#ভালোবাসি_প্রিয় (১৮)
#সিজন_৩
#লেখিকা_নূন_মাহবুব
-” ঝর্ণা আবরার শাড়ির আঁচলে হাত মুছতে মুছতে এসে বললো, কি হয়েছে বেটা? কিছু লাগবে তোমার?”
-” হ্যাঁ বউ লাগবে।আই নিড বিয়ে মম!এখন ঝটপট বউ এনে দাও।”
-“কিছু দিন আগে যখন তোমাকে বিয়ের কথা বলেছিলাম তুমি হাজার টা এক্সকিউজ আমার হাতে ধরিয়ে দিয়েছিলে বেটা।কি জানি বলেছিলে? ও হ্যাঁ ! তুমি নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাও।সো বিয়ের চিন্তা বাদ দিয়ে আগে নিজের পায়ে দাঁড়াও বেটা।”
-“একটু বোঝার চেষ্টা কর মম।রাতে একা ঘুমোতে পারি না,ভয় করে তো।”
-“আজ বিয়ে দিলে যে কাল চার বাচ্চার বাবা হয়ে যাবে তার কি না এখনো ভয় করে।হাউ স্ট্রেঞ্জ!”
-” দেখ মম ! তোমার বয়স হচ্ছে , আমি চাই কিছুদিনের মধ্যেই আমার কোল আলো করে থুক্কু তোমার বউমার কোল আলো করে চার থেকে পাঁচ টা পোলাপাইন আসুক। তারপর তুমি সারাদিন তাদের সাথে সময় কাটাতে পারবে । তোমার আর একাকীত্বে ভোগা লাগবে না। কিছুদিন আগে কি হয়েছে জানো? আমার এক ফ্রেন্ডের মা একাকীত্বে ভুগতে ভুগতে মানসিক রোগী হয়ে গিয়েছে।তাই প্লীজ মম তোমার কথা চিন্তা করে হলেও আমার জন্য অনলি একটা বউ এনে দাও।”
-” হঠাৎ করে তোমার মাথায় বিয়ের ভূত চেপেছে কেন? কথাবার্তা কেমন জানি খাপছাড়া হয়ে গিয়েছে। তুমি তো এমন টা ছিলে না বেটা। হঠাৎ এতো পরিবর্তন? তোমার এই খাপছাড়া কথা বার্তা আমি নিতে পারছি না।”
-” মামনির মেয়ের বাতাস গায়ে লেগেছে আমার।তারই ফল এইটা। আর যেহেতু মামনির মেয়ের দেখা পেয়ে গিয়েছি ,তাই আর দেরি করে লাভ কি? তুমি জানো না শুভ কাজে দেরি করতে হয় না । তাছাড়া পোলাপাইনের পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে তো মম। তাদের কে তো এই পৃথিবীর আলো দেখাতে হবে। তাই আর দেরি না করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করে দাও।”
-” ছিঃ ছিঃ এসব কি ধরনের কথা বেটা? লজ্জা শরমের মাথা খেয়েছো নাকি?ছেলে হয়ে মায়ের কাছে বিয়ে , বাচ্চাকাচ্চাদের কথা বলতে একটুও লজ্জা করছে না তোমার।নাকি নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন করছো?”
-” মামনির মেয়েই তো আস্ত একটা নেশা।এই নেশার কাছে পৃথিবীর অন্য সব নেশা তুচ্ছ। এতো দিন তুমি বিয়ে কর বিয়ে করআমার মাথা খারাপ করে দিয়েছো ।আর আজ যখন আমি বিয়ে করতে চাচ্ছি তখন তুমি টালবাহানা শুরু করেছো। তাছাড়া তুমি জানো না মম, বিয়ে একটা পবিত্র বন্ধন। জীবনের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ।বিয়ের মাধ্যমে রিজিকের দ্বার খুলে যায়।বিয়ে করলে…
-” বৃত্ত কে থামিয়ে দিয়ে ঝর্ণা আবরার বললেন, তোমার কি মনে হয় দোয়া তোমার মতো বখাটে ছেলে কে বিয়ে করতে রাজি হবে? কক্ষনো না। দোয়ার মা যেমন ধার্মিক ছিল। মেয়েটা ও তেমন হয়েছে। দোয়ার মায়ের জন্য কতো ভালো ভালো বিয়ের প্রস্তাব এসেছিল। কিন্তু শাহিনা সব প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে সামান্য একজন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক কে নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছে শুধু মাত্র তার মধ্যে দ্বীনের শিক্ষা আছে বলে। তেমনি দোয়া ও নিশ্চয় তার বাবার মতো কাউকে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নিবে। তাই মামনির মেয়ের চিন্তা দাও বাদ বলে ঝর্ণা আবরার কিচেনে চলে গেলেন।”
-“প্রায় দুই ঘণ্টা ব্যয় করে ঝর্ণা আবরার দোয়ার পছন্দের সব রেসিপি করে দোয়া কে পরম যত্নে নিজের হাতে খাইয়ে দিলেন। খাওয়া দাওয়া শেষ হলে দোয়া কে নিজের রুমে নিয়ে গিয়ে দোয়ার গলায় একটা স্বর্ণের চেন পড়িয়ে দোয়ার কপালে চুমু দিয়ে বললেন, আমার পক্ষ থেকে তোকে এই ছোট্ট উপহার।”
-” এসবের কি প্রয়োজন ছিল খালাম্মু? এমনিতেই তোমার দেওয়া সেই দুল টা আমি রাখতে পারি নি। হারিয়ে ফেলেছি।আমি এইটা নিতে পারবো না খালাম্মু। তোমার জিনিস তোমার কাছে রেখে দাও।”
-” দিবো ঠাঁটিয়ে এক চ”ড়।আর কোন কথা নয়। ড্রাইভার তো বাসায় নেয়।বেটা কি তোকে পৌঁছে দিয়ে আসবে?”
-” না ,না খালাম্মু।আমি যেতে পারবো।”
-” ঠিক আছে সাবধানে যাস।আর শাহিনা কে একদম আমার কথা বলবি না।আমি গিয়ে তোর আম্মা কে সারপ্রাইজ দিবো।”
-” ঠিক আছে খালাম্মু।আসছি আমি। আল্লাহ হাফেজ।”
___________________________________
-” দোয়া বাসায় ফিরে দেখে সিমরানের অনেক গুলো কল।খালাম্মু কে পেয়ে সিমরানের কথা দোয়ার মাথায় ছিলো না। দোয়া তৎক্ষণাৎ কল ব্যাক করতেই ঐ পাশ থেকে কান্নার আওয়াজ ভেসে উঠলো। দোয়া সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,কি হয়েছে সিমরান? কান্না করছো কেন?”
-” আমার অপ্রকাশিত ভালোবাসার প্রকাশ ঘটাতে পারলাম না দোয়া।ভালোবাসার মানুষ টা কে একবার জরিয়ে ধরে বলতে পারলাম না #ভালোবাসি_প্রিয়।কতো স্বপ্ন দেখেছিলাম তাকে হালাল ভাবে পাবার। তার সাথে বিয়ে হবার ছোট্ট একটা সংসার হবার। কিন্তু আমার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেলো।অভি ভাইয়া কে সত্যিই আমি মন থেকে চেয়েছিলাম। কিন্তু আল্লাহ হয়তো আমার জন্য তাকে সৃষ্টি করেন নি।তার জন্যই হয়তো তাকে পেলাম না।”
-” তুমি ঠিক কি বলছো আমি বুঝতে পারছি না সিমরান।কি হয়েছে একটু পরিষ্কার করে বলো।”
-” বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছেন । এবং আজই বিয়ে।”
-” হঠাৎ করে কাউকে কিছু না জানিয়ে বিয়ে?”আঙ্কেল এমনটা করছেন কেন?”
-” আমি বাদে সবাই জানে । বিয়ে নাকি আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। আমার বাবার বন্ধুর ছেলে।তারা সপরিবারে অস্ট্রেলিয়া থাকে। অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক তারা। বিয়ের পরে আমাকে ও অস্ট্রেলিয়া নিয়ে যাবে। বিয়ের জন্যই আমাকে শপিং করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু আমি এখন বিয়ে করতে চাই না দোয়া। এদিকে বিয়ের সব আয়োজন হয়ে গেছে। শুধু মাত্র আমাদের দুই পরিবার ছাড়া আর কাউকে জানানো হয় নি। তুমি আমার সবচেয়ে কাছের মানুষ।তাই তোমাকে জানালাম।আমি এখন অন্যের জন্য বউ সেজে বসে আছি। কিছুক্ষণ পরেই তিন কবুল বলে অন্য কারো হয়ে যাবো। কিন্তু আমি তো চাই নি অন্য কারো হতে।এখন আমি কি করবো বুঝতে পারছি না দোয়া?”
-” আল্লাহ যা করেন বান্দার ভালোর জন্যই করেন।হয়তো অভি ভাইয়া তোমার জন্য কল্যাণকর ছিল না। তাছাড়া তোমাদের মধ্যে তো কোন সম্পর্ক ও ছিলো না।অভি ভাইয়া আদৌ তোমাকে পছন্দ করতো কি না? একটা না হওয়া সম্পর্কের জন্য তুমি শুধু শুধু কষ্ট পাচ্ছো।”
-” এইটা অবশ্য তুমি ঠিক বলেছো। আমার মতো একটা কালো মেয়েকে অভি ভাইয়া কখনোই পছন্দ করবে না। এমনকি অভি ভাইয়া জানে ও না তাকে একটা বার #ভালোবাসি_প্রিয় কথাটা বলার জন্য কথাটা ছটফট করেছি আমি।তবে একটা কথা ভেবে ভালো লাগছে যে ছেলেটার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে সে আমার গায়ের রং নিয়ে প্রশ্ন তোলে নি। আমার এই কালো রঙ দেখেই সে আমাকে পছন্দ করছে।”
-” আলহামদুলিল্লাহ।এ কথাটা শুনে প্রশান্তি তে মন টা ভরে গেল। দোয়া করি তোমাদের দাম্পত্য জীবন সুখের হোক, আনন্দের হোক, রহমত বর্ষিত হোক তোমাদের উপর। অনেক অনেক সুখী হও তোমরা এই দোয়া করি।আর হ্যাঁ বিয়ের পরে অস্ট্রেলিয়া গিয়ে আমাকে ভুলে যাবে না তো? তোমার সাথে কা”টা”নো মূহুর্তগুলো খুব মিস করবো আমি।”
-” ভুলে যাবো কেন দোয়া? আমার তো বাবা, মা , তুমি এমনকি এই দেশ ছেড়ে যেতে মন চাইছে না। আমি ও তোমাকে খুব মিস করবো। রাখছি দোয়া।মা ডাকছে। ভালো থেকো।”
-” দোয়া স্পষ্ট বুঝতে পারছে মেয়েটা কান্না লুকাতে আন্টির কথা বলে ফোন রেখে দিয়ে চাচ্ছে। দোয়া বললো, ঠিক আছে । আল্লাহ হাফেজ। তোমার জন্য অনেক দোয়া ও ভালোবাসা রইল।”
-” সিমরানের সাথে কথা বলা শেষ করে দোয়ার খুব কষ্ট হচ্ছে। মেয়েটা কে সে বোনের জায়গা দিয়েছিল। অথচ সে আজ তাকে ছেড়ে চলে যাবে।মন চাচ্ছে ছুটে গিয়ে তাকে বুকে জড়িয়ে নিতে। কিন্তু সব চাওয়ায় কি পূর্ণতা পায়। যেমন টা সিমরানের ভালোবাসা অপূর্ণ রয়ে গেল। সেই সাথে থেকে গেল প্রিয় মানুষ কে #ভালোবাসি_প্রিয় বলার আকুলতা।
চলবে ইনশাআল্লাহ।।
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।।