ভালবেসে অবশেষে পর্ব -০২+৩

#ভালবেসে_অবশেষে
#নুশরাত_জেরিন
পর্ব: ২ + ৩

মিলিদের রওনা হবার কথা ছিল সকাল সকাল, নাস্তা সারার পরেই। আটটা কী নয়টার ভেতর। কিন্তু শেষ মুহূর্তে রওনা হতে হতে ১২ টা বেজে গেলো। মিলি যেন যেতেই চাইছিল না, তাকে এক প্রকার জোর করে গাড়িতে বসানো হলো। গাড়িতে বসার আগে আতাউর রহমান মিলিকে জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষণ চুপচাপ দাড়িয়ে ছিলেন। মেয়েটাকে এভাবে বিয়ে দিতে তার নিজেরও ভালো লাগেনি। মেয়ের মতামত না নিয়ে, হুটহাট এক বিবাহিত ছেলের হাতে তুলে দেওয়া নিয়ে মিলি যে তার উপর রেগে আছে সে কথাও তিনি বুঝতে পেরেছেন।
তবে মেয়েটাকে তিনি অপাত্রে দান করেননি। সিয়ামকে তিনি খুব ভালভাবে চেনেন, বড্ড পছন্দ করেন ছেলেটিকে।
মিলির হাতটা সিয়ামের হাতে তুলে দিতে গিয়ে তিনি কেঁদে ফেললেন। বললেন,
“আমার বুড়িমা কে দেখে রেখো বাবা, অযত্ন করো না কখনও।”

সিয়ামকে তখন উদভ্রান্তের মতো দেখালো। সে প্রতুত্তর না করে মাথা নাড়লো।
মিলির হাত তখনও তার হাতের মুঠোয় বন্দি।
মিলির কেমন অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছিল তখন…নিজেকে কেমন পরিপূর্ণ মনে হচ্ছিল। তবে বাবার কান্না দেখে সে নিজেও কেঁদে ফেললো। অথচ সে বারবার নিজে শক্ত থাকার প্রতিজ্ঞা করেছিলো। ভেবেছিলো যাওয়ার সময় একটু কাঁদবে না, একদম শক্ত থাকবে। নয়ত বাবা মাকে কে সামলাবে।
আপাও যে তার সাথেই যাচ্ছে। দুজনার একই শশুড়বাড়ি হলো। কিন্তু অবাধ্য চোখ কথাই শুনলো না, সমানে বর্ষন হয়েই চললো।

গাড়িতে বসেও মিলির কান্না থামলো না। একটু পর পর হিচকি তুলে কাদতে লাগলো। নীরা পাশে বসে বারবার সান্তনা দিতে লাগলো।
নীরার স্বামীর নাম সৌরভ, বেশ হাসিখুশি মানুষ। সিয়ামের মত মোটেও না, বরং পুরো উল্টো।
সে মিলিকে স্বাভাবিক করতে বলে উঠলো,
“তোমাকে আজ থেকে কী বলে ডাকবো বলোতো? মিলি বলে ডাকবো, নাকি ভাবি বলবো?”

মিলি ততক্ষণে কান্না কমে গেছে।
“ভাবি কেনো ডাকবেন সৌরভ ভাই, আমি কী আপনার চেয়ে বয়সে বড়?”

“কিন্তু ভাইয়া তো আমার চেয়ে বড়, তার বউ হিসেবে বয়সে না হলেও সম্পর্কে তুমি আমার বড় ই হও।”

সিয়াম ড্রাইভিং করতে করতে একবার আড়চোখে মিলির দিকে তাকালো।
মিলি বলল,
“সে আমি জানি না, আমাকে আপনি ভাবি ডাকবেন না মানে ডাকবেন না। কেমন অদ্ভুত লাগবে আমার কাছে। তাছাড়া আমি আপনার ছোট বোন হই বলেছিলেন না?”

সৌরভ হেসে ফেললো। “আচ্ছা ডাকবো না। তবে তুমি আমার বোন হলে ভাইয়াকে তো দুলাভাই ডাকতে হয়?”

সিয়াম কড়া চোখে তাকালো। সাথে সাথে সৌরভ নিভে গেলো। তার ভাইটাকে সে যমের মত ভয় পায়। হুটহাট রেগে যাওয়া তার স্বভাব। যদিও আগে এতটাও রাগী ছিল না। আরিয়া বেঈমানীটা করার পরেই….

সিয়াম থামলেও মিলি নিজেকে সামলাতে পারলো না। সে খিলখিল করে হেসে উঠলো। নীরা থামাতে চাইলেও সে থামলো না। হাসতে হাসতে বলল,
“এটা কিন্তু বেশ হবে সৌরভ ভাই।”

সৌরভ নিজেও মাথা চুলকে হাসলো।

বাড়িতে যখন পৌছুলো মিলি তখন ঘুমে কাঁদা, বোনকে আষ্টে পৃষ্ঠে জরিয়ে হুশ জ্ঞ্যান ফেলে শুয়ে আছে।
সিয়াম সেদিকে ভ্রক্ষেপ না করে ভেতরে চলে গেলো। সৌরভ বলল,
“তোমার বোন তো দেখছি একদম তোমার মত নীরা, একবার ঘুমালে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাধলেও উঠানো যাবে না?”

নীরা চোখ পাকালো।
“ফাইজলামি না করে সামনে থেকে সরো।”

সৌরভ হাসতে হাসতে চলে গেলো।
মিলি উঠলো আরো একটু পর। নীরার ঠেলাঠেলিতে না উঠে উপায় আছে। সে চোখ পিটপিট করে বাড়িটার দিকে তাকালো। আলিশান প্রাসাদের মতো দেখতে। তবে কিছুটা পুরনো আমলের। সামনে অনেকটা অংশ খালি পরে আছে। একটা গাছ অবদি নেই। সচরাচর এমন বাড়ির সামনে সুন্দর বাগান থাকে। কিন্তু এখানে নেই।
মিলি এর আগে দুবার এসেছিলো এ বাড়িতে। আপার সাথে দেখা করে চলে গেছে সবসময়। থাকেনি কখনো। তবে এবার থেকে এ বাড়িতেই থাকতে হবে তাকে।

সিয়ামের মা মিসেস রেনু, সৌরভের মতো হাসিখুশি মানুষ। এমনকি এ বাড়ির কাজের মহিলা, গেটের দারোয়ানটাও হাসিখুশি।
শুধু একটা মানুষই গোমড়ামুখো।
মিলিকে দেখে রেনু বেগম খুশিতে দৌড়ে এলেন। পায়ে একটু লাগলো বোধহয়। সেসবে গুরুত্ব না দিয়ে মিলিকে জড়িয়ে ধরলেন।
তার সংসারটা এবার যদি পরিপূর্ণ হয়….

সিয়ামের ঘরটা খুব বড়, বিশালাকার রুমটায় দুএকটা রংচংহীন শুভ্র আসবাবপত্র ঘিরে আছে। পরিস্কার, পরিচ্ছন্ন রুম। ছেলেদের রুমও এত গোছানো হয়। মিলির নিজের রুমের অবস্থা মনে পড়লেও মাথা ঘুরে ওঠে।
সে নিজে খুবই অগোছালো মানুষ। বরাবরই এ নিয়ে মায়ের কাছে প্রচুর বকা খেতে হয়।
সে ধীরপায়ে রুমের মাঝে এসে দাড়ালো। বাড়ি থেকে লাগেজ নিয়ে এসেছে সে, এখন শুধু ওয়াশরুম খোজার পালা। নীরা বারবার বলেছিল এ রুমে তার সাথে আসতে, নীরা আসেনি। সিয়ামের রুমে সচরাচর কেউ প্রবেশ করে না। সিয়াম নিজেই নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছে।
সেইজন্যই নীরা মিলিকে দরজা অবধি এগিয়ে দিয়ে গেছে, ভেতরে ঢোকার সাহস সন্ঞ্চয় করে উঠতে পারেনি।
বেলকনির দরজা খুলে সিয়াম রুমে ঢুকলো। মিলি তাকে লক্ষ্য করে বলল,
“পানি খাবেন?”

সে মুলত টিটকারি দিতেই কথাটা বলেছে। লোকটা কাল বাসর রাতে নতুন বউকে প্রথমেই কিনা পানি খাবার কথা বলে! লোকটার বোঝা উচিত, বিয়েটা কোনো ছেলেখেলা নয়।
তাছাড়া মিলির কথায় সিয়াম কতটা রিয়াক্ট করে এটাও মিলি দেখতে চায়।

মিলির ভাবনায় জল ঢেলে দিয়ে সিয়াম বলল,
“নিয়ে এসো।”

মিলি হতভম্ব হয়ে টেবিল থেকে পানির গ্লাস নিয়ে এগিয়ে গেলো। লোকটা টিটকারিও বোঝে না!

সিয়াম পুরো গ্লাস শেষ করে বলল,
“থ্যাংক্স।”

মিলি উত্তর না দিয়ে লাগেজ খুলল। সুতির শাড়ি বের করে ওয়াশরুমের উদ্দেশ্যে এদিকওদিক তাকালো। পরক্ষনেই ওয়াশরুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়াতে সিয়াম বলল,
“শোনো!”

মিলি পিছু ঘুরে সোজা হয়ে দাড়ালো।
“আমায় বলছেন? ”

সিয়াম ইতস্তত ভঙ্গিতে বলল,
“নতুন জায়গায় কোনো সমস্যা হলে আমায় জানাবে, নীরাকে বিরক্ত করার দরকার নেই। যেহেতু দায়িত্ব আমি নিয়েছি।”

মিলি মুখ খোলার আগে আবার বলল,
“তোমার বাবা ভরসা করে আমায় বলেছেন।”

“শুধু এইজন্যই?”

“হু!”

“আচ্ছা।”

মিলির হঠাৎ মন খারাপ হয়ে গেলো। লোকটা শুধুমাত্র বাবার কথা রাখতে এমন বলল? নিজে থেকে নয়?

,

চলবে…..

#ভালবেসে_অবশেষে
#নুশরাত_জেরিন
পর্ব: ৩

পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেও মিলি একই দশা দেখতে পেলো। তার হাত পা আজও সিয়ামের ওপর তুলে দেওয়া। বেচারা ঘুমের ঘোরে তার হাত থেকে বাঁচতে হয়ত বিছানার কোনে আশ্রয় নিয়েছিল, তবু শেষ রক্ষা হয়নি৷ বিছানার একেবারে কিনারায় সিয়াম শুয়ে আছে, আর একটু হলেই ধপ করে নিচে পরবে। মিলি নিজের মাথায় গুতো দিলো। তার ঘুমোবার অভ্যাস খুবই বাজে। রাতে ঘুমালো সারা বিছানা জুরে ফুটবল খেলে বেড়ায়, এইজন্য নীরা কখনও তার সাথে শুতে রাজী হতো না। তারা দুজন ঘুমোতে দু’রুমে।
মিলির ঘুমোনোর এই অভ্যাসের জন্য নীরা প্রায়ই মজা করতো। বলতো, ”
বিয়ের পর বরকে লাথি দিয়ে মেরে দিস না যেনো! রাগী স্বামী কপালে জুটলে গালে দু’একটা পড়লেও পড়তে পারে।”
তখন কথাগুলো শুনে রেগে গেলেও এখন তার মর্ম হারে হারে বুঝতে পারছে মিলি।
এরই মাঝে সিয়ামের ঘুম ভেঙে গেলো। নিজের অবস্থান বুঝতে সে কিছু সময় থম মেরে রইলো। কাল রাতেও মিলি একই কান্ড করেছিল। তখন বুঝেও না বোঝার ভান করেছিল সিয়াম। কিন্তু আজ তাড়াতাড়ি উঠতে হবে। নামাজের সময় হয়েছে।
মিলির ভাবনার মাঝেই সিয়াম ঘুমজড়ানো গলায় বলল,
“গায়ের ওপর থেকে হাত পা সরাও, উঠবো আমি!”

সিয়ামের আওয়াজ পেয়ে তড়িৎ গতিতে উঠে পড়লো মিলি। অসস্থিতে তার শরীর ঝিমঝিম করছে।
সে ইতস্তত ভঙ্গিতে বলল,
“আপনি কিছু মনে করেননি তো?”

সিয়ামও উঠে বসলো।
‘না।”

“কিছুই না?”

সিয়াম তীক্ষ্ণ নজরে তাকালো।
মিলি আমতা আমতা করে বলল,
“না মানে আমি কিন্তু গায়ে পড়া টাইপ মেয়ে নই, আসলে একা একা ঘুমানোর অভ্যাস তো, তাই আরকি…..”

সিয়াম বিছানা ছেড়ে ততক্ষণে উঠে দাড়িয়েছে।
“হুমম, বুঝতে পেরেছি।”

কথাটা বলে সে আর দাড়ালো না। ওয়াশরুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো। মিলির নজর তখনও তার দিকে নিবদ্ধ।

….

এ বাড়িতে সকালে একেকজন একেক সময় নাস্তা করে। সিয়ামের সবকিছুই রুটিন মাফিক, তার সময়ের এদিক ওদিক হয় না। সে অফিস যাবার আগে নাস্তা সেরে ধীরে সুস্থে বাড়ি ছেড়ে বের হয়।
সৌরভ অফিস যায় দৌড়াতে দৌড়াতে। প্রায়ই তার ঘুম থেকে উঠতে লেট হয়। সে নাস্তা করে আর ড্রেস পরে একসাথে।
এ নিয়ে নীরার সাথে প্রায়ই সৌরভের ঝগড়া লেগে যায়। তাদের ঝগড়া থামান রেনু বেগম। তিনি বরাবরই বউয়ের সাপোর্ট নেন।
এ নিয়ে সৌরভের আক্ষেপের শেষ নেই। সে হতাশ সুরে বলে,
“বউমা পেয়ে ছেলেকে পর বানিয়ে ফেলে এমন শাশুড়ি বোধহয় তুমি একপিসই আছো মা! আসো ঝটপট তোমার পায়ের ধুলো দাও, নিজেকে ধন্য করি।”

মিলি নিজেও এ দুদিনে বুঝতে পেরেছে রেনু বেগমের মতো শাশুড়ী পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। কী মিষ্টি সম্পর্ক তার আর নীরার। মিলিকে তিনি আপন করে নিয়েছেন।
কী ভালো ব্যবহার….

বিকেলে সৌরভ অফিস থেকে ফেরার পর মিলি তাদের রুমে গেলো। দরজায় নক করে বলল,
“আসবো সৌরভ ভাই।”

সৌরভ একগাল হেসে বলল,
“আরে বোনভাবি যে, এসো এসো।”

নীরা পাশেই বসে জামা কাপড় আলমারিতে তুলছিলো। মিলি কিছু বলার আগে সে বলল,
“বোনভাবি আবার কী?”

সৌরভ ব্যাখা করার সুরে বলল,
“বুঝলে না? তোমার বোন মানে আমার শালি হিসেবে তো মিলি আমার বোন হয় তাই না? এদিকে ভাইয়ের বউ হিসেবে ভাবি। তো একসাথে বোনভাবিই তো হলো বলো?”

নীরা ক্ষেপে উঠলো।
“কেনো? কাল ও যে তোমায় বলল ভাবী না ডাকতে! তবু কেনো বলবে? ফাইজলামি করো তাই না? সবসময় ফাইজলামির মুডে থাকা বের করছি তোমার। আর একবার এসব ফালতু ফাইজলামি করে দেখো…..”

নীরার ধমকে সৌরভ একটু চুপসালো। মাথা চুলকে বলল,
“আমি তো মহা জ্বালায় পড়লাম রে বাবা, ভাবী ডাকলে তোমরা রাগ করো আর বোন ডাকলে ভাইয়া রাগ করে। আমি কোনদিকে যাবো বলতো।”

মিলি বিস্মিত হয়ে হা করে তাকিয়ে রইলো।
নীরা বলল,
“কোন ভাইয়া রাগ করে সিয়াম ভাই?”

“তো আমার আর কয়টা ভাইয়া আছে শুনি?”

নীরা নিজেও অবাক হলো খুব। তবে মনে মনে খুশিও হলো। যাক সিয়াম ভাই একটু তো সম্পর্কটাকে নিয়ে সিরিয়াস হচ্ছেন। নাহয় আস্তে ধীরেই হোক ক্ষতি কী! ওমন বিষাক্ত অতীত থেকে বেরুতে একটু তো সময় লাগবে।

মিলি নিজেও বেশ খুশি হলো। তবে প্রকাশ করলো না। বলল,
“যে যাই বলুক আপনি আমাকে মিলি বলেই ডাকবেন সৌরভ ভাই। ওসব উল্টো পালটা নামে মোটেও ডাকা চলবে না।”

একটু বাদেই সৌরভের ঘরে মিলির আবার ডাক পরলো।
নীরা বলল,
“তখন কী বলতে এসেছিলে বোন? না বলেই তো চলে গেলি।”

মিলি চেয়ার টেনে বসলো।
“ঘরে বসে বোর হচ্ছিলাম আপা, চল না একটু ঘুরে আসি? রাস্তার মোড়টায় একটা ফুচকার দোকান বসে জানিস?”

সৌরভ প্রায় লাফিয়ে খাট ছেড়ে নামলো।
“আরে এ কথা আমায় আগে বলবা না, ফুচকা আমার কত পছন্দ জানো? কলেজ লাইফে ফুচকা খাওয়ার প্রতিযোগিতায় কেউ আমায় হারাতে পারতো না।”

“কী আশ্চর্য! আপনি ফুচকা খান সৌরভ ভাই? আপনি না পুরুষমানুষ?”

নীরা ঠোঁট টিপে হাসলো। সৌরভও খানিক অপ্রস্তুত হাসলো।
“ফুচকার গায়ে পুরুষ, মহিলা লেখা থাকে নাকি শালিকা?”

মিলি নিজেও এবার হেসে উঠলো।

….

সিয়াম সিঙ্গেল সোফাটার উপর বসে ল্যাপটপ ঘাটছে। টি-শার্ট, টাউজারেও তাকে বেশ দেখাচ্ছে।
মিলি মিনিট দুয়েক দরজার কাছে দাড়িয়ে তাকে দেখলো।
সিয়াম সেদিকে না তাকিয়ে বলল,
“কিছু বলবে?”

মিলি হকচকিয়ে বোকা হাসলো। রুমে প্রবেশ করে কিছুটা দিধাদন্দ নিয়ে বলল,
“আমরা ফুচকা খেতে বাইরে যাচ্ছি, মানে আমি, আপা আর সৌরভ ভাই।”

সিয়াম ল্যাপটপ থেকে চোখ সরালো। চোখে সূচালো দৃষ্টি। বলল,
“আচ্ছা। ”

মিলি হতাশ হলো। লোকটা সবসময় এত অল্প কথা বলে….এভাবে কথা এগুনো যায়? আচ্ছা বলার পর কী বলা যায়? মিলি ভাবতে লাগলো।

সিয়াম বলল,
“আর কিছু?”

“আপনি যাবেন আমাদের সাথে?”

সিয়াম বেশ কিছুক্ষণ মিলির মুখপানে তাকিয়ে থাকলো। মেয়েটার মুখে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে অথচ এখন শীতকাল। ভয় পাচ্ছে নাকি? কাকে দেখে? সে সাথে গেলে মেয়েটা ঠিকমতো ইনজয় করতে পারবে তো? তাকে দেখলেই কেমন তটস্থ হয়ে থাকে।
সিয়াম আবার ল্যাপটপে মনোযোগ দিয়ে বলল,
“না, আমার কাজ আছে।”

মিলির কী যে খারাপ লাগলো। মুখের ওপর কেউ এভাবে না বলে? তাও আবার নতুন বউকে? ঠিক এইজন্যই মিলি আসতে চাইছিলো না, নীরাই জোর করলো। বলল, “সিয়াম ভাইকে একবার বল, একসাথে সবাই ঘুরে আসা হবে। দেখবি খুব ভালো লাগবে। সিয়াম ভাই তো কখনও এভাবে বেড়ায়নি, তেমন একটা বন্ধু বান্ধব ও নেই। সেইজন্য এমন গম্ভীর হয়ে থাকে। আমাদের সাথে গেলে তার মনটাও ভালো হবে।”

মিলি নীরাকে বকতে বকতে বেরিয়ে এলো। রেনু বেগম ড্রয়িং রুমেই ছিলেন। মিলির মলিন মুখ দেখে বললেন,
“মন খারাপ কেনো রে মা, নীরা বলল তোরা বাইরে ঘুরতে যাবি? তুই কী যেতে চাইছিস না?”

মিলি বলল,
“আমি না আন্টি, তোমার ছেলে যাবে না। আমি বললাম তবু না করে দিলো।”

রেনু বেগম মিষ্টি হাসলেন।
“এই সামান্য কারনে মন খারাপ করতে আছে? দাড়া, এক্ষুনি মন ভাল করার ব্যবস্থা করছি।

….
রেনু বেগম কী করলেন বোঝা গেলো না। তবে তিনি সিয়ামের রুম থেকে বেরোনোর কিছুক্ষণ পরেই সিয়াম রেডি হয়ে বেরিয়ে এলো। গম্ভীর গলায় বলল,
” চলো, কোথায় যাবে।”

,

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here