#বুকভরা_ভালোবাসা
#পর্বঃ৭
#লেখিকাঃদিশা মনি
মুগ্ধ তার বন্ধু ধ্রুবকে বলতে থাকে,
‘আজ শুধু মেহুলকে আসতে দে। তারপর দেখ আমি ওর সাথে কি কি করি।’
মেহুল ভার্সিটিতে এসে নিজের ক্লাসের দিকে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে মুগ্ধর সাথে তার দেখা হয়। মুগ্ধকে কোনরকম পাত্তা না দিয়ে মেহুল এগিয়ে যেতে থাকে। মুগ্ধ মেহুলকে দেখে একটা শ’য়তানী হাসি হাসে। মেহুল বুঝতে পারছিল না মুগ্ধর এই হাসির কারণ কি।
মেহুল ক্লাসে ঢুকে যায়। মেহুলকে দেখে ক্লাসে উপস্থিত সবাই হাসতে শুরু করে। মেহুল বুঝতে পারছিল না এই হাসির কারণ কি।
কয়েকজন বলাবলি করে,
‘আমরা তো সবাই চুইংগাম খাই। আর এই মেয়েটাকে দেখ চুইংগাম মাথায় দেয়।’
তাদের কথা শুনে মেহুল হতবাক হয়ে যায়। ক্লাস থেকে দৌড়ে বাইরে চলে যায়। ইতিও ক্লাসের দিকে আসছিল মেহুলকে দেখে থমকে যায়।
ইতিঃতোর চুলের এ কি অবস্থা মেহুল। চুইংগাম আসল কোথা থেকে?’
ইতির কথাটা শুনে মেহুলের মনে পড়ে সে যখন মুগ্ধকে পাশ কা’টিয়ে আসছিল তখন মুগ্ধর মুখে চুইংগাম ছিল। তাহলে মুগ্ধই বোধহয় তার মাথায় চুইংগাম ছু’ড়ে মে’রেছে।
কথাটা ভাবতেই মেহুল রাগে কটমট করতে করতে মুগ্ধর ক্লাসের দিকে ছুটে যায়। মেহুলকে এভাবে মুগ্ধর ক্লাসের দিকে যেতে দেখে ইতিও তার পেছনে যেতে থাকে।
ইতিঃকোথায় যাচ্ছিস মেহুল? থাম এভাবে রাগ করিস না। আমাদের প্রিন্সিপালের কাছে যাওয়া উচিৎ।
মেহুল তার কথায় কান না দিয়ে চলতে থাকে। মুগ্ধকে অনেক সহ্য করেছে। আর না এবার একটা ব্যবস্থা করতেই হবে। মেহুল অনেক যত্ন করে চুলটা বড় করেছিল। ভাবতে ভাবতেই তার চোখে জল চলে আসে।
১৩.
মুগ্ধ ক্লাসে বসে বসে ধ্রুবর সাথে আড্ডা দিচ্ছিল।
মুগ্ধঃএবার মেহুল বুঝবে আমার সাথে পাঙ্গা নেওয়ার ফল। আমার নাম মুগ্ধ হোসাইন। আমি এত সহজে কাউকে ছাড় দেইনা।
ধ্রুবঃঠিক বলেছিস দোস্ত। কিন্তু একটা মেয়ের সাথে এরকম করা কি ঠিক?
মুগ্ধঃঠিক বেঠিক জানিনা। কাল আমাকে ভূত সেজে ভয় দেখিয়েছিল। এখন তো তার শাস্তি পেতেই হবে।
মেহুল হন্তদন্ত হয়ে তাদের ক্লাসের ভেতরে চলে আসে। এসে সোজা চলে যায় মুগ্ধর সামনে। মুগ্ধকে কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই তার গালে নিজের পাঁচ আঙ্গুলের ছাপ বসিয়ে দেয় মেহুল। আকস্মিক এই ঘটনায় স্তব্ধ
হয়ে যায় ক্লাসের পরিস্থিতি। এতক্ষণ ক্লাসে সবাই আড্ডায় মেতে ছিল। কিন্তু এখন সবার নজর মেহুল আর মুগ্ধর দিকে।
এভাবে কেন একটা মেয়ে একটা ছেলেকে থা’প্পর মারল। এই নিয়ে সবাই বিভিন্ন কথা বলতে লাগল। কেউ বলল,
‘নিশ্চয়ই প্রেমের কারবার।’
আবার কেউ বলে,
‘এই মেয়েটাই তো সেদিন মুগ্ধর বড় ভাইকে সবার সামনে প্রপোজ করেছিল। এই মেয়েটাই ভালো না।’
সবাই নিজের মতো গসিপ করতে ব্যস্ত ছিল তখন সবার দৃষ্টি আবার মুগ্ধর দিকে চলে আসে।
মুগ্ধঃএই মেয়ে আমায় এভাবে মা’রলে কেন? মেয়ে বলে কিছু বলছি না। নাহলে আমকে মে’রে এতক্ষণ ঠিকভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে না।
মেহুলঃনিজেকে পুরুষ বলে পরিচয় দিওনা। তুমি একটা কাপুরুষ। কোন পুরুষ মানুষ এরকম অপকর্ম করে না।
মুগ্ধঃকি এমন করেছি আমি যে তোমায় আমায় কাপুরুষ মনে হয়?
মেহুলঃআর নাটক করো না। আমি তোমার সাথে কোন কথাই বলতে চাইনা।
মেহুল আর কোন কথা না বলে কাদতে কাদতে মুগ্ধর ক্লাস থেকে বেরিয়ে আসে। মুগ্ধ হা করে মেহুলের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। তার কিছুতেই বোধগম্য হচ্ছিল না মেহুল কেন এমনটা করল।
ক্লাসে সবার অগোচরে মিটি মিটি হাসছিল মোহনা। আজ সে অনেক খুশি। মেহুলের সামান্য ক্ষতি করেই যে সে পৈশা’চিক আনন্দ পায়। আর সেখানে আজ মেহুলের এত যত্নে বেড়ে তোলা চুল ন’ষ্ট করতে পেরে তো মোহনার খুশি রাখার যায়গা নেই।
মোহনা মনে করতে থাকে আজ সকালে লুকিয়ে লুকিয়ে মেহুলের হেয়ার ব্যানের মধ্যে চুইংগাম লাগিয়ে রেখেছিল সে। মেহুল প্রতিদিন সকালে ভার্সিটিতে আসার আগে হেয়ার ব্যান লাগিয়ে আসে। তখন সেভাবে খেয়াল করেনা।
যার ফলে ব্যাপারটা বুঝতে পারেনি। আর এখন তো সে মোহনাকে দোষীও ভাবছে না। তাই সবদিক থেকেই সে লাভবান হয়েছে।
মেহুল কাদতে কাদতে বাড়িতে চলে আসে। মেহেজাবিন তাকে এভাবে বাড়িতে আসতে দেখে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে।
মেহুলকে জিজ্ঞেস করলে সে চুপ থাকে। মেহুল নিজের ঘরে গিয়ে রাগ করে চুলই কে’টে ফেলে।
তারপর জোরে জোর কাদতে শুরু করে। মেহেজাবিন মেহুলের এই অবস্থা দেখে বলে,
‘কি হয়েছে মেহুল আমায় সব খুলে বলো।’
মেহুল তখন তার মাকে জড়িয়ে ধরে কাদতে কাদতে সব বলে দেয়।
মেহেজাবিন রেগে গিয়ে বলে,
‘কোন ছেলে এমনটা করেছে তার নামটা শুধু একবার বলো।’
মেহুলঃআমি চাইনা এই ব্যাপারে আর কথা হোক। যা হওয়ার হয়ে গেছে। তুমি প্লিজ আমাকে একটু একা থাকতে দাও।
মেহেজাবিন চিন্তিত হয়ে মেহুলকে একা রেখে বাইরে বেরিয়ে আসে।
আচমকা মেহুলের ফোন বেজে ওঠে। মেহুল দেখে আননোন নম্বর থেকে কল এসেছে। রিসিভ করতেই মুগ্ধর কথা শুনতে পায়।
মুগ্ধঃতোমার বুঝতে কোথায় ভুল হয়েছে। আমি তোমার বান্ধবী ইতির কাছে পুরো ব্যাপারটা শুনেছি। হ্যা এটা ঠিক আমি তোমাকে শায়েস্তা করার জন্য পরিকল্পনা করেছিলাম কিন্তু এভাবে না। আমি তো একটি ভূতের মাক্স কিনে এনেছিলাম তোমাকে ভয় দেখানোর জন্য। কিন্তু তোমার মাথায় চুইংগাম দেওয়ার কোন পরিকল্পনা আমার ছিলনা।
মেহুলঃআমি কিছু শুনতে চাইনা। আমার কিছুই ভালো লাগছে না। প্লিজ আমাকে আর বিরক্ত করো না।
কথাটা বলেই ফোন কে’টে দেয় মেহুল। মুগ্ধ এরপর আরো অনেকবার কল করে কিন্তু মেহুল তার ফোন রিসিভই করেনা।
১৪.
‘আমি মেহুলের সাথে দেখা করতে এসেছি। এক সপ্তাহ থেকে ও ভার্সিটিতে যায়না তাই খোঁজ নিতে এসেছি। আমি ওর সিনিয়র। আমার নাম স্নিগ্ধ।’
স্নিগ্ধর কথাটা শুনে মেহেজাবিন তাকে ভেতরে আসতে দেন। তিনি স্নিগ্ধকে বলতে থাকেন,
‘গত এক সপ্তাহ থেকে মেহুল বাড়ির বাইরে যায়না। চুলে চুইংগাম লাগায় সব চুলও কে’টে ফেলেছে। জানি না ওর মনে কি চলছে।’
স্নিগ্ধ ব্যতিব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে,
‘মেহুলের রুমটা কোন দিকে?’
মেহেজাবিন স্নিগ্ধকে নিয়ে মেহুলের রুমে নিয়ে যায়। স্নিগ্ধকে দেখে মেহুল খুশি হয়।
স্নিগ্ধ এসেই বলতে থাকে,
‘আমি মুগ্ধর সাথে কথা বলেছি। ও বলেছে তোমার সাথে এসবের পেছনে ওর কোন হাত নেই। জানি আমার ভাইটা খুব দুষ্টু কিন্তু ও এরকম কোন কাজ করবে না। এই ঘটনার পর থেকে মুগ্ধ নিজেও ভালো নেই। সবসময় মন খারাপ করে থাকে। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে চায় সে। তুমি প্লিজ আমার ভাইটাকে একবার সুযোগ দাও।’
মেহুল মৃদু হেসে বলে,
‘কাল আমি ভার্সিটিতে ফিরব। কাল এসব নিয়ে কথা হবে।’
স্নিগ্ধঃআচ্ছা। তাহলে কাল তুমি এসো। আমি যাই এখন।
পরেরদিন ভার্সিটিতে গিয়ে মেহুল সম্পূর্ণ ভিন্ন আচরণ করতে থাকে। কারো সাথে কোন কথা বলছিল না। বেশ চুপচাপ ছিল।
এদিকে মুগ্ধ আশার অত্যা’চারে খুবই বিরক্ত। গত এক সপ্তাহ ধরে মেয়েটা বিভিন্নভাবে তাকে ডিস্টার্ব করছে। আকারে ইঙ্গিতে বোঝানোর চেষ্টা করছে যে সে মুগ্ধকে ভালোবাসে।
এদিকে মুগ্ধ যে তার মন অন্য কাউকে দিয়ে ফেলেছে। এই এক সপ্তাহ মেহুলের অনুপস্থিতি তাকে বুঝিয়ে দিয়েছে তার জীবনে মেহুল কিভাবে জড়িয়ে গেছে। মেহুলকে ভালোবাসতে শুরু করেছে মুগ্ধ।
এতদিন ধরে এই অনুভূতি নিয়েই মুগ্ধ সন্দিহান ছিল কিন্তু এখন সবটা তার কাছে পরিস্কার।
মুগ্ধ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে এতদিনের সব ঘটনার জন্য সরি বলে সে মেহুলকে প্রপোজ করবে। আর সেটা আজই।
ইতি আর মেহুল পাশাপাশি বসেছিল। ইতি মেহুলের নিস্তব্ধতা দূর করার জন্য বলে,
‘জানিস আমি একটা ছেলেকে ভালোবাসি। কাল সেই ছেলেটা নিজে এসে আমায় প্রপোজ করেছে। আমি তো হ্যা বলে দিয়েছি।’
মেহুল উৎসাহী হয়ে জানতে চায়,
‘ছেলেটা কে?’
ইতিঃধ্রুব। মুগ্ধর ফ্রেন্ড। ছেলেটা বেশ ভালোই আর,,,
মেহুলঃএকটা কথা বলবি ইতি। ভালোবাসা কি পরিবর্তন হয়? মানে এটা কি সম্ভব যে আমরা অনেকদিন ধরে একজনকে পছন্দ করি কিন্তু তার কাছে কোন সাড়া না পেয়ে অন্য কাউকে পছন্দ করতে শুরু করি।
ইতিঃঅবশ্যই সম্ভব। কেউ আমাদের ভালোবাসায় সাড়া না দিলে কিছুদিন হয়তো আমরা তার পিছনে পড়ে থাকি কিন্তু একটা সময় পর তাকে ভুলে অন্য কাউকে নিজের মন দিয়ে দিতেই পারি। কিন্তু হঠাৎ এসব জিজ্ঞেস করছিস কেন?
মেহুল কিছু বলে না শুধু বাকা হাসে।
মেহুল ক্লাস থেকে বের হওয়ার পর একটা মেয়ে এসে তার হাতে একটা গোলাপ ধরিয়ে দিয়ে বলে ঐ ছেলেটা তোমায় এটা দিতে বলেছে।
সাথে একটা চিঠিও আছে। যেখানে লেখা,
‘জানি না কখন কিভাবে তোমায় এত ভালোবেসেছি। শুধু এটুকুই বলবো ভালোবাসি। তোমার জন্য আমার তরফ থেকে বুকভরা ভালোবাসা। এই বুকভরা ভালোবাসার বিনময়ে তোমার মনের সামান্য ভালোবাসা কি পাবো?’
চিঠিটা পড়ার সাথে সাথে মেহুলের মুখে হাসি ফুটে ওঠে।
মেহুল বলে ওঠে,
‘আমিও ভালোবাসি তোমায়,,,,’
চলবে কি?
>>>> আসসালামু আলাইকুম গল্পটা কেমন লাগছে জানাবেন। ভালো ভালো কমেন্ট করবেন যাতে আমি লেখার উৎসাহ পাই।