ভালোবাসি প্রিয় ৩ পর্ব -০৯

#ভালোবাসি_প্রিয় (০৯)

#সিজন_৩

#লেখিকা_নূন_মাহবুব

-” এসব কি বলছিস তুই বৃত্ত?”

-” ইয়েস।আই লাভ দোয়া।শুনেছিস তুই আমি দোয়া কে ভালোবাসি।”

-” না! এটা হতে পারে না। দোয়া কে আমি ভালোবাসি। দোয়া শুধু আমার।”

-” জেগে জেগে স্বপ্ন দেখিস না অভি। দোয়া আমার।আমি বেঁচে থাকতে দোয়া কে তোর হতে দিবো না অভি।”

-” তাহলে ম”রা”র জন্য প্রস্তুত হয়ে যা বলেই অভি ফুলদানি দিয়ে বৃত্তের মাথায় আঘাত করলো। মূহুর্তের মধ্যেই লাল রঙ্গে রঙ্গিত হয়ে গেল সাদা টাইলস।”

-” আরে এই অভি কোথায় হারিয়ে গেলি ভাই?আমি সেই কখন থেকে একা একাই বকবক করে যাচ্ছি । কিন্তু তুই কোন সাড়া শব্দ দিচ্ছিস না।আরে ভাই এতো ঘামছিস কেন তুই? এনিথিং রং? এই নে পানি খা ।”

-“বৃত্তের কথায় ধ্যান ভাঙ্গল অভির। বৃত্তের হাত থেকে গ্লাস নিয়ে পুরো পানিটুকু শেষ করে ভাবলো তারমানে সবটা আমার কল্পনা , আমার মনের ভুল ছিল।অভি তবু ও শিওর হ‌ওয়ার জন্য বৃত্তকে বললো, তুই প্রেমের ব্যাপারে কি যেন বলছিলি?

-“বলছিলাম আমি ও তোর মতো প্রেমে পড়েছি।কোন এক নিষিদ্ধ ললনার।যে কি না আমার ধরা ছোঁয়ার বাইরে।”

-“আর ইউ কিডিং মি ?”

-“তুই আমার বেয়াই লাগিস না যে অযথা তোর সাথে মজা করবো।আই অ্যাম সিরিয়াস।আই অ্যাম ইন লাভ টু।”

-” এসব কবে থেকে চলছে ভাই? আশিয়ান আবরার বৃত্ত প্রেমে পড়েছে ভাবা যায় এগুলো?আমাকে এ ব্যাপারে কিছু বললি না তো ।নাকি বলার প্রয়োজন মনে করিস নি?”

-” তুই যে ডুবে ডুবে পানি খাচ্ছিস আমাকে বলেছিস কখনো? বলিস নি তো।তাহলে আমি কেন তোকে বলতে যাবো?”

-“আমি তো তোকে বলার জন্যই কল করেছি। কিন্তু তুই তো আমাকে কিছুই বলিস নি। মেয়েটা কে বৃত্ত? কার প্রেমে পড়েছিস তুই?”

-” আমার মামনির মেয়ের।হা হা হা হা।”

-” ধূর! ফাজলামি বাদ দে বৃত্ত।আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।”

-” কেন ব্রো তুই কি ভেবেছিলি তোর প্রেমিকা কে আমি ভাগিয়ে নিয়ে যাবো?হা হা হা।বাই দা ওয়ে হু ইজ দা গার্ল?আই থিংক শী লুকস লাইক ভেরি বিউটিফুল।

-” ইটস্ সিক্রেট। কালকেই জানতে পারবি।এখন আমাকে এইটা আমি কিভাবে তাকে আমার মনের কথা বলবো?”

-” আই হ্যাভ নো আইডিয়া। তুই এমনভাবে বলছিস যেন প্রেমের উপর পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছি। তুই এক কাজ কর গুগলে সার্চ করে দেখ। প্রয়োজনে রোমান্টিক ডায়ালগ গুলো নোট করে সারারাত জেগে প্রাকটিস কর। তবু ও আমার কাছে দ্বিতীয় বার জানতে চাস না।এসব প্রেম ভালোবাসা শুধু কষ্ট দিতে জানে ।আর কিছুই নয়।”

-” তুই আমার বন্ধু না শত্রু বৃত্ত? ওকে ফাইন।তোর কোন হেল্পের প্রয়োজন নেই আমার।”

-” মানুষ নাকি প্রেমে পড়ে অন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তুই দেখছি বাচ্চা হয়ে গেছিস। বাচ্চাদের মতো বিভেব করছিস। আচ্ছা ঠিক আছে তোর কিছুই বলা লাগবে না।তোর হয়ে আমি তাকে বলে দিবো।এবার হ্যাপি তো?

-” আমি কোন হারাম রিলেশনে যাবো না।তাকে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিবো।তাকে হালাল ভাবে নিজের করে নিবো।”

-” তুই যেমন টা বলবি তেমনটাই হবে।তবে দেখিস ব‌উ পেয়ে বন্ধু কে ভুলে যাস না আবার।”

-” অভি বৃত্ত কে জরিয়ে ধরে বললো, এতো গুলো বছরে এই চিনেছিস আমাকে? তুই তোর জায়গায় থাকবি আর ব‌উ ব‌উয়ের জায়গায়।তোর জন্য এখন যেমন ভালোবাসা আছে ভবিষ্যতেও এমন‌ই থাকবে।তোর আমার বন্ধুত্ব কখনো কোন কারনে আমি নষ্ট হতে দিবো না বৃত্ত।”

-” নে এবার ছাড়।আমাকে বাসায় ফিরতে হবে।মম টেনশন করবে।”

-” কোথাও যাচ্ছিস না তুই।আজ আমার এইখানে থাকবি। ওয়েট আমি আন্টিকে কল করে বলে দিচ্ছি।”

-” এই না না।মমের শরীর ভালো না‌।পাপা ও বাসায় নেয় আমার ফিরতে হবে।”

-” ঠিক আছে।তাহলে ডিনার করে যা। আম্মু নারকেল দিয়ে রাজহাঁসের মাংস রান্না করেছে ।সাথে পোলাও,ডিম,সালাত পায়েস তো আছেই। প্লীজ খেয়ে যা।”

-” রাজহাঁসের মাংস আমার ফেবারিট। তুই না বললে ও খেয়ে যেতাম।”

-” হা হা হা।চল ডাইনিং এ অপেক্ষা করছে সবাই।”

-” তুই যা।আমি একটু ওয়াশরুম থেকে আসছি।”

-“ঠিক আছে। তাড়াতাড়ি আয়।”

-” ফ্রেশ হয়ে বৃত্ত গিয়ে দেখে শুধু মাত্র অবনীর ‌পাশের চেয়ার টা খালি না।বাধ্য হয়ে অবনীর পাশের চেয়ারে বসে বৃত্ত। বৃত্ত কিছু দিন থেকে নোটিশ করছে অবনী কেমন অস্বাভাবিক আচরণ করছে তার সাথে।অযথা‌ তার সাথে ভাব জমাতে যাচ্ছে। বিষয় টা মোটেই ভালো লাগছে না বৃত্তের। বৃত্ত ভাবছে ব্যাপার টা বেশি দূর যাওয়ার আগেই অভির সাথে শেয়ার করার দরকার। বৃত্ত নিজের মতো খাচ্ছে এমন সময় পায়ে ব্যথা অনুভব করে। পরক্ষণেই অবনীর দিকে চেয়ে দেখে অবনী মুচকি মুচকি হাসছে। ব্যাপার টা বোধগম্য হতেই বৃত্ত কোনমতো খাবার শেষ করে সবার থেকে বিদায় নিয়ে নিজ গন্তব্যে রওনা হলো।”

___________________________________
ফজরের আযান শুনে ঘুম ভেঙ্গে গেল দোয়ার। রোজকার রুটিন মতো ছোঁয়া কে ডেকে তুলে দুই বোন ওযু করে এসে নামাজ পড়ে কিছুক্ষণ কোরআন তেলাওয়াত করলো। তেলাওয়াত শেষ করে দোয়া ছাদে গেল গাছের পরিচর্যা করতে। কিন্তু বেশিক্ষন সময় দিতে পারলো না। খুবই ব্যস্ত সময় পার করছে দোয়া। হাতেগোনা কয়েকটা দিন পরেই প্রথম বর্ষের পরীক্ষা ।আজ আবার তার ভার্সিটি তে যেতে হবে রেজিষ্ট্রেশন কার্ড,এডমিট কার্ড আনতে।সেই দূর্ঘটনার পর থেকে আর তেমন ভার্সিটি তে যাওয়া হয় নি দোয়ার। সেদিনের ঘটনা মনে পড়লে এখনও গায়ে কাঁ”টা দিয়ে ওঠে। শাহিনা বেগম কিভাবে যেন ঘটনা আঁচ করতে পেরে দোয়া কে কোন মতেই ভার্সিটি তে যেতে দেয় নি। ফর্ম ফিলাপ করার পর অবশ্য তেমন ক্লাস ও ছিল না। তাছাড়া দোয়া যেহেতু ম্যাথের সাবজেক্ট গুলো আগেই প্রাইভেট পড়ে কভার করে নিয়েছে তাই আর ভার্সিটি তে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে নি। বাকিটা বাড়িতেই শেষ করে নিয়েছে।ছাদ থেকে রুমে এসে দেখা সিমরান অনেক বার কল করেছে। দোয়া কল ব্যাক করতেই সিমরান রিসিভ করে বললো,

-” আসসালামুয়ালাইকুম।”

-” ওয়ালাইকুমুস সালাম।আমি ছাদ থেকে ভাবছিলাম নিচে গিয়ে তোমাকে কল করবো।এসে দেখি আমি কল করার আগেই তুমি কল করেছো। পরীক্ষার প্রিপারেশন কেমন তোমার?”

-” আলহামদুলিল্লাহ ভালো।মনে হচ্ছে ভালো কিছু হবে।কখন বের হবে তুমি? তোমার তো আবার অনেক সময় লাগে আসতে। একটু তাড়াতাড়ি এসো।আমি ভার্সিটির গেটে অপেক্ষা করবো।”

-” এইতো নাস্তা সেরে বের হবো।”

-” ওকে।রাখছি তাহলে।বাকি কথা দেখা হলে হবে ইনশাআল্লাহ।”

-” আল্লাহ হাফেজ।”

-” দোয়া নাস্তা সেরে বোরকা হিজাব পরিধান করে সবার থেকে বিদায় নিয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্য র‌ওনা হলো। যদিও দোয়ার আব্বা দোয়ার সাথে আসতে চেয়েছিল কিন্তু দোয়া তাদের কে আশ্বাস দিয়েছে আল্লাহর রহমতে তার কিছু হবে না। আল্লাহ ঠিক থাকে রক্ষা করবে।”

-” দোয়া ভার্সিটি তে এসে দেখে সিমরান আগে থেকেই গেটে দাঁড়িয়ে রয়েছে। দোয়া কে দেখেই সিমরান জরিয়ে ধরে বললো, ইশ্ কতোদিন পরে দেখলাম বলো তো? খুব মিস করেছি তোমাকে।”

-” গতকাল রাতেও ভিডিও কলে কথা বললাম।আর তুমি বলছো কতোদিন দেখো না।”

-” আরে ঐ টা তো ভার্চুয়াল দেখা।ঐ দেখার মধ্যে কোন ফিল পাওয়া যায় না।”

-” হয়েছে হয়েছে।আর ভালোবাসা দেখাতে হবে না।এবার চলো।সবার বোধহয় ‌এডমিট কার্ড নেওয়া হয়ে গেল।”

-” হুম চলো।”

-” এডমিট পাওয়ার পর দেখে দোয়া আর সিমরানের পাশাপাশি সিট পড়েছে। সিমরান তো বেশ খুশি তারা দুজনে পাশাপাশি ‌বসে পরীক্ষা দিতে পারবে এইটা ভেবে। সিমরান বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হবে এমন সময় দোয়া বললো,

-” সিমরান চলো তো একটু লাইব্রেরীতে তে যাই। আমার একটা ব‌ই লাগবে।”

-” ঠিক আছে চলো।”

-” লাইব্রেরীতে এসে দোয়া টেবিলের উপর রেজিস্ট্রেশন কার্ড, এডমিট কার্ড রেখে ‌ব‌ই খুঁজতে চলে যাই। কিন্তু কাঙ্খিত ব‌ইটার দেখা মিলে না।প্রায় বিশ ধরে অনেক খোঁজাখুঁজির পর অবশেষে দেখা মেলে। দোয়া ব‌ই নিয়ে এসে দেখে টেবিলের উপর তার রেজিস্ট্রেশন কার্ড, এডমিট কার্ড কিছুই নেয় । নিচে রেজিস্ট্রেশন কার্ড, এডমিট কার্ডের টুকরো টুকরো অংশ ‌পড়ে রয়েছে দেখেই দোয়া চিৎকার দিয়ে ফ্লোরে বসে পড়ে।

চলবে ইনশাআল্লাহ।।
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here