#ভালোবাসা_তুই
#পর্ব_৫
#লেখিকা_সাদিয়া_আক্তার
____________________________
বেলকনিতে কফি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ইরা।বাইরে টাইপরাইটারের শব্দের মতো ঝাঁঝালো বৃষ্টি হচ্ছে আজ।বেলকনির গ্রিলের বাইরে হাত বের করে বৃষ্টির পানি আলতো করে ছুঁয়ে ছুয়েঁ প্রকৃতির আনন্দ উপভোগ করতে ব্যস্ত ইরা।সেদিনের সিলিট ট্যুরের পর এখন অবধি তিনদিন হলো ভার্সিটির যাওয়া হয়নি তার।চৈতীকে কল দিয়েছে বাসায় আসার জন্যে। কিছু ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস লেকচার গুলো মিস করেছে ওইগুলোর নোট নিয়ে আসার জন্যে।
ইরা আবার কল দিলো চৈতীকে।অপরপাশ থেকে কল রিসিভ হতেই ইরা বলে,
—-কি রে আর কতক্ষণ লাগবে তোর আসতে?ঢিলা কোম্পানি!
—-দোস্ত দেখছিস বাইরে কতো বৃষ্টি হচ্ছে?এই বৃষ্টির মধ্যে কিভাবে আসবো বলতো।বৃষ্টি শেষ হতেই চলে আসবো রে।
—-তাও ঠিক।অকে আস বৃষ্টি শেষ হলেই।
কল রেখে পিছন থেকে এক পরিচিত স্বর ইরার কানে ভেসে আসতেই ইরা পিছন তাকিয়ে দেখেই ফাহিম দাঁড়িয়ে আছে। সম্পর্কে ইরার বড় ভাই।
ঠোঁটে হাসির রেখা ফুটিয়ে ইরা বলে,
—-আরেএ ভাইয়া?কখন এলে বাসায়?
—-এইতো কিছুক্ষন আগে ফ্রেস হয়ে আসলাম।
—-আমি বুঝি নি কি এমন তোমার জরুরি কাজ থাকে এই ভারি বর্ষণেও তোমাকে বের হতে হয়।
—-ছিলো কিছু কাজ।তুই বল তোর ভার্সিটির ক্লাস কেমন চলছে?ট্যুরে গিয়েছিস কেমন মজা করলি?
—-ভালোই চলছে ক্লাস।খুব মজা করেছি।তিনদিন ক্লাস মিস দিয়েছি তাই চৈতীকে আসতে বললাম কিছু ইম্পর্ট্যান্ট লেকচার ক্লাসগুলোর নোটের জন্যে।
—-আচ্ছা।ভালো করে পড়িছ বোন।আর হ্যাঁ ভার্সিটিতে কি কোনো প্রব্লেম হচ্ছে?কোনো পোলাপান আবার ডিস্টার্ব করে নাতো?
—-হাহাহা।ভাইয়া তুমিও না।আমাকে কে ডিস্টার্ব করবে।
—-আচ্ছা তাহলে ঠিক আছে।এমন কিছু হলে নির্দিধায় আমাকে এসে বলবি।
—-অকে ভাইয়া।তুমি টেন্সন করো নাতো।
🍁
একটুপর চৈতী ইরার রুমে ঢুকলো।ফাহিমকে দেখে চৈতী সালাম দিলো।
—-আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া।কেমন আছেন?
—-ওয়ালাইকুম আসসালাম।আলহামদুলিল্লাহ। তুমি?
—-আমি…..
চৈতী উত্তর দিতে না দিতেই ফাহিমের ফোনে কল আসে।ফাহিল কল রিসিভ করে বলে,,”হ্যাঁ বল ফয়সাল। কি সমস্যা? কি? অকে এখুনি ধরে রাখ।আমি আসতেছি।সাহস কত বড়।আজ শেষ দিন ওর”,, এই বলে ফোন রেখে চৈতী আর ইরাকে বলে, “আচ্ছা তোমরা কথা বলো।আমার একটু কাজ আছে আমি আসসি”।
ইরা আর চৈতী দুজনেই ফাহিমের ফোনালাপ শুনে একটা ঢোক গিলে। চৈতী বলে,
—-বাপরে!তোর ভাই কি সাংঘাতিক কিছেমের লোকরে!
—-কি আর বলবো ভাইয়াও ওই তূর্য ব্যাটার মত খারুস আর কি।আমার কপালে সব খারুস ই জুটে।আর ভাইও।
এই বলে চৈতী আর ইরা দুজনেই হাসিতে মেতে উঠে।
ইরা হঠাৎ মনে করতেই চৈতীকে বলে,
—দোস্ত নোট গুলো?
—এই নে নোট।না আনলে তো কাল মেবি আমাকে ক্লাসে চিবিয়ে খেয়ে ফেলতি।
ইরা হাসি দিয়ে বলে,
—-হ্যা।তা তো জানিসি।
—-তূর্য ভাইয়া আমাকে জিজ্ঞেস করছিলো তুই যে এই তিনদিন ভার্সিটি আসিসনি সেই বেপারে।
ইরা এবার একটু একসাইট্রেট স্বরে বলে,
—-সত্যি! আর কি বলেছে?
—-ভার্সিটি গেলে উনার সাথে দেখে করতে একবার।
—-সত্যি দোস্ত!
উফফ!আমার যে খুশি লাগছে।তার মানে আমি তিনদিন ভার্সিটি না আসায় আমাকে বানোর টা ধুর!তূর্য ভাইয়া মিস করেছে?এমন হাজারো প্রশ্ন করে তখন থেকেই ইরা নিজের সাথে নিজে বিড়বিড় করে যাচ্ছে।চৈতীর ডাকে ধ্যান ভাঙে ইরার।
—-ইরা, ওই ইরা।কি বলে যাচ্ছিস তখন থেকে তুই?সামনে যে একটা আস্ত মানুষ দাঁড়িয়ে আছে তার কি খেয়াল আছে তোর?(রেগে বলে চৈতী)
—-তুই আবার মানুষ হলি কবে রে! তাই হয়তো খেয়াল করিনি।(হেসে হেসে বলল ইরা)
এবার বেচারি চৈতী রেগেই বলে,
—-কি! কি বললি আমাকে তুই।
বলেই দুজন বেস্টু বাচ্চাদের মতো মারামারি, হাসিতে মেতে উঠছে।
🍁
সকালে ইরা ঘুম থেকে উঠতে আবারও লেট।কোনোরকম তারাহুরো করে রেডি হয়ে ভার্সিটিতে পৌঁছালো।খুব তারাহুরোয় ভার্সিটি গেটে ঢুকতেই কারো সাথে আচানাক ধাক্কা লেগে হোচট খেয়ে পরে যায় মাটিতে ইরা।
অচেনা লোকটির দিকে ইরা তাকলো রাগি লুকে।লোকটির পরনে সাদা শার্ট,কালো টাই সাথে কালো কোর্ট আর প্যান্ট,হাতে অফ হুয়াট কালারের ঘড়ি।চোখে ব্লাক কালারের সানগ্লাস পরায় মুখটা বেশ ফর্সা দেখা যাচ্ছে আরও। অচেনা লোকটি বলে,
—-সরি ম্যাম।আপনার কোথাও লাগে নিতো? বলে ইরার দিকে তাকাতে সে যেনো আর চোখ ফেরাতে পারছে না।সূর্যের আলো ইরার চোখ মুখে পরায় খোলা সিল্কি চুলগুলো আরও চিকচিক করছে,মুখের সৌন্দর্য যেনো আরও স্পষ্ট হয়ে আসছে।হালকা মৃদু হাওয়ায় চুলগুলো বার বার এসে ইরার মুখ,চোখ,ঠোঁটে লেপ্টে যাচ্ছে আর ইরা তা সরাতে ব্যস্ত হয়ে পরছে। সেই সুযোগেই এক পলকে ইরার এসব কান্ড মুগ্ধ নয়নে দেখে যাচ্ছে সানগ্লাসের ভিতর দিয়ে অচেনা লোকটি।ইরার দিকে হাত বারিয়ে দেই সে।কিন্তু ইরা তা প্রত্যাখ্যান করেই নিজ ভরে উঠে রাগি স্বরে বলে,
—-কি হয়েছে?অন্ধ নাকি আপনি?দেখে চলতে পারেন না?ওহ!দেখবেন কিভাবে চোখে আলো থাকতেও কালো চশমা পরে থাকতে?
লোকটি অবাক হয়ে চেয়ে রইলো আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইরা বলে,
—–আচ্ছা আচ্ছা বুঝেছি।সরি বলতে হবে না।বলেই চলে যাই।
অচেনা লোকটি তা শুনে হা হয়ে আছে কিছুক্ষন।পিছনে ইরার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে চলে যায় লোকটি।
🍁
ইরা ক্লাস শেষ করেই তূর্যের কাছে চলে যাই।তুর্য ওকে দেখা করতে বলেছিলো।তাই ইরা ওয়াশরুমের আয়নার সামনে চুল টুল ভালো করে ঠিক করে নিচ্ছে।মুখটা ধুয়ে নিলো,একটু না সাজলে কি হয় তুর্যের সামনে যাবে। আর তূর্যই তো তাকে ডেকেছে কি বলবে জানি তাই খুশিতে ইরা আরও ভালোভাবে নিজেকে আয়নায় দেখে নিচ্ছে।ঠোঁটে হালকা লিপিস্ট্রিক লাগিয়ে ওড়নাটা ভালোভাবে দিয়েই বেরিয়ে যায়।দুর থেকে চৈতী ইরার কান্ড দেখে বুঝতে পেরেছে যে তার বেস্টুও প্রেমে পরেছে তাই মুচকি মুচকি হেসে তার কান্ডগুলো দেখলো।
🍁
ক্যাম্পাসের মাঠে বসে তূর্য আর রিয়াদ গল্প করছিলো।তাদের দিকে দুর থেকে ইরা আসছিলো।রিয়াদ ইরাকে দেখে বলে,
—-কেমন আছো ইরা?
ইরা বার বার মুচকি হেসে তূর্যের দিকে তাকাচ্ছে আর বলছে,
—-আলহামদুল্লিলাহ ভাইয়া।আপনি?
—- আমিও।চৈতী কোথায়?
—-ভাইয়া ও তো ক্যান্টিনে বসে আছে।
—-ওহ আচ্ছা।আচ্ছা তোমরা থাকো।আমি আসসি।
তূর্য ইরার দিকে তাকালো।দেখেই মনের অজান্তে হারিয়ে গেলো।কিছুক্ষনপর ইরা লজ্জা মাখা মুখ নিয়ে বলে উঠলো,
—-ভাইয়া চৈতী বলল আপনি নাকি আমাকে দেখা করতে বলেছেন।
তূর্য একটু ভাব নিয়ে বলে,
—-হ্যা বলেছি।তোমাকে তিনদিন ভার্সিটিতে না দেখতে পেয়ে……
—–না দেখতে পেয়ে কি?
—–না দেখতে পেয়ে ভয় পেয়ে গেছিলাম।
এবার ইরা আরও একসাইট্রেট হয়ে বলে,
—-কেনো ভয় পেয়ে গেছিলেন?
—-কারণ তুমি যে সেদিন সিলেটের সেই দোকান থেকে শাড়ি কিনে ছিলে টাকাটা আমি পে করেছিলাম।ওই টাকাটা তুমি আমাকে দাওনি।সেইজন্যে দেখা করতে বলেছি।
ইরার চোখ কপালে উঠে গেলো তূর্যের মুখে এই কথা শুনে।হাসি যেনো এবার গায়েব হয়ে মুখটা ছোটো হয়ে গেলো।চোখে পানি ছলছল করছে।ইরা বলে,
—-তো এইজন্যে ডেকেছিলেন।আর ভয় কেনো পাচ্ছিলেন?
—–ভয় পাচ্ছিলাম কারণ ভাবলাম আবার তুমি আমার টাকা নিয়ে পালিয়েছো নাকি?
এবার ইরা কেদেই দিলো।রাগে ব্যাগ থেকে তিনহাজার টাকা বের করে তূর্যের হাতে জোরে মেরে চলে যায়।
ইরা চলে যাওয়ার পর তূর্য ফিক করে হেসে দেই।আর মনে মনে বলে,আমি জানি ইরা তুমি কেনো এসেছিলে?আর তুমি আমার কাছে কি শুনার জন্যে এসেছিলে।আমিও তোমাকে আসলেই মিস করেছিলাম। তিনদিন তোমাকে না দেখতে পেরে আমার মনের অবস্থা কি হয়েছিলো সেইটা শুধু আমি জানি রে ইরা।বাট আগে তোমাকে কিছুদিন জালাবো তারপর বলবো।এতো তারাতাড়ি আমার মনের কথা তোমাকে বলছি না বুঝলে।বলেই হেসে হেসে চলে যায় তূর্য।
🍁
ইরা ওয়াশরুমে গিয়ে বেশ কিছুক্ষন কান্না করলো।চোখগুলো ফুলে লাল বর্ণ ধারণ করেছে।চৈতী আসলো।এসেই ইরার চোখের এই অবস্থা দেখে বলছে,
—-কি হয়েছে রে দোস্ত তোর এই অবস্থা কেমন করে হলো?
ইরা রেগে বলে,
—কিছু না।
হঠাৎ ওয়াশরুমের বাইরে আজ সকালে অচেনা লোকের কন্ঠের স্বর শুনতে পেয়ে ইরা আর চৈতী দুজনেই বাইরে কোরিডোরে উঁকি দিলো।দেখলো অচেনা লোকটি প্রিন্সিপালের সাথে কথা বলছে।দেখেই ইরা অবাক হলো কিছুটা। হঠাৎ চৈতী অচেনা লোকটির দিকে তাক করে বলে উঠলো,
—উনি হলেন আমির হোসেন।আমাদের ভার্সিটির প্রিন্সিপালের ছেলে।আমাদের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে এবার গেস্ট হয়ে আসছেন।
তা শুনেই ইরার চোখে মুখে ঘামের ছড়াছড়ি। সকালে তো সে এই লোকটিকেই যা তা শুনিয়ে এলো।এখন কি হবে তার।তা ভেবেই ইরা বাকরুদ্ধ। চৈতী বলে,
—-কি হয়েছে দোস্ত। তোর একটু পর পর আজ ফেছের রং কেনো বদলাচ্ছে?আমাকে বলবি ঠিক করে আসলে কি হয়েছে?
ইরা শুকনো গলায় ঢোক গিলে আজ সকালে আমিরের সাথে হওয়া ঘটনা সব খুলে বলল।তা শুনে চৈতীও এখন গাবড়ে গেলো।
—-এখন কি হবে?তুই এখনি যা গিয়ে সরি বলে আই!(চৈতী)
—-তাই করতে হবে।নয়তো আমি তো গেছি আজ!
_________________
চলবে 💐