তাই সেভাবে কথা বলতে পারবে না রাফসান তার সাথে। রাফসান মুচকি হাসি দিয়ে রিমির দিকে তাকিয়ে রইল। তা দেখে রিমি বলে,

– কি কি হ্যাঁ কি দেখছেন ?

রাফসানের হাসিটা আরেকটু বেড়ে গেলো।

– ইম্পোসিবল আমি পারব না। অসম্ভব। স্যারকে দেখলেই আমার হাত পা শক্ত হয়ে যায়।

– আরে বেবি শুন তুমি পারবা। ভয়ের কি আছে ? আমি আছি তো।

রিমি অসহায়ের মত রাফসানের দিকে তাকায়। রাফসান রিমিকে ঠেলে ঠেলে স্যারের কেবিনে পাঠিয়ে দিলো।

দোয়া দূরুত পরে ভিতরে চলে গেলো রিমি।

– স্যার আসবো ?

– এসো।

– স্যার ফাইল গুলো দেখে দিতে হবে।

– বসো দেখছি।

রিমি মনে মনে ভাবছে অনেক গুলো ফাইল এনেছি যেনো সময় পাই।

– কিছু বলবে রিমি ? হয়ত কিছু বলতে চাও।

– না মানে আসলে স্যার….

ঢোক গিললো মেয়েটা।

– বলো কি বলতে চাও।

– স্যার আসলে আপনার পারসোনাল ব্যাপারে বলার রাইট আমার নেই। তাও না বলে পারছি না। আসলে। (আবার ঢোক গিললো রিমি)। আসলে স্যার ইতি ম্যাম কি সত্যি চলে যাবে ?

বলেই অসহায়ের দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে রইল রিমি রোদের দিকে।

রোদ একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে একগ্লাস পানি রিমিকে দিয়ে বলল,

– পানিটা খাও। মেয়েটা অনেক ভয় পেয়েছে এক টানে পানিটা খেয়ে নিলো। জানো রিমি ইতি অনেক ভালো একটা মেয়ে। যার জীবনে যাবে সে অনেক সুখী হবে। কিন্তু কি জানো আমার কপালে হয়ত সেই সুখটা নেই।

রিমি জিঙ্গাসু দৃষ্টিতে রোদের দিকে তাকালো। রোদ বলল,

– আমি জানি তুমি ইতিকে অনেক ভালোবাসো। তাই সব ভয় ডর বাদ দিয়ে আমাকে প্রশ্নটা করছো। সত্যি কি জানো আমি মেয়েটাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। আমি বললে হয়ত ও আমাকে ছেড়ে যাবে না জানি। কিন্তু আমি ওকে আর কষ্ট দিতে চাই না। অনেক কষ্ট দিয়েছি আর না। ওর সুখের কারণ হতে না পারি অন্তত আর ওর কষ্টের কারণ হবো না। তাই ওর সুখেই আমি সুখি।

– কিন্তু স্যার….

– ইটস ওকে রিমি আর স্বার্থপর হতে পারছি না আমি।

রোদ রিমিকে আর কিছু বলার সুযোগ দিলেন না। মন চাইছিলো সব বলে দিতে তার রোদকে। কিন্তু পারল না ব্যার্থ হয়ে বের হয়ে চলে এলো। মুখ ভার করে রাফসানকে সব বলল রিমি। সব কিছু শুনে রাফসান নিজেও মুখ ভার করে বসে রইল। রিমি আর রাফসান দুজনেই একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।
.
চলবে…………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here