বিনিময় পর্ব ৪

#বিনিময়
পর্ব-৪
ঠাস করে চড় খেয়ে গালে হাত দিয়ে হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে আছে রুহান।
সেই মনে হয় দুনিয়ার প্রথম ব্যক্তি যে বিয়ের রাতেই চড় খেয়েছে।
সামনে নববধূর বেশে দাড়িয়ে আছে লিসা।

চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি পড়ছে তার।
***
বাবা তার সামনে যখন একটা পেপার মেলে ধরে পড়ার জন্য তখন রুহান মনে করে হয়তো তার দুর্নীতির কথা বাবা জেনে গিয়েছেন। কিন্তু নিজের চোখের সামনে যখন তার আর লিসার ম্যারেজ সার্টিফিকেট দেখে তখন সে নিজের চোখকে বিশ্বাসই করতে পারেনা।
তার বাবা তাকে আগে থেকেই বলতেন পেপার সাইন করার আগে ভালোমত পড়ে নিতে। এ অভ্যাসটা কখনোই হয়ে উঠেনি তাই। এই দুর্বলতাকেই কাজে লাগিয়েছে মনে হয় লিসা। মনে মনে হাজারটা অভিশাপ দিচ্ছে এখন সে লিসাকে।
.

ভালোভাবেই ফাঁসিয়েছে লিসা তাকে। বাবা এখনই এত রিয়্যাক্ট করছেন যদি সত্যি কথা জানতে পারেন তাহলে তাকে মাটিতে পুঁতে ফেলবেন উনি। ঘরের কোণায় দাড়িয়ে একনাগাড়ে চোখের পানি ফেলছে লিসা। একে ঠিকমত না চিনলে রুহানও মনে করতো আসলেই সে ভিক্টিম।
.
বাবা এবার লিসার দিকে ফিরলেন। দিয়ে ওকে ধমক দিয়ে বললেন, “তোমাদের মত মেয়েদেরও সমস্যা আছে। পরিবারকে না জানিয়ে বিয়ে কর কেন? ভাল ছেলে কোনোদিন গোপনে বিয়ে করবেনা এ বুদ্ধি তোমাদের মাথায় নাই? নাকি বড়লোক ছেলে দেখলেই মাথা ঠিক থাকেনা?”
লিসা আরো জোরে কাঁদতে থাকে। তারপর বলে, “বাসায় সবাই অসুস্থ ভাইকে নিয়ে টেনশনে থাকে। আমি ভেবেছিলাম আমার বিয়ে করলে তাদের ঝামেলা একটু হলেও কমবে। ভাই এর চিকিৎসার খরচ চালানোর কথা প্রমিজ করেছিল ও আমাকে আংকেল। তাও মানছি আমার ভুল হয়েছে। কিন্তু ভুল আমরা দুইজনেই করেছি শাস্তি খালি একা আমিই কেন পাবো?”
.
রুহানের ইচ্ছা করছিল লিসাকে খুন করতে। সে রুহানের থেকেও এক্সপার্ট মিথ্যুক। লিসার কান্না দেখে তার বাবা আর কিছু বললেননা।
নরম স্বরে বললেন, “তোমার পরিবার কোথায়?”
লিসা বলল, “হাসপাতালে। তারা কিছু জানেনা।তাদের অপমান করবেননা প্লিজ। এমনিতেই ভাই এর অপারেশন নিয়ে টেনশনে তারা।”
বাবা বললেন, “ভাই এর অপারেশন নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবেনা। তুমি তাদের নিয়ে এসো বাসায়। এবার তোমাদের বিয়ে পারিবারিকভাবেই দিতে হবে।”
রুহান আপত্তি করতে যাচ্ছিল। কিন্তু লাভ নাই। এজন্য চুপচাপ থাকলো সে.
.
.
বিয়ের কয়েকটা দিন মনে হচ্ছে টর্চারের মধ্যে দিয়ে কাটছে রুহানের। সে এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চায়নি। আর সবাই যখন লিসাকে দেখে তার প্রশংসা করে যাচ্ছে তখন রাগে তার গা আরও জ্বলে যাচ্ছে।
এক বান্ধবী বলল, “তোর স্ত্রী তো সুন্দরী আর ইন্টেলিজেন্ট রে! ঠিক যেমন চয়েস তোর”.
রুহানের চোখ আছে। সে ভালোমতই জানে লিসা দেখতে কেমন। আর ইন্টেলিজেন্ট হওয়া আর কানিং হওয়ার মধ্যে পার্থক্য আছে। কিন্তু এখন এসব বলে লাভ নাই।
.
বিয়ের সময় লিসার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল রুহান, “এখন যত পারো আকাশে উড়ে নাও। বিয়ের পরে তোমাকে দেখে নেওয়া যাবে.”
তার দিকে এমন সময় তাকালো লিসা।
যেন রুহানের মনের কথাই বুঝতে পেরেছে।
চ্যালেঞ্জিং হাসি ছুড়ে দিলো তার দিকে।
.
.
বিয়ের রাতে রুহান ঘরে ঢুকতেই দেখে সমস্ত বিছানা দখল করে শুয়ে আছে লিসা। এত্ত বড় সাহস! তার ঘুম হারাম করে উনি নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছেন। রুহান যেয়ে গ্লাসে রাখা পানিটা লিসার মুখে ছুড়ে মারলো। ধড়মড়িয়ে উঠে বসলো লিসা।
রুহান তার সামনে দাড়িয়ে বলল, “তারপর? বিয়েটা তো করলা ধোঁকাবাজি করে। এরপরে কি হবে তা ভেবে দেখেছ কি? সারাদিন বাবার সামনে যতই নাটক কর তিনি কি এই রুমে তোমাকে আসবেন রক্ষা করতে? আগুন নিয়ে খেলা করার সাহস কোথা থেকে পেয়েছ? ”
লিসা তার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে বলল, “এত কথা বল কেন? কান ঝালাপালা হয়ে গেল। আর পুরনো কথা আনার কি দরকার? নতুন করে জীবন শুরু করলে হয়না?”
রুহান অট্টহাসি হেসে বলল, “জীবনকে কি হিন্দি সিরিয়াল পেয়েছ যে খারাপ ছেলেকে নিজে ভালোবাসা দিয়ে ভাল করে দিবে আর সব খারাপ কাজ ফেলে আমি তোমার আগে পিছে ঘুরবো? তোমার মত মেয়েকে কেমন করে লাইনে আনতে হয় জানা আছে আমার।”
লিসা বলল, “তাহলে আর কিছু করার নাই। ইউ ব্রট দিস অন ইওরসেলফ”.

.
কথাটা বলামাত্র কিছু বুঝে উঠার আগেই ঠাস করে রুহানের গালে চড় মারলো লিসা।
এরপর খাটের পাশের রুহান এত অবাক হয়ে গিয়েছে যে কি রিয়্যাক্ট করবে তাও বুঝছেনা। লিসার চোখ দিয়ে আবার পানি পড়তে শুরু করেছে।
.
এমন সময় দরজায় কে যেন নক করলো। বাইরে থেকে বাবা আর দাদী রুহানের নাম ধরে ডাকছেন। রুহান যেয়ে দরজাটা খুলে।
পরিবারের সবাই এসে বলে, “কি ব্যাপার? কিসের আওয়াজ শুনলাম মনে হল?”
লিসার দিকে চোখ পড়তেই সবাই অবাক হয়ে যায়। নতুন বউ কান্নাকাটি করছে আর তার জামাকাপড়ও ভেজা। তারা সিদ্ধান্তই নিয়ে নেয় যে রুহানই লিসার গায়ে হাত তুলেছে।
বাবা রুহান কে কোনোপ্রকার এক্সপ্লেনেশন দেওয়ার সুযোগ না দিয়েই বলেন, “শেষ পর্যন্ত আমাদের এই দিন দেখতে হল যে তুমি তোমার নিজের বউ এর গায়ে হাত তুলেছ? তুমি এতটা নিচে নামতে পারবে আমি তা কল্পনাও করিনি।”
রুহান বলে, “বাবা আমি কিছু করিনি, ওইই উল্টা….”
লিসা কথার মাঝখানে কাঁদতে কাঁদতে বলে, “আংকেল কিছু মনে করবেননা। রুহান এখনো আমাকে মেনে নেয়নি আমি আগে থেকেই জানতাম। কিন্তু সে কারো গায়ে হাত তুলবে তা কল্পনাও করিনি। এর সাথে আমার এক রুমে থাকা সম্ভব না। কোনোদিন দেখা গেল সে আমাকে মেরেই ফেলবে।”.
রুহান বলে উঠে, “খবরদার। লজ্জ্বা করেনা এত মিথ্যা কথা বলতে? আর একবার মিথ্যা মথাকথা বলেছ তো তোমাকে আমি খুন করবো।”
লিসা বলল,”দেখছেন আংকেল। আপনাদের সামনেই শাসাচ্ছে আমাকে। প্লিজ মাফ করেন আমাকে। আমি চলে যাই এখান থেকে। ”

বাবা তখন বললেন, “তুমি যাবে কেন? এটা এখন তোমার ঘর। বাইরে যেতেই হলে রুহান যাবে। রুহান তুমি আজকেই গেস্টরুমে শিফট কর। এ সম্পর্ক মেনে না নেওয়া পর্যন্ত ওখানেই থাকবে।”
.
রুহানের জীবনে প্রথম কান্না আসে। ছোটবেলা থেকে বাবামায়ের অবাধ্যতা করে এমন অবস্থা করেছে যে দুইদিন আগে আসা মেয়েকেও তারা রুহানের থেকে বেশি বিশ্বাস করে। এখন আফসোস হচ্ছে তার।


গেস্টরুমে শুয়ে থেকে রুহান প্ল্যানিং করতে থাকে কিভাবে মুক্তি পাবে লিসার হাত থেকে। বাবা থাকতে ডিভোর্স দেওয়া কিছুতেই সম্ভব হবেনা। কি করা যায়!!!
.
লিসা তাকে আন্ডারএস্টিমেট করে ঠিক করেনি। তার গায়ে হাত তোলার শাস্তি লিসাকে পেতেই হবে।
ফোনটা নিয়ে নিজের পুরনো বন্ধু, তার পার্টনার ইন ক্রাইম কে কল করলো রুহান।
.
.
.
পরেরদিন সকাল সকাল কাজের লোক এসে রুহানকে ঘুম থেকে ডাক দিলো। চরম বিরক্ত হল রুহান। এমনিতেই রাতে তার ঘুম হয়নি। বিরক্ত হয়ে খাওয়ার টেবিলে গেল রুহান।
বাবা বললেন, “লিসাকে আজকে তার নিজের বাসায় নিয়ে যাও। তার ভাই এর অপারেশন হয়েছে। এখন তার বাসায় যাওয়া প্রয়োজন।”
রুহান বিরক্ত হয়ে বলল, “সে নিজেই চলে গেলেই তো পারে. ”
বাবা বললেন, “নতুন বউকে বাসায় একা পাঠানো ঠিক না। তোমাদের সম্পর্ক ভাল না এটা সমস্ত দুনিয়ায় জানানোর প্রয়োজন নেই। আমার একটা সম্মান আছে।”
.
রুহান বিরক্তি দেখিয়ে রেডি হতে গেল। লিসাও ইতিমধ্যে সেজেগুজে হাজির।
গাড়িতে করে একসাথে রওনা দিলো তারা।
মাঝখানে একটা দোকানে গাড়ি থামালো রুহান। লিসা বলল, “কি ব্যাপার? গাড়ি থামালে কেন?”
রুহান বলল, “শ্বশুড়বাসায় খালি হাতে যাবো?”
চোখ সরু হয়ে গেল লিসার। সন্দেহ করছে রুহানকে। রুহান গাড়ি থেকে নামলো।
.
গাড়ি দাড় করানো অবস্থায় দেখে একটা ভিক্ষুক ভিক্ষা করতে আসছে গাড়ির কাছে। লিসা গ্লাস নামিয়ে টাকা দিতে যাবে এমন সময় মুখে কে যেন একটা স্প্রে করে।
লিসা চিৎকার করে রুহানকে ডাকতে চায় কিন্তু আওয়াজ বের হয়না মুখ থেকে। চোখের সামনের দিকটা ধীরে ধীরে অন্ধকার হয়ে আসে।
.
জ্ঞান হারালো লিসা।
.
চলবে…
.
#ফারিহা_আহমেদ
.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here