#ভালোবাসি_প্রিয় (১৫)
#সিজন_৩
#লেখিকা_নূন_মাহবুব
-” ফাইলের কথা শুনে বৃত্ত অভি দুজনেই পিছনে তাকিয়ে অবাকের সর্বোচ্চ সিমায় পৌঁছে যায়।কারণ তারা ফাইল দিতে আসা মেয়েটিকে কখনো এইখানে এইভাবে আশা করি নি।বৃত্ত ভেবেছিলো তার হয়তো সত্যিই পরীক্ষা দেওয়া হবে না। কিন্তু ফাইল দেখে বৃত্তের মন উৎফুল্ল হয়ে ওঠে। বৃত্তের মুখ ফসকে বেরিয়ে যায়,
-” মিস দেড় ফুট তুমি?”
-“হ্যাঁ আমি। হয়তো আমাকে এইখানে আশা করেন নি তাই তো মিষ্টার আশিয়ান আবরার বৃত্ত ? আমি ও প্রথমে আসতে চাই নি। কিন্তু পরক্ষণেই মনে হলো কু”কু”র মানুষ কে কামড়াতে পারে। কিন্তু মানুষ কখনো কু”কু”র কে কামড়াতে পারে না।এই মুহূর্তে আমি চাইলে আপনার এক ইয়ার লস করাতে পারতাম। আপনার বিসিএস দেওয়া থেকে আপনার একটা বছর কেড়ে নিতে পারতাম। কিন্তু আমি তো আপনার মতো অমানুষ নয়। আমার আব্বা আম্মা মানুষ কে মানুষ ভাবতে শিখিয়েছে আমাকে।তবে একটা কথা মনে রাখবেন মিষ্টার আশিয়ান আবরার বৃত্ত,অন্যের জন্য গর্ত খুঁড়লে নিজেই কিন্তু সেই গর্তে পরতে হয়। ঠিক যেমন টা হয়েছিল আবু জাহেলের সাথে।আবু জাহেল যখন বারবার আমাদের রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মা রা র চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছিল ,তখন তাকে মা”রা”র একটা গর্ত খনন করে।যার গভীরতা ছিল অনেক বেশি।আবু জাহেল গর্ত খুঁড়ে তার উপর এমন ভাবে ছাউনী দিয়ে রেখেছিল যা দেখে বোঝার উপায় ছিল না যে এইখানে কোন গর্ত আছে। কিন্তু পরে কি হয়েছিল জানেন? আমাদের রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই গর্তে পরে নি। বরং আবু জাহেল নিজেই নিজের খোঁড়া গর্তে পরেছিল। আপনার ঘটনা ও ঠিক আবু জাহেলের মতো হয়ে গেল। আপনি চেয়েছিলেন , আমি যাতে পরীক্ষা দিতে না পারি। কিন্তু দেখুন আল্লাহর রহমতে আমি ঠিকই ভালো ভাবে পরীক্ষা দিতে পেরেছি। কিন্তু ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে আপনার সাথে। আপনার অবস্থান টা আজ একবার দেখুন । কোথায় গেল আপনার সেই পাওয়ার? কোথায় গেল আপনার সেই সব ফ্রেন্ড সার্কেল? যাদের জন্য আপনি হাজার হাজার টাকা উড়িয়েছেন, অথচ আজ তাঁরা আপনাকে চিনে না।আর এই যে এই মানুষ টা যে অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছিল, আমার পক্ষে কথা বলেছিল বলে আপনি তার সাথে বন্ধুত্ব নষ্ট করেছিলেন।আজ সেই বন্ধু আপনার জন্য নিজের ইয়ার ড্রপ করতে ও কুণ্ঠাবোধ করছে না।”
-” মিস দেড় ফুট তোমার কাছে ক্ষমা চাওয়ার কোন মুখ নেই আমার। অনেক অন্যায় করেছি তোমার সাথে।আর আল্লাহ তায়ালা হয়তো এখন সেই পাপের শাস্তি দিচ্ছেন আমাকে। ড্যাড আমার সাথে যোগাযোগ করা বন্ধ করে দিয়েছে ।আর আজ এমন একটা দূর্ঘটনা।সবই আমার পাপের ফল।জানি আমি যা করেছি ,তা ক্ষমার অযোগ্য। তবু ও যদি পারো আমাকে ক্ষমা করে দিও।”
-” ক্ষমা মহৎ গুণ। এমনিতে ও আপনার প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই। আপনি আপনার ভুল বুঝতে পেরেছেন এইটাই অনেক।”
-” দোয়ার কথা শুনে বৃত্তের খুশিতে চোখ ছলছল করে ওঠে।বৃত্ত দোয়া কে ধন্যবাদ দিতে যাবে তার আগেই দোয়া প্রস্থান করে।”
-” দোয়ার যাওয়ার পথে বৃত্ত তাকিয়ে বললো, মিস দেড় ফুটের সাথে সত্যিই আমি অনেক অন্যায় করেছি।যা ক্ষমার অযোগ্য। তবু ও মিস দেড় ফুট বিনা বাক্যে আমাকে ক্ষমা করে দিলো।”
-” তুই দোয়া কে চিনতে ভুল করেছিলি অভি।আজ দোয়ার জায়গায় যদি অন্য কোন মেয়ে থাকতো কখনো তোর এডমিট কার্ড , রেজিস্ট্রেশন কার্ড পেয়ে তোকে ফিরিয়ে দিয়ে যেত না। কিন্তু দোয়া তার সাথে হওয়া অপমানের কথা ভুলে গিয়ে ছুটে চলে এসেছে তোর ফাইল দিতে।আজ এই গাইয়া,দেড় ফুট মেয়ের জন্যেই তুই পরীক্ষা টা দিতে পারছিস। এরপর ও কি তুই বলবি ঐ মেয়ে এই ভার্সিটি তে পড়াশোনা করার যোগ্যতা রাখে না।”
-” বাদ দে অভি।আমাকে আর লজ্জা দিস না।এখন চল তো। এতোক্ষণে বোধহয় খাতা দিয়ে দিয়েছে।”
-” হুম চল।”
___________________________________
-” হ্যাঁ রে দোয়া হসপিটাল থেকে বেরিয়ে আমাকে একা রেখে তুই কোথায় চলে গিয়েছিলি?আমি সেই কখন থেকে এইখানে দাঁড়িয়ে রয়েছি। কিন্তু তুই লাপাত্তা হয়ে গেছিস।”
-” দুঃখিত আম্মা। আপনাকে এইভাবে মাঝ রাস্তায় ফেলে যাওয়া উচিত হয় নি আমার। হসপিটাল থেকে বেরিয়ে দেখি ঐ আবর্জনা স্তূপের পাশে একটা ফাইল পরে রয়েছে। ফাইলের মধ্যে আমার ভার্সিটির একজন সিনিয়র ভাইয়ার রেজিস্ট্রেশন কার্ড এডমিট কার্ড রয়েছে।মনে হয় ভুলবশত রাস্তায় পরে গিয়েছিল। আর কোন কু”কু”র সেটা মুখে করে নিয়ে এসে এইখানে ফেলে রাখছে। পরীক্ষা শুরু হতে ও বেশি সময় বাকি ছিল না।তাই আমি আপনাকে না জানিয়ে ফাইল টা দিতে গিয়েছিলাম।না হলে হয়তো ভাইয়া টা পরীক্ষা দিতে পারতো না।”
-” ভালো কাজ করেছিস। অন্যের বিপদে সবসময় এভাবেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিবি। তাহলে দেখবি আল্লাহ তোর বিপদে ও কাউকে না কাউকে ঠিকই পাঠাবে তোকে সাহায্য করার জন্য।”
-” আপনি এমনিতেই অসুস্থ আম্মা। তারপর আবার এই রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছেন। চলুন আপনাকে অটোতে উঠিয়ে দেই।”
-” কেন তুই যাবি না?”
-” আমি একটু পরে আসছি আম্মা। সিমরান কল করেছিল ওর নাকি কিছু কেনাকাটা করতে হবে। আমাকে ওর সাথে থাকার জন্য অনুরোধ করেছে। আপনি নিশ্চিন্তে যান আম্মা।আমি কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসছি।”
-” ঠিক আছে মা। সাবধানে আসবি।”
-“জ্বি আম্মা।”
-“দোয়া শাহিনা বেগম কে অটোতে উঠিয়ে দিয়ে ভাবছে সিমরান কে কল করবে এরই মধ্যে দেখে দোয়ার আম্মার বয়সী একজন ভদ্রমহিলা ফোনে কথা বলতে বলতে হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পরে। দোয়া তাড়াতাড়ি ভদ্রমহিলার কাছে গিয়ে তার চোখে মুখে পানির ছিটা দিলে ভদ্রমহিলার জ্ঞান ফিরে আসে। ভদ্রমহিলার জ্ঞান ফেরা দেখে দোয়া জিজ্ঞেস করে, আপনি ঠিক আছেন আন্টি?”
-“হ্যাঁ , মা।জানি না হঠাৎ করে মাথায় কেন চক্কর দিয়ে উঠলো । তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ মা।”
-” ভদ্রমহিলা উঠে দাঁড়াতে গেলে আবারো পরে যেতে নিলেই দোয়া তাকে ধরে বললো, আন্টি আপনি তো ঠিক ভাবে দাঁড়াতেই পারছেন না।একা একা যাবেন কিভাবে? আপনার সাথে আর কেউ আসে নি? অসুস্থ শরীর নিয়ে একা একা বের হয়েছেন কেন?”
-” আসলে মা আমাদের পরিবারে লোকসংখ্যা খুবই কম। তোমার আঙ্কেল দেশের বাইরে আছেন।ছেলেটা ও তার কাজে আছে।আমি সচরাচর বের হলে ড্রাইভার আমার সাথে থাকে। কিন্তু ড্রাইভার টা গ্ৰামের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছে। অবশ্য বাসায় একটা মেয়ে আছে ।ওর কিছু দিন বাদে পরীক্ষা।তাই আর ওকে সাথে করে আনি নি। সমস্যা নেই আমি যেতে পারব।
ভদ্রমহিলার দোয়া কে চেনা চেনা মনে হচ্ছে। কিন্তু ঠিক মনে করতে পারছে না কোথায় দেখেছে। ভদ্রমহিলার ভাবনার মাঝে দোয়া বললো, আন্টি চলুন আমি আপনাকে আপনার বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসি।আপনি আমার আম্মার বয়সী।আপনাকে এইভাবে ফেলে রেখে যাওয়া আমার উচিত হবে না। তাছাড়া আমার পরিবার আমাকে এই শিক্ষা দেয় নি যে কাউকে বিপদে পরতে দেখে তাকে সাহায্য না করে চলে আসার।”
-” দোয়ার কথা শুনে ভদ্রমহিলার খুশিতে চোখ ছলছল করে উঠলো।সে যতই মুখে বলছিল যেতে পারবে , কিন্তু মনে মনে চায় ছিলো মেয়েটা তাকে পৌঁছে দিয়ে আসুক।”
-“দোয়া ভদ্রমহিলা কে নিয়ে তার বাসার সামনে আসতেই অবাক হয়ে গেল ।এতো বড় বাড়ির মালকিন সে। অথচ চলাফেরা একদম সাধারণ মানুষের মতো। দোয়া ভদ্রমহিলা কে বললো, আন্টি আমি আসি তাহলে।ভালো থাকবেন আপনি। নিজের যত্ম নিবেন।”
-“সে কি কথা মা? চলে যাবে মানে কি? তুমি আমার এতো বড় একটা উপকার করলে।আর আমি তোমাকে আমার বাসার বাইরে থেকে ফিরিয়ে দেই কিভাবে বলো তো?”আসো মা ভেতরে আসো।”
-” না ,না আন্টি । আমার যেতে হবে।”
-” কোন অযুহাত নয়। তুমি না বললে আমি তোমার আম্মার মতো।তাহলে তুমি ও তো আমার মেয়ের মতো।মেয়ে হয়ে মায়ের বাসায় যেতে এতো দ্বিধাবোধ করছো কেন?”
-” অবশেষে ভদ্রমহিলার জোড়াজুড়ি তে দোয়া বাসার ভেতরে প্রবেশ করে। দোয়া বাসার ভেতরে প্রবেশ করে আরেক দফা চমকে উঠে।মনে হচ্ছে কোন রাজপ্রাসাদে প্রবেশ করেছে। দোয়া মনে মনে ভাবছে এনারা নিশ্চয় এই শহরের সবচেয়ে প্রভাবশালী লোক। কতো বড় বাড়ি,কতো আসবাবপত্র, অথচ জনশূন্য মনে হচ্ছে।
ভদ্রমহিলা দোয়া কে নিয়ে তার রুমে নিয়ে যায়। দোয়া রুমের প্রত্যেক টা জিনিস খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। হঠাৎ বাতাসে টেবিলের ওপর রাখা একটা ছবির উপর থেকে পর্দা সরে যেতেই দোয়া হতভম্ব হয়ে যায়।”
চলবে ইনশাআল্লাহ।।
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।।