ভালবেসে অবশেষে পর্ব -০৪

#ভালবেসে_অবশেষে
#নুশরাত_জেরিন
পর্ব: ৪

টিভিতে ভালো কোনো অনুষ্ঠান হচ্ছে না। তবু মিলি একের পর এক চ্যানেল বদলে চলেছে। বিকেল হয়ে এসেছে। রেনু বেগম এ সময় বাইরে হাটতে বের হন। নীরাও ব্যস্ত থাকে। তাছাড়া এ বাড়িতে রান্না করা থেকে শুরু করে অন্যান্য সব কাজের জন্য আলাদা লোক রাখা আছে। মিলিকে কোনো কাজে হাত লাগাতে হয় না।
দিনের বেশিরভাগ সময় সে টিভি দেখে আর ঘুমিয়ে পাড় করে। মাঝে মাঝে অকারণে নিজের রুম ঝাড়পোছ করে, কাপড় গোছায়।
নীরার সাথেও সময় কাটায়।
সপ্তাহ খানেক হয়েছে সে এ বাড়িতে আছে৷ এতগুলো দিনেও সিয়ামের সাথে তার সম্পর্কের কোনো উন্নতি হয়নি।
আগে তবু মিলি সেধে সেধে আগবাড়িয়ে কথা বলতে যেত, এখন সেটাও বন্ধ করে দিয়েছে। এককথায় সে বেশ রেগে আছে সিয়ামের উপর। যদিও সিয়ামের এসবে কোনো ভ্রক্ষেপ নেই।
সে নিজের মতো সকালে উঠে নাস্তা সেরে অফিস যায়, বিকেলে ফেরে। রাতে ডিনার শেষে ল্যাপটপ নিয়ে বসে, তারপর ঘুম। ব্যাস তার রুটিনে এ’কটা কাজেই সীমাবদ্ধ।
মিলির এতে যেনো রাগ আরও বাড়ে।
সেদিন ফুচকা খেতে যাওয়ার সময় মিলির মনটা কী ফুরফুরে ছিলো। কত গল্প করতে করতে গিয়েছিলে সেখানে। অথচ সিয়াম যেনো সেখানে থেকেও ছিলো না। ফোনের মধ্যে ডুবে ছিলো।
তবুও মিলি খুশি ছিলো, গোমড়ামুখোটা এসেছে এই তো কত!
সৌরভের সাথে যখন মিলি ফুচকা খাওয়ার প্রতিযোগীতা শুরু করলো, তখন ফুচকার ঝালে মিলির চোখে পানি এসে গিয়েছিলো।
সে ভেবেছিলো সিয়াম সরাসরি মিলিকে খেয়াল না করলেও আড়ালে করছে। তার কষ্ট দেখে নিশ্চয় উতলা হবে। কিন্তু তাকে হতাশ করে দিয়ে সিয়াম ফোন কানে ধরে দুরে গিয়ে দাড়ালো।
তার নাকি অফিস থেকে কল এসেছিলো।

মিলি তার পর থেকে কঠিন প্রতিজ্ঞা করেছে, লোকটার সাথে আগবাড়িয়ে সে আর কথা বলবে না। সম্পর্ক টেনে নিয়ে যাবার দায়িত্ব শুধু তার একার নাকি? সিয়ামের নেই?
কই, মিলিও তো একসময় সিয়ামকে অপছন্দ করতো, বিয়ে অবদি করতে চায়নি। তবুও এখন সব মেনে নিয়েছে, ঠিকঠাক করতে চাইছে।
তবে সিয়াম কেনো চাইছে না?

একটু পরে নীরা এসে পাশে বসলো। কিছুক্ষণ ধারালো চোখে মিলিকে পর্যবেক্ষন করে বলল,
“কী হয়েছে তোর বোন? মুখটা ওমন কুমড়োর আকার ধরেছে কেনো রে?”

মিলি উত্তর না দিয়ে গালটা আরেকটু ফুলালো। তার বোনও তার কষ্ট বুঝলো না!
নীরা বলল,
“কথা বলিস না কেনো? দাঁতে ব্যাথা?”

মিলি কটমট ভঙ্গিতে তাকালো।
“তুই সৌরভ ভাইয়ের সাথে থাকতে থাকতে তার মতো হয়ে যাচ্ছিস আপা।”

“তুই ও তাহলে সিয়াম ভাইয়ের সাথে থাকতে থাকতে তার মতো হয়ে যাবি বুঝলি?”

“আমি তার মতো নিষ্ঠুর কখনো হবো না।”

মিলির অভিমানী মুখটা দেখে নীরা মুচকি হাসলো।
“ওওও তারমানে এই ব্যাপার?”

“কোন ব্যাপার?”

“কোন বিষয়ে কথা বলছি বুঝছিস না? আসল কথা বলতো, ভাইয়ের উপর রেগে আছিস কেনো? বকেছে?”

“সে আমাকে কখনও বকে না আপা, কথা বললে তো রাগারাগি করার প্রশ্ন উঠবে। আমার সাথে সে দরকার ছাড়া কথাই বলে না। আমি বললেও হু হা বলে জবাব দেয়।”

নীরা মিলির কাধ ধরে মুখোমুখি বসালো।
“এই জন্য রাগ করলি? এই সামান্য কারনে? কেনো রে? ভালো টালো বেসে ফেললি নাকি?”

“ভালবাসা কী এতই সহজ আপা? এত সোজা? সপ্তাহ পেরুলো না বিয়ের, তাকে ঠিক মতো জানলাম কোথায়? তাছাড়া হুটহাট প্রেমে পড়া যায়, ভালবাসা যায় না।
প্রেম জিবনে আসে হুট করে, কিন্তু ভালবাসা ধীরে ধীরে।”

“বাহ্, বেশ বললি তো।”

মিলি উত্তর না দিয়ে টিভি দেখায় মনোযোগ দিলো।
সিয়াম এলো তারও ঘন্টা খানেক পরে। কলিং বেলের আওয়াজ শুনে কাজের মেয়েটা দরজা খুলে দিলো।
ঘর্মাক্ত দেহের ক্লান্ত মুখশ্রীর মানুষটাকে দেখে মিলির মনটা একটু নরম হতে চাইলেও সে আবার শক্ত করলো৷ আগবাড়িয়ে সে আর কথা বলবে না।

রাতে ঘুমাতে এলো মিলি দেরি করে। ঘড়িতে এগারোটার বেশি বাজে। মিলি সৌরভের সাথে লুডু খেলতে বসেছিলো। সৌরভ বারবার চিটিং করতে গিয়ে ধরা পরেছে। এ নিয়ে কী হাসাহাসি!
রেনু বেগম তো একবার সৌরভের কান টেনে ধরলেন।
নীরা তখন মুখ টিপে হাসতে হাসতে বলল,
“আরেকটু জোরে টানুন মা, যেনো কানে দুদিন ব্যাথা থেকে যায়। এমনিতেও কান দিয়ে তার কী কাজ! কারো কথা তো কানে তোলে না, এককান দিয়ে ঢুকিয়ে অন্য কান দিয়ে বের করে দেয়
!”

সৌরভের মুখটা ছিল দেখার মতো। অসহায় ফেসটা দেখে মিলি হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেয়েছে।
বর্তমানে তার পেট ব্যাথা হয়ে গেছে।

রুমে ঢুকে দেখলো সিয়াম বিছানায় বসেছে ল্যাপটপ নিয়ে, এমনিদিনে সোফায় বসে কাজ করে।
মিলি ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বিছানার একপাশে দাড়িয়ে রইলো। সিয়াম বলল,
“ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে আমার চশমাটা এনে দাও তো।”

মিলি চুপচাপ চশমা তুলতে গিয়ে পাশে রাখা ছোট্ট ব্যাগটার ওপর চোখ রাখলো। সিয়াম এনেছে আসার সময়। ঘরে ঢোকার সময় মিলি তার হাতে এটা দেখেছিলো।
ভেতরে কী আছে জানার আগ্রহ প্রকাশ করলো না। চুপচাপ চশমা নিয়ে সিয়ামের পাশে রেখে বলল,
“আমি কী সোফায় ঘুমোবো?”

সিয়াম ল্যাপটপ সরিয়ে অবাক দৃষ্টিতে তাকালো।
“কেনো, সোফায় কেনো শোবে?”

মিলি মনে মনে একটু খুশিই হলো। যাক লোকটার মুখে একটু কথা ফুটেছে।
তবু বাইরে প্রকাশ করলো না। বলল,
“বিছানায় আপনি বসে কাজ করছেন, তাহলে আমি ঘুমাবো কোথায়?”

“আমাকে সরতে বলা গেলো না?”

মিলি ঝাঝালো সুরে বলল,
“আমি কেনো বলবো, আপনি বুঝতে পারেন না?”

সিয়াম গম্ভীর হয়ে বলল,
“বুঝি।”

“বোঝেন?”

সিয়াম এবার চোখে চোখ রাখলো।
“তোমার কী মনে হয়, আমি বুঝি না?

মিলির মনে হলো সিয়াম অন্যকিছু বলতে চেয়েছে। তবু মাথা ঘামাতে ইচ্ছে হলো না। তার ঘুম পেয়েছে। সিয়ামের সাথে পরেও ঝগড়া করা যাবে। এ’কটা দিনে মিলি এটুকু কথা বুঝেছে, সিয়াম অন্য সবার সাথে রাগারাগি ধমকাধমকি করলেও তাকে কিচ্ছু বলে না। তার বেলায় সিয়াম শান্ত।
ব্যাপারটা মিলির ভালো ও লেগেছে।
বিয়ের আগে সে লোকটাকে যতটা খারাপ ভেবেছিলো, ততটা খারাপ সে নয়।

,

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here