#ভালোবাসি_প্রিয় (০৭)
#সিজন_৩
#লেখিকা_নূন_মাহবুব
-“দোয়া সিমরানের সাথে কথা বলতে বলতে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে দাঁড়িয়ে ছিল। হঠাৎ ড্রেসিং টেবিলের দিকে চোখ পড়তেই দোয়া হতভম্ব হয়ে গেল। তার এক কানে দুল আছে,অন্য কানে দুল নেই। দোয়া মনে মনে বললো, আমার স্পষ্ট মনে আছে ভার্সিটি তে যাওয়ার সময় ও আমার কানে দুল ছিল। কিন্তু এরই মধ্যে কোথায় চলে গেল?দোয়া তড়িঘড়ি করে বিছানা,বালিশ , বোরকা হিজাব সব দেখলো । সম্পূর্ণ রুম ঝাড়ু দিলো,কিন্তু কোথাও দুল পেলো না। তার মানে দুল টা কি রাস্তায় বা অন্য কোথাও পড়ে গিয়েছে? দোয়া কিছু ভাবতে পারছে না। মস্তিষ্ক শূন্য লাগছে। দোয়া ভাবছে আমি হয়তো সেম আর একটা দুল বানিয়ে নিতে পারবো কিন্তু আম্মা একবার যদি জানতে পারে এইটা নতুন করে বানানো দুল , আম্মা খুবই কষ্ট পাবে।কি করবো এখন আমি?একটার পর একটা বিপদ লেগেই আছে আমার।ইয়া আল্লাহ এ কোন পরীক্ষা নিচ্ছো তুমি আমার?”
-“এই দুল টা দোয়ায় মায়ের অনেক পছন্দের। দোয়ার জ্ঞান হবার পর থেকে দেখে আসছে কোন বিশেষ দিনে শাহিনা বেগম শুধু এই দুলটা পড়তেন। কিন্তু যেদিন দোয়ার আঠারো বছর পূর্ন হলো, সেদিন শাহিনা বেগম দুল জোড়া দোয়ার কানে পড়িয়ে দিয়ে বললেন,আজ থেকে এই দুল জোড়া তোর। এতো দিন আমার কাছে আমানত হিসেবে ছিল।আজ আমার আমানত তার মালিকের হাতে তুলে দিলাম। তুই দুলজোড়া সবসময় পড়ে থাকবি। সাবধানে রাখবি যেন হারিয়ে না যায়। দোয়া শাহিনা বেগম কে বারবার জিজ্ঞেস করেছে,এই দুলের বিশেষত্ব কি আম্মা ?প্রতিউত্তরে শাহিনা বেগম একটা কথাই বলেছেন,এই দুলে আমার অনেক স্মৃতি, ভালোবাসা জরিয়ে আছে। তুই দুলজোড়া সাবধানে রাখিস মা। পুরোনো কথা মনে পড়তেই দোয়ার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো।তার আম্মার এতো পছন্দের একটা দুল সে হারিয়ে ফেললো। কান খালি দেখে আম্মা যদি দুলের কথা জিজ্ঞেস করে , আম্মাকে কি জবাব দিবো আমি? দোয়া দুলের কথা ভাবছে এমন সময় দোয়ার হাতের ফোন বেজে উঠে। দোয়া ভাবছে যেহেতু তখন সিমরানের সাথে কথা শেষ করাই আগেই কল কে”টে গেল, হয়তোবা সিমরান কল করেছে ভেবে ফোন রিসিভ করতেই ঐ পাশ থেকে পুরুষালী কণ্ঠে ভেসে আসলো , আঙ্কেল আপনার মেয়ে দোয়া কে একটু ফোন টা দেওয়া যাবে? ওর সাথে একটু জরুরি কথা ছিল।”
-” দোয়া কণ্ঠ শুনে বুঝতে পারে এইটা বৃত্ত। দোয়া সালাম দিয়ে বলে আপনি আমার আব্বার ফোন নাম্বার কোথায় পেলেন?”
-” ওমা ! এ দেখি মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। কবে থেকে তোমার এতো ভুলো মন হলো মিস দেড় ফুট? কিছুক্ষণ আগে আমার ফোন থেকে তোমার ড্যাড কে ও সরি তোমার ভাষায় আব্বাকে কল করেছিলে ।সো বুঝতেই পারছো নাম্বার কিভাবে পেলাম?”
-” কল কেন করেছেন?এখন যদি আব্বার কাছে ফোন থাকতো তাহলে ব্যাপারটা কি বিশ্রী হতো বুঝতে পারছেন।রাখছি আমি।”
-” ওয়েট !ওয়েট ! আমি তোমার সাথে প্রেম করার জন্য কল করি নি। অবশ্য তুমি তো নিজেকে বিশ্ব সুন্দরী মনে করো।ভাবছো এই আশিয়ান আবরার বৃত্ত তোমার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।বাই দা ওয়ে সত্যিই যদি এমনটা ভেবে থাকো তবে আমি বলবো জেগে জেগে স্বপ্ন দেখা বাদ দাও মিস দেড় ফুট।”
-” হা হা হা ।হাসালেন মিষ্টার আশিয়ান আবরার বৃত্ত। এই দোয়ার রুচিবোধ এতটা ও খারাপ নয় যে আপনার মতো বখাটের প্রেমে পড়বে।যে কি মানুষ কে মানুষ বলেই মনে করে না।যার মধ্যে নূন্যতম কোন মনুষ্যত্ববোধ, কোন দ্বীনি শিক্ষা নেই। আপনি ও কান খুলে একটা কথা শুনে রাখুন দোয়ার প্রেম ,ভালোবাসা এতোটা সস্তা নয় যে যাকে তাকে বিলিয়ে দিবে।আর আপনার মতো বখাটের , অমানুষ কে দেওয়ার প্রশ্নেই আসে না। যায় হোক আপনি কি ঝগড়া করার জন্য কল করেছেন? আপনার হাবভাব দেখে এমনটাই মনে হচ্ছে আমার।যা বলার তাড়াতাড়ি বলুন।”
-” কল করেছিলাম এইটা বলতে যে পুলিশ অফিসার ফোন করেছিলেন। রতন পাশা কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে কিন্তু তিনি কিছুতেই মুখ খুলছেন না।তার কথা সে যে পাতায় খেয়েছে সেই পাতা ফুটা করবেন না।এই একটা কথা বলো তো, তুমি কি সত্যিই চাও আসল কালপ্রিট সবার সামনে আসুক?”
-“অবশ্যই।”
-” হয়ে যাবে।তবে আমার একটা শর্ত আছে।যাকে বলে গিভ এন্ড টেক।”
-” মানে?”
-” হিসাববিজ্ঞানের ছাত্রী হয়ে ও গিভ এন্ড টেক এর অর্থ বোঝ না।মানে হচ্ছে দেওয়া নেওয়া।অন্য ভাবে বলতে গেলে বিনিময়।অর্থাৎ আমি তোমাকে আসল কালপ্রিট কে খুঁজে পেতে সাহায্য করবো। বিনিময়ে তোমাকে ভার্সিটি ছেড়ে দিতে হবে। বিশ্বাস করো তোমাকে আমার চোখের সামনে দেখলে আমার মাথা গরম হয়ে যায়।সহ্য হয় না তোমাকে। তার থেকে বেটার তুমি ভার্সিটি ছেড়ে দাও।”
-” আপনাকে নতুন করে বলার আর কিছুই নেই। আমার যোগ্যতা দিয়ে আমি ভার্সিটি তে গিয়েছি কোন কিছুর বিনিময়ে ছেড়ে আসার জন্য নয়।আর রইল আসল অপরাধীর কথা। আল্লাহ তায়ালা সব দেখেছেন, শুনেছেন,তিনি সবচেয়ে বড় বিচারক।তিনি যদি চান অবশ্যই আসল অপরাধী সাজা পাবে বলে কল কে”টে দিয়ে দোয়া এশার নামাজ পড়তে চলে গেল।”
__________________________________
আর ইউ ক্রেজি ? ডু ইউ হ্যাভ এনি আইডিয়া হোয়াট ইউ ওয়্যার গোইং টু ডু?”
-” ইয়েস আই অ্যাম ক্রেজি পাপা।শুনেছো তুমি, আমি পাগল হয়ে গেছি। তুমি যাও এখান থেকে পাপা।আমাকে আমার কাজ করতে দাও বলতেই কামরুল হাসান এসে বিন্দু মাহতাব কে থা”প্প”ড় দিয়ে বললেন, তোমার কাছে আমার ভালোবাসার কোন দাম নেই? আমি কেউ নই তোমার? তুমি সু”ই”সা”ই”ড করতে যাচ্ছিলে? একবার ও আমার কথা ভাবলে না বেবি?”
-” কি করতাম আমি? আমার যে সু”ই”সা”ই”ড করা ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই পাপা।জেলে পচে ম”রা”র চেয়ে নিজের হাতে নিজেকে শেষ করে দেওয়া টা কি বেটার নয়?”
-” ডোন্ট ওরি বেবি। তোমার পাপার টাকা পয়সা কম নেয় যে,তোমাকে জেলে পচে ম”র”তে হবে। ব্যাপার টা টাকা দিয়ে মিটিয়ে দিবো ।”
-” হা হা হা। তুমি হয়তো ভুলে গিয়েছো পাপা বৃত্তের পিতামহ একজন মন্ত্রী ছিলেন। বৃত্তের বাবার পাওয়ার সম্পর্কে তোমার কোন ধারনাই নেই পাপা। যেইখানে বৃত্ত নিজে রতন পাশা কে পুলিশে সোপর্দ করেছে। তোমার কি মনে হয় বৃত্ত এতো সহজে আমাকে ছেড়ে দিবে ?বৃত্ত এই কেসে জরিত না থাকলে ব্যাপারটা টাকা দিয়ে মিটিয়ে দেওয়া যেত। কিন্তু মাঝখান থেকে বৃত্ত এসে আমার পুরো প্লান ভেস্তে দিয়ে আমাকেই আমার জালে ফাঁসিয়ে দিলো।”
-” তুমি অযথা টেনশন করছো বেবি। রতন পাশা এখনো মুখ খোলে নি। রতন পাশা এখনো ও বলে নি ঐ মেয়েকে মা”রা”র জন্য তুমি সুপারি দিয়েছো।এর পেছনে সম্পূর্ণ দোষ তোমার।”
-“কিন্তু কতোক্ষণ বলবে না ? পুলিশ ঠিকই রতন পাশার মুখ কথা বের করবে।তখন আমার কি হবে বলতে পারো পাপা? নিজের মেয়ের হাতে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যাবে এইটা তুমি সহ্য করতে পারবে পাপা? বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল বিন্দু মাহতাব।”
-” তাই বলে তুমি সু”ই”সা”ই”ড করার পথ বেছে নিবে? তোমার পাপা এখনো বেঁচে আছে। আমি থাকতে তোমার কিছু হবে না বেবি। আমি হতে দিবো না। এক্ষুনি তোমার লাগেজ গুছিয়ে নাও। রতন পাশা মুখ খোলার আগেই আমরা এই শহর ছেড়ে দিবো। আপাতত কিছু দিন গা ঢাকা দিয়ে থাকবো। আমাদের পাসপোর্ট তো রেডি আছেই ভিসা হয়ে গেলেই আমরা এই দেশ ছেড়ে দিবো। এবার হ্যাপি তো বেবি?”
-” কিন্তু তোমার ব্যবসা বাণিজ্যের কি হবে পাপা?”
-“গো”ল্লা”য় যাক।আমার কাছে বিজনেস ,টাকা পয়সার থেকে আমার বেবির মুখের হাসি বেশি জরুরি। আমার বেবির খুশির জন্য আমি সব করতে পারবো।”
-” লাভ ইউ পাপা।”
-” লাভ ইউ টু বেবি। চলো যাওয়া যাক।”
-” হুম বলেই বিন্দু মাহতাব আর কামরুল হাসান বেড়িয়ে পরলেন অজানা উদ্দেশ্য।”
চলবে ইনশাআল্লাহ।।
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।।