বিকেলে ভোরের ফুল পর্ব ২৩

#বিকেলে_ভোরের_ফুল

#পর্ব_২৩

#Ishita_Rahman_Sanjida(Simran)

স্পর্শের বাবা অনবরত স্পর্শকে ফোন করেই যাচ্ছে কিন্তু স্পর্শ ফোন ধরছে না। বিয়ের খুশি বাদ দিয়ে সেখানে কান্নার রোল পড়ে গেছে।স্পর্শের মা সোফায় বসে কাদতেছে স্পন্দন মা’কে শান্তনা দিচ্ছে। ফুল ও কাদতেছে দিয়া ফুলের পাশে বসে আছে।এক ঝাঁক চিন্তা নিয়ে সবাই পায়চারী করতেছে। শেষে সবাই সিদ্ধান্ত নিল পুলিশের কাছে যাবে।এই নিয়ে সবাই কথা বলতেছিল তখনই সদর দরজা দিয়ে স্পর্শ আসলো। সবাই তো অবাক হয়ে গেল তার সাথে রাগও হলো। স্পর্শের বাবা রেগে গিয়ে বলল,

–“কোথায় ছিলি এতক্ষণ তুই??সবাই কত চিন্তা করছিল জানিস??”

–“বাবা আমার কথাটা শোন।”

–“কি শুনব হ্যা??তোর মায়ের অবস্থা দেখ একবার। আমরা তো সবাই ভেবেছিলাম,,,”

–“ফুলের বাবা আমাকে গায়েব করে দিয়েছে তাই তো?দেখ আমার মনে হয় না যে এরপরও ফুলের বাবা আমাদের কোন ক্ষতি করার চেষ্টা করবে। কারণ এখন সবাই আমাদের শত্রুতার কথা জানে। আমাদের পরিবারের কোন ক্ষতি হলে সবার আগে ফুলের বাবার দিকেই আঙ্গুল তোলা হবে।”

–“কিন্তু তুই কোথায় গিয়েছিলি??”

–“ওয়েট।”

স্পর্শ পিছনে ঘুরে বলল,

–“আন্টি ভেতরে আসুন।”

একটা মহিলা ভেতরে প্রবেশ করল।মহিলাকে দেখে বাড়ির সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। ফুল দৌড়ে গিয়ে মহিলাটিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিল।মহিলাটি ও কাঁদছে। এতবছর
পর নিজের মেয়েকে দেখে তিনি আবেগ ধরে রাখতে পারলেন না। ফুল মা’কে জড়িয়ে ধরে বলল,

–“কেমন আছো মা?? তুমি জানো তোমাকে আমি কত মিস করেছি?তবুও বাবা একবারও তোমার কাছে আমাকে যেতে দেয়নি। আপুও আমাকে ছেড়ে চলে গেছে আর তুমিও। আমি পুরোই একা হয়ে গিয়েছিলাম। আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি মা,,,,।”

ফুলের মা ফুলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,

–“কাদিস না মা। এই দেখ আমি এসে গেছি। আমিও তো এতদিন তোকে ছাড়া ভালো ছিলাম না।তোর কাছে যাওয়ার কত চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু পারিনি।তোর বাবা সবসময় তোর সাথে গার্ড পাঠাতো যাতে আমি তোর কাছে যেতে না পারি। কিন্তু আজ আমি তোর কাছে আসতে পেরেছি।”

দু’জনেই কথা বলতেছে আর কাদতেছে।সবাই মা মেয়ের কান্না দেখতেছে আর নিজেরাও কাদতেছে।স্পর্শ এগিয়ে এসে ফুলকে ওর মায়ের থেকে ছাড়িয়ে বলল,

–“এই কান্নাকাটি বন্ধ করো প্লিজ। আজকে আমাদের সবার খুশির দিন। কোথায় সবাই আনন্দ করব তা না। এখানে সবাই কেঁদে ভাসাচ্ছে।”

ফুলের মা হালকা হেসে স্পর্শের গালে হাত বুলিয়ে বলল,

–“তোর কাছে আমি সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকব
রে স্পর্শ।”

ফুল তখনও কাদতেছে।স্পর্শ ফুলের মাথায় গাট্টা মেরে বলল,

–“এই তুই ফ্যাচফ্যাচ করে কাঁদা বন্ধ কর।আন্টি তোমার মেয়েকে কাঁদতে বারণ করো??
কেঁদে ভাসিয়ে মেকআপ নষ্ট করে ফেলেছে। ভুতের মতো দেখতে লাগছে।”

ফুল স্পর্শের বাহুতে কিল বসিয়ে বলল,

–“না আমি এখন মায়ের কাছে থাকব।”

–“আরে তাহলে বিয়েটা??”

–“কালকে হবে।”

বলেই ফুল হেসে মায়ের বুকে মাথা গুঁজে দিল।স্পর্শ চোখ কুঁচকে ফুলের দিকে তাকিয়ে আছে। এতক্ষণ পর স্পর্শের বাবা মুখ খুললেন বললেন,

–“কিন্তু তুই ফুলের মা’কে কোথায় পেলি??”

স্পর্শ বলল,

–“আমারা যেদিন শপিং মলে গিয়েছিলাম সেদিন আমি সেখানে ফুলের মামাকে দেখি। তখন ভাবলাম ওনাকে জিজ্ঞেস করে দেখি যদি তিনি কিছু জানেন। কিন্তু ততক্ষণে তিনি গাড়িতে করে বেড়িয়ে যায়। আমিও পিছু নিয়ে ওনার বাড়িতে গেলাম। এবং ফুলের মামার কাছ থেকে জানতে পারলাম যে আন্টি ওনার কাছেই আছে। কিন্তু আন্টি নিজেকে ঘরবন্দি করে রেখেছেন পাড়পি মারা যাওয়ার পর থেকে। আর ফুলের জন্যও খুব কষ্ট পাচ্ছে। তাই আমি আন্টিকে ফুলের ব্যাপারে সব জানাই আর আমার সাথে নিয়ে আসি।”

স্পন্দন বলে উঠলো,
–“তার মানে এজন্যই তোর এত দেরী হয়েছে। কিন্তু তুই একবার আমাদের জানাতে তো পারতি??”

–“সবাইকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য।”

দিয়া এগিয়ে এসে বলল,

–“এতক্ষণ ধরে সবাই অনেক সারপ্রাইজ হয়েছে। এবার সবাই চলো বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু করি। এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে।”

স্পর্শ বলল,
–“হুম তার আগে এই পেত্নিটাকে ঠিক করো। আমি পেত্নিকে বিয়ে করব না।”

ফুল ছোট ছোট চোখে স্পর্শের দিকে তাকিয়ে বলল,

–“আমার বয়েই গেছে আপনার মতো কিডন্যাপারকে বিয়ে করতে। জানেন আঙ্কেল আপনার ছেলে আমাকে আটকে রেখে কি করেছে?? আমাকে দিয়ে ঘর পরিষ্কার করিয়েছে। আমার পায়ে লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছিল।”

দিয়া গালে হাত দিয়ে বলল,

–“ওমা কি সাংঘাতিক কিডন্যাপার??”

স্পর্শ ফুলের দিকে এগিয়ে এসে বলল,

–“আর তুই কি করেছিলি?? আমাকে যে তিনটা চড় মেরেছিলি!!”

–“বেশ করেছি মেরেছি আরও মারব।”

শুরু হয়ে গেল কথা কাটাকাটি। এবার এদের থামায় কে?ছোটবেলায় দু’জনে যেমন ঝগড়া করতো ঠিক তেমনি ঝড়গা শুরু করে দিল। শেষে অনেক কষ্টে ওদের থামিয়ে সব আচার অনুষ্ঠান শেষ করা হলো।

অনুষ্ঠান শেষে ফুল ওর মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে। অনেক বছর পর আজকে মায়ের আঁচলের সুগন্ধ পেল।তাই মা’কে ছাড়তেই চাইছে না ফুল। ফুলের মাও পরম যত্নে মেয়ের মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছে। খাওয়া দাওয়া শেষে প্রায় সব আত্নীয়রা চলে গেছে। দিয়া এসে ফুলকে বলল,

–“ফুল ওঠো!!”

ফুল মায়ের কোলে মাথা রেখেই বলল,

–“কেন??”

–“কেন মানে অনুষ্ঠানের যে এখনও কিছুটা বাকি আছে।”

–“এখন আবার কি বাকি ভাবি??একটু মায়ের কাছে থাকি না??”

–“শোন মেয়ের কথা। অনুষ্ঠানের সব পর্ব শেষ এখন শুধু বাসর ঘরে তোমাকে দিয়ে আসব তারপর আমার কাজ শেষ। নিজের হাতে সাজিয়েছি বুঝেছো। টাকা না নিয়ে ছাড়বোই না স্পর্শের থেকে।”

–“কিন্তু ভাবি আমি তো আজকে মায়ের কাছে থাকব ভেবেছিলাম।”

ফুলের মা ফুলকে উঠিয়ে বলে,

–“বিয়ের পর তো মায়ের কাছে কেউ থাকে না রে ফুল। তুই যা আর আমি তো চলে যাচ্ছি না। এখানেই আছি। আমার ভাগ্যটা না খুব ভালো জানিস তো?? না হলে এমন সময়ে এসে মেয়ের বিয়ে দেখতে পারব কখনও ভাবিওনি।বড় মেয়ের লাশটাও তো দেখার সুযোগ পেলাম না।”

বলেই তিনি চোখের পানি ছেড়ে দিলেন। ফুল ওর মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিল। দুজনের কান্না দেখে দিয়ার চোখও পানিতে ভরে গেল।আড়ালে চোখ মুছে বলল,

–“দেখুন আন্টি এখন কাঁদার সময় নয়।সব দুঃখের দিন তো শেষ হয়ে গেছে।তাই আমরা যতদিন বাঁচবো হাসি খুশিতে থাকব।আর ফুল তুমি তাড়াতাড়ি চলো।”

বলেই দিয়া ফুলের হাত ধরে টেনে নিয়ে স্পর্শের রুমে নিয়ে যায়।খুব সুন্দর করে রুমটা সাজানো হয়েছে। বাসরঘর বলে কথা, কিন্তু স্পর্শের দেখা নেই।গেল কোথায়??দিয়া হাক দিয়ে স্পর্শকে ডাকতেই স্পর্শ এসে হাজির।স্পর্শ রুমে ঢোকার আগেই দিয়া ওর পথ আটকে বলল,

–“নো সাহেব, টাকা না দিয়ে কোথাও যেতে দেব না।আগে আমার টাকা দাও।”

–“কিসের টাকা??”

–“বাব্বাহ সব ভুলে গেলে নাকি?? আমার বাসরঘর সাজিয়ে টাকা নিয়েছিলে আর এখন সবটা ভুলে গেলে??”

স্পর্শ মাথা চুলকে বলল,

–“মনে তো পড়ছে না।”

–“তাহলে ফুলকে নিয়ে আমি যাই।যখন মনে পরবে তখন ফুলকে দিয়ে যাব।”

–“এই না না ভাবি।কত টাকা লাগবে??”

–“দশ হাজার।”

–“কি??এত টাকা??পাগল নাকি??আর তোমার বাসরঘর সাজিয়ে তো আমাকে ভাইয়া ছ’হাজার টাকা দিয়েছিলো তাহলে আমার বেলায় এতো কেন??”

–“এই তো তোমার সব মনে পরে গেছে।”

স্পর্শ বোকা বনে গেলো। ফুল এগিয়ে এসে বলল,

–“ভাবি এমাউন্ট তো কম হয়ে গেছে। আমার মনে হয় পনের হাজার হলে ভালো হতো।”

স্পর্শ চোখ গরম করে বলল,

–“তুই আমার বউ নাকি শত্রু?? কোথায় আমার পক্ষে কথা বলবি তা না।”

–“তো কি হয়েছে?? আমার যেটা ঠিক মনে হয়েছে আমি সেটাই বলেছি।”

দিয়া ওদের থামিয়ে বলল,

–“তোমরা ঝগড়া পরে করবে।আগে আমার টাকা দাও আমি কেটে পরি।”

স্পর্শ ভাবির কাঁধে হাত রেখে বলল,

–“আচ্ছা চলো বাইরে আমি টাকা দিচ্ছি।”

–“ওকে।”

দিয়া স্পর্শের সাথে বাইরে যেতেই স্পর্শ পিছনে ফিরে এসে রুমে ঢুকে দরজা আটকে দিল। ফুল অবাক হয়ে এগিয়ে এসে বলল,

–“এইটা আপনি চিটিং করছেন।”

–“তুই চুপ থাক। বেশি বকবক করবি না।”

ওদিকে দিয়া কিছুক্ষণ স্পর্শকে বকাবকি করে চলে গেল।স্পর্শ শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে ফুলের দিকে এগোচ্ছে।আর ফুল একপা একপা করে পিছোচ্ছে।স্পর্শ বলল,

–“কি করছি আমি??”

–“ইয়ে মানে দূরে যান।”

–“কেন দূরে যাব।”

–“আর এগোবেন না।”

স্পর্শ তবুও এগোচ্ছে। ফুলের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। ফুল উপায় না পেয়ে বলে উঠলো,

–“স্ট্যাচু।”

স্পর্শ সাথে সাথে স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়ায়। ফুল মুখে হাসি ঝুলিয়ে বলে,

–“এইবার ঠিক আছে।”

স্পর্শ বিরক্তি নিয়ে বললো,

–“এটা কি হচ্ছে ফুল। আজকের এই দিনে তোর এইসব খেলার কথা মনে হলো।”

–“অবশ্যই। খবরদার নড়বেন না কিন্তু তাহলে শাস্তিস্বরূপ সারারাত বাইরে কাটাতে হবে কিন্তু।”

স্পর্শ বিরক্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ফুল আলমারি থেকে একটা শাড়ি নিয়ে বাথরুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলল,

–“মুভ।”

বলেই বাথরুমে ঢুকে গেল।স্পর্শ তো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রাগে ফুঁসছে আর বলছে,

–“একবার বের হ তারপর দেখাচ্ছি মজা।”

ফুল শাড়ি চেঞ্জ করে ওখানেই দাঁড়িয়ে আছে না জানি স্পর্শ এবার কি করবে ওর সাথে??
ফুল ভাবল স্পর্শ কিছু করার আগেই ওকে আবার স্ট্যাচু করে দিতে হবে। ফুল আস্তে করে দরজা খুলে সারা রুমে চোখ বুলায় কিন্তু স্পর্শ নেই।যাক বাবা তাড়াতাড়ি গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লেই কেল্লাফতে। ফুল তাড়াতাড়ি বিছানার দিকে পা বাড়াতেই স্পর্শ পিছন থেকে ডেকে উঠলো ফুল পিছনে ঘুরতেই বলল,

–“স্ট্যাচু।”

ফুল এবার পড়ল মহা বিপদে।স্ট্যাচু হয়েই দাঁড়িয়ে রইল।স্পর্শ হেসে বলল,

–“একদম নড়বি না।নড়লে শাস্তিস্বরূপ কিন্তু,,,।”

–“কি??”

–“শাস্তিস্বরূপ আমাকে একশটা কিস করতে হবে।মানে সেন্ঞ্চুরি বুঝলি।”

–“অ্যা,,,,।”

–“অ্যা নয় হ্যা।”

স্পর্শ ফুলের দিকে এগিয়ে আসতেই ভয়ে ফুলের গলা শুকিয়ে গেল।স্পর্শ ফুলের চারপাশে রাউন্ড দিয়ে বলল,

–“শাড়িটাতে তোকে বেশ মানিয়েছে। কিন্তু,,,”

–“কিন্তু কি?? আর আমাকে মুভ করে দিন প্লিজ।”

বলতে বলতেই স্পর্শ ফুলের কোমড়ে চিমটি কাটলো। ফুল শব্দ করে চেঁচিয়ে উঠলো,

–“আহহহ এটা কি করলেন।”

–“কেন মনে নেই ছোটবেলায় আমার কোমড়ের কোন অংশ দেখা গেলে তুই রাম চিমটি কাটতি।আর আমি তো শুধু চিমটি কাটলাম।”

–“আল্লাহ আর কতো অত্যাচার করবে এই লোকটা আমার উপর??”

স্পর্শ বলল,

–“অনেক।”

বলেই স্পর্শ ফুলের সামনে দাঁড়িয়ে ওর দুহাত নিজের ঘাড়ের উপর রাখল আর ফুলের কোমড় দুহাতে জড়িয়ে ধরে বলল,

–“মুভ।”

ফুল এবার রাগ করল না।উল্টো হেসে দিল।স্পর্শও হেসে ফুলের কপালে নিজের কপাল ঠেকিয়ে হাসলো।

চলবে,,,,,,,,

কালকে শবেবরাত ছিল তাই গল্প লিখিনি। আর এমনিতেও ফেসবুকে একটা প্রবলেম হয়েছে তার জন্য গল্প পোস্ট করাও যাচ্ছে না। VPN ব্যবহার করে ফেসবুকে ঢুকতে হচ্ছে।
এই গল্পটা নিয়ে আর আগাবো না। কালকে শেষ পর্ব পোস্ট করা হবে।

ধন্যবাদ সবাইকে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here