#বিনিময়
পর্ব-২
.
“টাইম আর প্লেস আমি ঠিক করবো। আর তুমি একা আসবে ”
লিসার কথা শুনে হাসে রুহান। এমন অবস্থাতেও নিজে সিদ্ধান্ত নিতে চাচ্ছে। এজন্যেই একে আরো মজা লাগছে রুহানের।”
….
***
লিসা রুহানের অফিসে ঢুকতেই রুহান বলল, “সামান্য দেরিতে এত রাগ হলে চলবে? তোমরা যে ফ্রি ট্রিটমেন্ট এর জন্য মাথা খারাপ কর এজন্য আমাদেরও কাজ করা লাগে। টাকা আকাশ থেকে পড়েনা।”
লিসা অবাক হয়ে গেল রুহানের ব্যবহার দেখে।
প্রথমদিন তারা যখন এসেছিল তখন রুহান কত সুন্দর করে তাদের সালাম দিয়ে বসতে বলেছিল। চা নাস্তাও অফার করেছিল। আজকে সেইই লিসাকে বসতে পর্যন্ত বলছেনা। নাকি তার প্রথমদিন এর ভালোমানুষি সবই অভিনয় ছিল?
.
যাই হোক, যার স্বার্থ তাকেই ধৈর্য ধরতে হয়। তাই লিসা বলল, “সরি ভাই এর চিন্তায় ইদানিং ধৈর্য কমে যাচ্ছে”.
রুহান তখন একটু নরম হল।
লিসা বলল, “কি যেন ফর্মালিটি পূরণ করার জন্য ডেকেছিলেন আমাকে এখানে?”
.
রুহান তখন বলে, “দেখ লিসা, আমি প্যাঁচ মেরে কথা বলা পছন্দ করিনা, তাই যা বলবো
সরাসরিই বলবো। এ দুনিয়াতে ফ্রিতে কোনোকিছুই পাওয়া যায়না।
বিনিময়ে কিছু না কিছু লাগেই। আজ পর্যন্ত যাদেরই ফ্রিতে কাজ
করে দিয়েছি তাদের কাছে থেকে কিছু না কিছু নিয়েছি বিনিময়ে।
বেশি ইমোশনাল হয়ে ব্যবসায়ী হওয়া যায়না। গতবছর এক
পুলিশের লোকের অপারেশন ফ্রিতে করে দিয়েছিলাম,
বিনিময়ে আমি যাতে ইল্লিগাল কাজ করতে যেয়ে ধরা না খাই
সেদিকটা সে খেয়াল রেখেছে। সরকারি অফিসার এর কাজ করে দিয়েছিলাম। এখন কোনো ফাইলই আটকায় না আমার।”
.
লিসা অবাক হয়ে বলল, “আমাদের কাছে কিছু থাকলে আপনার কাছে এভাবে সাহায্য চাইতাম? পুলিশ আর সরকারি লোকের বেশি সাহায্য প্রয়োজন না আমাদের?
আর এসব কথা সেদিন বলেননি কেন?”
.
রুহান বলল, “সে যাই হোক। আমার বাবা বেশি চ্যারিটি করে আমাদের ব্যবসা ধুলিস্যাত করে ফেলেছিলেন প্রায়। তাই আমি তার মত ভুল করিনা। বিনিময় ছাড়া এখানে কোনো সাহায্য পাওয়া যায়না। তুমিও তার ব্যতিক্রম না। যা চাই তোমার কাছে তা দেওয়ার সাধ্য তোমার আছে।.”
এরপর পৈশাচিক হাসি হেসে বলে রুহান,
“তোমার মায়ের সামনে তো আর এসব আলোচনা করা যায়না। আশা করি কি বলছি তা বুঝতে পারার মত ক্ষমতা আছে তোমার।”
.
লিসার মাথা ঘুরতে লাগলো। মনে হচ্ছে পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। খুব বুঝতে পারছে লিসা যে রুহান কি বুঝাতে চাচ্ছে।
তার এই অবস্থা দেখে রুহানের আরো আনন্দ লাগলো। এমনিতে মেয়ের অভাব নাই রুহানের। কিন্তু অসহায় মানুষকে ট্র্যাপে ফেলতে তার অন্যরকম আনন্দ লাগে। তার উপর লিসাকে তার জেদী মেয়ে মনে হয়। এসব মেয়েদের জ্বালাতে আরো ভাল লাগে রুহানের।
.
রাগে চোখটা জ্বলজ্বল করছে লিসার।
যখন লিসা রেগে যায় তখন তার মুখ দিয়ে তলোয়ারের মত ধারালো হয়ে যায়।
সে চিৎকার করে বলল, “এতই যখন টাকার বিনিময়ে মানুষজনের থেকে অ্যাডভানটেজ নিতে ইচ্ছা হয় তাহলে সেসব মেয়েদের কাছে যেতে পারনা? তোমার আব্বুর তো খুব সুনাম শুনি তার ছেলে এমন হয় কেমন করে? তিনিই তোমার আসল বাপ কি না মাকে যেয়ে ভাল করে জিজ্ঞাসা করে নিও”.
.
রুহান এরকম উত্তর প্রত্যাশা করেনি। রাগে চকচক করে উঠলো তার চোখ। সে মনে করেছিল লিসা কান্নাকাটি করবে তার সামনে। হাতজোড় করবে। কিন্তু তার এ অন্যরকম রূপ দেখলো রুহান। এত বাজে গালি দিয়ে দিলো তাও আবার এত ভদ্র ভাষায়। রুহান কোনোপ্রকার রিয়াক্ট করার আগেই লিসা ঘর থেকে বের হয়ে গেল।
.
এরকম জেদী, অবাধ্য ক্যারেক্টার রুহানের যদিও পছন্দ। কিন্ত তার অফিসে এসে একটা মেয়ে তাকেই অপমান করে যাবে একথা মেনে নেওয়া যায়না।
ফোনটা তুলে নিলো সে। অফিস স্টাফকে কতগুলো নির্দেশনা দিলো সে।
তারপর মুচকি হাসি দিলো। এ মেয়েকে লাইনে আনতে হবে তার। আর এ কাজ কেমন করে করা লাগে তা রুহানের ভালোমতই জানা আছে।
.
অফিস থেকে বের হয়ে লিসা অনেকক্ষণ করিডোরে ঘুরঘুর
করতে থাকলো লিসা। আব্বা আম্মাকে কিভাবে কথাটা জানাবে চিন্তা
করছে। অদ্ভুতরকমের সংকোচ হচ্ছে। বাবা মা যদি তাকেই দোষ দেয়?
অবশেষে অনেক সাহস করে সে ভাই এর রুমে যায়। রুমে যেয়ে দেখে যে তার মা কান্নাকাটি করছে।
“কি হয়েছে মা? কাঁদছ কেন?” লিসা জিজ্ঞাসা করে।
“রুহানের সাথে কথা হল তোর? এখনই একজন লোক আমাদের বলে গেল যে আমাদের নাকি বিল পে করতে হবে গত কয়েকদিনের। নাহলে আমাদের আর রাখা যাবেনা “.
লিসার বোঝা উচিত ছিল যে অফিসে যেয়ে সে রুহানকে অপমান করে আসবে আর রুহান চুপ করে থাকবে এমন ছেলে সে না। তারা টাকা জোগাড় করবে এমন সুযোগও দিবেনা রুহান তাদের।
.
লিসা কি বলবে ভেবে পায়না। সে বলে, “না মা ফর্মালিটি পূরণ হয়নি এখনো।”
লিসার মা তখন বলেন, “চল তাহলে এখনই তার অফিসে। আমাদের কথা নিশ্চয় তার মনে নাই। ব্যস্ত মানুষ তো। আমরা যেয়ে কথা বললে ঠিকই বুঝবে।”
.
লিসাকে জোর করে তার মা অফিসে নিয়ে যায়।
লিসার মার সামনে রুহানের চেহারা আবার চেঞ্জড। খারাপ মনে হয় আসলেই অনেক নিঁখুত অভিনয় করতে পারে।
খুব মনোযোগ দিয়ে তাদের কথা শুনার ভান করলো রুহান। তারপরে বলল, “আন্টি আমি আমার মত চেষ্টা করছি। কিন্তু এসব এত সহজ না। সবকিছু তো আমার একার সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করেনা।”
বলে লিসার দিকে তাকিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ হাসি দিলো রুহান। ঘৃণায় মুখ ঘুরিয়ে নিলো লিসা।
“তবুও সাধ্যমত চেষ্টা করব আমি। আফটারঅল এ বয়সী ছেলেকে বাঁচানো আমার সাধ্যের মধ্যে থেকেও যদি কিছু না করি তাহলে আমার জন্য তা লজ্জাজনক “.
রুহান আবার লিসার দিকে তাকালো।
লিসার ইচ্ছা করলো এখনই রুহানকে ঠাস করে চড় দিয়ে দিতে। কিন্তু এখন কিছুই করার নাই। একে তো তার মা আছে তার উপরে সে বাধ্য।
.
লিসা আর তার মা ফিরে আসে অফিস থেকে।
বাসায় যেয়ে লিসা চিন্তা করতে থাকে রুহানের কথা।
শেষমেশ মাকে যেয়ে লিসা জিজ্ঞাসা করে, “আচ্ছা মা, যদি আমার আর লিটনের মধ্যে যে কোনো একজনকে বাঁচানো যেত তুমি কাকে বাঁচাতে?”
মা অবাক হলেন। মাঝেমাঝে লিসা একটু হিংসা করতো তিনিও বুঝতেন কিন্তু এমন সময়ে এসব প্রশ্ন করার মত মেয়ে তো লিসা না।
তিনি বললেন, “সে অসুস্থ তাই হয়তো তার দেখাশোনা বেশি করেছি। কিন্তু তোকে তার থেকে কম ভালোবাসি ভাবলে ভুল ভাবিস। জন্মমৃত্যু আল্লাহর হাতে। তোদের মধ্যে কাউকে বেছে নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। তোদের জন্য আমি প্রাণও দিতে রাজি।”
.
লিসাও আগে তাই ভাবতো যে সে পরিবার এর জন্য প্রাণও দিতে পারবে। কিন্তু আজকে সে বুঝতে পারছে কাজটা কতটা কঠিন। সে খুব ভালোভাবেই জানে যে তাকে কি করতে হবে তাও মেনে নিতে পারছেনা সে।
সারারাত ঘুম হলনা লিসার।
.
.
পরদিন হাসপাতালে যেয়েই রুহানের ঘরে গেল সে। আজ আর সেক্রেটারি আটকালোনা তাকে।
রুহান তাকে দেখে হাসি দিলো।
.
লিসা ঘরে ঢুকে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে, “টাইম, প্লেস আমি বলব। আর তুমি একা আসবে”.
রুহান হেসে বলে, “বাপরে! খুনটুন করে ফেলবেনা তো আবার? আমাকে মেরে ফেললেও কিন্তু তোমার লাভের লাভ হবেনা কিছুই?”
লিসা বলল, “খুন করলে এখানেই করতে পারতাম। তোমার মত মেরুদন্ডহীন মানুষকে মেরে ফেলা কোনো ব্যাপারই না।”
রুহান খুব মজা পেল। ব্যঙ্গ করে বলল, “খুব ভয় লাগছে ম্যাডাম। আপনার কথা মেনে নিলাম”.
লিসা কিছু বললনা।
“আগে আমার প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলেই তো এত সময়
নষ্ট হতনা। তোমার ভাই এর শরীরের অবস্থাও এত খারাপ হতনা,”
পৈশাচিক হাসি হেসে বলল রুহান”.
.
কাঁদো কাঁদো চোখে লিসা বলে, “জীবন্মৃত হওয়ার
প্রস্তাবে কেউ সহজে রাজি হয়না”.
.
রুহান বলল, “ভালোবাসা এক দূর্বলতা যা মানুষকে দিয়ে সবই করাতে
পারে। অনেক সময় নষ্ট করেছ তুমি। যাই হোক, বেটার লেট
দেন নেভার। আজকে রাতে দেখা হবে।
.
*(ঘরের মধ্যে রুহান আর লিসার কথোপকথন শুনে মুচকি হাসলো
ব্যক্তিটি।
একটা নাম্বারে কল করে বলল, “কাজ হয়ে গেছে”.
অপরপ্রান্ত থেকে উত্তর আসলো, “ভাল। পরের পার্সেলে
নেক্সট টাস্ক পাবা।”
ব্যক্তিটি ফোন কেটে ফোনটা পানিতে ফেলে দিলো।
একটা ফোন একবারই ব্যবহারের নিয়ম তাদের।)
.
চলবে…
#ফারিহা_আহমেদ
.