ভালোবাসায় মরণ রেখে গেলে

আমার বিয়ে হয়েছিল বছর তিনেক আগে। মাস দুয়েক পেরোতেই ডিভোর্স, কেননা দুই মাসের সম্পর্কে আমাদের দৈহিক মিলন টা একদিনের জন্যও হয়নি। ঘেন্না করতাম ওকে আমি।

না তেমন কোনো কারণ নেই ওকে ঘেন্না করার। খুব লাজুক স্বভাবের ছিল মেয়েটি। তার অতিকায় ভদ্র ও মার্জিত ব্যবহার মুগ্ধ করার মতোই ছিল। রান্নায় বেশ পারদর্শী ছিল ও। ওর হাতের খাসির মাংসের ঝোল ভীষণ প্রিয় ছিল আমার।

ভোর সকালে ওর কন্ঠের মধুর কুরআন তেলওয়াত শুনেই আমার ঘুম ভাঙতো। রান্না করার সময় কোমড়ে আঁচল গুজে খুন্তি নাড়ার সময় পুরোনো বাংলা গান গুনগুন করে গাইতো, যেটা দেখে অনেক সময় গভীর ঘোরে হারিয়ে যেতাম আমি…

তবুও ওকে ঘেন্না করি। ও দেখতে দারুণ সুন্দর ছিল যেন কোনো মায়াবী চাঁদ ভুল করে আমার ঘরে ঢুকে পড়েছে…

তবুও…তবুও আমি ওকে ঘেন্না করি, ওর হাসির ভেতর মায়া আছে, যেন কোনো জাদুকর জাদুমন্ত্র পাঠ করে আমায় সম্মোহন করে রেখেছে গোটা দিন জুড়ে, মেঘলা দিনে এসব সম্মোহন আর একটু বেশি বেড়ে যেত।

তবুও ওকে ঘেন্না করি বড্ড, ওর গায়ের রঙটা যেন ভোরের শিশিরের ন্যায়, কি পবিত্র, কি স্নিগ্ধ!

ও যখন গোসল সেরে চুল মুছে গামছা টা ছাদে মেলে রাখতো, আমি মাঝেমধ্যেই গামছাটা জড়িয়ে রাখতাম গায়ে, নারকেল তেলের একটা সুন্দর সুগন্ধ বেরোতো। ওসব দিনগুলোতে বড় শান্তি পেতাম, মনে হতো একবার ওকে জড়িয়ে ধরি, কিন্তু ওই যে বললাম ওকে আমি ঘেন্না করি।

ওকে ঘেন্না করার একটাই কারণ, ও একজন নারী, আর আমি নারীদের ঘেন্না করি।

কারণ আমার প্রথমা স্ত্রী ভীষণ রকম ভাবে ঠকিয়েছে আমায়। ভালোবেসে ছিলাম ওকে আমি মনপ্রাণ উজাড় করে দিয়ে।আর সেই ভালোবাসার উপর্যুক্ত শাস্তিই ও আমাকে দিয়েছে একাধিক পুরুষের সাথে অবৈধ দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে। সব জেনেও সুযোগ দিয়েছিলাম ওকে, বলেছিলাম নিজেকে শুধরে নিতে। বিশ্বাস রেখেছিলাম যে, সময়ে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু আমার সমস্ত বিশ্বাসকে ও ধূলোর সাথে মিশিয়ে দিয়ে চলে গেছে। অবৈধ সুখের জন্য ও ত্যাগ করেছে আমায়। মিছে স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে ও দোষী করে গেছে আমায়. . .

তখন থেকেই আমার ভেতর প্রবল নারী বিদ্বেষ, অফিসে কিংবা রাস্তাঘাটে মেয়েদের দেখলে আমার রাগ হয়, সহ্য করতে পারি না, ইচ্ছে হয় খুন করে দিই।

চলতি বাসে ভিড়ের মাঝে চলতে গিয়ে ওদের গায়ে ঘেঁষা লাগলেই আমার গা শিউরে ওঠে, ভীষণ ঘেন্না হয়. . .

আসলে ওর এভাবে চলে যাওয়া টা আমি ঠিক মেনে নিতে পারিনি, ওর স্মৃতিরা ভীষণ পীড়া দিত আমায়। কত যে বিকেলে আমি দরজায় খিল এঁটে ওর ছবি বুকের সাথে আঁকড়ে ধরে কেঁদেছি তার কোন ইয়ত্তা নেই. . . .

এখন আমার বয়স পঁয়ত্রিশ, অনেকটাই পরিণত, বেশ কয়েকবছর সাইকিয়াট্রিস্ট দেখাচ্ছি, আপাতত সুস্থ আছি। তবে এখন আমার থেকে বয়সে প্রায় তেরো বছরের ছোট এক মেয়েকে বড্ড ভালো লাগে। তার সাথে আমার ফেসবুকেই আলাপ। সে বড্ড ব্যস্ত লেখিকা, স্ক্রিপ রাইটার….

তবে সারাদিনে একটা বার আমায় ফোন করলেই আমার সে দিনটা খুব ভালো যায়, খুব। অধিকার কায়েমের ন্যায় একবার যদি সে বলে ‘অনিরূদ্ধ! খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু! আবার এমনটি বললে দু’গালে কষে দুইটা থাপ্পড় দেবো!” তখন কি যে ভালো লাগে বলে বোঝাতে পারবো না।

খুব ভালো লাগে তার গলার আওয়াজ, গোছানো কথা, তার কন্ঠে গাওয়া ওই গান- ‘কতবার ভেবেছিনু আপনা ভুলিয়া, তোমারই চরণে দেবো হৃদয় ও খুলিয়া!’ সর্বোপরি তার পছন্দগুলোও বড্ড ভালো লাগে আজকাল।

তার নামের পাশের সবুজ আলোটাও আমার মনে প্রশান্তি বিরাজের অন্যতম কারণ। আমি জানিনা তার মধ্যে কি আছে, আমি জানতেও চাইনা। তবে যতবার আমি তার কাছাকাছি যাই ততবারই মনে হয় আমি আমার দ্বিতীয় স্ত্রীর প্রতি বড্ড অন্যায় করে ফেলেছি।

মনে হয়, স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনি, ওকে কোনোদিন ভালোবাসা হলোনা। আজ সময় হারিয়ে ওকে ভালোবাসতে ইচ্ছে করে, জাপটে ধরতে ইচ্ছে করে, কানের কাছে মুখ নিয়ে বলতে ইচ্ছে করে, ‘লক্ষ্মী, ভালোবাসিতো!”

কিন্তু আমার থেকে বয়সে অনেকটাই ছোট মেয়েটাকে আমি কোনদিন ভুলতে পারবো না, কোনোদিন ছাড়তেও পারবো না।

— ভালোবাসায় মরন রেখে গেলে/ অন্তরা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here