ভালোবাসি প্রিয় পর্ব ১

#ভালোবাসি_প্রিয়
#পর্ব_১
#সুলতানা_সিমা

_আমাকে বিয়ে করবেন?
অচেনা অজানা একটা মেয়ের মুখে এমন কথা শুনে ৪৪০ ভোল্টের শকড খায় দিহান।

হা হয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকে সে। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। শ্যামলাবর্ণ গায়ের রং মেয়েটার গুলাপি সেলোয়ার-কামিজ পড়া। সাদা একটা ওড়না সিঁথির অর্ধেক পর্যন্ত মাথায় টেনে রাখছে। এক গুচ্ছ চুল বাম গালের পাশে ছড়িয়ে পরছে। যতবার মেয়েটা কানে গুজে দিচ্ছে ততবার ঝরঝর করে আবার মুখে এসে পড়ছে। মেয়েটার চোখ দুটো টানা টানা চোখের পাপড়ি গুলা খুব ঘন। নেশা ধরে যাওয়ার মতো চাহনি। কাজল পরেনি তবুও চোখ দুটো সম্ভব সুন্দর লাগছে। শ্যামলা মেয়েদের চোখ সুন্দর হয় সেটা দিহান জানত কিন্তু এতোটা সুন্দর হয় এটা তার জানা ছিলোনা। সরু নাক,পাতলা ঠোঁট লিপিস্টিক ছাড়াই গোলাপি রঙের।

_করবেন আমায় বিয়ে?

মেয়েটাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিলো দিহান। তখনই মেয়েটার কথায় ধ্যান ভাঙে দিহানের। হতভম্ব হয়ে আবারও তাকিয়ে তাকে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটার মুখের দিকে। সে বুঝতে পারছে না মেয়েটাকে কি বলবে। মাত্রই দেখা হলো মেয়েটার সাথে। এইতো একটু আগে তার গাড়ি খাদে পড়ে গেছিল। মেয়েটা কতো কষ্ট করে তাকে টেনে টুনে উদ্ধার করেছে।

(একটু আগে যা ঘটেছে)

দিহান গাড়ি নিয়ে বাসার দিকে যাচ্ছে। তার বন্ধুদের সাথে একটা পার্টিতে গেছিলো। ওরা জোর করে তাকে দু এক ঢোক ড্রিংক গিলিয়ে দিছে। এখন তার কাছে সব কিছু ডাবল লাগছে। রাস্তার পাশের গাছ গুলা মনে হচ্ছে সব রাস্তার মাঝকানে সারি বেধে দাঁড়িয়ে আছে।

হঠাৎ বিকট শব্দ করে তার গাড়িটা গাছের সাথে ধাক্কা খায়। তার সব নেশা উড়ে যায় কিন্তু ততক্ষণে তার গাড়ি খাদে পড়ে যায়। দিহানের মাথা সিটের সাথে বারি খেয়ে ফেটে ফিনকি দিয়ে রক্ত পরা শুরু হয়েছে। কপালের পাশে অনেকটা কেটে গেছে।সেদিকে তার খেয়াল নেই। সে বাঁচার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে। গাড়ির সাথে সেও উল্টে আছে। গাড়ির দরজা খুলার কোনো উপায় নেই। গাড়ি থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। দিহানের মনে বাঁচার আশা নিবে গেল। মনে মনে কালেমা পরতে লাগল। জীবনের সব পাপ কাজ গুলা মনে পরতে লাগল।

মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলো তখনই একটা মেয়ে দৌড়ে এসে তাকে উদ্ধার করে। অনেক কষ্ট করে মেয়েটা তাকে টেনে গাড়ি থেকে বের করল। দিহানকে গাড়ি থেকে বের করে দাঁড় করালো। মেয়েটার কাধে ভর দিয়ে দাঁড়ালো দিহান। তাকে ধরে ধরে নিয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়ালো মেয়েটা। দিহান কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলল।

_ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করব না আপনার কাছে আজীবন ঋণী থাকবো। আজ আপনি না থাকলে আমি মরেই যেতাম।
_ধন্যবাদ লাগবে না। একটা সাহায্য করলেই চলবে।

দিহান একটু অবাক হয়ে থাকালো। তার অবাক হওয়ার কারণ হলো। মাত্রই মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে আসা মানুষের কাছে কেউ সাহায্য চায় বলে তার জানা নেই।

নিজেকে স্বাভাবিক করে দিহান বললো।
_ আপনার কি সাহায্য লাগবে বলতে পারেন। আপনার জন্য কিছু করতে পারলে অনেক শান্তি লাগবে।
_হুম আমার একটা সাহায্য লাগবে। আপনি প্রমিজ করুন আপনি আমায় সাহায্য করবেন। এবং আপনি আমায় এ নিয়ে কোনো প্রশ্ন করবে না।
_অবশ্যই প্রমিজ। বলুন কি করতে পারি।
_কিছু করতে হবেনা একটা জিনিস চাইবো। তবে সেটা পরে চেয়ে নিবো আগে আসুন আপনাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই।
_আরে না আমি ঠিক আছি।
_আমি দেখতে পারছি তা আসুন।

দিহানকে নিয়ে মেয়েটা একটা ডাক্তারের কাছে যায়। মাথায় ব্যান্ডেজ করে কিছু অষুধপত্র নিয়ে রিকশা করে একটা কাজি অফিসের সামনে এসে নামে। দিহান চারিদিকে তাকিয়ে জায়গাটা দেখছিলো তখনি মেয়েটি বলে উঠলো” আমাকে বিয়ে করবেন?”

(এখন)

_কি হলো কিছু বলছেন না যে?
মেয়েটির কথায় আবারও ভাবাচ্ছেদ হয় দিহানের। দু’কয়েক শুকনো ঢোক গিলে গলা ভিজাতে চায়।তবুও গলা ভিজেনা। তার গলা শুকিয়ে চৌকির হয়ে গেছে।জ্বীভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে বলে”
_আপনি হয়তো কোনো একটা বিষয় নিয়ে খুব ডিপ্রেশনে ভুগছেন তাই কি বলছেন নিজেই বুঝতে পারছেন না।
_আমি সম্পুর্ণ ঠিক আছি। আর হ্যাঁ আপনি আমাকে প্রমিজ করেছেন আমি যা চাইব আপনি তা দিবেন। আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই।
_আপনি আমাকে চিনেন?
_চেনার কি কথা নাকি? যতদূর জানি আজ প্রথম আপনাকে দেখেছি।
_তাহলে বিয়ের মতো সিরিয়াস একটা বিষয়ে এত বড় ডিসিশন নিচ্ছেন কি করে?
_আপনি কিন্তু এটাও প্রমিজ করেছেন আপনি আমায় কোনো রকম প্রশ্ন করবেন না।

দিহান বুঝতে পারছেনা কি করবে। এভাবে মেয়েটা তাকে ফাসিয়ে দিবে বুঝতেই পারেনি সে। রাগে নাক লাল হয়ে গেছে তার। রাগটা তার নিজের প্রতি হচ্ছে। এরকম একটা গাইয়্যা টাইপ মেয়ের জালে সে ফেসে গেলো?

_কি হলো চলেন কাজি অফিসে।
দিহান রাগি লুকে মেয়েটার দিকে তাকালো। মেয়েটা বললো “”দেখুন আমি একটা মেয়ে এখন যদি আমি লোক জড়ো করে বলি আপনি আমায় বিয়ে করবেন বলে এখানে এনে আমায় বিয়ে না করে ফেলে যাচ্ছেন তাহলে কিন্তু পাবলিক আপনাকে জোর করে বিয়ে করিয়ে দিবে। এমন একটা বিনোদন কিন্তু পাবলিক হাত ছাড়া করবে না। ভিডিও করে সাথে সাথে সেটা ভাইরাল করে দিবে। এতে মানসম্মানেরও লস নিজের আত্মীয় স্বজনের সাথেও সম্পর্ক খারাপ। এর থেকে কি ভালো নয় আপনি ভদ্র ভাবে আমায় বিয়ে করতে আসেন।

অবশেষে দিহান বিয়ে করে নিলো। দিহানের ইচ্ছে করছে নিজের গলায় নিজে ছুরি চালিয়ে দিতে। কি দরকার ছিলো এভাবে মেয়েটিকে প্রমিজ করার? তন্দ্রা যখন জানতে পারবে এসব তখন কি হবে আল্লাহই জানে। তন্দ্রা দিহানের গার্লফ্রেন্ড। গত দুই বছর ধরে তাদের রিলেশন চলছে। তন্দ্রার বাবা মার্ডারের আসামি ছিলেন। দিহানের বাবা একজন পুলিশ অফিসার তাই কিছুতেই ওই পরিবারের সাথে এই পরিবারের সম্পর্ক মেনে নিতে রাজি নয় তার বাবা। অনেক কষ্ট অনেক ঝড়,বাধা পেরিয়ে মাত্র দুইদিন আগে তাদের সম্পর্ক সবাই মেনে নিয়ে তাদের বিয়ের আলাপে বসেছে। আর আজ কিনা সে অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করে ফেললো?

কটকট শব্দ করে সিড়ি দিয়ে নেমে আসছে মেয়েটা। দিহানের কানে শব্দগুলা বিকট ভাবে লাগছে। কপাল কুঁচকে তাকাল সে। ইচ্ছে করছে এই বিরক্তিকর মেয়েটাকে গলা টিপে খুন করতে। দিহানের মস্তিষ্ক শূন্য লাগছে। বাসায় উঠবে কিভাবে গিয়ে? বাসার সবাই যখন দেখবে সে বিয়ে করে বউ নিয়ে বাসায় উঠছে তখন যে কি হবে ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠছে।

মেয়েটা সামনে এসে দাঁড়ালো। দিহান বিরক্ত হয়ে কপাল কুঁচকে মুখ ঘুরিয়ে নিল। কিছুক্ষন পরে দিহান একটা সিএনজি নিয়ে আসলো। এসে মেয়েটাকে ঝাড়ি স্বরে বললো “ওঠেন এসে গাড়িতে”। মেয়েটা হাসি মুখে বললো” একটা কাবিননামার দরকার ছিল পেয়ে গেছি। আর কিছুর দরকার নেই। আপনি এবার আসতে পারেন।

মেয়েটির কথায় দিহান আবারও শকড হল। মাত্র একটা কাবিননামার জন্য তাকে এভাবে বিয়ে করল? একটা কাবিননামা কি এমন প্রয়োজনীয় জিনিস? কোনো ভাবে মেয়েটা থাকে ফাসাতে চাচ্ছে না তো? এমন তো নয় মেয়েটা তাদের বিরুধী দলের কেউ? অথবা তাদের কোনো শত্রু মেয়েটাকে পাঠিয়েছে? দিহানের মাথায় হাজারও প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। বিয়ে পড়ানোর সময় কি যেন মেয়েটার নাম বলছিলো কাজি? অরিন। হ্যাঁ অরিন। অরিন নামটা আগে শুনছে বলে ওতো মনে হচ্ছে না।

চলবে…..।

উৎসাহ পেলে নেক্সট দিব।❤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here