বাক্সবন্দী চিঠি পর্ব -০৬

গল্প: #বাক্সবন্দী_চিঠি
লেখক: Ninika Jaman Noor
পর্ব: ৬
“একটু পরেই অনুকে স্টেজে নিবো আমরা।অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেলে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়বে।অহনা, না তুই না।অর্পি গিয়ে আবির ভাইয়াকে কোনো একটা বাহানা দিয়ে স্টেজের পিছনে দাড়াতে বলবি।”
অহনা মুখ কালো করে বললো,”আমি ডেকে নিলে কি হয়?”
ইতু মুখ শক্ত করে বললো,”না তুই আমার সাথে থাকবি।”
অর্পি কৌতুহল নিয়ে বললো,”ওখানে দাড়ালে কি হবে?তুই উল্টা পাল্টা কিছু করলে পরে আমার উপর দিয়ে ঘুর্ণিঝড় যাবে।”
“আরে দূর কিছু হবে না।যেভাবে বলেছি ওইভাবে কাজ করলেই হবে।”
অনু অনুনয়নের স্বরে বললো,”ইতু যাই করিস শুধু এটা মনে রাখিস আমার একটা মাত্র ভাই।”
“জানে মারবো না।শুধু একটু শায়েস্তা করবো।আচ্ছা তোর খালাতো ভাইটা কই?ওরে দিয়েও কাজ আছে।”
“আছে হয়তো বাইরে কোথাও।খুজলেই পাবি।”
||
অনুষ্ঠান শুরু হলে কেউ জোরে গান চালিয়ে নাচতে শুরু করলো তো কেউ খেতে।বড়রা অনুকে হলুদ ছোঁয়াচ্ছে।
ইতু বিভিন্ন এংগেলে তার বান্ধবিদের ছবি তুলে দিচ্ছে।ইতুরা স্টেজে উঠে কিছুক্ষন থেকেই নেমে এলো।অর্পিতাকে ইশারা করতেই অর্পিতা ভয়ে মনে মনে আয়াতুল কুরসি পড়তে লাগলো।আবির তার বন্ধুদের নিয়ে একপাশে আড্ডা দিচ্ছিলো।অর্পিতা কিছু না বলে ফিরে আসতে দেখে ইতু দূর থেকে হাত মুঠ করে হুমকি দিলো।কাঁদো কাঁদো মুখ করে আবার ফিরে গেলো অর্পিতা।
“আবির ভাই!”
“ওহ!অর্পিতা,বলো।”
“একটু স্টেজ এর পিছনে গিয়ে দাড়াবেন?ইতু কি যেনো কথা বলবে।”
আবির ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষন অর্পিতার দিকে তাকিয়ে রইলো।ইতু ওকে ডাকছে কথাটা কেনো যেনো বিশ্বাস হচ্ছেনা।
আবিরকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে অর্পিতা ঢোক গিললো।কেবলার মতো হেসে বললো,”আচ্ছা ভাইয়া আপনি আসেন আমি যাই।”
“শুনো।”
“জি ভাইয়া?”
“কেনো ডাকছে?”
“সেটা তো জানিনা।”
“আচ্ছা তুমি যাও আমি আসছি।”
_________
আবির স্টেজের পিছনে ইতুর জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।ইতু কি এমন বলবে তা ভেবে কুল পাচ্ছে না।হঠাত্‍ মাথায় পানি জাতীয় কি যেনো পরলো।হাতটা মাথায় দিতে না দিতে পুরো শরীরে র্দুগন্ধ যুক্ত কিছু পড়লো।গন্ধে আবিরের পেটের নাড়িভুড়ি বেরিয়ে আসার উপক্রম হয়ে যাচ্ছে।হাত দিয়ে চোখে মুখ মুছে দেখলো গোবর আর সাথে ডিম মিক্স পুরো শরীরে মিশে আছে।আবির আর সহ্য করতে না পেরে গড়গড় করে বমি করে দিলো।
ইতু ছাদে দাড়িয়ে মুখে হাত দিয়ে হাসতে লাগলো।
“ইয়েস” বলে হাসতে হাসতে চলে গেলো।আবিরের মনে হচ্ছে পচা নর্দমায় পড়ে আছে।মাকে ডাকতে গিয়ে আবারো বমি করে ভাসিয়ে দিলো।বমি করতে গিয়ে মনে হচ্ছে নাড়িভুড়ি সব ছিঁড়ে যাচ্ছে।চোখটা কচকচ করছে মনে হচ্ছে ডিমের খোসা ঢুকে গেছে।
“কিরে তোর এই অবস্থা কেনো?”
শ্রাবণের ডাকে আবির ফিরে তাকালো।আবিরের অবস্থা গাবড়ে গেলো শ্রাবণ।
আবিরের রক্তলাল চোখ গুলো দেখেই বুঝতে পারছে অবস্থা ভালো না। আবির শুধু কোনো রকমে বললো,”পারলে আমাকে রুম পর্যন্ত এগিয়ে দে।”
শ্রাবন নাক চেপে আবিরকে একহাতে ধরে সবার আড়ালে রুমে নিয়ে গেলো।
১ঘন্টা ধরে গোসল করার পর ও গন্ধটা যাচ্ছে না।পেটের ভিতরে কিছুই অবশিষ্ট নেই সব আগেই বেরিয়ে গেছে এখন শুধু অক অক করে যাচ্ছে।এতে কোমরের রগ গুলো ছিড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। আবির ছোটবেলা থেকে ডিমের গন্ধ সহ্য করতে পারেনা।ডিম খাওয়া তো দূরের ব্যাপার।ডিমের গন্ধ নাকে লাগলেই ভমি করে দেই।সেই যায়গায় ডিম তার গায়ে মাখামাখি তাও গোবরের সাথে।আবির সাবান,শ্যম্পু দিয়ে ঘষেঘষে গন্ধ দূর করার চেষ্টা চালালো দুই ঘন্টা যাবত।এইদিকে আবিরের অবস্থা শ্রাবণ সবাইকে জানিয়ে দিলো।বাড়ির সবাই আবিরের রুমে এসে ভীড় করেছে।আবিরের মা কয়েকবার বাথরুমের দরজা নক করেছে আবির জবাব দেয়নি।ইতু রুমের এককোনে অপরাধী মুখ করে দাড়িয়ে আছে।অনু,অর্পিতা,রুপু,অহনা সবাই রাগী দৃষ্টি ওর দিকেই নিক্ষেপ করছে।ইতু ভালো করেই যানে আবির ডিম জিনিসটা কতোটা অপছন্দ করে তারপর ও এই কাজটা করেছে দেখে অনু সব থেকে বেশী অবাক হয়েছে।এতোগুলো মানুষের সামনে কিছু বলতেও পারছেনা।
আবির দরজাটা একটু খুলে তার মাকে বললো জামা কাপড় দিতে।
মিসেস কণা তাড়াতাড়ি কাপড় দিলেন।
আবির দরজা খুলে বেরিয়ে এসে দেখলো বাড়ি সুদ্ধ সবাই তার রুমে।
আবিরের মা বারবার তাকে জিঙ্গেস করছে এইসব কি করে হয়েছে?আবির গভীর দৃষ্টিতে ইতুর দিকে তাকিয়ে আছে।আবিরের এই রক্তলাল চোখে শান্ত দৃষ্টি দেখে বুক কেঁপে উঠলো ইতুর।আবিরকে শিক্ষা দিতে গিয়ে বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে।ইতু মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
আবির কারো কথার জবাব না দিয়ে বিছানা শুয়ে সবাই চলে যেতে বললো।
মিসেস কনা ছেলের দিকে তাকিয়ে সবাইকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো।
ইতু তখনো ঠায় রুমের এক কোনে দাড়িয়ে আবিরকে দেখছে।গোসল করে আসায় সিগ্ধ লাগছে।কিন্তু মুখটা কেমন মলিন হয়ে আছে।আবির চোখ বন্ধ করা অবস্থায় বললো,”দাড়িয়ে আছিস কেনো?চলে যেতে বলেছি তো।নাকি প্রতিশোধ নেয়া এখনো শেষ হয়নি।”
ইতু একদৃষ্টিতে আবিরের দিকে তাকিয়ে রইলো।
ছোট ছোট কদম ফেলে আবিরের দিকে এগিয়ে গেলো।আবির চোখ বন্ধ করেই বুঝতে পারছে ইতু তার খুব কাছে।চোখ খুলে তাকাতে ইচ্ছা করছে না।
ইতু পাশে বসে আবিরের কপালে হাত রাখলো।জ্বরে গা পুরে যাচ্ছে আবিরের।চমকে উঠে হাত সরাতে চাইলে আবির হাত চেপে ধরে দুর্বল গলায় বললো,”থাক না এইভাবে।তোর ছোঁয়ায় ঠিক হয়ে যাবো।”
ইতু অস্থির হয়ে বললো,”আবির ভাই তোমার ভীষণ জ্বর।ঔষুধ না খেলে ভালো হবে না।”
আবির পিটপিট করে চোখ খুলে মুচকি হেসে বললো,”এই জ্বর ঔষুধ খেলেও যাবে নারে।তুই পাশে থাক দেখবি সেরে গেছে।”
ইতু বলার মতো কিছু খুঁজে পেলো না।নিজেকে নিম্ন শ্রেণীর প্রাণী মনে হচ্ছে তার।মানুষের দূর্বল জায়গা যেনে তাকে আঘাত করা ভালো মানুষের কাজ নয়।
আবির ইতুর হাত কপালে চেপে ধরেই চোখ বন্ধ করে আছে।মনে হচ্ছে প্রশান্তিতে ঘুমাচ্ছে সে।
ইতু মনে মনেই বললো,”আবির ভাই,তোমাকে যে এইভাবে কষ্ট দিলাম তার বদলে কি আমাকেও সমান কষ্ট দিতে ইচ্ছা করে না তোমার?এতো ভালো কবে বাসলে?”
আবির ঘুমের ঘোরেই কপাল থেকে হাত সরিয়ে নিজের গালে চেপে ধরলো।
ইতু কেঁপে কেঁপে উঠছে আবিরে ছোঁয়ায়।নিজেকে কেমন অসুস্থ অসুস্থ লাগছে তার।
চলবে।
(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here