বাক্সবন্দী চিঠি পর্ব -০৭

গল্প: #বাক্সবন্দী_চিঠি
লেখক: Ninika Jaman Noor
পর্ব:৭
আবিরের নিঃশ্বাসের ভারী শব্দ শুনে ইতু আলতো করে হাতটা সরিয়ে নিলো। কার্বাড থেকে কম্বল বের করে ভালো করে আবিরের গায়ে জড়িয়ে দিলো।আসার আগে আবিরের কপালে ঝুঁকে উষ্ণ ছোঁয়া দিতে গিয়েও নিজেকে বাধা দিলো।
ইতুকে ঘিরে অনু,অর্পিতা,রুপু,অহনা আর রাফি দাড়িয়ে আছে।রাফি অনুর মামাতো ভাই।ইতুর প্ল্যানের সব রাফি জোগাল করে দিয়েছে।
ইতু বিছানায় বসে দাঁত দিয়ে নখ কাটছে আর আড় চোখে ওদের দেখছে।
সবার প্রথমে মুখ খুললো রাফি।
“তোর থেকে এটা আশা করিনি।আমাকে যখন এইসব জোগাল করে দিতে বললি কতোবার জিঙ্গেস করলাম একবার ও বললি না প্ল্যানের কথা?এইসব জানলে জীবনেও এমন কিছু করতে দিতাম না।”
ইতু মিনমিন করে বললো,”তাই তো তোকে কিছু বলিনি।”
রাফি আবার মুখ খুলতে নিলে অনু ইশারা করে চুপ করতে বললো।
“ইতু আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না ভাইয়া কষ্ট পায় এমন কোনো কাজ তুই করতে পারিস।কেনো করতে গেলি এমন?”
ইতুর মুখটা সাথে সাথে থমথমে হয়ে গেলো।ইতু এমন কিছু হবে নিজেও ভাবতে পারেনি।আবির ডিম অপছন্দ করে তা ইতুর যানা।কিন্তু এতোটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে ভাবেনি।
অহনা ইতুর পাশে বসে রাগী চোখে তাকিয়ে বললো,”আবির ভাই কতো কষ্ট পেয়েছে দেখেছিস?ওর মুখটা দেখেই তো আমার কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছিলো।”
ইতু অহনার কথা কানে তুললো না।আবিরে মলিন মুখটা বারবার চোখে ভেসে উঠছে।অর্পিতা ইতুর দিকে তাকিয়ে কোনো কথাই বললো না।
রুপু সবার মুখ থমথমে দেখে বললো,”আচ্ছা আজ অনুর একটা স্পেশাল দিন তোরা সবাই এমন মুখ কালো করে থাকলে ভালো লাগবে?মেয়েটার তো কতো শখ ছিলো আজকের দিন নিয়ে।”
অনু মুখ কুঁচকে বললো,”বাদ দে তো।ভাইয়ার এই অবস্থা দেখে আর কিছু করার ইচ্ছে নেই।বাড়ির সবাইকে দেখেছিস?থম মেরে আছে।বাবারা শুধু মুখ মলিন করে কাজ করে যাচ্ছে।এই অবস্থায় ও বলছিস আমার শখ পূরণ করবো?”
অনুর কথা শুনে রুপু কিছু বলতে গিয়েও বললোনা।আসলেই এমন সময় এইসব মানায় না।
রাত এগারোটার সময় আবির উঠে ড্রয়িং রুমে এসে বসলো।ওকে দেখে সবাই ঘিরে ধরলো তাকে।
কণা আফরোজ ছেলে কপালে হাত দিয়ে টেম্পারেচার চেক করলেন।আগের তুলনায় কম আছে।ইতুর কথা মতো ঘুমের মধ্যে আবিরকে একটু জাগিয়ে ঔষুধ খাইয়ে দিয়েছিলো।
সবাই প্রশ্ন করে যাচ্ছে এই অবস্থা কিভাবে হলো? কে করেছে তাকে দেখেছে কিনা? এখন কেমন লাগছে?
আবির এতো প্রশ্ন শুনে বিরক্তি লাগছে।মাকে বললো,”এইসব কথা থাক না।ভালো লাগছে না।ক্ষুদায় পেট জ্বলছে কিছু খেতে দাও।
আর তোমরা এতো অস্থির হওয়ার কিছু নেই আমি একদম ঠিক আছি।তোমার আবার অনুষ্ঠান শুরু করে নিজেদের মতো মজা করো।আমার একটা মাত্র বোনের গায়ে হলুদ এইভাবে নষ্ট হবে সেটা তো মানবো না।”
আবির তার বন্ধুদের দিকে তাকালে তারা সবাই উত্‍সাহ দিয়ে বাইরে নিয়ে জোর গান ছেড়ে দিলো। কণা আফরোজ তাড়াহুড়ো করে উঠে গেলেন ছেলের জন্য খাবার আনতে।আবিরের পাশ থেকে উঠতে ইচ্ছা করছে না।তার ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে ইচ্ছা করছে।আবির প্রায় সারা বছরই ঢাকা থাকে।বোনের বিয়ে উপলক্ষেই ছেলেকে চোখের দেখা দেখতে পেয়েছেন।আর এখন ছেলের এই অবস্থা দেখেও শান্তিতে দুফোটা চোখের জল ফেলতে পারছেনা।শারমিন বেগম এসে তাকে শান্তনা দিলেন।
গানের আওয়াজ শুনে ইতুরা সবাই রুম থেকে বেরিয়ে এলো।আবিরকে চোখ বন্ধ করে সোফায় বসে থাকতে দেখে অনু দৌড়ে তার কাছে গেলো।পিছন পিছন ইতু বাদে সবাই গেলো।ইতু দূর থেকেই আবিরকে দেখছে।চোখ এখনো লাল হয়ে আছে।জ্বর কমলেও পুরোপুরো ভাবে যায়নি বুঝতে পারছে।অনু ভাইয়ের হাত শক্ত করে ধরে বসলো।আবির চোখ খুলে অনুকে দেখে মুচকি হেসে অনুর কাধে মাথা রেখে আবার চোখ বন্ধ করলো।শরীরটা আরো খারাপ লাগছে।ভিতরটা জ্বলে যাচ্ছে মনে হচ্ছে।মাথার ভেতরটা দপদপ করেছে।রুমে গিয়ে শুয়ে থাকলে ভালো হতো কিন্তু ও আবার চলে গেলে বাড়ির আমেজটা নষ্ট হয়ে যাবে।
বাড়ির হই হল্লোড় রাতের সাড়ে বারোটায় শেষ হলো।
আবির সাথে সাথে উঠে রুমে চলে গেলো।
ইশা ঠিক করলো কাল যেহেতু অনুটার বিয়ে হয়ে যাবে এই শেষবারের মতো অনু তার ব্যাচেলর লাইফটা ইনজয় করুক।ইতু না চাইলেও অনুর কথা ভেবে রাজি হয়ে গেলো।তাই রাফিকে দিয়ে বিয়ার এনে ছাদে লুকিয়ে রাখতে বললো।যদিও ওরা কেউই জীবনে এইসবের দিকে তাকিয়েও দেখেনি তাও মজা করার জন্য আনিয়ে রাখলো।সাথে কোক ও অর্ডার করা হয়েছে।হলুদের অনুষ্ঠান শেষে ওরা সবাই ছাদে চলে এলো।মাদের বলে রাখলো ওরা ছাদে আড্ডা দিবে কেউ যেনো ডির্স্টাব না করে।সেফটির জন্য বাইরে থেকে তালা দিয়ে রাখলো।রাফি খাবার আর সাউন্ড বক্সের ব্যবস্থাও করেছে। যাক মনে মনে খুশি হলো সবাই ছেলেটার উপর।
অনু বললো লো ভলিউমে একটা গান চালিয়ে দিতে।ইতু Cheap thrill গানটা চালিয়ে দিলো।অনুর কাজিন ইশা বললো “ইতু শুরু করনা।জীবনে প্রথম বিয়ার খাবো,আই এম সো এক্সাইটেড।”
অর্পিতা গুনী গুনী ভাব নিয়ে বললো,”করবো করবো তার আগে আসরটা জমতে দে।”
ইতু যেই বিয়ারটা খুলতে যাবো ইশা বললো,”ইতু আমরা আজকে আরেকটা জিনিস খাবো।”
সবাই কৌতুহলি হয়ে ওর দিকে তাকালো।ইশা আমতা আমতা করে ওর কোমরের শাড়ির ভাজ থেকে একটা সিগারেটের প্যাকেট বের করলো।
সিগারেটের প্যাকেট দেখে ওদের সবার চোখ কপালে।ইতু দাঁতে দাঁত চেপে বললো,”কাল অনুর সাথে তো তুই বিদায় হবি সাথে আমাদেরও বিদায় করতে চাস নাকি?”
ইশা বললো,”দেখ আজকেই ফাস্ট এন্ড লাস্ট।লাইফে সব ধরনের এক্সপেরিয়েন্স থাকতে হয়।যদি খেতে না পারি ফেলে দিবো।আর এটা ব্ল্যাক বেরি।মেয়েরা এটা খেতে পারে।”
অনু ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকালো।অনুর তাকানো বুঝতে পেরে ইশা বললো,”দেখ এটা আমিও যানতাম না।রাফিকে বলাতে ও বলেছে।”
অহনা আর রুপু বলে উঠলো,”আমরা খাবো।”
অর্পিতাও আমতা আমতা করে বললো,”আচ্ছা একদিন ট্রাই করি।”
ইতু বিরক্তি দেখিয়ে বললো যা ইচ্ছা কর আমাকে খেতে বলবি না।
ইতু বিয়ার বের করে একটা একটা করে সবার হাতে দিলো।
সবাই এক চুমুক দিয়েই থুথু করে ফেলে দিলো।
সবাই একজন আরেকজনের মুখের দিকে তাকিয়ে ক্যানগুলো রেখে দিলো।
অনু চেঁচিয়ে বললো,”ছিঃ কি বাজে টেস্ট আর গন্ধ।ছেলেরা এইসব খায় কিভাবে।আমার তো মনে হচ্ছে এখনই বমি করে দিবো।”
রুপু চোখ মুখ কুঁচকে বললো,”এই জন্য আমি ছেলেদের খবিশ বলি।খবিশ না হলে এইসব খায় কিভাবে?”
ইতু মনে মনে দোয়া করছে আবির যেনো না আসে।
চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here