বিকেলে ভোরের ফুল পর্ব ৬

#বিকেলে_ভোরের_ফুল

#পর্ব_৬

#Ishita_Rahman_Sanjida(Simran)

ফুল স্পর্শকে ধাক্কা মেরে দূরে সরে গিয়ে বলল,

–“অসভ্য চরিত্রহীন কোথাকার। মেয়েদের সম্মান করতে শেখেননি?? লজ্জা করে না আপনার একটা মেয়ের গর্ভে জন্ম নিয়ে মেয়েদেরকেই অসম্মান করতেছেন??”

স্পর্শ ততক্ষণে দাঁড়িয়ে পড়েছে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফুলের কথাগুলো শুনতেছিল। রাগে চোখমুখ শক্ত করে রেখেছে। রাগের প্রথম কারণ হলো ফুল ওকে আবার চড় মেরেছে তাও আবার দু দুটো। আবার উল্টোপাল্টা বকছে। ফুল কি জানে স্পর্শর চরিত্র কেমন?? স্পর্শ কখনোই কোন মেয়েকে খারাপ নজরে দেখেনি। সেটা কি ফুল জানে??না জেনেই বাজে কথা বলতেছে। স্পর্শ বাজখাঁই গলায় বলল,

–“জাস্ট শাট আপ। তুমি কি করে জানো আমার চরিত্র সম্পর্কে আর কতটুকুই বা জানো??না জেনেই উল্টাপাল্টা বকতেছো কেন??

ফুল উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

–“তাহলে বলুন আপনি কি করছিলেন একটু আগে??হুমমম??”

স্পর্শ আমতা আমতা করে বলল,

–“আ আমি ত তো,,,”

–“আমি তো কি হ্যা?? এখন তোতলাচ্ছেন কেন?? মিথ্যা কথা ভেবে পাচ্ছেন না তাই না?
ছেলেদের আমার ভালো করেই চেনা হয়ে গেছে।”

–“ওয় হ্যালো ক’জন ছেলেকে চেনো তুমি??”

–“আপনাকে দেখেই সব ছেলেদের চেনা হয়ে গেছে। চরিত্রহীন লম্পট লোক।”

রাগে স্পর্শ ফুলকে থাপ্পর মারার জন্য হাত ওঠালো ফুল সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ফেলল।স্পর্শ হাত উঠিয়ে ও নামিয়ে ফেললো।
স্পর্শ একটু আগে যা করেছে তাতে ফুল কেন অন্য মেয়ে থাকলেও এসব বলতো। এটাই স্বাভাবিক দোষটা সম্পূর্ণ স্পর্শর তাই স্পর্শ চুপ করে গেল। ফুলের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বলল,

–“হাতের পাঁচটা আঙুল যেমন সমান নয় তেমনি পৃথিবীর সব ছেলেরাও এক নয়। অনেক সময় চোখের দেখাও সত্যি হয় না। তার মধ্যে কোন না কোন কারণ লুকিয়ে থাকে।”

এটুকু বলে স্পর্শ চুপ করে গেল। ফুল স্পর্শর কথার আগাগোড়া কিছুই বুঝতে পারলো না। স্পর্শর বলা বাক্য ফুলের কাছে বাংলা দ্বিতীয় পত্রের ব্যাকারণের মতো লাগলো। স্পর্শ চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। খুব ইচ্ছে করছে সিগারেট খেতে। কিন্তু স্পর্শর একটা বাজে অভ্যাস সিগারেট খাওয়ার সময় এক কাপ কফি ও খায়। তাই এই ক’দিন তেমন সিগারেট খায়নি। কিন্তু এখন আর পারছে না। কালকেই কফি কিনে আনবে ও। তাহলেই প্রতিদিনের রুটিন মাফিক সিগারেট খেতে পারবে।

স্পর্শ ঘুমিয়ে পড়েছে। ফুল কুশনটা পায়ের নিচে দিয়ে এক কোণায় হাত পা গুটিয়ে বসে আছে। আজকে ও কিছুতেই ঘুমাবে না। যদি ওর ঘুমের সুযোগ নিয়ে স্পর্শ আবার আসে?? না না আর ঘুমাবে না ফুল। লোহার শিকলটা পায়ে আটকানো তাই ঘুমাতে খুব কষ্ট হয় ফুলের। পায়ে দাগ হয়ে গেছে শিকলের। তাই কুশনটা আপাতত পায়ের নীচে রেখে বসে আছে। ওদিকে স্পর্শ মরার মত পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে। স্পর্শরও এতক্ষণ ঘুম আসছিল না অনেক কষ্টে ঘুমিয়েছে।

সকালে ঘুম থেকে উঠে স্পর্শ দেখল ফুল পায়ের নিচে কুশন দিয়ে দেওয়ালে হেলান দিয়ে ঘুমাচ্ছে। স্পর্শ কোন আওয়াজ না করে বেরিয়ে যায়। ফুল একটু দেরিতেই ঘুম থেকে উঠে। সারারাত চিন্তায় ঘুমাতে পারেনি। ভোর ভোর ঘুমিয়ে পড়েছে। ঘুম থেকে উঠে স্পর্শকে দেখতে না পেয়ে ফুল স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। ফ্রেশ হয়ে আবার চেয়ার পেতে বসলো।

স্পর্শ ফিরে এলো হাতে একটা বড় ব্যাগ। ফুল এক নজর স্পর্শর দিকে তাকিয়ে আবার মুখ ঘুরিয়ে নিলো। কালকে রাতের ঘটনার কথা মনে পড়লেই রাগ হচ্ছে ফুলের। স্পর্শ গিয়ে বিছানায় বসল। একে একে খাবারের প্যাকেট আর ফ্লাগটা বের করল। তারপর টেবিল ফ্যান বের করলো। অনেক গরম পড়েছে রাতে ঘুমাতে কষ্ট হয়। স্পর্শর ফ্যান ছাড়া ঘুমানোর অভ্যাস নেই তাই ফ্যানটা কিনে এনেছে। ফুল দূর থেকে দেখতেছে ফ্যানটা মনে মনে খুশি ও হলো। কারণ ফুলের ও ঘুমাতে কষ্ট হয় ফ্যান ছাড়া। স্পর্শ ফ্যানে কানেক্ট করে অন করল। ফ্যানের নিচে বসে এখন ভালো লাগছে। শার্টের বোতাম দুটো খুলে ফেলল। পুরো ঘেমে গেছে স্পর্শ। ফুল আস্তে আস্তে এগিয়ে এসে বলল,

–“ফ্যানটা একটু এদিক ঘোরান।”

স্পর্শ চোখ তুলে ফুলের দিকে তাকাতেই ফুল আমতা আমতা করে বলল,

–“না মানে আমার ও তো গরম লাগছে।”

স্পর্শ ব্যাগ থেকে একটা প্লাস্টিকের হাতপাখা বের করে ফুলকে দিয়ে বলল,

–“এখন থেকে পাখা দিয়ে বাতাস খাবে আমি আর কোন ফ্যান কিনতে পারব না তোমার বাবার মতো ওত টাকা নেই আমার।”

ফুল পাখা হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে বলল,

–“পাখা দিয়ে সারারাত বাতাস করলে আমি ঘুমাবো কিভাবে??”

–“দ্যাটস ইউর প্রবলেম। তুমিই সলভ করে নাও।”

–“কেন ফ্যানটা একটু এদিকে ঘুরিয়ে দিলে কি হয়??”

–“আমি তোমার কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নই।”

ফুল ঠোঁট ফুলিয়ে গিয়ে চেয়ারে বসে পাখা দিয়ে বাতাস খেতে লাগল। ফুলের খুব রাগ হচ্ছে। ইচ্ছে করছে চেয়ার দিয়ে স্পর্শের মাথা ফাটিয়ে দিতে। ফুল বাতাস করছে আর স্পর্শকে মনে মনে গালি দিচ্ছে। তখনই সিগারেটের ধোঁয়ার গন্ধ নাকে আসতেই খুক খুক করে কেশে ওঠে ফুল। তাকিয়ে দেখে স্পর্শ ফ্লাগের কাপে করে কফি খাচ্ছে আর সিগারেট টানছে। ফুল তো অবাক স্পর্শ সিগারেট খাচ্ছে কিন্তু এই দুদিন তো খায়নি। তবে?? ফুল ওড়না দিয়ে নাক ঢেকে স্পর্শর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,

–“আপপপনি এসব কি খাচ্ছেন??”

–“চোখ নেই তোমার?? দেখতেই তো পাচ্ছো কি খাচ্ছি।”

–“না মানে কেন খাচ্ছেন??”

–“আমি কি খাব না খাব তার কইফিয়ত কি তোমাকে দিতে হবে??”

–“একটু বাইরে গিয়ে খান আমার সিগারেটের ধোঁয়া সহ্য হয় না।”

–“তোমাকে যত দেখছি আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি। তুমি আমাকে অর্ডার করছ। তোমার সাহস তো কম না।”

ফুল বড় একটা নিঃশ্বাস ফেলে চেয়ারে গিয়ে বসলো। ফুল বুঝতে পেরেছে স্পর্শকে কিছু বোঝানো আর কচুপাতায় পানি ঢালা একই কথা। কুচুপাতায় যেমন হাজার কলস পানি ঢাললেও ভিজবে না তেমনি স্পর্শকে কিছু বোঝালেও বুঝবে না। ফুল নাকে শক্ত করে ওড়নাটা চেপে ধরে বসে আছে তবুও সিগারেটের গন্ধ ওড়না ভেদ করে আসতেছে। স্পর্শ সিগারেট শেষ করে বাইরে গেল। একটু পর আবার এসে বাথরুমে ঢুকে লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। সাথে সাথেই ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দিলো। ফুল বসে বসে স্পর্শর কান্ড দেখতেছে। মনে মনে বলছে,

–“ইশশ খুব তো ফ্যানের নিচে ঘুমাচ্ছে কিন্তু আমি কিভাবে ঘুমাবো??এই হাতপাখা দিয়ে আর কতক্ষন বাতাস করা যাবে??”

ফুল গালে হাত দিয়ে বসে আছে। বসে বসে স্পর্শর ঘুমানো দেখতেছে আর হাতপাখা নেড়ে বাতাস করতেছে। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে স্পর্শ কফি নিয়ে বসল। একটা সিগারেট ধরাতেই তার ধোঁয়া আবার ফুলের নাকে এলো। ফুল এতক্ষণ চেয়ারে বসে বসে ঘুমে ঢুলছিল। সিগারেটের ধোঁয়া নাকে আসতেই চমকে উঠে। স্পর্শকে সিগারেট খেতে দেখে তাড়াতাড়ি নাকে ওড়নাটা দেয়। স্পর্শ সিগারেট এক টান দিয়ে কফির কাপে চুমুক দিতেই নাক কুঁচকে ফেলে। কফিটা অনেকটা ঠান্ডা হয়ে গেছে। বলতে গেলে কুসুম গরম। স্পর্শ গরম কফি ছাড়া খেতে পারে না। তাই কফিটা রেখে দিল। সিগারেটটা অর্ধেক খেয়ে ফেলে দিলো। কফি বিনা সিগারেট ওর কাছে জল বিনা মাছের মত। ফুল এতক্ষণ চেয়ে চেয়ে স্পর্শর কান্ড দেখতেছিল। ও ভেবে পাচ্ছেনা যে স্পর্শ সিগারেট খেল না কেন??

স্পর্শ বাইরে থেকে দরজা তালা বন্ধ করে চলে যায়। বাজারে দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে স্পর্শ ভেলপুরি খাচ্ছে আর ভাবছে আজকে কি আজমল চৌধুরীকে ফোন করবে?? না থাক আর একটু টেনশনে রাখা যাক চৌধুরী সাহেব কে?? খাওয়া শেষে স্পর্শ একবার ভাবলো ফুলের জন্য ভেলপুরি নিবে কি??যদি আবার বমি করে ভাসিয়ে দেয়??এত বড়লোকের মেয়ে সে কি না ভাত ছাড়া অন্য কিছু খেতে চায় না। নিশ্চয়ই কিছু গন্ডগোল আছে মেয়েটার মধ্যে। স্পর্শ ফুলের জন্য খাবার কিনে ফিরে আসে। ফুল এতক্ষণ স্পর্শর ফ্যানটা চালু করে বাতাস খাচ্ছিল। দরজা খোলার শব্দে তাড়াতাড়ি ফ্যানটা অফ করে চেয়ারে গিয়ে বসে পড়ল। রুমে এসেই স্পর্শর চোখ গেল ফ্যানের দিকে। পাখাগুলো এখনো ঘুরতেছে তার মানে ফুল এতক্ষণ ফ্যানের নিচে বসা ছিল।

স্পর্শ ফুলেরর দিকে তাকিয়ে বলল,

–“তুমি ফ্যান অন করেছিলে??”

–“কই না তো!!”

–“তাহলে পাখাগুলো ঘুরছে কেন??”

একথা শুনেই ফুল জিভে কামড় দিলো। মনে মনে বলল,

–“ইশশশ ধরা পড়ে গেলাম। এখন কি বলব?”

স্পর্শ খানিকটা ধমকের সুরে বলল,

–“কি হলো কথার উত্তর দিচ্ছো না কেন?”

ফুল আমতা আমতা করে বলল,

–“আ আমি জানি না।”

–“কারেন্ট বিল তোমার বাপ এসে দেবে??”

ফুল এবার দাঁড়িয়ে বলল,

–“কেন??আমার বাবা দেবে কেন?? আমার বাবা কি বলেছিল আমাকে কিডন্যাপ করে আনতে। কিডন্যাপ করে যখন এনেছেন তখন আমার ভালো মন্দ সবকিছু দেখার দায়িত্ব আপনার। আর যদি তা না পারেন তাহলে আমাকে ছেড়ে দিন।”

স্পর্শ ফুলের হাতে খাবার ধরিয়ে দিয়ে বলল,

–“আমি কি করব না করব তা তোমাকে বলতে হবে না। এইটুকু মেয়ের কি বড়বড় কথা।”

–“ওয় হ্যালো আমি যথেষ্ট বড় তা না হলে কি বাবা আমাকে বিয়ে দেয়??”

–“তোমার বড়বড় কথা শুনে সবাই তোমাকে বড় ভাবে আসলে তুমি ততটা বড় না।”

–“আপনি কিন্তু,,,,”

–“এই থামো তো বকবক করে মাথা নষ্ট করে দিচ্ছো। খাবার এনেছি চুপচাপ খেয়ে নাও।”

স্পর্শ বিছানায় শুয়ে পড়ল। ফোন বের করে গেমস খেলতে লাগল। ফুল ফ্লোরে বসে পড়লো। খাবারের প্যাকেট খুলে খেতে লাগল।
স্পর্শ বারবার আড়চোখে ফুলের খাওয়া দেখতেছে। ফুল স্পর্শর দিকে তাকাতেই স্পর্শ ওপাশ ফিরে গেল।

খাবার খেয়ে ফুল কুশন মাথার নিচে দিয়ে শুয়ে পড়ল। কিন্তু ওর ঘুম আসছে না। আজকে গরম একটু বেশি পড়েছে। বড় কথা ফ্যান দেখে গরম বেড়ে গেছে। হাতপাখা নাড়তে ইচ্ছে করছে না। হাতটা ব্যাথা হয়ে গেছে। ফুল উঁকি দিয়ে দেখলো স্পর্শ ঘুমিয়েছে কি না??স্পর্শকে ঘুমাতে দেখে ফুল মুচকি হাসলো। আস্তে আস্তে স্পর্শর দিকে এগিয়ে গেল। স্পর্শর পাশ ঘেঁষে বসে ফ্যানের দিকে মুখটা এগিয়ে দিলো। এখন একটু ভালো লাগছে ফুলের। চোখ বন্ধ করে বাতাস অনুভব করতেছে। ফুলের খোলা চুলগুলো বাতাসে উড়ছে। বারবার স্পর্শর মুখে চুলগুলো আছড়ে পড়ছে ফুলের সেদিকে খেয়াল নেই। ফুল গরম নিবারণ করতে ব্যস্ত। মুখে চুল পড়ায় স্পর্শর ঘুম ভেঙ্গে গেল। তাকিয়ে দেখে ফুল চোখ বন্ধ করে ফ্যানের সামনে বসে আছে। কয়েক সেকেন্ড স্পর্শ ফুলের দিকে তাকিয়ে ওর হাত ধরে হ্যাচকা টান মেরে বিছানায় ফেলে ওর হাত বিছানার সাথে চেপে ধরে। আকস্মিক ঘটনা ঘটায় ফুল হতভম্ব হয়ে গেল। স্পর্শকে দেখে ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে।

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,

কালকে সম্ভবত গল্প দিতে পারব না। কারণ গোপালগঞ্জ যাব পরিবারের সাথে। কেউ অপেক্ষা করবেন না।

ধন্যবাদ ❤️❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here