ভালোবাসি প্রিয় ৩ পর্ব -০৮

#ভালোবাসি_প্রিয় (০৮)

#সিজন_৩

#লেখিকা_নূন_মাহবুব

-“এই মুহূর্তে আমি বিয়ে করতে পারবো না আম্মু । আমি বুঝতে পারছি না তুমি আমার বিয়ে নিয়ে এতো উঠে পড়ে লেগেছো কেন?এই আব্বু আম্মু কে একটু বুঝিয়ে বলো না প্লীজ।আমি এখন‌ই বিয়ে করতে চাচ্ছি না। ”

-“তোমার আব্বু কি বলবে হ্যাঁ?আমি যখন বলেছি তুমি বিয়ে করবে ব্যাস এইটাই ফাইনাল। আমার কথাই শেষ কথা।হয় তোমার পছন্দের মেয়েকে আমাদের সামনে নিয়ে আসবে না হয় আমাদের যে মেয়ে পছন্দ হবে তাকে বিয়ে করতে হবে তোমার।”

-” কিন্তু মা!”

-” কোন কিন্তু নয় অভি। আমি তোমার কোন কিন্তু শুনবো না।”

-” কিন্তু আম্মু,আব্বু তোমরা ভাইয়া থাকতে আগে আমার বিয়ে দিবে? সমাজের লোকজন কি বলবে বলো তো?বড় ভাইয়া থাকতে ছোট ভাই বিয়ে করবে এইটা ভালো দেখায় না আম্মু।আগে ভাইয়া বিয়ে করুক । তারপর আমার বিয়ে নিয়ে ভেবো তোমরা।”

-” জাষ্ট শাট আপ অভি। তোমাকে কতো বার বলেছি এই বাসায় কখনো ঐ কু”লা”ঙ্গা”রে”র নাম নিবে না। তোমার কোন বড় ভাই নেয়। আমার দুই টা ছেলে মেয়ে, তৃতীয় কোনো সন্তান নেই আমার।যে নিজের ক্যারিয়ারের জন্য বাবা,মা ভাই বোন , নিজের পরিবার বিসর্জন দিতে পারে সে আর যায় হোক কারো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নয় বলতে বলতে চোখের পানি মুছলেন নূরজাহান শিকদার।”

-” এইটা তোমার মুখের কথা মনের কথা নয় আম্মু। আমি জানি তুমি ভাইয়া কে কতটা ভালোবাসো। তুমি সবার সামনে ভাইয়া প্রতি যতটা কাঠিন্য দেখাও ঠিক লুকিয়ে লুকিয়ে ভাইয়ার জন্য ততোটাই কাঁদো।”

-“চুপ করো অভি। প্লীজ চুপ করো। আমি না ওকে ভালবাসি না ওর জন্য কাঁদি।সবটা তোমার মনের ভুল।”

-” ওহ্ রিয়েলি?তাহলে রোজ তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে কেন তার জন্য দোয়া করো? কেন তার কথা ভেবে নির্ঘুমে রাত কাটাতে হয় তোমার? স্বজনপ্রীতি করলে জীবনে বড় কিছু হ‌ওয়া যায় না আম্মু।যেমন টা আমার সাথে হয়েছে। আমার দেশের ‌বাইরে পড়াশোনার সুযোগ ‌হলেও শুধু মাত্র তোমার কথা ‌ভেবে করতে পারি নি। কিন্তু ভাইয়া আমার মতো বোকা ছিল না।সে ঠিকই তার স্বপ্ন তার ক্যারিয়ার গড়ে নিয়েছে। জীবনে সফল হ‌ওয়ার জন্য অনেক কিছু করতে হয়। কিছু পেতে হলে কিছু বিসর্জন দিতে হয়।দেখ আম্মু! ভাইয়া আজ একজন নামকরা ডক্টর।দেশ বিদেশে তার সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে।এইটা কি তোমার গর্বের নয়? সত্যি করে বলো তো আম্মু লোকে যখন বলে নূরজাহানের বড় ছেলে একজন নামকরা ডক্টর তখন কি তোমার কিছু ফিল হয় না? গর্বে বুক ভরে ওঠে না?”

-“তোমার মাকে বুঝিয়ে কোন লাভ হবে না অভি।যে বোঝে না তাকে বোঝানো যায় , কিন্তু যে বুঝেও অবুঝের মতো থাকে তাকে হাজার বোঝালে ও সে বুঝবে না। তুমি তোমার মায়ের কথায় কান দিও না। বিদেশে পড়াশোনা করতে পারো নি তো কি হয়েছে? বাংলাদেশ থেকেই ভালো কিছু করো।আগে নিজের ক্যারিয়ার , নিজের পায়ের তলার মাটি শক্ত করো তারপর বিয়ের চিন্তা করা যাবে।”

-” আমজাদ শিকদারের কথা শুনে নূরজাহান শিকদার ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে উঠলো, আমার কথার তো কোন দাম ‌নেই।যাও যাও তুমি ও চলে যাও। একজন তো তার ক্যারিয়ারের জন্য বিদেশে ‌পাড়ি জমিয়েছে, তুমি এইখানে পড়ে থাকবে কেন?বড় ভাই নামকরা ডক্টর হয়েছে ,তোমাকে তার থেকেও বড় কিছু হতে হবে তাই না? তুমি ও যাও। আমার ও যেদিকে দুচোখ যাই আমি চলে যাবে। যেইখানে আমার কথার কোন মূল্য নেই, সেইখানে আমার থাকার ও কোন প্রয়োজন নেই।”

-” তুমি আমাদের ছেড়ে থাকতে পারবে আম্মু?”

-” তোমরা পারলে আমি কেন পারবো না?”

-” তোমরা বলতে কি ভাইয়া কে মিন করলে আম্মু?”

-” আমি আগেই বলেছি আমার তৃতীয় কোনো সন্তান নেই।”

-” আচ্ছা মানলাম ঐ টা তোমার ছেলে না, তোমার সতীনের ছেলে। এইবার খুশি তো?”

-“অভি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু।”

-“আম্মু”

-” বলো”

-” তোমার সতীনের ছেলে কিছুদিনের মধ্যেই দেশে ফিরছে।”

-” সত্যি বলছিস , আমার রাজ দেশে ফিরছে?কবে,কখন ফিরবে‌ আমার ছেলেটা? ছলছলে চোখে বললেন নূরজাহান শিকদার।”

“- নূরজাহানের কথা শুনে সবাই হো হো করে হেঁসে উঠে বললো কেউ একজন বলেছিলো আমার তৃতীয় কোনো সন্তান নেই।তাহলে সে দেশে ফিরুক বা না ফিরুক তাতে কার কি এসে যায়?”

-” নূরজাহান শিকদার কারো কথায় রেসপন্স না করে আঁচলে চোখ মুছতে মুছতে কিচেনে চলে গেল ।”

___________________________________

-“পড়ার টেবিলে ফোন হাতে নিয়ে বসে আছে অভি।পড়তে বসেছে অথচ কিছুতেই পড়াশোনায় মনোযোগী হতে পারছে না। নিজের কাছে বড্ড হাঁসফাঁস লাগছে। ফোন ঘেঁটে ঘেঁটে বসন্ত উৎসবের ‌দিন দোয়ার গাওয়া সেই হৃদয়স্পর্শী গান শুনছে আর ভাবছে, অনেক হয়েছে লুকোচুরি,আর নয়।এখন সময় এসেছে অপ্রকাশিত ভালোবাসা প্রকাশ করার। কিন্তু কিভাবে দোয়া কে আমার মনের কথা বলবো? দোয়ার সামনে গেলেই তো আমার সব এলোমেলো ‌হয়ে যাই। কতোবার যে মনের কথা বলতে গিয়ে ফিরে এসেছি তার হিসাব নেই। এই তো বসন্ত উৎসবের দিন কতো সাহস নিয়ে দোয়া কে ভালোবাসি কথাটা বললাম কিন্তু দোয়া দেখার আগেই আবার লুকিয়ে গেলাম। ধ্যাত কেন যে সেদিন লুকিয়ে গিয়েছিলাম ?যা হয় হতো।মেয়েটাকে সেই বসন্ত উৎসবের দিন দেখেছিলাম ‌তারপর আর ভার্সিটি তে দেখা মেলে নি।বড্ড মিস করছি তাকে। মেসেজ ও দিতে পারছি না।কতো কাঠখড় পুড়িয়ে নাম্বার টা জোগাড় করেছিলাম, দুই দিন ভালোবাসি বলে মেসেজ দিলাম তারপর থেকে নাম্বার টা ও বন্ধ। ধূর কি যে করি? ও হো কাল যেহেতু ফাষ্ট ইয়ারের এডমিট কার্ড দিবে দোয়া নিশ্চয় আসবে ভার্সিটি তে। কালকে যে করেই হোক দোয়া কে আমার ভালোবাসার কথা জানাতেই হবে। কিন্তু কিভাবে? ইয়েস আইডিয়া পেয়েছি।বৃত্তকে কল করে জিজ্ঞেস করে দেখি‌ , ও নিশ্চয় কোন না কোন টিপস্ দিতে পারবে।যেই ভাবা সেই কাজ।বৃত্ত কে কল দিতেই কল রিসিভ করে বৃত্ত বললো,

-” কি হয়েছে অভি? আমি জানি তুই প্রয়োজন ছাড়া কল করিস না‌।তাই ঝটপট বল এই অধমকে কেন স্বরণ করলি?”

-” তুই কোথায় আছিস? গান বাজনার শব্দ শোনা যাচ্ছে।”

-” ক্লাবে আসছি।”

-” আমাদের বাসায় একটু আসতে পারবি?তোর সাথে কিছু জরুরী কথা ছিল।”

-” ইয়াহ।আই অ্যাম কামিং রাইট নাও।”

-” বৃত্ত এসে কলিং বেল ‌দিতেই অভির ছোট বোন অবনী দরজা খুলে দিয়ে বললো, আসসালামুয়ালাইকুম কেমন আছেন বৃত্ত ভাইয়া?”

-” ওয়ালাইকুমুস সালাম।এই তো ঠিকঠাক আছি। তুমি কেমন আছো?”

-” ভালো না ভাইয়া।আপনি আর আগের মতো আমাদের বাসায় আসেন না কেন?মিস করি তো আপনাকে।”

-“বৃত্ত প্রতিউত্তরে কিছু না বলে ভেতরে যেতেই অবনী পিছন থেকে ডেকে বললো, বৃত্ত ভাইয়া জিজ্ঞেস করলেন না কেন ভালো নেই আমি?”

-” তোমাকে দেখে তো সুস্থ্য ‌সবল মনে হচ্ছে , অসুখের ছিটেফোঁটা ও দেখছি না।আর যদি অসুস্থ হয়ে ও থাকো ডক্টর দেখাও নি কেন?”

-” এ অসুখ শরীরের নয় বৃত্ত ভাইয়া যে ডক্টর দেখালে সেরে যাবে।এ অসুখ মনের।এ অসুখের যন্ত্রণা যে খুব বেশি বৃত্ত ভাইয়া। পৃথিবীতে এমন কোন ডক্টর সৃষ্টি হয় নি যে এই অসুখ সারাবে।”

-” কি আবল তাবল বকছো অবনী?মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোমার?”

-” আমি আপনাকে … বাকি টা বলার আগেই অভি এসে বললো, আরে বৃত্ত চলে এসেছিস? ভেতরে চল।”

-” হুম । এবার বল কি বলতে আমাকে এতো রাতে ডেকে এনেছিস?”

-” আমি প্রেমে পড়েছি বৃত্ত।আই অ্যাম ইন লাভ।”

-” প্রেমে তো আমার আমি ও পড়েছি।সেই কবে থেকেই।কোন এক নিষিদ্ধ ললনার। যে কি না আমার ধরা ছোঁয়ার বাইরে। ”

চলবে ইনশাআল্লাহ।।।
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here