ভালোবাসবে_তুমিও পর্ব ১১+১২

#ভালোবাসবে_তুমিও❤
#পর্ব__১১
#অদ্রিতা_জান্নাত

কোনো রকমে রেডি হয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরলাম ৷ কিছুক্ষন পর গাড়ি এসে থামলো একটা রেস্টুরেন্টের সামনে ৷ গাড়ি থেকে নেমে আশপাশটা হালকা চোখ বুলিয়ে ভিতরে চলে গেলাম ৷ ভিতরে যেতেই সামনের একটা টেবিল তুহিনকে দেখতে পেলাম ৷ ওনার কাছে গিয়ে চেয়ার টেনে ওনার সামনে বসে বললাম,,,,,,,,

“কখন এসেছেন? আমার আসতে একটু দেরি গেল ৷”

“সমস্যা নেই কি খাবে বলো?”

“আগে আপনি বলুন কোনো খোঁজ পেয়েছেন?”

“আস্তে ধীরে কথা বলি ৷ কি খাবে সেটা বলো? তারপর মেইন কথায় আসছি ৷”

“উম আচ্ছা অামার জন্য একটা কোল্ড কফি হলেই হবে আপনি কি নিবেন সেটা আপনিই বলে দিয়েন ৷”

“জাস্ট কফি?”

আমি মাথা নাড়ালে উনি ওয়েটারকে ডেকে দুটো কোল্ড কফি ওর্ডার করলেন ৷ কিছুক্ষন পর একটা ছেলে এসে কফির গ্লাস আমাদের সামনে দিয়ে চলে গেল ৷ আমি স্ট্র দিয়ে কফি খেতে খেতে বলে উঠলাম,,,,,,,,,

“এবার বলুন ৷”

উনি গ্লাসে স্ট্রটা নাড়াতে নাড়াতে বলতে লাগলেন,,,,,,,,,,

“এই মায়াকে আমার অনেক সন্দেহ হচ্ছে ৷”

“যেমন?”

“একটা কথা কি ভেবে দেখেছো? অরূপ কেন খালি তোমার চরিত্র নিয়ে কথা বলে? আমার মনে হচ্ছে ওকে তোমার ব্যাপারে কেউ ভুল বুঝিয়েছে ৷”

“অরূপ কি বাচ্চা যে ওনাকে যে যেটা বোঝাবে উনি সেটাই বুঝে যাবেন ৷”

“হয়তো কোনো প্রমান দেখিয়েছে ৷”

“আপনি কি শিউর?”

“একদম শিউর না আমি ৷ তবে অনেকটাই শিউর ৷ কাল সারা রাত এই বিষয়গুলো নিয়ে ভেবেছি আমি ৷ দেখো কেউ কাউকে এমনি এমনি ভুল বুঝে না ৷ তার পিছনে কোনো বড়সর কারণ তো অবশ্যই থাকবে তাই না? আর অরূপও ঠিক তাই ৷ কেউ ওকে এমনভাবে বুঝিয়েছে যে ও মিথ্যাটাকেই সত্যি ভেবে নিয়েছে ৷ হয়তো ওর জায়গায় অন্য কেউ থাকলেও এরকম করতো ৷”

তুহিনের বলা কথা গুলো পুরোটাই ঠিক আর যুক্তিসংগত ৷ কিন্তু অরূপের উচিত ছিল কোনটা সত্যি কোনটা মিথ্যা যাচাই করার ৷ তুহিন আবার বলে উঠলো,,,,,,,,

“সবকিছু জানতে হলে আমাদের মায়াকে ফলো করতে হবে ৷”

“আপু না মানে মায়াকে?”

“হ্যাঁ সব কিছুর মধ্যে ও নিজেই জড়িত মনে হচ্ছে আমার ৷ তাই সবকিছুর জন্য আমাদের মূল টার্গেট হিসেবে মায়াকে ধরে নিতে হবে ৷ ও কি করে না করে সবটা জানলে তুমি তোমার সব প্রশ্নের উত্তর ঠিক পাবে৷”

“আপনার যেটা ভালো মনে হয় আপনি সেটাই করুন ৷ মায়া কোথায় কি করছে না করছে সবটা আমাকে জানাবেন ৷”

“আচ্ছা ৷”

“অরূপকেও নজরে রাখতে হবে আমার ৷ ওনাকেও সুবিধার লাগছে না আমার কাছে ৷”

“আচ্ছা অরূপের বিষয়টা তুমি দেখো ৷”

“হুম আচ্ছা ৷ চলুন উঠি ৷”

বলেই আমি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম ৷ উনি আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে উঠে গেলেন ৷ একটা ওয়েটারকে ডেকে টাকা দিতে গেলেই উনি বলে উঠলেন,,,,,,,,,

“আমি দিচ্ছি তোমার দেয়া লাগবে না ৷”

“আপনি দেয়া আর আমি দেয়া একি কথা ৷ পরেরবার নাহয় আপনি দিয়ে দিয়েন ৷”

তুহিন হালকা হাসলেন ৷ আমি বিল পে করে দিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে তুহিনের সাথে বের হতেই অরূপের সামনে পরলাম ৷ উনি আমার দিকে একবার তাকিয়ে তুহিনের দিকে তাকালেন ৷ সাথে সাথে ওনার চোয়াল শক্ত হয়ে এলো ৷ আমি ওনাকে দেখিয়ে তুহিনের হাত জড়িয়ে ধরে অরূপকে বললাম,,,,,,,,,

“আপনি কি করছেন এখানে? নতুন গার্লফ্রেন্ডের জন্য এসেছেন বুঝি?”

অরূপের হাত শক্ত হয়ে এলো ৷ কপালের রগও ফুলে গেল রাগে ৷ আমি একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললাম,,,,,,,,

“যা ইচ্ছা করুন ৷ আমাকে ডিস্টার্ব না করলেই হলো ৷ অসহ্যকর!”

বলেই তুহিনের হাত ধরে টেনে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে এলাম ৷ এবার দেখুক কেমন লাগে ৷ খুব শখ না আমার চরিত্র নিয়ে খোঁটা দিতে ৷ এখন প্রতিনিয়ত আমি আপনার চরিত্র নিয়ে খোঁটা দিব ৷ অামাকে অন্যের সঙ্গে দেখলে রাগ হয় নাকি জেলাস? সে যাইহোক দুই নৌকায় ভর দিয়ে দুই নৌকা পাওয়ার আশাটা ছেড়ে দিন ৷ একবার ধরা দিয়েছি দেখে বারবার কখনোই দিব না ৷ এই শ্রেয়া কি জিনিস তা আপনি এখন থেকে হাড়ে হাড়ে টের পাবেন ৷

এদিকে শ্রেয়া চলে যাবার পর অরূপ নিজের পা দিয়ে দেয়ালের উপর লাত্থি দিলো বার কয়েক ৷ প্রচুর রাগ লাগচ্ছে ওর ৷ আর কিছু না ভেবে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে অন্যদিকে চলে গেল ৷

তুহিনের হাত ছেড়ে দিয়ে আমি বললাম,,,,,,,,

“সরি আসলে তখন…”

“সমস্যা নেই বুঝেছি আমি ৷ তো তুমি কোথায় যাবে?”

“কলেজ যাবো ৷ অনেকদিন হলো যাওয়া হয় না ৷ বাড়ি থেকে কলেজে যাবো বলেই বের হয়েছি ৷”

“আচ্ছা তাহলে তোমাকে পৌঁছে দি আমি ৷”

“না থাক আপনার কষ্ট করতে হবে না আর ৷ এমনিতেই অনেক সাহায্য করছেন আমাকে ৷ কিন্তু আমি আপনার জন্য কিছুই করতে পারছি না ৷ গাড়ি নিয়ে এসেছি আমি ৷ চলে যেতে পারবো ৷”

“এভাবে বলছো কেন শ্রেয়া? আমার একটুও কষ্ট হবে না ৷ আর সাহায্যের কথা বলছো? তোমাকে আজ আমি সাহায্য করছি নিজ ইচ্ছায় ৷ তুমিও না হয় একদিন আমার এই সাহায্য গুলো পূরন করে দিও ৷”

“কিন্তু কীভাবে?”

“সেটা সময় আসলে আমি নিজ থেকেই চেয়ে নিবো ৷ এখন চলো নাহলে দেরি হয়ে যাবে ৷”

আমি আর কিছু না বলে তুহিনের সাথে কলেজে চলে গেলাম ৷ তুহিন আমাকে কলেজে ড্রপ করে দিয়ে চলে গেলেন ৷ অনেকদিন পর এলাম এই কলেজে ৷ আগের বার তো মায়া আপুর সাথে এসেছিলাম ৷ সে যাইহোক এতোদিন পর এলাম পুরো কলেজ ঘুরে দেখবো আগে ৷

________________

রুমের মধ্যে বিছানায় বসে মোবাইল এদিক থেকে ওদিক ঘোরাচ্ছে মায়া ৷ গতকাল শ্রেয়ার বলা কথাগুলো নিয়ে ভাবছে ও ৷ ‘শ্রেয়া যেটা বলবে সেটা করেই ছাড়বে ৷ তাহলে তো আমার আরো বিপদ বেড়ে যাবে ৷ কি করে আটকাবো ওকে? কি করেই বা তখন সবাইকে বোঝাবো? কিছু একটা তো করতেই হবে এভাবে চুপ করে থাকলে হবে না কিছু ৷’

এসব ভেবেই একজনকে ফোন করলো মায়া ৷ ওপাশে রিসিভ হলে কিছুটা গম্ভীর গলায় মায়া বললো,,,,,,,,

“সব ঠিক আছে তো?”

ওপাশের ব্যাক্তির কথা শুনে মায়া আবার বলে উঠলো,,,,,,,

“সব কিছু ঠিকঠাক থাকলেই ভালো ৷ সাবধানে সব কাজ করবে ৷ এই একমাস আমি ছিলাম না ৷ কি করেছো না করেছো জানা নেই আমার ৷ কিন্তু এখন জানতে হবে ৷ রাতে বের হতে পারি কি না দেখি ৷ আর আরেকটা বিষয়ের খবর দিতে হবে আমাকে ৷”

ওপাশ থেকে আবার কেউ কিছু বললে মায়া বললো,,,,,

“এই একমাস আমাকে আটকে রাখার পিছনে কে ছিল? সেটা জানতে চাই আমি ৷ সব তথ্য ক্লিয়ারলি দিবে আমায় ৷”

ওপাশ থেকে কিছু কথা শুনে ও নিজে আর কিছু না বলে ফোন রেখে দিল ৷ কিছু একটা গভীরভাবে ভাবতে লাগলো ও ৷ খুব গভীর ভাবে চিন্তা করছে আসলে ওকে সরানোর পিছনে ছিলটা কে? আর তাও ওর বিয়েরদিন ৷ বিয়েটা হওয়ার পর হলেও হতো ৷ কিন্তু না সেই -ই বিয়ের দিনই হতে হলো ৷ আবার এখন এটাও শুনেছে যে অরূপ আর শ্রেয়ার বিয়ে হয়ে গেছে ৷ সবটা মিলিয়ে ও নিজেই পাগল হয়ে যাচ্ছে ৷ কোনটা রেখে কোনটা কি করবে কিচ্ছু বুঝতে পারছে না ৷

___________________________

ক্লাস শেষে কলেজ থেকে বের হতেই অরূপের সামনে পরলাম ৷ বুঝতে পারছি না কেন এই ছেলেটা আমার পিছু পিছু ঘুরছে ৷ আমাকে এতো কিছু বলার পরও শান্তি হয়নি ওনার? আরো কি কিছু বলার বাকি আছে? যেটা বলার জন্য আমার পিছে পরে আছেন ৷ আমি সরে অন্যদিক দিয়ে যেতে নিলে উনি আবারও পথ আটকে দাঁড়ালেন ৷ এবার রাগ হচ্ছে আমার ৷ জোরে চেঁচিয়ে বললাম,,,,,,,,,,

“সমস্যাটা কি আপনার? কেন বারবার আমার পিছে পিছে আসছেন? কেন ডিস্টার্ব করছেন আমাকে?”

উনি কিছু বললেন না ৷ আমার চেঁচানোতে আশে পাশের অনেকেই চলে এলেন ৷ পাশ থেকে রিয়া আমার ফ্রেন্ড একটা গুঁতা মেরে বললো,,,,,,,,

“কি করলি? দেখ রাস্তার সবাই চলে এসেছে তোর চেঁচানোতে ৷ এখন জিজুকে তারা ধরে পিটাবে ৷”

চোখ রাঙিয়ে ওর দিকে তাকাতেই ও চুপ হয়ে গেল ৷ দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,,,,,,,,

“আরেকবার যদি তোর মুখে ওই জিজু শব্দটা শুনি তাহলে তোর গালে পর পর কয়েকটা থাপ্পর বসিয়ে দিব৷”

তারপর সামনে অরূপের দিকে তাকিয়ে বললাম,,,,,,,,

“সমস্যা কি আপনার? কেন বিরক্ত করছেন আমাকে?”

“বিরক্ত করছি আমি তোমাকে?”

আমি কিছু বলবো তার আগেই পাশের থেকে একটা লোক আমার কাছে এসে বলে উঠলো,,,,,,,,,

“কি হয়েছে এখানে? ছেলেটা কি বিরক্ত করছে আপনাকে?”

“হ্যাঁ!”

অরূপ অবাক হয়ে তাকালেন আমার দিকে হয়তো এই উত্তরটা আশা করেন নি তিনি ৷ পাশ থেকে আরেকটা মহিলা বলে উঠলো,,,,,,,,

“এসব ছেলেদের কাজই এটা ৷ কলেজের সামনে এসে মেয়েদের টিজ করে খালি ৷ একে তো গণধোলাই দেয়া দরকার ৷ নাহলে এদের সাহস আরো বেড়ে যাবে ৷”

ওই মহিলাটির কথায় আরো কয়েকজন তাল মিলালেন ৷ অরূপ চিৎকার করে বলে উঠলো,,,,,,,,

“আমি আমার বউকে টিজ করেছি তাতে আপনাদের সমস্যা কি?”

আমিসহ সবাই অবাক হয়ে তাকালাম অরূপের দিকে ৷ অরূপ কি বললেন? অামাকে তার বউ বললেন? কিন্তু পরক্ষনেই ওনার সব অপমানের প্রত্যেকটা শব্দ মাথায় বাজতে লাগলো ৷ অরূপ আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলে একটা লোক অরূপকে আটকে দিয়ে বলে উঠলো,,,,,,,,,,,,

“প্রমান কোথায় যে মেয়েটা আপনার স্ত্রী?”

অরূপ নিজের ফোন বের করে কিছু একটা দেখাতেই সবাই চলে গেল আস্তে করে ৷ অরূপ আমাকে নিয়ে যেতে নিলে আমি হাত টান মেরে ছাড়িয়ে নিলাম ৷ তারপর বললাম,,,,,,,,,,

“অপমান করতে নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে? তো করুন না ৷ দেখি কত অপমান করতে পারেন আপনি ৷ কেউ কিছু বললে সেটা যাচাই করে দেখে নিতে হয় সেটা কতটা সত্যি ৷ কিন্তু আপনি তো তা করেন নি ৷ মিথ্যা প্রুভ দেখে আমার জীবনটা বিষিয়ে দিয়েছেন ৷ নড়ক বানিয়ে দিয়েছেন আমার জীবনটা আপনি ৷ তো কেন আবার সেই আমাকে নিয়ে টানাটানি করছেন? কেন আমাকে আপনার বউ বলে পরিচয় দিচ্ছেন? নামে মাত্র বউ আমি আপনার ৷ আর কয়েকদিন পর সেই নামও মুছে যাবে ৷ তখন ভালো থাকিয়েন আপনার সো কল্ড জিএফয়ের সাথে ৷ দয়া করে অামাকে অার ভাঙ্গবেন না ৷ অনেক কষ্টে সামলে নিয়েছি নিজেকে ৷ কিন্তু আর পারবো না ৷ তখন মরা ছাড়া আর কোনো উপায়ও থাকবে না আমার কাছে ৷”

বলেই চোখ মুছে অরূপকে কিছু বলতে না দিয়ে চলে গেল শ্রেয়া ৷ শ্রেয়ার মুখে ওর মরার কথা শুনে অরূপের বুকটা ধুক করে উঠলো ৷ সত্যি কি ও অনেক বড় ভুল করে ফেলেছে? সত্যি মিথ্যা না ভেবে শ্রেয়াকে দিনের পর দিন কষ্ট দিয়ে যাচ্ছে? কিন্তু শ্রেয়ার কষ্ট দেখে ওর কেন কষ্ট হচ্ছে? সেটা ধরতে পারছে না অরূপ ৷ শ্রেয়াকে আজ ও ওর মায়ের জন্য ফিরিয়ে নিতে এসেছিল ৷ গতকালকে শ্রেয়ার কথা গুলো শুনে অরূপের মা অসুস্থ হয়ে পরেছিল ৷ শ্রেয়া থাকলে হয়তো সেই অসুস্থতা নিমিষেই কেটে যেতো ৷ কিন্তু অরূপ সেটা পারে নি ৷ তাই গাড়িতে উঠে বসে সোজা বাড়ির দিকে চলে গেল ৷





সারা রাস্তা চোখের পানি ফেলতে ফেলতে অবশেষে বাড়ি পৌঁছালাম ৷ বাড়িতে ঢুকতেই আব্বুর কথা শুনে অবাক হয়ে তাকালাম আমি তার দিকে ৷ কান্নাটা যেন আরো বের হয়ে আসতে চাইছে ৷ তবুও কাঁপাকাঁপা গলায় বললাম,,,,,,,,,

“কককি বববললে?”

আব্বু গম্ভীর সুরে আবার বললো,,,,,,,,,,

“অরূপের সঙ্গে ডিভোর্স হয়ে গেলে তুমি কানাডা চলে যাবে ৷ তোমার যাওয়ার জন্য সব ব্যবস্থা করে দিব আমি ৷ বাকি স্টাডিটা সেখানেই কমপ্লিট করবে তুমি ৷ আমি কিন্তু না শুনতে চাই না ৷ তোমার ভালোর জন্যই এই সিদ্ধান্তটা নিয়েছি আমি ৷ আশাকরি নিজের ভালোটা বুঝবে ৷”
#ভালোবাসবে_তুমিও❤
#পর্ব__১২
#অদ্রিতা_জান্নাত

আব্বুকে কিছু বললাম না বলেও লাভ নেই ৷ অরূপের থেকে দূরে চলে গেলে আমারই ভালো হবে ৷ যেখানে মায়া বাড়িয়ে লাভ নেই সেখানে মায়া কাটাতে শিখতে হয় ৷ এই দেশে থাকলে অরূপকে ভুলা আমার জন্য অনেক কঠিন হবে ৷ তাই ওনার থেকে যত দূরে যাবো ততই ভালো ৷ তাই রাজি হয়ে গেলাম ৷ রুমে এসে বিছানা বসে চোখ মুখ চেপে ধরলাম ৷ কিচ্ছু ভালো লাগছে না ইচ্ছা করছে সব ছেড়ে চলে যাই অনেক দূরে





কেটে গেছে আরো সাতদিন ৷ এই সাতদিনে বিশেষ কিছুই জানতে পারি নি আমি ৷ তুহিন বলেছেন মায়া আপু নাকি সতর্ক হয়ে গিয়েছে ৷ সাবধানে সবকিছু সামলে নিয়েছে সে ৷ তাই আমরা কেউই কিছু টের পাচ্ছি না ৷ তবে আজ সকালে নাকি মায়া আপুকে একটা ক্লাবে যেতে দেখেছেন তুহিন ৷ সেই ক্লাবে যাওয়ার জন্যই রেডি হচ্ছি আমি ৷ রাতে যাচ্ছি তাতে বেশি সুবিধা হবে ৷ রাতের অন্ধকারে কেউ আমার চেহারা দেখলেও চিনতে পারবে না ৷

একটা কালো জিন্স তার সাথে কালো একটা টপস আর সেটার উপরে একটা কালো জ্যাকেট গাঁয়ে জড়ালো শ্রেয়া ৷ হাতে কালো গ্লাভস পরলো ৷ চুলগুলো উঁচু করে খোপা করে তার উপর দিয়ে মুখসহ একটা ওড়না দিয়ে পুরো মুখ আর মাথাটা ঢেকে নিলো ৷ তখনি শ্রেয়ার আম্মু রুমে এসে ওকে এভাবে দেখে অবাক হয়ে বললো,,,,,,,,,,

“কি করেছিস তুই এগুলা? আচ্ছা তুই কি শ্রেয়া?”

বিছানায় বসে জুতার ফিতা বাঁধতে বাঁধতে শ্রেয়া বলে উঠলো,,,,,,,,,,

“উফ আম্মু নিজের মেয়েকেই চিনতে পারছো না?”

“তুই এগুলা কি পরেছিস মা? তোর শরীর ঠিক আছে তো?”

“ইয়াহ আই এম অল রাইট ৷”

বলেই বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে একটা কালো চশমা হাতে নিয়ে সেটা চোখে দিলাম ৷ তারপর আম্মুর দিকে তাকিয়ে বললাম,,,,,,,,,,,

“কেমন লাগছে আমাকে দেখো? তুমিই আমাকে চিনতে পারো নি ৷ আশা করি কেউই আমাকে আর চিনতে পারবে না ৷”

“কিন্তু কোথায় যাচ্ছিস তুই?”

“সত্যিটা জানতে ৷ চিন্তা করো না আমি একা না ৷ আমার সাথে তুহিনও আছে ৷”

আম্মু মুচকি হেসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,,,,,,,,

“আচ্ছা যা তবে সাবধানে ৷ তোর বাবা আসার আগেই চলে আসিস কিন্তু ৷”

আমি মাথা নাড়িয়ে গাড়ির চাবি নিয়ে বেরিয়ে গেলাম ৷




ক্লাবের সামনে এসে গাড়ি থামালাম ৷ আশেপাশে একবার তাকিয়ে ভিতরে চলে গেলাম ৷ ভিতরে যেতেই তুহিনকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে পেলাম ৷ উনি আমার দিকে তাকালে আমি ইশারা করে বললাম,,,, “কোথায়?”

তুহিন চোখ দিয়ে ইশারা করে দেখালেন আমাকে ৷ আমি ওই দিকে তাকিয়ে তুহিনকে ইশারা করে বললাম,,,,, “আচ্ছা!” তারপর সেইদিকে চলে গেলাম ৷

শ্রেয়া গিয়ে একটা ছেলের সামনে বসলো ৷ ছেলেটা মদ খেয়ে পুরো মাতাল হয়ে গেছে ৷ আবছা আবছা চোখে শ্রেয়াকে দেখতে পেয়ে একটা বিচ্ছিরি হাসি দিল ৷ শ্রেয়া সামনে থেকে এক গ্লাস ড্রিংক নিয়ে সেখানে অ্যালকোহল মিশিয়ে দিল ৷ যাতে নেশাটা একটু হলেও বেশি হয় ৷ তারপর গ্লাসটা ছেলেটার মুখের সামনে ধরে তার মুখের সামনে ঘুরাতে ঘুরাতে শ্রেয়া বলে উঠল,,,,,,,

“hold it!”

ছেলেটা একবার গ্লাসটার দিকে তাকিয়ে থেকে শ্রেয়ার হাত থেকে গ্লাসটা নিয়ে পুরোটা একটানে খেয়ে নিলো ৷ তারপর শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,

“ওহহো তোমার হাতের ড্রিংকটা তো সেই ছিল ৷ না জানি তুমি কেমন!”

বলেই ছেলেটা একটা বিচ্ছিরি ভাবে হাসি দিল ৷ শ্রেয়ার রাগ উঠে গেলো ৷ বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ছেলেটার শার্ট ধরে টেনে আনলো ক্লাবের পিছনে ৷ ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল তাকে ৷ তারপর শ্রেয়া কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,,,,,,,,

“আমি কেমন? সেটা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাবি তুই ৷”

বলেই তুহিনকে চিল্লিয়ে ডাকলো ৷ তুহিন ওর সাথে আরো কয়েকজন ছেলেকে নিয়ে এসে হাজির হলো সেখানে ৷ ছেলেগুলা ওই মাতাল ছেলেটাকে ধরে বেঁধে একটা চেয়ারে বসালো ৷ মাতাল ছেলেটা রেগে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,

“আব্বে ওই তোরা কারা? আমাকে আটকে রাখার সাহস পেলি কই ৷ ছাড় আমাকে ৷”

শ্রেয়া ছেলেটার সামনে গিয়ে ছেলেটাকে ঠাস করে একটা থাপ্পর দিয়ে বললো,,,,,,

“দেখলি তো? আমাদের সাহস? নাকি আরো দেখাতে হবে?”

ছেলেটা ছুটার চেষ্টা করতে লাগলো আর অকথ্য ভাষায় গালি দিতে লাগলো ৷ কিন্তু শ্রেয়া সেদিকে মন না দিয়ে তুহিনকে বললো,,,,,,,,,,,,,

“তুহিন? রেকর্ড অন করুন ৷ আর যা বলবে সবটা রেকর্ড করবেন ৷”

তুহিন মাথা নাড়িয়ে রেকর্ড অন করলে ছেলেটাকে আমি বলে উঠলাম,,,,,,,,,

“মায়ার সবকিছু খুলে বল আমাকে ৷”

ছেলেটা চমকে গেল ৷ কাঁপাকাঁপা গলায় বললো,,,,,,,,,,

“কককে তুমি?”

নিজের মুখের থেকে কাপড় সরিয়ে বলে উঠলাম,,,,,,,,,,,,

“চিনতে পেরেছিস?”

“তততততুমি?”

“বাহ মাতাল অবস্থায়ও সব মনে আছে দেখছি ৷ এখন সব সত্যিটা বল নাহলে তোকে মেরে এখানেই পুতে রেখে দিব ৷”

“ককককোন সত্যি? ককককিসের সত্যি? আমি ককককিছু জজজানি না ৷”

“ভালোই ভালোই বলতে বলছি নাহলে…”

ছেলেটা চেঁচিয়ে বলে উঠলো,,,,,,,,,

“নাহলে কি? কিচ্ছু বলবো না আমি ৷”

“ওকে তো একটু ট্রেইলার দেখানোই যেতে পারে ৷”

বলেই তুহিনকে ইশারা করলাম ৷ উনি ওনার লোকদের ইশারা করলে তারা এগিয়ে এসে মাতাল ছেলেটাকে ইলেকট্রিক শক দিল ৷ চিৎকার করে উঠলো ছেলেটা ৷ আমি হাত দিয়ে ওদের থামিয়ে দিয়ে বললাম,,,,,,,,,,,

“হয়েছে? এবার বল ৷”

ছেলেটা ঢুলতে ঢুলতে আস্তে বলে উঠলো,,,,,,,,

“আমি জানি নাহ ৷”

“ওকে! ডু এগেইন ৷”

আবার ইলেকট্রিক শক দিতে গেলে ছেলেটা চেঁচিয়ে বলে উঠলো,,,,,,

“জানি জানি বলছি আমি ৷”

“হুম বল!”

“কিন্তু মায়া ম্যাম এসব জানলে মেরে দিবে আমাকে ৷”

“তোকে স্যাফ রাখা আমাদের দায়িত্ব ৷ কিন্তু তুই যদি না বলিস তো আজ আমিই তোকে মেরে দিব ৷ সো এখন ইচ্ছাটা তোর ৷”

“কি বলবো? সেটা বলুন ৷”

“অরূপকে মায়া ভুল বুঝিয়েছে না? কিন্তু কীভাবে? সেটা জানতে চাই আমি ৷”

“কাকে কিভাবে বুঝিয়েছে সেটা জানি না আমি ৷ ম্যাম শুধু আমায় ভিডিও বানাতে বলেছে ৷”

“ভিডিও?”

“হুম ফেইক ভিডিও আর ছবি যেখানে অাপনি একটা ছেলের সাথে খুব ঘনিষ্ঠ অবস্থায় ছিলেন ৷”

ছেলেটার দুইগাল শক্ত করে চেপে ধরে রাগে বলে উঠলাম,,,,,

“তোর বিবেকে একটুও বাঁধলো এরকম একটা জঘন্য কাজ করতে? শেষমেষ আমার ফেইক ভিডিও বানালি?”

বলেই ওর গালে কয়েকটা থাপ্পর মারলাম ৷ রাগে আমার মাথা ফেটে যাচ্ছে ৷ মায়া আপুকে যদি এই মূহুর্তে পেতাম মেরে ফেলতাম একেবারে ৷ একটা মেয়ে হয়ে কি করে পারে এরকম কাজ করতে ৷ তুহিন ছেলেটাকে বলতে লাগলেন,,,,,,,,,,

“সেই ভিডিও আর ছবিগুলা কই? দাও আমাকে ৷”

ছেলেটা বলে উঠল,,,,,,,,,,

“ওগুলা একটা পেনড্রাইভের মধ্যে সুরক্ষিত আছে ৷”

“পেনড্রাইভটা বের করো ৷”

“মায়া ম্যাম জানলে মেরে দিবে ৷”

“তুই না বের করলে এখন আমি মারবো তোকে ৷”

শ্রেয়া কথাটা বলে ছেলেটার দিকে এগিয়ে যেতে নিলে তুহিন ওকে আটকে দিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,,

“শ্রেয়া শান্ত হও ৷ আমি দেখছি ৷”

তারপর তুহিন ছেলেটাকে আবার বলতে লাগলো,,,,,,,

“মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়েও তুই মায়া মায়া করছিস? এটা ভাবছিস না? যে তুই না দিলে আমরাই তোকে মেরে দিব ৷ বের কর ওটা ৷”

ছেলেটা মাথা নিচু করে কিছুক্ষন চুপচাপ বসে রইল ৷ তুহিন চেঁচিয়ে বললো,,,,,,,,,

“কি হলো বের কর?”

ছেলেটা কাঁপাকাঁপা হাতে নিজের শার্টের পকেট থেকে পেনড্রাইভটা বের করে তুহিনের হাতে দিল ৷ তুহিন সেটা হাতে নিয়ে বললো,,,,,,,,,,,,

“বাহ এগুলা সঙ্গে করে নিয়ে ঘুরিস নাকি তোরা?”

ছেলেটা মাথা নিচু করে ফেললো ৷ তুহিন পেনড্রাইভটা উল্টে পাল্টে দেখে শ্রেয়ার হাতে দিতে নিলে শ্রেয়া ওকে থামিয়ে বললো,,,,,,,,,,,

“ইডিট করে রিয়েল ভিডিও বের করতে দিয়েন সঙ্গে ছবি গুলাও ৷ এসব আমার দেখে কাজ নেই ৷ ভালো লোকদের কাছে দিবেন যারা ভিডিও খুব ভালো ইডিট করে রিয়েলটা বের করতে পারে ৷ আর এই ছেলেটাকে আপাতত হসপিটালে নেয়ার ব্যবস্থা করুন ৷ আজকের দিনটা চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাক ৷”

“তারপর?”

তুহিন বললেন ৷ আমি ছেলেটার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলতে লাগলাম,,,,,,,,,,

“মায়ার মুখে সব সত্যিটা তোকে বের করতে হবে ৷”

ছেলেটা মুখ তুলে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,,,,,,

“মানে? কিভাবে করবো?”

“কাল সকালে মায়াকে তোর সাথে দেখা করতে ডাকবি ৷ তারপর এখানেই ওর সঙ্গে কথা বলে জানবি ও কেন এসব করেছে ৷ পুরোটা জানবি বাট মায়া যেন এটা জানতে না পারে যে তুই আমাদের হয়ে কাজ করছিস ৷ আমরা কিন্তু তোর কাছাকাছিই থাকবো ৷ সো চালাকি করারও চেষ্টাও করবি না ৷”

তারপর তুহিনের সঙ্গে করে নিয়ে আসা ছেলেদের দিকে তাকিয়ে বললাম,,,,,,,,,,,

“ওকে হসপিটালে নিয়ে যাও ৷ এক মূহুর্তও চোখের আড়াল করবে না ৷ চোখেচোখে রাখবে সবসময় ৷ এখন নিয়ে যাও ওকে ৷”

ওরা ওদেরকে নিয়ে চলে গেলে আমি আর তুহিন ক্লাব থেকে বেরিয়ে এসে গাড়িতে বসলাম ৷ মাথার ওড়নাটা খুলে হাতের মধ্যে পেঁচাতে পেঁচাতে তুহিনকে বলে উঠলাম,,,,,,,,,,,,,

“অনেক রাত হয়ে গেল নাকি? আব্বু বাসায় এসে আমাকে না দেখলে আমার খবর আছে ৷ গাড়ি স্টার্ট দিন তাড়াতাড়ি ৷”

“খুব বেশি না মাত্র ১০ টা বাজে ৷”

“১০ টা বাজে এটা বেশি না? আচ্ছা কথা না বলে তাড়াতাড়ি চলুন ৷”

উনি গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বলতে লাগলেন,,,,,,,,,,,,,,

“কিছুটা বিষয় তাহলে পরিষ্কার হলো ৷ বাকিটার জন্য কাল পর্যন্ত ওয়েট করতে হবে ৷”

“হুম কালকের কাজটা পুরোটা আপনি করবেন ৷ মায়া আপুকে তো আমি সবার সামনে অপমান করবো যেভাবে ও আমায় করেছে ৷ এখন ওর সামনে গেলে ও অন্য কোনো চাল চালবে ৷ ওকে বুঝতে দিলে হবে না যে আমরা সবটা জেনে গিয়েছি ৷”

“হুম আচ্ছা ৷”

তুহিন আমাকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলেন ৷ আব্বু এখনো আসে নি তাই আমি সোজা রুমে গিয়ে চেঞ্জ করে নিলাম ৷

_______________________

একটা অন্ধকার রুমে বসে গিটারে সুর তুলছে অরূপ ৷ সুর বললে ভুল হবে এটাকে বেসুর বলা যেতে পারে ৷ সব গুলো সুর এলোমেলো আর মৃত শুনাচ্ছে ৷ অরূপ নিজেও জানেনা হঠাৎ ওর কি হলো ৷ গিটারের সুর তো ও ভালোই তুলতে পারে ৷ কিন্তু আজ চেষ্টা করেও পারছে না কেন জানি ৷ কেন এই গিটারটাও আজ ওকে কষ্ট দিচ্ছে ৷ গত কয়েকদিন যাবত ওর কিচ্ছু ভালো লাগছে না ৷ ওর সব কিছুতেই যেন বিষন্নতা ছেয়ে রয়েছে ৷ মন মস্তিষ্কের বোঝা পড়ায় ও নিজেই খুব বিরক্ত ৷ মায়ার সঙ্গেও ইদানিং তেমন একটা কথা বলে না তার কারনটা ওর কাছে অজানা ৷

হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে অরূপ কিছুটা চমকে উঠলো ৷ ঘাড় বাকিয়ে পিছনে দরজার দিকে তাকাতেই মায়াকে দেখতে পেল ৷ একপলক দেখে চোখ ফিরিয়ে নিল ৷ মায়া রুমের ভিতরে ঢুকে রুমের লাইট অন করে অরূপের পাশে গিয়ে বসলো ৷ অরূপ এখনো তাকায়নি ওর দিকে ৷ ও কোনো কথা বলছে না দেখে মায়া বলতে লাগলো,,,,,,,,,

“এভাবে লাইট বন্ধ করে একা বসে কি করছো?”

অরূপ কোনো উত্তর দিল না মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে বসলো ৷ মায়া আবার বললো,,,,,,,

“কি হয়েছে বলবে? কয়েকদিন ধরেই তুমি আমার সঙ্গে এরকম করছো ৷ কথা বলছো না বলতে দিচ্ছোও না ৷ অরূপ কি হয়েছে?”

“কিছু না তুমি যাও এখান থেকে ৷”

“কিন্তু কেন? দেখো তোমার এরকম ইগনোর করাটা আমি সহ্য করতে পারছি না ৷ তুমি বুঝতে পারছো না? প্লিজ কথা বলো না!”

বলেই মায়া অরূপের হাতের উপর হাত রেখে কিছু বলতে যাবে তার আগে অরূপ মায়ার হাত সরিয়ে দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলতে লাগলো,,,,,,,,,

“আমার মাথা গরম করো না মায়া ৷ আমাকে একা ছেড়ে দাও ৷ তুমি যাও এখান থেকে ৷”

“তুমি এভাবে বলছো কেন…”

অরূপ রেগে উঠে দাঁড়ালো ৷ হাতের গিটারটা ছুড়ে ফেলে দিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,,

“ওকে ফাইন তুমি থাকো এখানে ৷ আমি নিজেই বের হয়ে যাচ্ছি ৷”

বলেই ও চলে যেতে নিলে মায়া অরূপের হাত ধরে আটকে দিল ৷ আর সেটা দেখে অরূপের রাগ আরো দ্বিগুন বেড়ে গেল ৷ ও মায়ার হাত ঝাঁটা মেরে সরিয়ে দিয়ে চেঁচিয়ে বলে উঠলো,,,,,,,,,,

“কথায় কথায় কেন হাত ধরাধরি করো? তুমি জানো না? আমার ভালো লাগে না এসব ৷ তবুও কেন শুনো না ৷ যাও এই রুম থেকে বেরিয়ে যাও এখনি ৷”

“আমি তোমার হাত ধরলেই দোষ? আর শ্রেয়া ধরলে কিছু না?”

“গেট আউট ফ্রম হেয়ার!”

অরূপের চিৎকারে কেঁপে উঠলো মায়া ৷ আগে কখনো ওকে এতোটা রাগ করতে দেখেনি ও ৷ আজ ওকে এভাবে দেখে মায়া আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না ৷ তাড়াতাড়ি করে রুম থেকে বেরিয়ে গেল ৷ মায়া যাওয়ার পর অরূপ নিজের চোখ মুখ চেপে ধরলো ৷ ও নিজেই জানেনা কেন আজ ও মায়ার সাথে এরকম বিহেভ করলো ৷




মায়া রুম থেকে বাইরে বেরিয়ে আসলো ৷
ওর এখন অরূপকে নিয়ে চিন্তা হচ্ছে ৷ আগে কখনো অরূপ ওর সাথে এমন ব্যবহার করে নি ৷ তবে আজ কি হলো? ‘সব সত্যিটা কি তাহলে অরূপ জেনে গেছে ৷ না সেটা কি করে হতে পারে ৷ ধূর কি সব ভাবছি আমি হয়তো ওর মুড অফ তাই এমন করছে ৷ কিন্তু কিসের জন্য ওর মুড অফ? উফ পাগল হয়ে যাবো আমি ৷ কার কখন কি হয় বোঝা মুশকিল ৷ তবুও একবার ফোন করে দেখে নি ৷’

মায়া ওর ফোন বের করে একটা নাম্বার ডায়াল করে কল দিল ৷ কিন্তু ওপাশ থেকে একটা বিরক্তিকর মহিলা বলল ‘এই মূহুর্তে সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না’ ৷ রাগ লাগছে এখন মায়ার ৷ কাজের সময়ই ফোন বন্ধ থাকে ৷ একটাও কাজের না ৷ এসব বিড়বিড় করে নিজের রুমের দিকে পা বাড়াতেই বাড়ির বেল বেজে উঠলো ৷ মায়া সেটাকে উপেক্ষা করে নিজের রুমে চলে গেল ৷ কিন্তু বেল বাজানো বন্ধ হচ্ছে না ৷ কেউ দরজা খুলছে না আর যে এসেছে সেও থামছে না ৷ বারবার বাজিয়েই যাচ্ছে সে ৷

এক প্রকার বিরক্ত হয়ে রুমের থেকে বেরিয়ে নিচে চলে গেল মায়া ৷ আশেপাশে কেউ নেই যে দরজা খুলবে অথবা মায়া কাউকে কিছু বলবে ৷ ওর নিজেরই খুলতে হবে এখন ৷ তাই তাড়াতাড়ি করে এগিয়ে গিয়ে কোনো রকমে দরজা খুলে দিল ৷ রেগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই সামনের ব্যাক্তিকে দেখে মায়া অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে রইলো তার দিকে ৷ এটা কি সত্যি নাকি কোনো হ্যালুসিনেশন!”

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here