#ভালোবাসার_রং_মিছিল💚
#লেখিকা:ইশা_আহমেদ
#পর্ব_২০
৪১.
অর্ষার অবস্থা প্রচন্ড শোচনীয়।সে যে ইরহামকে ভালোবেসে ফেলেছে তা এই একয়েকদিনে খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছে।একদিন ইরহাম তাকে জ্বালায়নি।এমনকি সামনেও খুব কম পরেছে গতকাল।ইগনোর করেছে তাকে এক কথায়।অর্ষা আজকে এর বিহিত করেই ছাড়বে আর পারছে না।অন্য কাউকে ভালোবাসলেও ইরহামের তার সাথেই থাকতে হবে।সে কখনোই ছাড়বে না ইরহামকে।
অর্ষা সাদা রঙের একটা থ্রি পিস পরে হালকা একটু সেজে রুশানের সাথে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা হয়।ভার্সিটিতে যেতেই অর্ষা একটা ঝটকা খায়।ইরহামের সাথে একটা মেয়ে।তার হাত ধরেই ঘুরছে ইরহাম।অর্ষার চোখ জ্বলছে, বুকে ভীষণ ব্যাথা করছে।
ভালোবাসার মানুষকে অন্য মেয়েদের সাথে দেখতে আসলেই হৃদয় পুরে যায়।অর্ষা সহ্য করতে পারে না।দৌড়ে ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে যায়উশা,নাইম,মুহিব,রুশান হা করে তাকিয়ে থাকে।কি হলো কিছুই বুঝতে পারছে না।
রুশানের মাথা খারাপ হয়ে যায়।ও ভার্সিটির বাইরে যায় দৌড়ে গিয়ে দেখে অর্ষা এলোমেলো পায়ে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে।রুশান দৌড়ে ওর কাছে যায়।অর্ষা অশ্রুসিক্ত চোখে তাকায় রুশানের দিকে।রুশানের বুক ধপ করে উঠে।যে বোনকে কাঁদতে দিতে চায় না সে আজ কাঁদছে।রুশানের সহ্য হয় না।অর্ষাকে বুকে চেপে ধরে বলে,,,
—“কি হলো তুই কাঁদছিস কেনো অর্ষু বল আমায়।তুই কাঁদিস না”
—“রুশান ওই লোকটা অন্য মেয়ের সাথে।আমার সহ্য হচ্ছে না কি করবো আমি।আমার হৃদয় পুরছে”
—“তুই কাঁদিস না আমি দেখছি এই ইরহামকে আমার বোনকে কাঁদিয়েছে।আমি এর একটা কিছু করেই ছাড়বো”
ইরহাম মেয়েটাকে নিয়ে ভার্সিটি থেকে বের হচ্ছিল।তখনই দেখে অর্ষা একটা ছেলের বুকে মাথা রেখে দাঁড়িয়ে আছে।ছেলেটা উল্টো দিকে ঘুরে থাকায় চিনতে পারে না।মাথায় আগুন ধরে যায় ইরহামের।ধুপধাপ পা ফেলে অর্ষার কাছে এসে টেনে ওকে ছাড়ায়।রাগে থরথর করে কাঁপছে ও।কিন্তু সামনে রুশানকে দেখে থতমত খায়।
ইরহামকে দেখেই রুশান রেগে যায়।অর্ষার হাত ইরহামের হাত থেকে টেনে ছাড়ায়।রুশান রাগে না আর যখন রাগে তখন ভয়ংকর রেগে যায়।ইরহামের কলার ধরে বলে,,,
—“আপনার জন্য আমার বোনের চোখের পানি ঝরেছে ছাড়বো না আমি।ফারদার আমার বোনের আশেপাশে না দেখি আপনাকে।”
রুশানের ব্যবহারে ইরহামের রাগ তিরতির করে বেড়ে যায়।ঝাঁকি মেরে রুশানের হাত ছাড়ায়।এরপর অর্ষাকে টেনে নিজের কাছে এনে কোমড় চেপে ধরে বলে,,,
—“ও আমার বউ আমি ওর আশেপাশে একবার না হাজার বার আসবো কি করবে তুমি করে নিয়ো”
অর্ষা ইরহামকে সহ্য করতে পারছে না।আরো ইরহামের গাড়ির সামনে সেই মেয়েটাকে দেখে রাগ বেড়ে যায়।ধাক্কা মেরে দূরে সরায় ইরহামকে।রেগে চিল্লয়ে বলে,,,
—“আই হেইট ইউ।আপনি চলে যান এখান থেকে আমি দেখতে চাইছি না আপনার মুখ”
ইরহামের রাগ দ্বিগুণ করতে এই একটা কথাগুলোই যথেষ্ট ছিলো।ইরহাম অর্ষাকে কোলে তুলে নিয়ে হাঁটা ধরে।রুশান আটকাতে চায় কিন্তু ব্যর্থ হয়।ইরহাম অর্ষাকে গাড়িতে বসিয়ে দেয়।মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলে,,,
—“তুই এখান থেকে রিকশা করে বাসায় যা আমি আসছি কিছুক্ষণ পর”
মেয়েটা মাথা নাড়ায়।ইরহাম গাড়ি চালাতে শুরু করে।অর্ষা পাশে বসে কেঁদে যাচ্ছে।ইরহামের সহ্য হচ্ছে না অর্ষার চোখের পানি।তবুও কিছু বলছে না কারণ সে রেগে আছে।কাজল লেপ্টে গিয়েছে।টানাটানির সময় কাঁচের চুড়ি ভেঙে অর্ষার হাত কেটেছে কিছুটা।কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পরেছে অর্ষা।
একটা বাগান বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামায় ইরহাম।অর্ষাকে কোলে তুলে নিয়ে হাঁটা ধরে।বাড়ির দারোয়ান বাড়ির মেইন দরজা খুলে দেয়।ইরহাম অর্ষাকে নিয়ে সোজা একটা রুমে নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দেয়।অর্ষার চোখ মুখ ফুলে গিয়েছে কাঁদার জন্য।ইরহাম কপালে চুমু দিয়ে অর্ষার হাতে মলম লাগিয়ে দেয়।চুড়িগুলো যত্ন করে হাত থেকে খুলে রেখে দেয়।
—“তুমি এমন কেনো করলে আজকে জানি নাহ আমি কিন্তু তোমাকে অন্য পুরুষের সাথে দেখা সম্ভব না।রুশানকেও এখন সহ্য হচ্ছে না তোমার পাশে কি করবো বলো তো”
অর্ষার দিকে নেশাক্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,,,
—❝তুমি নেশার চেয়েও ভয়ংকর প্রেয়সী❞
অর্ষার ঘুম ভাঙতেই নিজেকে একটা অচেনা রুমে আবিষ্কার করে।উঠে বসে সামনে তাকাতেই ইরহামকে চোখে পরে।ইরহাম গভীর দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে।অর্ষার মনে পরে একটু আগের ঘটনা।রাগটা বেড়ে যায়।মনে পরে সকালের মেয়েটার সাথে কিভাবে হেসে হেসে কথা বলছিলো।
—“আপনার সাহস কি করে হলো আমাকে এখানে নিয়ে আসার হ্যা।হাউ ডেয়ার ইউ মিস্টার ইরহাম চৌধুরী”
ইরহাম অর্ষার কাছে এসে বলে,,,”আমার অধিকার আছে বলেই নিয়ে এসেছি তোমাকে এখানে”
ধাক্কা মেরে দূরে সরিয়ে দিয়ে রেগে চিল্লিয়ে বলে,,,
—“তোর কোনো অধিকার নেই আমার কাছে আসার।ক্যারেক্টারলেস পুরুষ।তোর সাথে থাকবো না আমি ডিভোর্স দিবো হ্যা হ্যা আজকে বাসায় গিয়ে বলবো বাবাকে।”
ইরহামের ধৈর্যের সীমা ছাড়িয়ে যায়।তাকে ডিভোর্স দিবে এ কথা শুনেই আবার রাগ উঠে এতো সময় ধরে নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছিলো কিন্তু অর্ষা আবার তার রাগ উঠিয়ে ছাড়লো।ইরহাম অর্ষার একদম কাছে এসে কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে আনে।দূরত্ব নেই দু’জনের মাঝে একটুও।অর্ষা ধাক্কা মেরেও এক চুল সরাতে পারে না ইরহামকে।
ইরহাম চুলে হাত দিয়ে অর্ষার মুখ এগিয়ে নিয়ে এসে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়।অর্ষা চোখ বড়বড় হয়ে যায়।প্রথম স্পর্শ।অর্ষা নিজেকে ইরহামের থেকে ছাড়াতে চায়।কিন্তু ইরহাম তো ইরহাম সে কি ছাড়ার মতো মানুষ।রাগ উঠিয়েছে যখন তার মাসুল তো দিতেই হবে অর্ষাকে।
অর্ষাকে ছেড়ে দেয় অনেকক্ষণ পর।অর্ষা হাঁপাচ্ছে।ইরহামকে ধাক্কা মেরে নিজের থেকে দূরে সরায়।ইরহাম ঠোঁট স্লাইড করতে করতে বলে,,,
—“উফ জান মিষ্টিটা খুব মজা ছিলো আরো একবার খেতে ইচ্ছে করছে আমার এখন কি করি বলো আরেক বার…..”
অর্ষা ইরহামের দিকে হাতের কাছে যা পাচ্ছে তাই ছুড়ে মারছে।অর্ষা চিল্লিয়ে বলে,,,
—“ইউ অসভ্য পুরুষ মানুষ আপনি কেনো আমাকে স্পর্শ করলেন।ক্যারেক্টারলেস পুরুষ মানুষ।একদিন নিহানা তো আরেক দিন ওই মেয়েটা আর শেষে আমার কাছে আসে।ছিহ”
ইরহাম রেগে অর্ষার কাছে এসে ওকে বিছানার সাথে চেপে ধরে।অর্ষার কাটা হাতে বেশ ব্যাথা লাগছে।ইরহামের চোখ লাল বর্ন ধারণ করেছে।অর্ষা ভয় পেলেও মুখ ভঙ্গি স্বাভাবিক।যেন কিছুই হয়নি।
—“আমি ক্যারেক্টারলেস না।আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলার আগে দশবার ভাববি।”
৪২.
রুশান অর্ষা বসে আছে ছাদে।অর্ষা নিজেকে কেমন গুটিয়ে নিয়েছে সবার কাছ থেকে।বাড়ির সবাই অর্ষার এমন পরিবর্তন দেখে কিছুটা চিন্তিত।রুশান অর্ষাকে মন মরা দেখে বলল,,,
—“তুই ভালোবাসিস ইরহাম স্যারকে?”
—“হয়তো”
অর্ষার অস্পষ্ট উত্তর।রুশানের ভালো লাগছে না।ইরহাম অর্ষার জীবনে আসার পর মেয়েটা কেমন হয়ে গিয়েছে।বিকালে বাসায় আসার পর রুমে বসে ছিলো।সন্ধ্যার দিকে রুশান টেনে রুম থেকে বের করে নিয়ে এসেছে।রুশান অর্ষার মন ভালো করতে বলে,,,
—“অর্ষা চল ঘুরে আসি আমাদের আগের বাসা থেকে”
—“যেতে ইচ্ছে করছে না তুই যা”
রুশান অর্ষাকে টুল থেকে টেনে উঠিয়ে টানতে টানতে বাইরে নিয়ে আসে।বাইক বের করে দু’জন চলে আসে পুরোনো সেই বাড়িতে যেখানে তাদের ছোটবেলা কেটেছে।এটা ছিলো ওদের দাদুর বাড়ি।৮মাস হলো ওদের বাপ চাচা মিলে বর্তমান বাড়িটা করেছে।পুরোনো বাড়িটা এখন ফাঁকা পরে আছে।বাগান বাড়ির ন্যায় হয়েছে।রুশান মিথ্যা বলেছে অর্ষা সে পুরোনো বাড়িতে না এসে অর্ষাকে নিয়ে ফুসকা খেতে এসেছে সাথে উশা নাইম,মুহিব আছে।
সবাই মিলে অর্ষার মন ভালো করে দেয়।নয়টা পর্যন্ত এদিক ওদিক ঘুরে আড্ডা দিয়ে বাসায় চলে যায় সবাই।অর্ষা নিজের রুমে যাওয়ার সময় রুশানের গাল টেনে দিয়ে বলে,,,
—“ধন্যবাদ ছোট ভাই রুশাইন্না”
রুশান হাসে।বোনের মন ভালো করতে পেরেছে এতেই সে খুশি।ছোটবেলা থেকে দুজন মারামারি করেই বড় হয়েছে।ওদের সম্পর্কটা আপন ভাই-বোনের চেয়েও উপরে।
৪৩.
ইরহাম বারান্দায় ইজিচেয়ার বসে আছে।রুম অন্ধকার।চারপাশের কিছুই তেমন ভাবে দেখা যাচ্ছে না।কপালে হাত ঠেকিয়ে বসে আছে।অর্ষার কথাগুলো এখনো কানে বাজছে তার।সে ক্যারেক্টারলেস!জীবনে কোনো মেয়ের দিকে ফিরে তাকায়নি সে।আর এখন নিজের বউয়ের মুখ থেকে চরিত্রহীন শুনতে হচ্ছে।প্রচুর ইগোতে লেগেছে ইরহামের।
—“তুমি জ্বলবে প্রেয়সী কাল থেকে জ্বলবে এবং নিজের আমার কাছে আসবে।আমি আর যাবো না তোমার কাছে তুমি যতক্ষন না আমার কাছে আসছো”
প্রিয়া তখনই রুমে নক করে।ইরহাম আসতে বলে।প্রিয়া লাইট জ্বালিয়ে সোফায় বসে পরে।প্রিয়া হেসে বলে,,,
—“কিরে অসুস্থ তুই?”
—“নাহ।ভালো লাগছে না আরকি”
—“কেনো অর্ষা ঝগড়া করেছে”
—“আর বলিস না আপুই মেয়েটা বোঝেই না আমাকে।আমি ওকে ভালোবাসি তাও বোঝে না”
প্রিয়া হাসে।প্রিয়া ইরহামের ফুফাতো বোন।সকালে যখন সে ইরহামের সাথে ছিলো তখন অর্ষার চোখে হিংসা দেখেছে।অর্ষাও যে ইরহামকে ভালোবাসতে শুরু করেছে তা বেশ বুঝতে পারছে।কিন্তু এই বলদ তো বলেই না তার মনের কথা।
—“তুই ওকে বলেছিস নিজের মনের কথা যে ও বুঝবে আগে তাই বল।ও তো জানেই না তুই ওকে ভালোবাসিস”
—“বলবো আপুই কিন্তু এখন না আর কিছুদিন যাক ও যে আমায় ভালোবাসে তা বুঝি আগে তারপর বলবো”
—“ঠিক আছে।কিন্তু ভাই ইয়াদকে দেখলাম কেমন মনমরা হয়ে আছে।আগে তো কখনো এমন করেনি ও।কি হয়েছে ওর।হাসে না আগে তো আমার সাথে দেখা হলে ছাড়তেই চায়তো না এখন তো ধরে বেঁধেও রাখা যাচ্ছে না”
—“আমিও জানি না জিজ্ঞেস করতে হবে ওকে”
—“করিস তুই দেখ কি হলো ছেলের।”
প্রিয়া কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে চলে যায়।ইরহাম নিজের রুমে থাকা আরেকটা সিক্রেট রুমে যায়।রুমটা জুড়ে অর্ষার ছবি।বড় করে বিয়ের পরের দিনে ঘুরতে যাওয়া ছবিটা টানানো।এরপর বিয়ের দিনের ছবি অর্ষার হুট করে হেসে ওঠা অর্ষার বিভিন্ন রকমের ছবি আছে।রুমের এক জায়গায় বড় করে লেখা “আমার মনের রাজ্যের রানী” নিচে অর্ষা লেখা।
ইরহাম ছবিগুলো দেখতে থাকে।রং তুলি নিয়ে আবারও বসে সে।ছবি আঁকে অর্ষার।আঁকতে আঁকতে রাত কত বাজে খেয়াল নেই ইরহামের।ইরহাম ছবিটা আঁকা শেষ করে রুমে আসে।মন ভালো হয়েছে তার কিছুটা তবে পুরোপুরি না।
#চলবে#ভালোবাসার_রং_মিছিল💚
#লেখিকা:ইশা_আহমেদ
#পর্ব_২১
৪৪.
আজকে আসিফ আহমেদের সপরিবারে দাওয়াত দিয়েছেন ইসফাক চৌধূরী।আজকে ইলমার জন্মদিন।তাই আয়রা আর ইসফাক ঠিক করেছে দুই পরিবার আবার একসাথে হবে।সবার মতো করে জন্মদিন করা হয় না ঘটা করে কিন্তু বাড়ির সবাই মিলে খাওয়া দাওয়া করে মজা করে।অর্ষা যেতে চাইছিলো না তবুও মায়ের জোরাজুরিতে যেতে হচ্ছে।অর্ষাকে লাল রঙা একটা শাড়ি পড়িয়ে দেয় ইরানী বেগম।রুশান রেডি হয়ে হাজির।
—“আরে অর্ষা যে শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার জন্য যে রেডি হয়েছিস একেবারে ঝাকানাকা ভাবে।তা এবার কি থেকে যাওয়ার চিন্তা ভাবনা করেছিস”
অর্ষা রুশানের দিকে বালিশ ছুড়ে মেরে চোখ রাঙিয়ে বলে,,,
—“আজাইরা কথা বাদ দে।বুঝতে পেরেছি তুমি এমন হিরো আলম মার্কা সেজে কেনো যাচ্ছো ইলমাকে পটাতে।চিন্তা করিস না তোরে জীবনেও ইলমারে পটাইতে দেবো নাহ”
—“তুই বন্ধু নামের কলঙ্ক।বেস্টফ্রেন্ডের প্রেমে সাহায্য করবে তা না আমার প্রেমে না হওয়ার জন্য আজাইরা ফন্দি আঁটছে বদমাশ মাইয়া”
মৌ রহমান রুমে ঢুকে দুজনকে ঝগড়া করতে দেখে ধমক দিয়ে বলেন,,,
—“থামবি তোরা সব সময় ঝগড়া।আর এই রুশান সমস্যা কি তোর আমার মেয়েটার পিছনে না লাগলে হয় না।
মৌ রহমান দুজনের ঝগড়া থামিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।নিচে এসে সবাই রওনা হয়।জন্মদিনটা হবে ইসফাকদের বাগান বাড়িতে।ইরহাম সেদিন অর্ষাকে যেই বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলো সেই বাড়িতে।বাড়ির সামনে আসতেই অর্ষার অস্বস্তি ফিল হয়।ইরহামের সামনে আবার যেতে হবে।ব্যাপারটা খুব অস্বস্তিকর অর্ষার কাছে।
সবাই ভিতরে প্রবেশ করে।আয়রা ও ইসফাক সবাইকে দেখে কুশল বিনিময় করে বসতে বলেন।অর্ষার দাদু আর দাদিমা ছাড়া সবাই এসেছেন।বুড়ো মানুষদের টানাহেঁচড়া করতে চায়নি তারাও আসতে চায়নি।দাদিমা আসতে নারাজ।অসুস্থ ভেবে কেউ জোর করেননি।
ইলমা দৌড়ে এসে অর্ষাকে জড়িয়ে ধরে বলে,,,
—“ভাবিমনি কেমন আছো?”
অর্ষা মৃদু হেসে উত্তর দেয়,,,
—“ভালো আছি মিষ্টিপাখি।হ্যাপি বার্থডে।জীবনে খুব সুখী হও মিষ্টিপাখি।সব সময় এমন হাসিখুশি থাকো এটাই চাই”
—“ধন্যবাদ ভাবিমনি”
ইলমা কিছুকথা বলে চলে যায় আরিশার কাছে।দুজন খুব ভালো বান্ধবী হয়েছে কয়েকদিনে।মেসেজে কথা বলে প্রায়।রুশান হা করে ইলমার দিকে তাকিয়ে আছে।ইলমার পরনে বেবি পিংক রঙের গাউন।চুলগুলো ছাড়া,চোখে কাজল,ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক ব্যস এতেই মায়াবী লাগছে রুশানের কাছে ইলমাকে।
রুশানের অবস্থা দেখে অর্ষা মুখ টিপে হাসে।রুশানের পেটে গুতা দিয়ে বলে,,,
—“আর তাকাইস না আমার ননদের নজর লেগে যাবে তো”
—“উফ অর্ষা ব্যাথা পেয়েছি তো।আর তোর ননদের উপর তো আমার নজরই পরবে সবসময়।কারণ আমি ও আমার মায়াবিনী”
—“উমম তুই যে মিষ্টিপাখির প্রেমে ডুবে ডুবে পানি খাচ্ছিস খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি।কিন্তু দুঃখের কথা হলো ইলমার ভাই তোকে পছন্দ করে না”
—“তাতে আমার কিছুই আসে যায় না”
রুশান অর্ষা মাথায় থাপ্পড় মেরে পকেটে হাত গুঁজে ভাব দিয়ে চলে যায়।অর্ষা বেআক্কেলের মতো তাকিয়ে থাকে রুশানের যাওয়ার পানে।আয়রা সবাইকে রেস্ট নিতে বলেন।সবাইকে একেকটা রুম দেওয়া হয়।সবাই যেতেই আয়রা অর্ষার কাছে আসে।অর্ষাকে সোফায় বসিয়ে নিজে পাশে বসে।
অর্ষার লজ্জা লাগছে।অর্ষা মাথা নিচু করে বসে আছে।চুলগুলো খোপা করা ছিলো এখন খুলে গিয়েছে।আয়রা অর্ষার মুখ উঁচু করে বলে দেখে বলে,,,,
—“মাশাআল্লাহ মাশাআল্লাহ আমার ইরহামের বউকে তো অনেক সুন্দর লাগছে।কেমন আছো মা?”
—“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আন্টি আপনি?”
আয়রা মুচকি হেসে বলে,,,”আন্টি কি মা তুমি আমাকে মামনি বলে ডেকো”
অর্ষা মাথা নাড়ায়।আয়রা হাসেন।অর্ষার অস্বস্থি বুঝতে পারেন।অর্ষার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,,,
—“তুমি হয়তো অস্বস্তি ফিল করছো।তুমি আমাকে নিজের মা ভাবতে পারো অর্ষা”
অর্ষা অবাক হয়ে তাকায় আয়রার মুখপানে।মহিলার ব্যবহারে মুগ্ধ হয় অর্ষা।নিজের অস্বস্তি কাটিয়ে উঠে।হেসে বলে,,,
—“ঠিক আছে মামনি কিন্তু সরি”
আয়রা ভ্রু কুচকে তাকায় অর্ষা সরি কেনো বলছে তাকে।তার মাঝেই অর্ষা বলে ওঠে,,,
—“আসলে মামনি প্রথম দিনের করা কাজ মনে করে অস্বস্তি হচ্ছিল।ক্ষমা করবেন আমায়”
—“আরে অর্ষা মা আমি কিছু মনে করিনি”
অর্ষা আয়রার হাসে বেশ কিছুক্ষন কথা বলার পর আয়রা তাকে একটা রুম দেখিয়ে দিয়ে চলে যায়।ইসফাক গিয়েছে রান্নার কাছে।ইয়াদ আগে থেকেই আছে।অর্ষা রুমে এসে ধপ করে শুয়ে পরে বিছানায়।ইরহাম ওয়াশরুম থেকে বের হয়।অর্ষাকে দেখে থমকায়।ইরহাম ভাবে অর্ষা ঘুমিয়ে আছে।ও অর্ষার কাছে এসে ঝুঁকে দেখে নেয় নিজের প্রেয়সীকে।
লাল শাড়িতে রাঙা বউ লাগছে অর্ষা।ইরহাম ঠোঁট কামড়ে হেসে বিড়বিড় করে বলে,,”আমার রাঙা বউ”
ইরহাম নিজের ফোন বের করে কয়েকটা ফটো তুলে নেয়।এরপর অর্ষার কপালে,গালে চুমু খেয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে চলে থেকে চলে যায়।ও চাইছে না অর্ষার মুখোমুখি হতে।ইরহাম যেতেই অর্ষা ধপ করে চোখ খোলে।বুকে হাত দিয়ে শ্বাস নেয়।ইরহাম যখন তার কাছে এসেছিলো তখন হার্টবিট বেড়ে গিয়েছিলো।
চুমু দিয়েছিলো যখন তখন অর্ষা কেঁপে উঠে।অর্ষা ভয়ে পেয়েছিলো যদি ধরা পরে যায় ইরহামের কাছে তখন।কিন্তু একটুর জন্য ধরা পরেনি।ইরহামের বলা রাঙা বউ কথাটা এখনো কানে বাজছে অর্ষার।কথাটা মনে আসতেই লজ্জা লাগে।কিন্তু ইরহামের সেদিনের ব্যবহারের কথা মনে পরে যায়।
৪৫.
রুশান ইলমার সাথে কথা বলার জন্য ঘুরঘুর করছে।আরিশা সরছে না ইলমার কাছ থেকে।আরিশা হঠাৎ উঠে যায়।রুশান সেই সুযোগে ইলমার কাছে আসে।ইলমার রুশানকে দেখে হেসে বলে,,
—“আরে রুশান ভাইয়া যে কেমন আছেন”
—“এতো ভালো ইলমা।হ্যাপি বার্থডে।”
রুশান ইলমার দিকে একটা শপিং ব্যাগ দিয়ে বলে।ইলমা অবাক হয়ে শপিং ব্যাগটা নেয়।ও ভাবতেই পারেনি রুশান ওর জন্য আলাদা করে গিফট আনবে।গিফটটা হাতে নিয়ে বেশ খুশি হয়।রুশান ইলমাকে হাসতে দেখে মাথা চুলকে হাসে।দুদিন আগেই জানতে পেরেছে ইলমার জন্মদিন।সেদিনই গিফট কিনেছে ইলমার জন্য।
—“এতে কি আছে ভাইয়া।”
—“এই ছোট্ট গিফটা আমার তরফ থেকে তোমার জন্য।বাসায় গিয়ে খুলে দেখো”
ইলমা মাথা নেড়ে সায় দিয়ে বলে,,,,”ধন্যবাদ ভাইয়া গিফটের জন্য”
রুশান হাসে।প্রেমে পরলে মানুষ কতো কিহ না করে।সেও করছে ইলমা নামক রমনীর জন্য সে হাজার পাগলামি করতেও রাজি।ইলমা ছোট জানে সে কিন্তু ইলমার প্রেমে যে সে দিনদিন পাগল হয়ে যাচ্ছে।ভালোবেসেও ফেলেছে হয়তো।ইলমা নামক রমনীর মায়ায় পরে গিয়েছে।যে মায়া থেকে বের হওয়া সম্ভব না।তার যে ইলমাকেই লাগবে।
৪৬.
আরিশা তখন ইয়াদকে দেখেই ইলমার কাছ থেকে চলে এসেছে।ইয়াদকে ছাদে আসতে দেখে নিজেও ছাদে চলে আসে।ইয়াদ ছাদে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছিলো।আরিশা সিগারেটের গন্ধ সহ্য করতে পারে।কেশে ওঠে।ইয়াদ পিছনে ফিরে তাকায়।আরিশাকে দেখে সিগারেট ফেলে দেয়।আরিশা নিজেকে স্বাভাবিক করে ইয়াদের কাছে আসে।
—“আপনি সিগারেট খান ইয়াদ ভাইয়া”
ইয়াদ মলিন হাসে।যে হাসিতে লুকিয়ে আছে হাজারো কষ্ট।ইয়াদের এমন হাসির কারণ বুঝতে পারে না আরিশা।বোঝার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।ইয়াদ আকাশের পানে তাকিয়ে বলে,,,
—“ওই যে দেখো সূর্যকে যেমন কালো মেঘগুলো ঢেকে দিয়েছে আমার জীবনেও কালো মেঘ জমেছে।”
আরিশা ইয়াদের ভারি কথাগুলোর মানে বুঝার চেষ্টা করে।কিন্তু সে এবারও ব্যর্থ।কিন্তু এতো টুকু বুঝতে পারে ইয়াদের মন ভালো নেই।সে বলে,,,
—“আপনি কি কিছু নিয়ে আপসেট ভাইয়া”
—“তেমন কিছু না আরিশা।ও তুমি বুঝবে না”
—“আমি বুঝবো না কেনো আমি মোটেও ছোট না আপনি বললেই বুঝতে পারবো আমি বলুন আমি সমাধান করার চেষ্টা করতে পারি”
—“পারবে না পিচ্চি”
আরিশা চোখ ছোট ছোট করে বলে,,,”আমি মোটেও ছোট নাহ আপনি বলুন না কি হয়েছে”
—“আমার সুখপাখি আর আমার নেই আরিশা উড়ে গিয়েছে ওই দূর আকাশে”
—“আমি খুঁজে এনে দেবো আপনার সুখপাখিকে তবুও আপনি মন খারাপ করবেন না প্লিজ”
ইয়াদ হাসে।মেয়েটা যে তাকে পছন্দ করতে শুরু করেছে তা বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে।আবেগের বয়স।এমন সময় এমন হবেই।মেয়েটার চোখে তার জন্য অফুরন্ত প্রেম দেখতে পারছে।মেয়েটা ভালো।ইয়াদ আরিশার গাল টেনে দিয়ে বলে,,,
—“এই সব বাদ দাও আরিশা এখন পড়ালেখার সময়।পড়াশোনার মনোযোগ দাও।”
আরিশার মন খারাপ হয়।লোকটা এভাবে বলতে পারলো।তবুও মন খারাপ করে না সে।উপন্যাসে পরেছে প্রেমে পরলে একটু বেহায়া হতেই হয়।সে না হয় হলো ইয়াদের জন্য।পাগলামি না করলে তা কি আর প্রেম হয়।প্রেমের মাঝে পাগলামি থাকবেই।ইয়াদ চলে যায়।ইয়াদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আরিশা বলে,,,
—“আপনি আমায় পাত্তা না দিলেও আমি ও আপনার পিছু ছাড়বো না।পছন্দ যখন হয়েছে আমার আপনাকেই লাগবে।আমি ওত টাও ছোট নাহ মিস্টার প্রেমিক পুরুষ”
—❝প্রেমে পরে না হয় আমিও একটু বেহায়া হলাম❞
#চলবে