ভালোবাসার রং মিছিল পর্ব -১৮+১৯

#ভালোবাসার_রং_মিছিল💚
#লেখিকা:ইশা_আহমেদ
#পর্ব_১৮

৩৭.
ভার্সিটিতে সবাই গোল হয়ে বসে আছে।নাইম অস্থির হয়ে হাত মোচড়ামুচড়ি করছে।উশাকে ওর বাবা মা জোর করছে বিয়ে করার জন্য।উশা চুপচাপ বসে আছে।নাইম স’হ্য করতে না পেরে নীরবতা ভেঙে বলে,,,

—“আমি তোকে ছাড়া থাকতে পারবো না উশা”

উশার চোখে পানি।নাইমের দিকে তাকাতেই নাইমের বুকটা ধক করে উঠলো।প্রেয়সীর চোখের পানি কেই বা সহ্য করতে পারে।
—“উশা চল আজকেই আমরা বিয়ে করে নেই দেখবি বিয়ে করলে সবাই মেনে নিবে প্লিজ উশা”

নাইমের কন্ঠে অসহায়ত্বের চাপ।উশা চোখ থেকে টুপ করে কয়েক ফোঁটা পানি পরে।দু’হাত দিয়ে মুছে নেয়।অর্ষা নাইম উশার দিকে তাকিয়ে হাসে।দুজন যে দুজনকে বড্ড ভালোবাসে তা বুঝতে পারছে অর্ষা।অর্ষা উঠে দাঁড়িয়ে বলে,,,

—“তোদের এই শোকসভা ভালো লাগছে না চল চল উশার বিয়ের জন্য পার্টি দেই”

সবাই হা করে তাকিয়ে আছে অর্ষার দিকে।রুশান রেগে যায়।সিরিয়াস মুহুর্তে কেউ ফাজলামি করে।রুশান দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,,

—“তোর কি কমনসেন্সের অভাব অর্ষা এখানে একটা সিরিয়াস বিষয় নিয়ে কথা বলছি আর তুই ফাজলামি করছিস”

অর্ষা বিরক্ত হয়।নাক মুখ কুচকে তাকায় সবার দিকে।কিছুক্ষণ তাকিয়ে উশার কাছে গিয়ে ওকে দাঁড় করিয়ে বলে,,,

—“ভালোবাসিস নাইমকে”

উশা মাথা নাড়ায়।অর্ষা নাইমের দিকে তাকায়।ছেলেটার চোখ লাল হয়ে গিয়েছে।
—“আজকে এই মুহুর্তে তোদের বিয়ে দেবো আমি”

—“কি বলছিস তুই অর্ষা আব্বু আম্মু মানবে না”

—“উশা নাইম রিজেক্ট করার মতো ছেলে না।ভালোবাসে তোকে,পড়ালেখায় ভালো,ফ্যামিলি ভালো তো সমস্যাটা কোথায়?”

—“আমরা সমবয়সী অর্ষা এটাই সমস্যা”

অর্ষা উশার কাঁধে হাত দিয়ে বলে,,,
—“এটা কোনো সমস্যা না উশা।সব কিছুর উপরে তোরা দুজন দুজনকে ভালোবাসিস।এর উপরে কোনো সত্যি নেই”

নাইম উশার কাছে এসে চোখে চোখ রেখে বলে,,,
—“তুই আমাকে ভালোবাসলে আজকেই বিয়ে করবি উশা”

উশা চুপ করে আছে।কি বলবে ও,একদিকে ভালোবাসা আরেকদিকে পরিবার।নাইম এবার রেগে যায়।উশার কাঁধ ঝাকিয়ে বলে,,,,

—“কি সমস্যা তোর বলছিস না কেনো?তার মানে তুই আমায় ভালোবাসিস না ওকে ফাইন।আর কখনো ভালোবাসার কথা বলবো না তোকে”

নাইম উশাকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে উল্টো দিকে ঘুরে ফুঁসছে।মেজাজ খারাপ হচ্ছে ভীষণ নাইমের।উশা কাঁদতে কাঁদতে বলে,,,

—“আমি তোকে ভালোবাসি নাইম কিন্তু বিয়ে!বিয়ে জিনিসটা সহজ না তোর আব্বু আম্মু মেনে না নিলে কি করবি”

—“আমাকে ভরসা করতে পারিস।আম্মু জানে শুধু বাবাকে বলতে হবে।এন্ড আই আম সিয়র তারা তাদের একমাত্র ছেলের জন্য তোকে মেনে নিবে।এবার বল বিয়ে করবি”

উশা কান্না থামিয়ে মাথা নেড়ে হুম বলে।সবাই খুশি হয়।সব কটা মিলে কাজী অফিসে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।মুহিব আর অর্না গিয়েছে বিয়ের টুকিটাকি জিনিস কিনতে।কাজী অফিসের সামনে আসতেই ইরহামকে দেখে সবাই চমকে ওঠে।ইরহাম গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।অর্ষাদের দেখে চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে অর্ষার দিকে তাকিয়ে চমৎকার হাসি দেয়।

অর্ষা বিরক্ত হয় এই সময়ে এইখানে ইরহামকে দেখে।ইরহামকে সে তিন চারদিন যাবত ইগনোর করছে।ইগনোর করার কারণ সেদিন তাকে হুট করে জড়িয়ে ধরা আর ইরহামের অদ্ভুত ব্যবহার যা অর্ষা মেনে নিতে পারছে না।রুশান ইরহামকে দেখে মুখ কালো করে ফেলে।সেদিনের পর রুশান সব ক্লাসই করেছে ইরহামের।

ইরহাম পকেটে হাত গুঁজে হিরোর মতো করে অর্ষার সামনে আসে।রুশানের দিকে তাকিয়ে বলে,,,
—“তোমরা ভেতরে যাও আমি অর্ষাকে নিয়ে আসছি”

উশা,নাইম,রুশান একবার অর্ষার দিকে তাকিয়ে ভেতরে ঢুকে যায়।ওরা যেতেই ইরহাম অর্ষার দিকে ঝুঁকে ওর মুখ বরাবর মুখ নিয়ে বলে,,,
—“মিসেস চৌধুরী আপনি কেনো আমাকে এই তিনদিন ইগনোর করেছেন তা যদি কষ্ট করে বলতেন”

—“ইচ্ছে হয়েছে করেছি”

অর্ষার একরোখা জবাব।ইরহামের এতে রাগ হলো না বরং ও হাসলো।অর্ষা ইরহামকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চায়।ইরহাম অর্ষার হাত ধরে ফেলে।অর্ষা হাতের দিকে তাকিয়ে বলে,,,

—“স্যার হাতটা ছাড়ুন ভেতরে যাবো আমি।”

—“কারণটা না বলা পর্যন্ত ভেতরে যেতে পারবে না”

—“বললাম তো ইচ্ছা করেছিলো তাই।আপনি এখানে কেনো বলুন তো”

—“আমার শালার বিয়ে তো আমি আসবো তাই না মিসেস চৌধুরী”

ইরহামের সাদামাঠা উত্তর।অর্ষা হাত ছাড়ানোর জন্য মোচড়ামুচড়ি করছে হাত।সে যে নিহানার ব্যাপারটা নিয়ে এখনো রেগে আছে।কিন্তু কেনো রেগে আছে জানে না অর্ষা।কিন্তু রাগ লাগছে ইরহামের উপর।বউ থাকতেও কেনো অন্য মেয়েদের সাথে হাসাহাসি করবে।
ইরহাম অর্ষার মুখের উপর পরে থাকা ছোটছোট চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিয়ে বলল,,,,,

—“কি হলো মিসেস চৌধুরী কোথায় হারালে তুমি?”

অর্ষা ঘোর কাটে।নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে।লোকটার কদিনের ব্যবহার মানতে পারছে না অর্ষা।ইরহাম মৃদু হেসে অর্ষার হাত নিজের মুঠোয় নিয়ে কাজী অফিসের ভেতরে ঢুকে যায়।অর্ষা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছে ইরহামকে।এ সে কোন ইরহামকে দেখছে।

উশা আর নাইমের বিয়েটা ভালোভাবে হয়ে যায়।সবাই মিলে রওনা হয়েছে নাইমদের বাসার উদ্দেশ্যে।নাইম উশা বাইকে গিয়েছে।রুশান একা গিয়েছে।ইরহাম অর্ষাকে টেনে গাড়িতে বসিয়েছে।অর্ষা রেগে বলে,,,

—“মিস্টার চৌধুরী সমস্যা টা কি আপনার বলুন তো”

ইরহাম মুচকি হেসে অর্ষার দিকে ঝুঁকে বলল,,,,
—“আমার সমস্যা টা হলো আমার বউ”

ইরহাম কথাটা বলেই সরে আসলো।অর্ষা ভ্যাবাচেকা খেয়ে ইরহামের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।ইরহাম অর্ষাকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে,,,

—“হা করে তাকিয়ে থেকো না মিসেস চৌধুরী প্রেমে পরে যাবে তো”

ইরহামের কথায় অর্ষা মুখ ভেংচি দিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়।ইরহাম মৃদু হেসে মনে মনে বলে,,,,

—❝তোমার প্রেমে পুরোপুরি ডুবে গিয়েছি প্রেয়সী❞

৩৮.

অর্ষা ইরহাম নাইমদের বাড়ির সামনে আসতেই দেখে ওরা এখনো দাঁড়িয়ে আছে।অর্ষা গাড়ি থেকে বের হয়ে বলে,,,

—“কিরে তোরা বাইরে এখনো দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?”

—“তোর বান্ধবী তো ভয়ে যেতেই চাইছে না অর্ষা”

অর্ষা উশার দিকে চোখ গরম করে তাকালো।উশা বোকা বোকা হাসি দিলো।অর্ষা উশাকে নিয়ে জোর করে বাড়িতে ঢুকলো।বাড়িতে তখন নাইমের বাবা জাফর সাহেব আর নাইমের মা নুরি বেগম বসে গল্প করছিলেন।সবাইকে বাড়িতে একসাথে দেখে বেশ খুশি হন দুজন।সবাইকে আগে থেকেই চেনে নুরি বেগম।অর্ষা আর উশাকে ভালোবাসেন তিনি অনেক।

—“আরে অর্ষা উশা মা যে কেমন আছো অর্নাও যে ভালো আছো মা”

অর্ষা আলতো হেসে জবাব দেয়,,,,
—“জি আন্টি ফাটাফাটি আছি আমি”

উশা ভয়ে অর্ষার হাত চেপে ধরে।অর্নাও হেসে কথা বলে।নুরি বেগম সবাইকে বসতে বলে।ইরহাম সবার পেছনে বাড়িতে প্রবেশ।ইরহামকে দেখে জাফর সাহেব আর নুরি বেগম দাঁড়িয়ে যায়।তারা খুব ভালো করেই চিনে ইরহামকে এটাও জানে ইরহামের সাথে অর্ষার বিয়ের কথাটা।

—“আসসালামু আলাইকুম স্যার আপনি হঠাৎ”

ইরহাম হেসে জবাব দেয়,,,,”ওয়ালাইকুম আসসালাম আন্টি আপনি আমাকে ইরহাম বলেই ডাকতে পারেন।”

জাফর সাহেব সবাইকে দেখে বলেন,,,

—“তা সবাই হঠাৎ এখানে যে এমনিতেও তো বলে কাউকে আনা যায় না আজকে যে অর্ষা মামনি জামাই বাবাকে নিয়ে”

অর্ষা লজ্জায় পরে যায়।ইরহাম সবাইকে শান্ত হয়ে বসতে বলে।এরপর বলে,,,

—“আন্টি আসলে নাইম আর উশা একে অপরকে ভালোবাসে”

—“হ্যা বাবা আমরা জানি সেই বিষয়ে”

—“জি আন্টি কিন্তু কিছুদিন ধরে উশার বাবা মা বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে।আপনার পাগল ছেলে জানতে পেরে আজকেই উশাকে বিয়ে করছে”

জাফর সাহেবের মুখ গম্ভীর হয়ে যায়।নুরি বেগম বেশ খুশি হয়েছেন তা তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।উশাকে তার আগে থেকেই ভীষন পছন্দ।জাফর সাহেবের মুখের ভঙ্গি দেখে সবাই ভয় পেয়ে যায়।তবে ইরহাম স্বাভাবিক।জাফর সাহেব সবাইকে ভয়ে পেতে দেখে হু হা করে হেসে ওঠেন।সবাই হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে।উশা তো ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে।

—“ওরে বলদ ছেলে আমার এই কথাটা বলতে ইরহাম বাবাকে নিয়ে এসেছে।নাইম তুই তোর বাবাকে চিনিস না”

নাইম এসে জড়িয়ে ধরে ওর বাবাকে।ওর বিশ্বাস ছিলো মেনে নিবে।উশা হাফ ছেড়ে বাঁচে।ইরহাম হাসে।জাফর সাহেব উশার বাবাকে ডাকে।তারা প্রথমে অমত দিলেও পরে মেনে নেয় উশা নাইমকে।সব মিলিয়ে ঝামেলা মিটিয়ে বাসায় আসতে আসতে অনেক রাত হয়ে যায়।অর্ষা জেদ করে এবার রুশানের সাথেই এসেছে।

#চলবে#ভালোবাসার_রং_মিছিল💚
#লেখিকা:ইশা_আহমেদ
#পর্ব_১৯

৩৯.
ইয়াদ ছাদে বসে আছে।আকাশের দিকে একমনে চেয়ে আছে।অর্ষা!এই মেয়েটাকে সে প্রথম দেখেছিল রাস্তায়।তিন বছর আগে।দিনটা এখনো মনে আছে ইয়াদের।ভুলতে পারবে না সেদিন।রাজশাহী থেকে এসেছিলো দুদিনের জন্য।বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়ার জন্য বের হয়েছিলো সেদিন।

চায়ের দোকানে তিন বন্ধু মিলে গল্প করছিলো আর চা খাচ্ছিলো।তখনই সামনের বাড়ি থেকে একটা ছোটখাটো মেয়ে বের হয়।
পরনে তার গোলাপি রঙের গাউন।চুলগুলো ছাড়া।সাথে একটা ছেলেও আছে।দুজন হাসতে হাসতে কথা বলছিলো।ইয়াদ একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে ছিলো সেই হাসির পানে।

রিকশা আসলেই দুজন উঠে চলে যায়।ওইদিনের পর ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছিলো ইয়াদের।ইয়াদ আবারও সেই বাড়ির সামনে যায় এক নজর মেয়েটাকে দেখার জন্য।কিন্তু সেদিন আর দেখা মেলে না।পাক্কা দুই ঘন্টা বসে ছিলো এক নজর দেখার জন্য মেয়েটাকে।কিন্তু দেখা মেলেনি।

এরপর জানলো মেয়েটার নাম অর্ষা আহমেদ ইনাজ।নামটা শোনার সাথে সাথে বেশ কয়েকবার বাড়ির দিকে তাকিয়ে নামটা বিড়বিড় করে আওড়ায়।নাম যেমন সুন্দর দেখতেও মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর অর্ষা।যেই ইয়াদ দুদিন থেকে সময়মতো চলে যায় এবার সে দুদিনের জায়গায় সাতদিন থাকে।

অর্ষাকে দেখার চতুর্থ দিন বার সে অর্ষাকে দেখে।বেলকনিতে বসে সেদিনের ছেলেটার সাথে মারামারি করছিলো।ইয়াদের বেস্টফ্রেন্ড সহ বন্ধুরা সব অবাক হয়েছিলো।যে ছেলে কোনো মেয়ের দিকে সেভাবে তাকায় ও না সে একটা মেয়েকে দেখার জন্য দিনের পর দিন বাড়ির সামনে এসে বসে থাকে শুধু একবার দেখার জন্য।

এরপর প্রায়ই সে রাজশাহী থেকে চলে আসতো অর্ষাকে দেখার জন্য।এই এক বছর সেইভাবে আসার সময় পাইনি ইয়াদ।আর এর মাঝেই তার প্রেয়সী অন্যকারো হয়ে গেলো।ইয়াদ রেলিং এ ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে পরে।ভাগ্যে ছিলো না অর্ষা তার,তাই তো পাইনি তাকে এতো ভালোবাসার পরও।

৪০.

ভার্সিটির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে অর্ষা।ইরহাম তখনই এসে হাত ধরে গাড়িতে উঠিয়ে নেয়।অর্ষা কিছু বুঝে ওঠার আগেই সব কিছু হয়ে যায়।ইরহাম সিট বেল্ট বেঁধে গাড়ি চালাতে থাকে।অর্ষা হতভম্ব হয়ে বসে আছে।

—“মিস্টার চৌধুরী আপনি বলবেন কেনো আমাকে এভাবে নিয়ে এসেছেন?”

—“বউকে আনতে হলে কি পারমিশন লাগে নাকি।বউ তো আমার যখন ইচ্ছে তখন নিয়ে আসতে পারি তাই না মিসেস চৌধুরী”

অর্ষা রাগি রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,,,
—“না পারেন না।আমি চাই না আপনি আমায় এভাবে হুটহাট করে ভার্সিটির সামনে থেকে নিয়ে আসেন সবাই কি ভাবে”

—“আমি আমার বউকে আনি অন্য কাউকে না।কে কি ভাবলো তাতে আমার কিছু যায় আসে না।”

ইরহামের স্বভাবিক উত্তর। অর্ষা বিরক্ত হয়।অর্ষা অধৈর্য হয়ে বলে,,,,

—“আপনি কি আমায় ভালোবাসতে শুরু করেছেন মিস্টার চৌধুরী”

—“নাহ”

ইরহামের সাবলীল উত্তর।গাড়ি চালাতে চালাতে সামনের দিকে দৃষ্টি রেখে কথাটা বলল।অর্ষার খারাপ লাগে ইরহামের সোজাসাপ্টা উত্তরে।বুকে চিনচিন ব্যাথা করে।কিছু না ভেবে নাহ বলে দিলো।একটুও খারাপ লাগলো না।অর্ষা ইরহামের সাথে কথা বলবে না পন করলো।জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো।ইরহাম নিজের প্রেয়সীর হাবভাব দেখে হাসলো।

সে তো অর্ষাকে অলরেডি ভালোবাসে তাহলে ভালোবাসতে শুরু করার কি আছে।ইরহাম বেশ কিছুক্ষণ পরে একটা লেকের সামনে গাড়ি থামালো।ইরহাম নিঃশব্দে হেসে গাড়ি থেকে বের হলো।গেট খুলে অর্ষাকে কোলে তুলে নিলো।অর্ষা হাত পা ছোড়াছুড়ি করছে।ইরহাম শক্ত করে ধরে।

ইরহাম অর্ষাকে নিয়ে লেকের এক কোনায় কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে বসায়।এরপর নিজে অর্ষার পাশে বসে।অর্ষা কথা না বলে নিশ্চুপ হয়ে সামনে দিকে তাকিয়ে থাকে।দুপুর টাইম হওয়ায় বেশি কেউ নেই।দুই একটা কাপল ছাড়া কাউকেই দেখা যাচ্ছে না।ইরহাম মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অর্ষার পানে।প্রেয়সীকে দেখার তৃষ্ণা মনে হয় এ জীবনে কাটানো সম্ভব নয়।

৩০মিনিট যাবত বসে আছে।অর্ষা এবার অধৈর্য হয়ে যায়।বিরক্তিতে উঠে দাঁড়িয়ে হাঁটা শুরু করে।ইরহাম অর্ষাকে দেখার ঘোরে ছিলো অর্ষা উঠে যেতেই ঘোর ভাঙে।অর্ষা হাঁটতে থাকে।ইরহাম দৌড়ে এসে অর্ষার সামনে দাঁড়ায়।অর্ষার মেজাজ তো সেই লেভেলের খারাপ হয়ে যায়।

—“সমস্যাটা কি আপনার বলুন তো আধা ঘন্টা যাবত বসিয়ে রেখেছেন এখানে”

—“আমার সমস্যাটা তুৃমি”

—“আমি কি করে আপনার সমস্যা হই বলুন তো”

ইরহাম হাসে।অর্ষার দিকে নিচু হয়ে কিছুটা ঝুঁকে।অর্ষা দু কদম পিছনে যায়।ইরহাম তা দেখে ঠোঁট কামড়ে হাসে।অর্ষা আরো একবার ইরহামের উপর ক্রাশ নামক বাশ খায়।লোকটা এতো সুন্দর কিভাবে অর্ষা তা ভেবে পায় না।তার বর তবুও ভালোবাসতে কোথাও বাঁধা লাগে।ইরহাম কাউকে ভালোবাসে কথাটা মনে করতেই অর্ষার ছোট হৃদয় পুরে ছাড়খার হয়ে যায়।

—“তুমিই আমার সমস্যা দিনে দিনে পাগল হয়ে যাচ্ছি আমি।তোমার ওই মাতাল করা চোখ আমায় ভীষণ ভাবে মাতাল করে তুলছে।এর কারণ কি বলতে পারো”

অর্ষা হা করে তাকিয়ে আছে।কথাগুলো বোঝার চেষ্টা করছে।ইরহাম হেসে অর্ষার কপালে আলতো করে নিজের ঠোঁট ছোঁয়ালো।অর্ষা কেঁপে উঠলো।চোখ বুঝে ফেললো।অর্ষা চোখ খুলে তাকায় ইরহাম তার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে যে দৃষ্টির গভীরতা বোঝার মতো ক্ষমতা অর্ষার নেই।

অর্ষা আপনমনে বিড়বিড় করে বলে,,,

—“আপনার এমন উদ্ভট কাজ আমার মাথায় ঢুকে না কিন্তু আমি যে দিনদিন আপনার উপর ভীষণ ভাবে দুর্বল হয়ে পরছি ইরহাম।”

ইরহাম কোথা থেকে একটা ফুল এনে অর্ষার কানে গুঁজে দেয়।অর্ষা অবাক হয়ে ইরহামকে দেখতে থাকে।ইরহাম অর্ষার গাল টেনে বলে,,,

—“এই ফুলটার মতো তুমিও আমার কাছে স্নিগ্ধ প্রেয়সী”

কথাটা বলেই ইরহাম হাঁটা ধরে।অর্ষা ও ইরহামের পিছু পিছু আসতে আসতে বলে,,,

—“এটা কি ছিলো মিস্টার চৌধুরী”

—“সামনে এর থেকেও ভয়ংকর কিছু হবে তোমার সাথে”

ইরহাম বাঁকা হেসে কথাটা বলে।অর্ষার মাথার চার হাত উপর দিয়ে ইরহামের কার্যকলাপ যাচ্ছে।মানুষটা এমন অদ্ভুত কেনো বুঝে উঠতে পারছে না অর্ষা।অন্যকাউকে ভালোবাসলে তার সাথে এমন করছে কেনো?সে তো নিজেকে এটার জন্যই গুটিয়ে রেখেছে ইরহামের কাছ থেকে।নিজের ভালোবাসাটা প্রকাশ করতে চায় না।

ভালোবাসা না হয়তো ভালোলাগা।এটা যে ইরহামের কাজো ভালোবাসায় রূপান্তর হচ্ছে তা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে অর্ষা।ইরহাম অর্ষাকে নিয়ে ফুলের দোকানে আসে।সেখান থেকে ৫ টা গোলাপ কিনে নেয়।অর্ষা ভাবে হয়তো তাকে দিবে কিন্তু ইরহাম দেয় না।

অর্ষার মন খারাপ হয়।ফুলগুলো তাকে দিয়ে পছন্দ করালো আবার তাকে দিলো না।অর্ষা বেহায়ার মতো প্রশ্ন করে বসলো,,,

—“ফুলগুলো কাকে দিবেন মিস্টার চৌধুরী”

ইরহাম মুচকি হেসে বলে,,,”দেবো আমার ভালোবাসার একজনকে”

অর্ষা ছোট করে ওহ বলে।অর্ষার মুখটা শুকিয়ে যায়।ইরহাম অর্ষার আড়ালে হাসে।বাড়ি পৌছে দিয়ে চলে যায় ইরহাম।তখনও ফুলগুলো দেয়নি সে অর্ষাকে।অর্ষা ভেবেছিলো বাড়িতে নামিয়ে দেওয়ার সময় হয়তো দেবে কিন্তু দিলো না।

বাড়িতে ঢুকতেই রুশানকে দেখতে পেলো অর্ষা।আজকে ভার্সিটিতে নাইম উশা আসেনি।মুহিবও অসুস্থ থাকায় আসতে পারেনি।অথৈয়ের কি জেনো হয়েছে তাই আসেনি।রুশান আর সেই গিয়েছিলো।মূলত যাওয়া ইরহামের জন্য আজকে ইরহামের ক্লাস ছিলো।

রুশানকে দেখেই অর্ষার মেজাজ আরো বিগড়ে গেলো।এমনিতেও ইরহাম মেজাজ খারাপ করে দিয়েছে আর এই রুশান তাকে তখন ভার্সিটিতে একা রেখে চলে এসেছে।এখন শান্তিতে বসে টিভি দেখছে আর হাসাহাসি করছে।রুহান আর আরিশা স্কুলে গিয়েছে।বাড়িতে বড়রা আর রুশান।অর্ষা রুশানের কাছে গিয়েই ধুপধাপ করে কয়েকটা কিল থাপ্পড় মেরে দিলো।

আচমকা আক্রমণে রুশান চমকে উঠলো।ভাবতেও পারেনি অর্ষা তাকে এভাবে হুট করে আক্রমন করবে।ক্লাস শেষে তাকে ইরহাম মেসেজ করে বলেছে একা চলে আসতে।

—“তুই আমাকে রেখে কেনো আসলি হ্যা”

অর্ষা চিল্লিয়ে বলে কথাটা।রুশান থতমত খেয়ে তাকিয়ে আছে অর্ষার দিকে।এমন ব্যবহার করছে কেনো বুঝতে না পারলেও অর্ষা যে ভীষণ রেগে আছে তা বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে রুশান।রুশান অর্ষাকে শান্ত করতে চায়।অর্ষা চিল্লিয়ে বলে,,,

—“সর এই খান থেকে তোর মতো বেস্টফ্রেন্ড লাগবে না আমার”

অর্ষা রাগে ফোসফাস করতে করতে উপরে চলে যায়।রুশান বেচারা না বুঝে হা করে তাকিয়ে থাকে অর্ষার যাওয়ার পানে।অর্ষার হুট করে রাগ করা রুশানের মাথার উপর দিয়ে গেলো।

#চ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here