বিলম্বিত বাসর পর্ব ১৯

#বিলম্বিত_বাসর
#পর্ব_১৯
#Saji_Afroz
.
.
.
সদর দরজা খোলা পেয়ে খানিকটা অবাক হলো আবেশ। তার মা রাত ১০টার পরেই যেখানে দরজা বন্ধ করে দেয় আজ কিনা ১১টার পরেও খোলা! হয়তোবা ভুলে গিয়েছে।
সদর দরজা বন্ধ করে ভেজা শরীরে নিজের রুমের দিকে এগিয়ে গেলো আবেশ। বৃষ্টি হচ্ছে তুমুল। বন্ধুদের সাথে ঘুরাঘুরি হয়েছে আজ অনেক দিন পর। শরীরটা মেশ মেশ করছে। একটা লম্বা ঘুমের প্রয়োজন এখন খুব বেশি।
.
.
.
আয়ানকে জড়িয়ে ধরে লামিয়া বললো-
কাল আমি চলে যাবো। কিস করবো তোমাকে।
-আমি তোমার বাসায় যাবোতো। দিনে না গেলেও রাতে গিয়ে থেকে আসবো আর…
.
বলেই হাসলো আয়ান।
লামিয়াও হেসে বললো-
লজ্জা করবেনা? আমার বাসায় এভাবে যেতে?
-বউ এর কাছে যেতে কিসের লজ্জা শুনি? গর্বসহকারে যাবো আরো।
-কিন্তু তোমার তো খুব তাড়াতাড়ি হলে চলে যেতে হবে। পরীক্ষা না?
-পরীক্ষা কি এক টানা হয় নাকি! আমি আসবো বন্ধের মাঝে।
-কোনো দরকার নেই। পরীক্ষা ভালোভাবে দাও। তারপর এসে বিয়েটা করে নাও।
-বিয়েতো হয়েই গেলো। বাসায় নিয়ে আসবো পরীক্ষা দিয়ে যেদিন আসবো সেদিনই।
-কিপ্টার মতো কথা বলবেনা। ঢাকঢোল বাজানো ছাড়া আমি এ বাড়ি পার্মানেন্ট আসবোনা। কতো স্বপ্ন জানো বিয়ের অনুষ্ঠান নিয়ে আমার?
-আচ্ছা তুমি যা বলো। তুমি বললে আমি আমেরিকাতেও বিয়ের অনুষ্ঠান করতে পারি!
.
আয়ানের কথা শুনে হাসির মাত্রা বাড়িয়ে দিলো লামিয়া।
সে হাসির রোল দেখে তার মুখে নিজের ঠোঁটের ছোঁয়া বসিয়ে দিলো আয়ান।
আয়ানের ছোঁয়া পেতেই হঠাৎ আদুরের বলা কথাগুলো মনে হলো লামিয়ার।
আয়ানের উদ্দেশ্যে সে বললো-
আবেশ ভাইয়াদের এখনো বাসর হয়নি।
.
লামিয়ার কথা শুনে হো হো শব্দে হেসে উঠলো আয়ান।
তা দেখে লামিয়া বললো-
আমাকে আদুরে ভাবী বলেছেন।
.
হাসি থামিয়ে ভ্রুজোড়া কুচকে আয়ান বললো-
এটা কেমন কথা! ৬বছর প্রেম করে বিয়ে হয়েছে তাদের। বাসর কেনো হবেনা?
-আমি কি করে বলবো! আমার নিজেরি অবাক লাগছে শুনে।
-কেমনে আমার ভাই এতোবছর প্রেম করে ধুমধামভাবে বিয়ে করেও বাসর না করে আছে! আমি ২বছর প্রেম করে বিয়ে না করেই বাসর করার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিলাম।
-হুম তুমিতো অতি মাত্রায় রোমান্টিক। আর আবেশ ভাইয়া অনেক বেশি ভদ্র।
-বউ এর সাথে বাসর করেনায় এটা কেমন ভদ্রতা! ভাবী ঠিক বলেছেন, ভাইয়া আসলেই একটা ম্যান্দামার্কা!
.
.
.
ভেজা শরীরে রুমে প্রবেশ করতেই আবেশ দেখতে পেলো পুরো রুমটা মোমবাতি আর ফুল দিয়ে সাজানো। বিছানার মাঝখানে অজস্র ফুলের পাপড়ি ছিটানো।
আদুরে কি তাদের বাগান থেকে ফুল এনে এসব করেছে! কিন্তু কেনো? আর আদুরে বা কই?
.
-অনেক সাধনার পরে আমি পেলাম তোমার মন,
পেলাম খুঁজে এই ভুবনে আমার আপনজন,
তুমি বুকে টেনে নাওনা প্রিয় আমাকে,
আমি ভালোবাসি,, ভালোবাসি,,, ভালোবাসি তোমাকে!
.
গান গেয়ে গেয়ে বারান্দা থেকে বেরিয়ে আসলো আদুরে।
এমন সাজে আদুরেকে দেখতে পেয়ে বেশ অবাকই হলো আবেশ। এর আগে সে এভাবে কখনো তাকে দেখেনি। একটা ঘোর কাজ করছে তার মনের মাঝে।
আবেশের কাছে এসে আদুরে বললো-
আজ আমি তোমার স্ত্রী হবার অধিকার চাই। দিবে কি?
.
আদুরের কাছে এটা আশা করেনি আবেশ। সে স্ত্রীর অধিকার এভাবে হঠাৎ করে চেয়ে বসবে ভাবতে পারেনি সে।
ভেজা শরীরেই আদুরেকে জড়িয়ে ধরলো আবেশ।
আদুরেও তাকে শক্ত করে চেপে ধরলো। আজ বুঝি আবেশ তার ডাকে সাড়া দিবে?
কিন্তু না, তাকে অবাক করে আবেশ বললো-
বন্ধুদের সাথে ঘুরাঘুরির ফলে খুব ক্লান্তি লাগছে আদুরে। মাথাটা ভনভন করছে। মনে হচ্ছে এখুনি পড়ে যাবো মাথা ঘুরিয়ে।
.
আবেশের কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে আলনার দিকে এগিয়ে এলো আদুরে। হাতে তোয়ালে নিয়ে আবেশের কাছে এসে তার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো-
তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও, ভেজা কাপড় বদলে নাও। আমি কাপড় দিচ্ছি তোমাকে।
.
.
বিছানার উপর শুয়ে আছে আবেশ। তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আদুরে। বৃষ্টিতে ভেজার ফলে শরীরটা গরম হয়ে আছে তার। জ্বরও এসেছে।
যে বিছানায় আজ দুজনে মিশে যাবে ভেবেছিলো সেই বিছানায় আবেশের সেবায় ব্যস্ত সে।
আবেশের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আদুরে বললো-
খারাপ লাগছে?
-হু।
.
আবেশের কপালে আলতো করে ঠোঁটের ছোঁয়া বসিয়ে দিলো আদুরে।
আবেশের মনে হলো এটাই যেনো এখন তার ভালো হবার মেডিসিন!
কিছু না ভেবেই আবেশ বললো-
আরেকটু ছোঁয়া দিবে কি তোমার?
.
কথাটি শুনতেই আবেশের মুখে, চোখে চুমু এঁকে দিলো আদুরে।
আদুরে উপুড় হওয়াতে তার চুলগুলো আবেশের মুখের উপর পড়লো।
আবেশ একটা হাত আদুরের কোমরে রাখলো। আরেকটা হাতে ওর কানের নিচ দিয়ে চুলের ভেতর দিয়ে ওর মুখটা তুলে ধরলো। আদুরে তার দিকে তাকাতেই আবেশ তার ঠোঁটে ঠোঁট রাখলো। এরপর গভীর চুম্বনে লিপ্ত হয়ে পড়লো তারা।
কিছুক্ষণের মধ্যেই আবেশ টের পেলো আদুরের চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। কিন্তু কেনো?
আদুরেকে উল্টো করে শুইয়ে দিয়ে তার উপর উপুড় হয়ে আবেশ নাকে নাক ঘষে জিজ্ঞাসা করলো-
কি হয়েছে? কাঁদছো যে?
-অতি সুখে। এ যেনো এক অন্যরকম সুখ আবেশ! আমি হারিয়ে যেতে চাই এই সুখের মাঝে।
.
আদুরের কথাগুলো তীরের মতো বুকে বিধলো আবেশের। আসলেই যেটা আদুরের প্রাপ্য সেটা থেকে তাকে বঞ্চিত করা মোটেও ঠিক হচ্ছেনা। মেয়েটারই বা কি দোষ?
আর কিছু না ভেবে আবেশ বললো-
আমার আদুরের আদর চায়?
-হু চাই।
.
আদুরের কথা শুনা মাত্রই তার গলায় মুখ ডুবিয়ে শত শত চুমোতে ভরিয়ে দিতে লাগলো আবেশ।
আবেশের ঠোঁটের প্রতিটা স্পর্শে কেঁপে কেঁপে উঠছে আদুরে।
আদুরের কানের লতিতে আবেশ ঠোঁট বসাতেই শিউরে উঠলো সে। দুহাত দিয়ে আবেশের চুল খামচে ধরে সরিয়ে দিতে চাইলো। আবেশ সরলো না। আশেপাশে আরো কয়েকটা চুমু দিলো। এভাবে মিশে যেতে থাকলো তারা একে অপরের মাঝে।
.
.
.
সকাল বেলায় গোসল সেরে এসেই আবেশকে সোফার উপরে দেখতে পেলো আদুরে।
উদাসীন ভাবে বসে আছে সে।
আদুরে তার দিকে প্রশ্ন ছুড়লো-
এমন পঁচামার্কা মুখ করে বসে আছো কেনো?
.
সে প্রশ্নের জবাব না দিয়ে আবেশ উল্টো প্রশ্ন ছুড়লো-
আচ্ছা আদু? কাল রাতে তোমার চাওয়া আমি পূর্ণ করেছি। আমার একটা চাওয়া কি তুমি পূর্ণ করবে?
.
কিছু না ভেবেই আদুরে বললো-
কেনো নয়!
-ভেবে বলো। তোমার জন্য হয়তো সহজ হবেনা বিষয়টা।
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here