#ভালোবাসি_তোমায়
#A_mysterious_love_story
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_০৪
বাড়ির সামনে চলে এসেছে হুর। সে জানে বাড়িতে ঢো’কা মাত্র মিসেস হেনা তার উপর এ’টাক করবে। কিন্ত কিছু করার নেই। হুর চিন্তা করলো যদি সুযোগ পাওয়া যায় তবে এক দৌড়ে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিবে। চো’রের মতো পা টিপে টিপে ঘরে ঢুকলো হুর। যেই মাত্র নিজের রুমের দিকে দৌড় দিবে অমনি পিছন থেকে মিসেস হেনার কণ্ঠ ভেসে আসলো। যেই ভ’য়টা পাচ্ছিলো তাই হলো। স্ট্যা’চু হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো হুর। চিন্তা করতে লাগলো কি বলবে। এখন যদি বলে মাথা ঘু’রছে, অ’সুস্থ লাগছে তাহলে তার খবর আছে। কিন্ত এছাড়া তো আর কোনো উপায় নেই। সে তার আম্মুকে মি’থ্যা বলতে পারবেনা।
মিসেস হেনা হুরের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো,
-“কিরে!তোর ক্লাস এতো জলদি কি করে শেষ হলো। তুই না এক ঘন্টা আগে গেলি। এতো জলদি ফিরে এলি কি করে?”
হুর কিছুক্ষন আমতা আমতা করে বলে উঠলো,
-“আসলে মা হয়েছে কি, আচ্ছা শোনো না!তুমি রা’গ করো না। আমার অনেক অসুস্থ লাগছিলো তাই ক্লাস না করে চলে এসেছি।”
হুর খু’ন আর অ’জ্ঞান হওয়ার বিষয়টা এড়িয়ে গেলো। কিন্তু যতটুকু বলেছে ততটুকুই তুল’কালাম বাধানোর জন্য যথেষ্ট ছিলো।
মিসেস হেনা চি’ল্লিয়ে বলে উঠলেন,
-“এই জন্যই বলি ঠিক মতো খা। কিন্ত আমার কথা কে শুনে!তোরা একটাও তো আমার কথা শুনিস না।”
মিসেস হেনা একাধারে হুরকে ব’কেই চলেছেন। হুর এবার মনে মনে প্রার্থনা করতে লাগলো,
-“কেউ তো বাঁ’চাও আমাকে!”
হুরের দোয়া যেনো কবুল হলো। হৃদ এলো বাইরে থেকে। এসেই বললো,
-“কিরে আপাই মা এমন লেডি হি’টলারের মতো চি’ল্লায় কেনো!”
মিসেস হেনা তেলেবেগুনে জ্ব’লে উঠলেন হৃদের কথা শুনে। বলে উঠলেন,
-“এইতো এসেছেন আমার গুণধর পুত্র। বলি সকালের নাস্তা না করে যে খেলতে চলে গেলেন, আপনারও বোনের মতো অসুস্থ লাগছে না!আমার হয়েছে কপাল!দুইটা বাঁ’দর জুটেছে।একজন পারে সারাদিন মোবাইল চা’পতে আর আরেকজন সুযোগ পেলেই খেলতে দৌড় দেয়।”
দুই ভাইবোন দুইজনের দিকে তাকিয়ে ইশারা করে প্রস্তুতি নিলো। এখনই এক দৌড়ে ঘরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিবে। যেই না দৌড় দিবে অমনি মিসেস হেনা বলে উঠলেন,
-“এক পা নড়ে দেখা,তোদের দুইটার আমি ঠে’ঙ ভা’ঙবো। কি ভেবেছিস আমি বুঝি না!রুমে পা’লিয়ে যাবি আর আমি বুঝবো না!হুঁহ এতটাও বো’কা না আমি।” গর্ব করে বললেন মিসেস হেনা।
হুর আর হৃদ হতা’শ হলো। তারা বুঝতে পারলো আজকে তাদের আম্মাজান থামবে না। এই মুহূর্তে দুইজনই তাদের বাবাই কে বড্ডো মিস করছে। একমাত্র বাবাই পারতো তাদের মায়ের ব’কা থেকে বাঁ’চাতে। তাদের আম্মু রে’গে গেলে পুরো ইতিহাস টে’নে নিয়ে আসে। এই যে এখন যেমন লাস্ট ব’কা দেয়ার পর থেকে যতো উল্টো পাল্টা কাজ করেছে সব টে’নে নিয়ে আসছে একের পর এক। দুই ভাইবোনের মাথায় হাত। হৃদ বেচারা বোনের পক্ষে কথা বলতে এসে নিজেই ফেঁ’সে গেছে।
হৃদ হুরের কানে ফিসফিসিয়ে বললো,
-“আর জীবনেও তোরে ব’কা দেয়ার সময় মাঝখানে কথা কমু না। পারলে সামনেই আসমু না। তুই একা ব’কা খাবি।”
হুর অ’সহায় দৃষ্টিতে ভাইয়ের দিকে তাকালো। এতকিছুর মাঝে হুর ভার্সিটির ঘটনা ভুলেই গেছে। সেও ভাইয়ের মতো ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো,
-“কেমন ভাই তুই!কোথায় নিজের বোন কে বি’পদ থেকে র’ক্ষা করবি তা না তুই বলছিস তুই আর সামনেই আসবি না। এমন ভাই এর কোনো দর’কার নাই আমার। তুই এই বাসায় কি করছিস!যা বের হো। তোকে আমাদের লাগবে না। হুঁহ ভা’গ!”
হৃদ মুখ বাকিয়ে বলে উঠলো,
-“এইটা আমারও বাসা। দরকার হলে তুই চলে যা।”
মিসেস হেনা যে তাদের ব’কছে বর্তমানে সেদিকে তাদের খেয়াল নেই। তারা নিজেরা কানে কানে ঝ’গড়া করতে ব্যস্ত।
এমন সময় পিছন থেকে কারোর কণ্ঠস্বর ভেসে আসলো।
-“কি ব্যাপার, আমার আম্মু – আব্বু ঝ’গড়া করে কেনো!আর আমার সুন্দরী মিসেস টা হি’টলারের মতো করে কেনো হু!”
আওয়াজ টা শুনে দুই ভাই-বোনের জানে যেনো পানি আসলো। এক লা’ফে উঠে ঝাঁ’পিয়ে পড়লো লোকটার বুকে। দুজনই সমস্বরে চেঁ’চিয়ে উঠলো,
-“বাবাই তুমি চলে এসেছো!”
মিস্টার হাসান ও হেসে তার দুই কলিজার টুকরো কে বুকে জড়িয়ে বলে উঠলো,
-“হ্যা, আব্বু – আম্মু চলে এসেছি। দুইদিন আগেই কাজ শেষ হয়ে গেলো। তাই ভাবলাম হুট করে এসে তোমাদের surprise দেই। কিন্ত এসে দেখি তোমাদের আম্মু মানে আমার বিউটিফুল মিসেস র’ণমূর্তি ধারণ করেছে। ঘটনা কি আমাকে বলো তো!”
দুই ভাই – বোন সুযোগ পেয়ে কাঁদো কাঁদো মুখ বানিয়ে বললো,
-“দেখো না বাবাই আম্মু শুধু আমাদের ব’কে। একটুও ভালোবাসে না।”
মিসেস হেনা তে’ড়ে এসে বললেন,
-“বাঁ’দর পোলাপান কোথাকার!আমি কি তোদের শুধু শুধু ব’কি। আর এই যে আপনি শুনেন, আপনার মেয়ের শুধু অ’সুস্থ লাগে, মাথা ব্যা’থা করে। ঠিকমতো খেতে বললে খেতে চায় না। দুই গা’ল খেয়েই বলে আর খেতে পারবো না। আর আপনার লা’টসাহেব ছেলে যখন তখন খেলতে চলে যায়। তখন আর দিন দুনিয়ার হুশ থাকে না। এগুলারে ব’কবো না তো কি করবো!ওদের কিছু হলে আমার ক’ষ্ট হয় ওরা বোঝে না!”
কথাগুলো বলতে বলতে মিসেস হেনার চোঁখে পানি চলে আসলো। বড্ড ভালোবাসেন তিনি ছেলে মেয়ে দুটোকে। তাদের কিছু হলে তিনি স’হ্য করতে পারেন না।
মিস্টার হাসান, হুর আর হৃদ বুঝতে পারলো মিসেস হেনা খুব ক’ষ্ট পেয়েছেন। তাই তারা চোঁখে চোঁখে কিছু একটা ইশারা করে হুট করে মিসেস হেনাকে জড়িয়ে ধরলো।
হুর আর হৃদ আদুরে কণ্ঠে বলে উঠলো,
-“এখন থেকে তোমার সব কথা মেনে চলবো আম্মু। তাও তুমি ক’ষ্ট পেও না। আমরা তোমাকে অন্নেক ভালোবাসি।”
দুইজন মিসেস হেনার দু গালে চুমু খেলো।মিসেস হেনার সব রা’গ যেনো গলে পানি হয়ে গেলো। তিনিও ছেলে মেয়ের কপালে চুমু খেলেন।
মিস্টার হাসান মুখটা কে দুঃ’খী দুঃ’খী করে বললেন,
-“বাহ্!সব ভালোবাসা মায়ের জন্য। আমাকে তো কেউ ভালোই বাসেনা। আমার আর এখানে থেকে কি হবে!কেউ ভালোবাসে না রে।”
মিসেস হেনা মুখ বাকিয়ে বলে উঠলেন,
-“হয়েছে আর ড্রামা করতে হবে না আপনার। আমার ছেলে মেয়ে আমাকে ভালোবাসে সেটা নিয়েও হিং’সা হয় আপনার। কি হিং’সুটে লোক ভাবা যায়।”
মিস্টার হাসান মুখটা কে গম্ভী’র করে মিসেস হেনার দিকে বাঁকা চোঁখে তাকিয়ে বললেন,
-“চলে যাই। আমার অভিমান কেও এখন মানুষজন হিং’সা বলে।”
হুর আর হৃদ বাবা – মায়ের অভিমান দেখে তাদের একত্রে জড়িয়ে ধরে বললো,
-“আমরা তোমাদের দুইজনকেই অনেক ভালোবাসি। এবার তো কথা কা’টাকা’টি বন্ধ করো!”
মিস্টার হাসান তার তিন প্রিয় মানুষের সান্নিধ্য পেয়ে তিনজনকেই জড়িয়ে ধরলেন।
মিসেস হেনা এবার তাড়া দিয়ে বলে উঠলেন,
-“সবাই যাও ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি কিছু খাবারের ব্যবস্থা করি।”
————————————————————————-
চৌধুরী বাড়িতে আজ শো’কের ছায়া নেমেছে। বাড়ির ছোট ছেলে মুহিব আর নেই। মোস্তফা চৌধুরী অর্থাৎ মুহিবের বাবা একটা জায়গায় শক্ত হয়ে বসে আছেন। চোঁখ তার ছেলের ক্ষ’ত-বিক্ষ’ত দেহের দিকে। চারপাশে অনেক মানুষের আনাগোনা। মুহিবের মা অনু পা’গলের মতো কাঁ’দছেন আর বিড়বিড় করে বলে চলেছেন,
-“বলেছিলাম আমার ছেলেটাকে তোমার ঐ বা’জে পথে চালিও না। কিন্তু আমার কথা শুনো নি। তোমার কারণে আমার ছেলে আজ নেই। তোমার কারণে।”
কাঁ’দতে কাঁ’দতে একসময় ঢোলে পড়লেন অনু বেগম। অন্যান্য মহিলারা তাকে সামলে নিলো। এখন মুহিব কে নিয়ে যাওয়া হবে দা’ফনের জন্য।
মোস্তফা চৌধুরী আলতো পায়ে মুহিবের লা’শের সামনে গিয়ে বসলেন। ছেলের মুখে হাত ছুঁইয়ে বলে উঠলেন,
-“যেই তোকে মে’রেছে, তাকে আমি এতটা ক’ষ্ট দিয়ে মারবো যে মানুষের আ’ত্মা কেঁ’পে উঠবে। তাকে কে’টে টুক’রো টুক’রো করবো। আমি তোর লা’শ ছুঁয়ে কথা দিলাম।”
#ভালোবাসি_তোমায়
#A_mysterious_love_story
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_০৫
দুই দিন যাবৎ ভার্সিটি যায় না হুর। এই দুই দিনে অ’জস্র বার ফারানের কথা মনে পড়েছে হুরের। কিন্তু প্রতিবারই নিজেকে সামলে নিয়েছে। হুর ঠিক করেছে আজকে দু ঘন্টা আগে যাবে ভার্সিটি তে। ফারানের সামনে না যাক দূর থেকে তো দেখতেই পারে প্রিয় মানুষটাকে। হুর দ্রুত রেডি হয়ে নাস্তা করে বেরিয়ে পড়লো ভার্সিটির উদ্দেশ্যে।
ভার্সিটি তে পৌঁছে সোজা কৃষ্ণচূড়া গাছের দিকে চলে গেলো সে। তাদের ভার্সিটিতে একটা বি’রাট কৃষ্ণচূড়া গাছ রয়েছে। সেই গাছের চারপাশে সুন্দর করে বাঁ’ধানো যাতে যে কেউ বসতে পারে।হুর সেখানে বসে পড়লো। এখান থেকে সে ডিরেক্ট ফারান কে দেখতে পেতো এতদিন। কিন্তু আজ ফারানের দেখা মিললো না। প্রায় পঞ্চাশ মিনিট হতে চললো। ফারান আসে নি। হুর অ’ধৈর্য হয়ে সামনে একজনের কাছে ফারান সম্পর্কে জানতে চাইলে সে বললো ফারান আর আসবে না। তার কাজ শেষ এখানে। তাই কালকেই সে সকলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেছে। এই কথা শুনে হুরের প্র’চন্ড কা’ন্না পেয়ে গেলো। বারবার মনে হতে লাগলো কেনো সে কাল আসলো না। তাহলে শেষ বারের জন্য হলেও প্রিয় মানুষ টাকে দেখতে পেতো।
হুর নিজেকে কোনোমতে সামলে লাইব্রেরি রুমে চলে গেলো। সাইডের একটা টেবিলে বসে কা’ন্নায় ভে’ঙে পড়লো। টেবিলের পাশের জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো। এখান থেকে সে প্রায় ফারান কে দেখতে পেতো। আর দেখতে পাবে না ভেবেই বুকটা শূন্য শূন্য মনে হলো।ওহ আপনাদের তো বলাই হয়নি হুর ফারানকে কিভাবে চেনে। কিভাবে তাদের পরিচয় হলো। তো চলুন জেনে নেয়া যাক।
—————————————————————————-
এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার পর হুর আর লিয়া same ভার্সিটি তে এডমিশন নেয়। লিয়া হুরের লে’দা কালের বান্ধুবী। একসাথেই বড়ো হয়েছে দু জন। হুরের বাবা আর লিয়ার বাবা বেস্টফ্রেন্ড। সেই সূত্রে হুর আর লিয়াও পিচ্চিকাল থেকে বেস্টু। লিয়ার দুই টা বড়ো বোন আছে। একজনের বিয়ে হয়ে গেছে। আর আরেকজন ফাইনাল ইয়ার এর ছাত্রী। লিয়া সবচেয়ে ছোট।
ভার্সিটির প্রথম দিন বেঁ’চে গেলেও দ্বিতীয় দিনে বড়ো আপুদের খ’প্পরে পড়ে হুর আর লিয়া।হুরের সৌন্দর্য দেখে তাদের মনে হিং’সা জাগে। তারা ঠিক করে ওকে সবার সামনে হাসির পাত্র বানাবে। তারা অন্যদের সহজ ৱ্যা’গ দিলেও হুর কে না’কানি চু’বানী খাওয়ানোর জন্য কঠি’ন টা দেয়। তারা লিয়া কে বলে গান গেয়ে শোনাতে। লিয়া বেচারি ভয়ে একটা গানের দুই লাইন কোনোরকমে গায়।
তাদের মধ্যে থেকে একটা মেয়ে হুর কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,
-“এখন তোমাকে একটা ছেলে কে প্রপোজ করতে হবে। আমরা যাকে প্রপোজ করতে বলবো তার সামনে গিয়ে তার চোঁখের দিকে তাকিয়ে বলবে ‘আমি আপনাকে ভালোবাসি’।”
আরেকজন বলে উঠে,
-“আমাদের কথা অমান্য করলে ক’ঠিন শা’স্তি দিবো মনে রেখো। আর যাকে প্রপোজ করবে তাকে বলতে পারবে না আমরা যে তোমাকে ৱ্যা’গ দিয়েছি।”
হুর ছিলো চঞ্চল প্রকৃতির মেয়ে। সে এসবে কখনো ভ’য় পেতো না। বরং তার কাছে এইসব dar’e টাইপ জিনিস ইন্টারেষ্টিং লাগতো। আর এই মেয়েগুলো তাকে এমনিতেও ছাড়বে না। তাই সে রাজি হয়ে গেলো এক কথায়। মেয়েগুলো একটু অবাক হলো এতে তবে তারা গায়ে মাখলো না।তারা দূরে একটা ছেলের দিকে ইশারা করে বললো,
-“ঐ যে দেখতে পাচ্ছ দূরে যেখানে নতুন দালান হচ্ছে ওইখানে একটা ছেলে উল্টো দিক ফিরে দাঁড়িয়ে আছে,ব্ল্যাক শার্ট!ওকে প্রপোজ করবে তুমি।”
হুর এর বুক ধুক’পুক করতে লাগলো অজান্তেই। আর লিয়া সে তো বেচারি ভ’য়ে চু’পসে আছে। হুর ধীর পায়ে সেদিকে এগিয়ে যেতে লাগলো।
হুর কিছুদূর চলে যাওয়ার পর দলের সবগুলো মেয়ে একে – অপরের দিকে তাকিয়ে উচ্চ স্বরে হেসে উঠলো। দীপা নামের একটা মেয়ে বলে উঠলো,
-“লে পরীর মতো সুন্দরী মেয়ে এখন কা’লাচাঁন কে প্রপোজ করবে।”
মহুয়া নামের আরেকজন বলে উঠলো,
-“আমি তো শুনেছি ঐ লোকটা দেখতে যেমন কুৎ’সিত তার ব্যবহার ও সেরকম। আজকে সুন্দরী পরীর কপালে দুঃ’খ আছে।”
বলে আরেক দফা উচ্চ স্বরে হেসে উঠলো সবাই। লিয়া সব কথা শুনে আরও ভ’য় পেয়ে গেলো।কিন্ত হুর ততক্ষনে অনেক দূরে চলে গেছে। এখন একমাত্র সৃষ্টিকর্তা কে স্মরণ করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
হুর যতোই সামনে এগোচ্ছে, ততোই তার ধুকপু’কানি বেড়েই যাচ্ছে। সে বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে তার সাথে!আগে তো কখনো এমন টা হয়নি!
হুর ছেলেটার পেছনে দাঁড়িয়ে হাত কচলা’চ্ছে। অনেক বেশি নারভা’স সে। হুর চোঁখ বন্ধ করে নিজেকে ধা’তস্থ করে হুট করে ছেলেটার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
হুট করে কেউ সামনে চলে আসায় ফারান অবাক হয়ে সেই ব্যক্তির দিকে তাকালো। তার মনে হলো সামনে কোনো পরী দাঁড়িয়ে আছে। অপরূপ সুন্দরী এক মেয়ে। কিন্তু পরোক্ষণে কপাল কুঁ’চকে ফেললো এই ভেবে যে হুট করে এই মেয়ে সামনে এসে দাঁড়ালো কেনো!
আর হুর সে তো একধ্যানে সামনের ব্যক্তির চোঁখের দিকে তাকিয়ে আছে। হুর দেখলো তার সামনে দাঁড়ানো ব্যক্তির সম্পূর্ণ মুখ মাক্স দিয়ে ঢাকা। শুধু তার চোঁখ দুটো দেখা যাচ্ছে। ব্যক্তিটার গায়ের রং কালো। কিন্তু হুর সে তো চোঁখের মায়াতেই ডু’বে গেছে। বাদামী বর্ণের গভীর একজোড়া চোঁখ তার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
ফারানের গভীর চোখজোড়ার দিকে তাকিয়ে হুরের মুখ থেকে আপনা আপনি বেরিয়ে এলো,
-“আমি আপনাকে ভালোবাসি।”
হুরের মুখে ভালোবাসি কথা টা শুনে ফারান অবাক না হয়ে পারলো না। সে ভাবলো,
-“এই মেয়ে বলে কি!কোথায় সে আর কোথায় আমি। এই মেয়ের মাথা খা’রাপ হয়ে গেছে মনে হয়!”
সে এবার হুরকে ঝাঁ’জালো কণ্ঠে বলে উঠলো,
-“ফাজ’লামি করছেন আমার সাথে!এক থা’প্পরে দাঁত ফে’লে দেবো। ভার্সিটি তে কি পড়াশোনা করতে আসেন নাকি এসব করতে আসেন।”
ফারান হুরের দিকে তাকিয়ে দেখলো তার কোনো হে’লদোল নেই। সে এখনো ফারানের দিকে তাকিয়ে আছে।ফারান বির’ক্ত হলো। মনে মনে ভাবলো,
-“এই মেয়ে টা তো ভালোই এক্টিং করতে পারে!নিশ্চই একে কেউ ৱ্যা’গ দিয়েছে। অথচ এমন ভা’ন করছে যেনো সব সত্যি।”
ফারান ক’র্কশ কণ্ঠে হুরকে বলে উঠলো,
-“তুমি তো ভালোই এক্টিং পারো মেয়ে!তোমাকে কেউ ৱ্যা’গ দিয়েছে আমি জানি। তাই এইসব নাটক বাদ দাও।”
কথাটা বলে ফারান সেখান থেকে সরে গেলো। হুর এখনো স্ট্যাচু হয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে। সবাই যে একটা কালো ছেলে কে প্রপোজ করে রি’জেক্ট হওয়ার জন্য হুর কে নিয়ে হাসি-তা’মাশা করছে সেদিকে তার ধ্যান নেই। তার ধ্যান মন যে ঐ কালো ছেলের কাছেই পড়ে আছে।
লিয়া এসে হুর কে ধা’ক্কা দিয়ে বললো,
-“কিরে, তুই এভাবে মূর্তির মতো দাড়িয়ে আছিস কেনো!”
লিয়ার ধাক্কা’য় হুরের ধ্যান ভা’ঙলো। সে এক ঝা’টকায় লিয়া কে ধরে জো’রে ঘুরিয়ে বললো,
-“দোস্ত I am in love…”
লিয়া কে ছাড়ার সাথে সাথে সে হা’পাতে হা’পাতে বললো,
-“পাগ’ল হলি নাকি!এমন কেউ করে!”
হুর মুচকি মুচকি হেসে বললো,
-“হ্যা হয়েছি পা’গল। তার চোখের মায়া তে।”
লিয়া বলে উঠলো,
-“ঐ কালো ছেলেকে তোর মনে ধরেছে। কোথায় তুই আর কোথায় সে!”
হুর হেসে বললো,
-“গায়ের রং আমার কাছে ম্যাটার করে না। তার চোঁখ, কথা বলার স্টাইল আমাকে মুগ্ধ করেছে। এবার জাস্ট তার চরিত্র যাচাই এর পালা।”
কথাগুলো বলেই হুর সামনের দিকে হাঁটা দিলো। লিয়া পিছন থেকে চিল্লি’য়ে বললো,
-“ঐ দিকে কই যাস!ঐ দিকে ঐ ফা’লতু আপু গুলো আছে।”
হুর ও পিছন ফিরে চি’ল্লিয়ে বললো,
-“ঐ আপু গুলো কে ধন্যবাদ দিতে যাচ্ছি। তাদের কারণেই তো উনার দেখা পেলাম।”
হুর উল্টো ফিরে আবার হাঁটা দিলো। লিয়া মনে মনে বললো,
-“তুই সত্যিই পাগ’ল হয়ে গেছিস।”
চলবে?