বিনিময় পর্ব ৩

#বিনিময়
পর্ব- ৩
“আজকে ওরা দুজন দেখা করতে যাবে। ওদিক দিয়ে সব ঠিকভাবে এগুচ্ছে। তুমি তোমার কাজ ঠিকমত করেছ তো?”,
ফোনের ওপ্রান্ত থেকে প্রশ্ন করলো লোকটি।
“জ্বি হ্যা, এদিক থেকে সব ঠিক” জবাব আসলো এপ্রান্ত থেকে।
আসলেই, নিজের দায়িত্ব ভালোমতই পালন করছে সে। তার শিকার টেরও পাবেনা কখন সে ট্র‍্যাপে পড়ে গিয়েছে।
***

যে কোনো মেয়ের সাথে দেখা করতে যাওয়ার সময় খুব বেশি রেডি হয়না রুহান। কিন্তু আজকে অনেকক্ষণ ধরেই রেডি হচ্ছে সে। যদিও বাধ্য না সে, তাও কেন জানি ইমপ্রেস করতে চাচ্ছে সে লিসাকে। আর মেয়ের ঠোঁট কাটা খুব, কি বলতে কি বলে কে জানে!
.
রুহানের ফোনে কল আসলো। লিসা ফোন দিয়েছে। ফোন ধরে বলল রুহান, “বের হবো একটু পর। এত ইমপেশেন্ট কেন তুমি?”
অসহ্যকর লাগলো রুহানের টোন লিসার।
কাটাকাটা গলায় উত্তর দিলো, “টাকা নিয়ে আসবা তুমি। তোমার মত ছেলের মুখের কথা আর পেপারওয়ার্কে আমার কোনো ভরসা নাই।”
রুহানের উত্তর শোনার আগেই খট করে ফোন রেখে দিলো লিসা। রাগে গা জ্বলে উঠলো রুহানের। রুহানের মত ছেলে মানে? লিসা কেমন মেয়ে তাহলে?
পরে দেখে নিবে সে লিসাকে।
আপাতত বের হল সে। ওই মেয়ের জন্য আবার তাহলে ব্যাংকেও যাওয়া লাগবে।
তার বাবা তার কান্ডকারখানা সম্পর্কে জানতে পারলে তাকে আস্ত রাখবেনা। তাই নিজের আলাদা একাউন্টে সে টাকা রাখে গোপনে।
.
রুহান যখন লিসার দেওয়া ঠিকানায় গেল তখন রাত প্রায় আটটা বাজে। অলরেডি লেট সে। তাড়াতাড়ি উপরে উঠলো ।
কলিংবেল বাজালো, একটু পরে লিসা এসে দরজা খুলল। কিন্তু রুহানকে ঢুকতে না দিয়ে দরজা ধরেই দাড়িয়ে থাকলো সে।
রুহান বিরক্ত হয়ে বলল, “কি সমস্যা? তোমার টাকা নিয়ে এসেছি। ”
লিসা কিছু না বলে সরে দাড়ালো।
রুহান বলল, “তোমার টাকা নিয়ে এসেছি। আমার কথা কিন্তু আমি……”
কথা বলতে বলতে থেমে গেল রুহান। লিসার দুই গাল বেয়ে পানি পড়ছে।
অন্য কোনো মেয়ে হলে অবাক হতনা রুহান। কিন্ত লিসা প্রথম থেকেই নিজেকে খুব শক্ত করে ধরে রেখেছে।
.
লিসা বলল, “প্লিজ তুমি আমার এত বড় সর্বনাশ করনা। কি দোষ আছে আমার?
তুমি তোমার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করলে আত্মহত্যা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না”.
রুহান এবার রেগে যেয়ে বলল, “দেখ সব তোমার হিসাবমতই হচ্ছে। টাকাও নিয়ে এসেছি যত চেয়েছিলা। এখন এসব কথার কি মানে?”
লিসা বলল, “টাকাই সব না”. বলে আরও বেশি করে কাঁদতে থাকলো লিসা।
রুহান বলল, “ইটস টু লেট ফর দ্যাট”.
বলেই লিসার হাত ধরলো সে জোর করে।
এমন সময় কে যেন ঘাড়ে হাত রাখলো রুহানের। রুহান ঘুরে তাকাতেই ভুত দেখার মত চমকে গেল।
হাত পা অবশ হয়ে গেল রুহানের.
.
রুহানের সামনে আর কেউ না তার বাবা দাড়িয়ে আছেন।
“বা…বাবা তুমি? ” কোনোমতে বলল রুহান।
“তুমি যা ভাবছ তা না”.
ঠাস করে থাপ্পড় মারলেন তিনি রুহানকে।
রুহান থ হয়ে তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকলো।
ছোটবেলা থেকে আজ পর্যন্ত কখনো তিনি রুহানের গায়ে হাত তুলেননি।
ঘটনার আকস্মিকতায় লিসাও অবাক হয়ে গিয়েছে।
“তোমাকে যে ঠিকমত মানুষ করতে পারিনি তা আগেই টের পেয়েছিলাম। কিন্তু তুমি এত বড় অমানুষ হয়ে গিয়েছ তা কল্পনাও করতে পারিনি” রাগান্বিত স্বরে বললেন রুহানের বাবা।
“বাবা আমি…সরি বাবা ভুল হয়ে গিয়েছে। মাফ করে দাও বাবা”. মাথা নিচু করে বলল রুহান।
.
“কোন কোন দোষ মাফ করব তোমার? নিজে কাউকে না বলে বিয়ে করেছ সেই দোষ নাকি এখন টাকার বিনিময়ে তাকে তালাক নিতে বাধ্য করছো সেই পাপ?
তোমার মত ছেলেকে জন্ম দিয়েছি বলে নিজেরই লজ্জ্বা হচ্ছে।”
আরও রেগে বললেন তিনি।
.
বাবার কথা শুনে রুহান এর মুখ হা হিয়ে গেল।
স্ত্রী? এ কি বলছে তার বাবা???
অবাক হয়ে সে তাকালো সে লিসার দিকে। বাবার পিছনে দাড়িয়ে আছে সে। এতক্ষণ ধরে সে অঝোরধারায় কেঁদেই যাচ্ছিল। রুহান তাকাতেই স্পষ্টভাবে দেখলো ধীরে ধীরে তার মুখে হাসি ফুটে উঠছে। হাসিতে একধরণের ব্যঙ্গ।
.
“এমন জায়গায় থাকাও আমাদের জন্য অপমান। বাসায় আসো তুমি। দেখে নিবো তোমাকে আমি.” রুহানকে একথা বলে লিসার দিকে তাকালেন তিনি,
“শোন মেয়ে, কাউকে না জানিয়ে বিয়ে করে তুমিও কম অপরাধ করনি মেয়ে। কিন্তু যখন তুমি আর আমার ছেলে দুইজনেই অপরাধ করেছ তখন এর শাস্তি তুমি একা পাবেনা। তোমার সাথে কোনোপ্রকার অন্যায় হবেনা। এসো তুমি আমার সাথে।”
রুহান বাধা দেওয়ার আগেই লিসাকে নিয়ে চলে গেলেন রুহানের বাবা।”
.
লিসা চলে যাওয়ার পর ওখানেই অনেকক্ষণ বসে থাকলো রুহান। কেমন করে কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছেনা সে। ভালোভাবেই টের পাচ্ছে লিসা ইচ্ছাকরেই ট্র‍্যাপে ফেলেছে তাকে। আর সেও গাধার মত নিজের ফাঁদে নিজেই পড়েছে।
কি করবে সে এখন? সব সত্যি বলে দিবে বাবাকে? খুন করে ফেলবে তাকে যদি তিনি রুহানের আসল চেহারা কথা জানতে পারেন। না জানিয়ে বিয়ে করার কথা শুনেই যেভাবে রিয়্যাক্ট করলেন তিনি! লিসাও ভালোমত বুঝতে পেরেছে এই ব্যাপার। তাই তো বাবার সামনে এভাবে ট্র‍্যাপে ফেলল রুহানকে। লিসা এমন মেয়ে তা কল্পনাও করতে পারেনি রুহান।
.

লিসার উপর খুব রাগ লাগছে রুহানের।
নাহ! কিছুতেই এভাবে লিসাকে জিততে দিবেনা রুহান। তার বাবা যতই ভাল হোক নিজের ছেলের উপর অবশ্যই দুর্বলতা আছে তাঁর। সেটারই সুযোগ লাগাতে হবে। আগে বাড়ি যাক সে।
.
বাসায় পৌছিয়েই বুঝতে পারলো সে যে তার বিয়ের খবর এখানে বাবা অলরেডি বলে দিয়েছেন। বাসায় থমথমে আবহাওয়া কেমন। মা কান্নাকাটি করছেন। দাদীও তার দিকে তাকাচ্ছেননা।
.
রুহান সরাসরি তার বাবার কাছে গেল। গিয়ে যতটা পারে গলায় কান্নাকান্না ভাব এনে বলল, “বাবা, জানি আমি তোমার আদর্শ ছেলে না। তাই বলে কোথাকার কোন মেয়ে কি বলবে আর তুমি তা মেনে নিবে? ওই মেয়ে মিথ্যা বলছে বাবা। কয়েকদিন আগে তার কে যেন হাসপাতালে মারা গিয়েছিল। আমাদের বিরূদ্ধে মিথ্যা কেস করার হুমকি দিচ্ছিলো বারবার। এজন্যেই টাকা অফার করছিলাম। তুমি তো জানোই এরা কেমন হয়? এখন দেখি অল্প টাকাতে তার মন ভরেনা তাই মিথ্যা গল্প সাজাচ্ছে এভাবে।”
.
বাবা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন রুহানের দিকে। তারপর বললেন, “জীবনে কি এমন পাপ করেছি যে তোমার কত ছেলে পেয়েছি?”
রুহান বলল, “সত্যি বলছি বাবা মেয়েটা মিথ্যা বলছে। তোমার ছেলে এমন না।”
বাবা বললেন, “আমিও তাই ভেবেছিলাম। যে আমার ছেলে এমন না। মেয়েটার কথাও বিশ্বাস করতে চাইনি। তারপর মেয়েটা আমাকে এইটা দেখালো।”
.
বাবা রুহানের সামনে একটা কাগজ ধরলেন। রুহান কাগজটা নিয়ে দেখলো। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা সে।
.
লিসা আর রুহানের ম্যারেজ সার্টিফিকেট এর দিকে অবিশ্বাসের চোখে তাকিয়ে থাকলো রুহান.
.
.
***
এয়ারপোর্টে এসে ট্যাক্সি থেকে নামলো রুহানের সেক্রেটারি। মনে মনে হাসছে সে। খুব কম মানুষের ভাগ্যই তার মত ভাল হয়। সাধারণ মানুষের মতই স্বপ্ন নিয়ে চাকুরি শুরু করেছিল সে। এ হাসপাতালের অনেক নামও ছিল। কিন্তু জয়েন করে দেখে যে সব মিথ্যা। রুহানের বাবার হার্টে সমস্যা হওয়ার পরে তিনি হাসপাতালের দায়িত্ব রুহানের হাতে দে।। রুহান হাসপাতালে আসার পর দুর্নীতি ছড়িয়ে দিয়েছে চারিদিকে। আর মেয়েদের নিয়ে অন্যায় কাজ করার কথা তো বাদই দিলো সে।
আর সবচেয়ে বড় কথা এসব কাজের বিরোধিতা করার মত অবস্থা ছিল না তার। অনেক কষ্টে এ চাকুরি পেয়েছে সে। আর রুহানে কনট্যাক্টও ছিল অনেক।
নিজেকে রুহানের মতই অপরাধী মনে হত তার।
.
তাইতো যখন হঠাৎ করে এক অপরিচিত মানুষ এসে বলল যে তারা রুহানের পাপকর্মের জন্য তাকে শাস্তি দিবে, তখন মনে মনে খুশিই হয় সে। প্রথম প্রথম সে বিশ্বাস করতে চায়নি। কিন্তু পরে তারা এত টাকা অফার করে যে সে মানাও করতে পারেনি। আর তাকে বেশি কাজও করা লাগেনি। শুধুমাত্র একটা পেপারে রুহানের সাইন নিয়ে দিয়েছিল সে। এটা কোনো ব্যাপারই না। রুহান নিজে কখনো পেপার পড়ে সাইন করেনা। স্টাফ আছে এসবের জন্য। চারিদিকে অকাজ করে বেড়ানোর পর এসবের জন্য সময় কোথায় তার?!.
.
পেপার খুলে দেখার পারমিশন ছিলনা সেক্রেটারির। যদিও তার খুব কৌতুহল হয়েছিল তার। কিন্তু রিস্ক নিতে চায়নি সে।
এ পরিবেশ থেকে মুক্তি চায় সে।
.
সাইন করা পেপার দেওয়ার পর যত টাকা দেওয়ার কথা ছিল তত টাকাই ক্যাশ পেয়ে যায় সে। এখন মাকে নিয়ে মালয়েশিয়া যাচ্ছে সে।
.
রুহানের শাস্তি হলে খুশিই হবে সে।
.
চলবে….
.
#ফারিহা_আহমেদ
.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here