ভালোবাসি প্রিয় পর্ব ২+৩

#ভালোবাসি_প্রিয়
#পর্ব_২
#সুলতানা_সিমা

পশ্চিম আকাশে সূর্য ডুবেছে মাত্র মিনিট দু’য়েক হবে। সন্ধে নেমেছে পুরো শহর জুড়ে। দক্ষিণা বাতাস বইছে চারিদিকে। মসজিদে মসজিদে আজানের ধ্বনি শুনা যাচ্ছে। বিশাল বড় পাচঁতলা বিল্ডিংয়ের তিনতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে চাতক পাখির মতো ছেলের পথ চেয়ে আছেন সুমনা চৌধুরী। এই বড় বাড়িটার নাম শান্তি নীড়। এটা উনার শশুরের দেওয়া নাম। শান্তি নীড় নাম দেওয়ার পেছনে একটা কারন আছে। সেটা হলো এই বাড়িতে কখনো ঝগড়াঝাটি হয়না। উনাদের যৌথপরিবার। উনার দেবর বাশুড় সবাই সবার বউ বাচ্চা নিয়ে এক সাথে থাকে। এতে নাকি সুখ আছে। সুমনা নিজেও এতে সুখ পান। নিজের স্বামীর পরিবার নিয়ে গর্ববোধ করেন। কিন্তু উনার মনে হয় এই বাড়ির নাম শান্তি নীড় না হয়ে আইনজীবী ভিল্লা হওয়া উচিত ছিল। এটা মনে হওয়ারও একটা কারন আছে। সেটা হলো এই বাড়ির সবাই আইনের লোক।

উনার শাশুড় ছিলেন একজন সেনাবাহিনী। উনার স্বামী হচ্ছেন পুলিশ অফিসার। উনি নিজেও পুলিশে চাকরি করতেন। বাচ্চা কাচ্চার জন্য চাকরিটা ছেড়ে দিতে হয়েছে অনেক আগে। উনার দেবর ভাশুর দুজনই পুলিশে চাকরি করেন। উনার বাশুরের ছেলে সি আই ডি পুলিশ। উনার বড় জা একজন উকিল। এক কথায় এই বাড়িতে শুধু আইনজীবী দিয়ে ভরপুর।

উনার দুই মেয়ে আর এক ছেলে। বড় মেয়ে দিশা অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ে। ছোট মেয়ে দিয়া ক্লাস টেনে পড়ে। আর উনার একমাত্র ছেলে দিহান সে এইবার অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ছে।

এতোক্ষন ধরে এই দিহানেরই পথ চেয়ে আছেন তিনি। কাল সন্ধ্যায় দিহান গিয়েছিল বন্ধুদের সাথে দেখা করতে। আজ আরেক সন্ধ্যা হয়ে গেলো এখনো দিহান বাড়ি ফিরেনি। ফোনটাও বন্ধ কল যাচ্ছেনা। সুমনার মনে বার বার কুঁ ডাকছে। উনার ছেলে ঠিক নেই বলে বার বার মনে হচ্ছে। হঠাৎ পিছন থেকে কেউ উনার কাধে হাত দিল। চোখের কোনে জমে থাকা জলটা মুছে পিছন ঘুরে তাকালেন তিনি। উনার স্বামী হানিফ চৌধুরী দাঁড়িয়ে আছেন।

_নামাজ পড়বে না?
_হুম পড়ব তো। [একটু থেমে] বলছিলাম কি। ছেলেটা কই গেল একটু খুঁজে দেখনা। সারাদিন পেরিয়ে গেলো এখনো আসলো না। চারিদিকে শত্রুর ভিড় আমার ছেলেটা নিরাপদে আছে কিনা আল্লাহই জানে।
_তোমরা মায়েদের এই কারণে আমার বিরক্ত লাগে। সব কিছু এত নেগেটিভ মাইন্ডে ভাবো কেন? পজিটিভলি ভাবো। হতে পারে তার ফোনে চার্জ নেই। বন্ধুরা ছাড়ছেনা বলে আসতে পারছে না। তোমার ছেলে কি ছোট রয়েছে? ও এখন যথেষ্ট বড় চিন্তা করনা চলে আসবে।

সুমনা চৌধুরী কিছুই বললেন না শুধু বুক ছিড়ে আসা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। সন্তানের অনুপস্থিতি ভিতরটা কিভাবে খোঁড়ে খোঁড়ে খায় সেটা মা ছাড়া কেউ অনুভব করতে পারেনা। স্বয়ং বাবাও না। চোখ থেকে চশমাটা খুলে হাতে নিয়ে রুমে চলে আসলেন। তিনি।

_____________

_কি গো বারো বেটার বউ? শুধু শুয়ে ঘুমিয়ে দিন পার করলে চলব? কাজ কাম কিছু করন লাগব নাকি? রান্নাবান্না কে করবো? তর বারো জামাই আইসা কইরা দিবো?

সৎ মায়ের মুখে এমন তীক্ষ্ণ কথা শুনেও কিছু বললো না অরিন। বইয়ে মুখ গুজে বসে থাকল। রোজ রোজ এমন কথা শুনতে শুনতে সে অভস্ত্য হয়ে গেছে। তার মা যখন তাকে চার বছরের রেখে মারা যান। তারপর তার বাবা এই মহিলাকে বিয়ে করে নিয়ে আসেন। সেই থেকে এই পর্যন্ত উনি এক দিনও অরিনের সাথে ভালো ব্যবহার করেন নি। ওর বাবা থাকতে কিছুটা কম বকাঝকা করতেন। উনি মারা গেছেন থেকে উনার বকাঝকা অত্যাচার বেড়ে গেছে। ওর বাবা মারা গেছেন তখন সে ক্লাস টেনে পড়ে। উনি মারা গেছেন থেকে তাকে লেখাপড়ার খরচ দেয়না তার সৎ মা।

এই তিন বছর ধরে অরিন নিজের টাকা দিয়ে চলে। টিউশনি করিয়ে কিছু টাকা পায় সেগুলা দিয়ে ওর লেখা পড়া চালায়। মাঝে মাঝে কম দাম দিয়ে কিছু জামা কাপড় কিনে। প্রতিদিন কলেজে যেতে হয় জামা তো লাগবেই। ওর সৎ দুইটা বোন একটা ভাই। তার আর তার সৎ ভাই বোনদের মাঝে আকাশ পাতাল তফাত। ওদের পোশাকে আভিজাত্য আছে। চেহারায় সুখি ভাব আছে। আর সে? ভাবতেই তাচ্ছিল্য হাসলে অরিন।

অরিনের পড়তে ভালো লাগছে না মন খারাপ হয়ে গেছে তার। এখন একমাত্র লুপার সাথে কথা বললে মনটা ভালো হবে। অরিন ফোন হাতে নিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। লুপাকে ফোন দিতে হবে। লুপা তার বেস্টফ্রেন্ড। খুব অভিমানী মেয়েটা। অল্পতেই অভিমান করে বসে। আবার অল্প কিছুতেই তার অভিমান ভেঙে যায়। তিন চারবার কল দেওয়ার পরে রিসিভ করলো লুপা।

লুপা কল রিসিভ করেই ঝাঝালো গলায় বললো”
_ওই কুত্তি তুই আমারে কল দিলি কেন?
_সরি ইয়ার ভুল হয়ে গেছে।
অরিনকে ভ্যাঙ্গ করে লুপা বললো “”সরি ইয়ার ভুল হয়ে গেছে। ফোন রাখ তুই আর কোনোদিন আমাকে ফোন দিবিনা।
_বললাম তো সরি। দেখ তুই শুধু শুধু রাগ করছিস। এটা রাগের কোনো কারন হলো বল?
_অবশ্যই রাগের কারন আছে। আমি প্রতিদিন কলেজ যাওয়ার সময় তর জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করি। আর তুই কলেজ শেষেই ফুড়ুৎ করে উড়াল দিস। বুঝলাম প্রতিদিন তর টিউশনি থাকে তাই আমাকে ফেলে চলে যাস। আজ তো তর টিউশনি ছিলনা। তাহলে আজ কেন আমায় ফেলে আসলি?
_আজ বাসায় অনেক কাজ ছিল ইয়ার।
_তুই থাক তর কাজ নিয়ে আমি রাখলাম।

রাখলাম বলেই ফোন কেটে দিলো লুপা। কিছুক্ষণ পরে আবার অরিনকে কল দিবে দিয়ে সরি বলবে। এটাই এই মেয়েটার সভ্বাব। অরিন রুমে আসতেই দেখলো তার সৎ বোন তানভি টেবিলের উপর পা তুলে পায়ে নেইল পলিশ দিচ্ছে। তানভির পা বার বার বইয়ের সাথে লাগছে। অরিন বড় বড় পা ফেলে দ্রুত হেটে এসে তার বইটা হাতে নিয়ে কিঞ্চিৎ ধমকের স্বরে বললো

“” তানভি তুই কি দিন দিন ছোট হচ্ছিস? বইয়ে যে তর পা লাগছে সেদিকে খেয়াল নেই তর? আর সারা বাড়ির জায়গা থাকতে আমার টেবিলের উপর এসে কেন তোকে নেইল পলিশ লাগাতে হবে?
“” অরিনের মা চেচিয়ে তেড়ে আসলেন “” কার টেবিল? কার টেবিল বলছিস? এটা তর টেবিল? আমার বাবা আমাকে সব মালামাল দিয়ে বিয়ে দিয়েছে। এটা আমার বিয়েতে এসেছে। তর মায়ের মতো ফকিন্নি বেশে আসিনি আমি।
_মা তুলে একটা কথা বলবা না। আমার মা এখানে কি করছে যে আমার মাকে টানছো?
_একদম মুখে মুখে তর্ক করবি না। নয়তো খুব খারাপ হয়ে যাবে।
_করব তর্ক। কি করবা? কি করবা তুমি? “”” বলতে না বলতেই অরিনকে টাস টাস করে থাপ্পড় দিতে শুরু করলেন জহুরা (অরিনের সৎ মা)। একটু আগে যে অরিন রান্না করতে যায়নি সেই রাগটা এই সুযোগে ঝেড়ে দিচ্ছেন তিনি। অরিনের চুলে মুঠি ধরে বললেন “বলছিলাম না তর্ক করবি না। খেয়েদেয়ে যে বেঁচে আছিস এই শুকরিয়া আদায় কর। ” অরিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে মেয়েকে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন তিনি। ধাক্কা খেয়ে নিচে পরে যায় অরিন। কপাল টা গিয়ে খাটের সাথে বারি খায়। কপাল থেকে হাত এনে সামনে তুলে ধরতেই দেখে পুরো হাত রক্তে লাল হয়ে আছে।
#ভালোবাসি_প্রিয়
#পর্ব_৩
#সুলতানা_সিমা

রক্ত দেখে কিঞ্চিত কেঁপে ওঠে অরিন। ওড়না দিয়ে তারাতাড়ি রক্ত মুছে নেয়। মুছার সাথে সাথে আবার কপাল লাল হয়ে যাচ্ছে রক্তে। কিছুতেই রক্ত পরা বন্ধ হচ্ছেনা। দৌড়ে গিয়ে তার পুরাতন একটা ওড়না খুঁজে বের করে ছিড়ে মাথা বাধে। গায়ের ওড়নাটা ধুয়ে নেয় নয়তো রক্তের দাগ বসে যাবে। অরিনের খুব খারাপ লাগছে মাথা ফেটে যাওয়ায়। দুদিন পরে সে লুপার বার্থডেতে তাদের বাসায় যাবে। এই প্রথম অরিন রাজি হয়েছিল যাওয়ার জন্য,আর এরই মাঝে মাথা ফাটিয়ে সে বসে আছে। লুপাকে নাও বলতে পারবেনা নয়তো তার সব চুল ছিড়ে হাতে নিয়ে নিবে। দুইদিনে তো কাটা জায়গা ভালও হবেনা। ডাক্তারের কাছে গেলে অবশ্য তারাতাড়ি ভালো হয়ে যেতো। কিন্তু হাতে মাত্র পাঁচ’শ টাকা আছে। এই পাঁচ’শ টাকা এখন খরচ করে ফেললে লুপাকে কি দিয়ে গিফট দিবে সে? মাথা খুব ব্যথা করছে কাটা জায়গায় খুব জ্বালাপোড়া করছে। খাটে বসে কাঁদতে লাগলো অরিন। কেন সেই ছোট থেকে তাকে এতো অত্যাচার করেন উনি? উনার কি একটুও মায়া হয়না তার জন্য? আল্লাহরও কি মায়া হয়না? ছোট বেলায় মাকে হারালো বড় হয়ে বাবাকে। বাবা যদি থাকতো অন্তত একবার কান্নারত মুখটার দিকে তো তাকাত। কিন্তু ওরা? ওরা মা মেয়ে মিলে তো মারতে মারতে মেরে ফেললেও একবার মুখের দিকে তাকায় না।
_________________

দিহান বাসায় ফিরলো রাত ৮টায়। ফিরতেই পুরো বাসায় হইচই শুরু হয়ে গেছে। তার মাথায় ব্যান্ডেজ দেখে সবাই অস্থির হয়ে গেছে। সবাই তাকে ঘিরে ধরেছে। কি হইছিলো? কিভাবে ফাটছে? কই ছিল কাল? ফিরতে দেরি হল কেন? একের পর এক প্রশ্ন করতে করতে তার অবস্থা কাহিল করে দিচ্ছে। তার মা তো একেবারে কান্না জুড়ে দেন। দিহানের বিরক্ত লাগছে সবকিছু। বিরক্ত হয়ে চেচিয়ে উঠে “” স্টপ””। সাথে সাথে সবাই স্তব্ধ হয়ে যায় দিহান চেচিয়ে বলে “” আমি একটা কথা বুঝতে পারি না তোমরা সব কিছুতে এতো হাইপার হও কেন? কমন সেন্স বলতে কিছু নেই নাকি?আমি যখন এসেছি আমি তো এমনিতেই বলবো কই ছিলাম না ছিলাম। এভাবে প্রশ্ন করতে করতে আমাকে পাগল করে দিচ্ছ৷ আমিও তো মানুষ তাইনা যখন যার যা কিছু মন চায় তখন সে সেটা করে উদাও হয়ে যায়। ব**র জীবন আর ভাল্লাগেনা।”” দিহান রাগে উপরে চলে যায়। সবাই হতভম্ব হয়ে গেলো দিহানের বিহেভে। সে কখনোই এভাবে রাগে না। আজ এমন কি হলো যে এভাবে রাগল? ভেবে পায়না তারা।

নিজের রুমে গিয়ে টাস করে দরজা লাগিয়ে খাটে বসে দিহান। কাল ওই মেয়েটা বলা নেই কওয়া নেই হঠাৎ করেই উদাও হয়ে গেলো। দিহান এখনো ক্লিয়ারলি বুঝতে পারছেনা তার সাথে হচ্ছে টা কি। তাকে বোকা বানিয়ে একটা মেয়ে বিয়ে করে চলে গেলো? তাও এমন ক্ষেত মার্কা একটা মেয়ে? কাবিননামার প্রয়োজনে বিয়ে করছে শুনে দিহান ৪৪০ ভোল্টের শকড খেয়ে মস্তিষ্ক শুন্য হয়ে গেছিলো। হুস আসতেই দেখলো মেয়েটা নাই। মেয়েটাকে খুঁজতে খুঁজতে কাল সারারাত চলে গেছে। দিনে তার এক বন্ধুর বাসায় ঘুমিয়ে ছিলো। সারারাত না ঘুমানোর কারণে ঘুম ভাংতে অনেক সময় লেগেছে। দিহান এখন এমন একটা অবস্থার মাঝে আছে কাউকে বলতেও পারছে না আবার নিজেও কিছু করতে পারছে না। তার বন্ধু সাওনকে বলছিল,সাওন এসব শুনে তাকে পাগল বলেছে। পাগল তো যে কেউই বলবে৷ তন্দ্রার সাথে কথা বলার জন্য মনটা ছটফট করছে। দিহান রুহানের রুমে গেলো, রুহান তার ছোট চাচ্চুর ছেলে এবার ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ছে। দিহান রুহানের রুমে গিয়ে দেখলো রুহান বসে বসে ফোন টিপছে। দিহান ধমকের স্বরে বললো “” ওই মোবাইল দে তো।”” দিহানের গলা শুনে কিঞ্চিত কেঁপে ওঠে রুহান। ভিতু চোখে একবার দিহানের দিকে একবার ফোনের দিকে তাকালো। দিহান ছুঁ মেরে ফোনটা নিয়ে বেরিয়ে আসলো। রুহান একটা মেয়ের সাথে চ্যাট করছিল। দিহান আপাতত এসবে পাত্তা দিলো না। তন্দ্রার নাম্বারে ডায়েল করল। দুইবার রিং হওয়ার পরে তিনবারের বেলায় ফোন রিসিভ করল তন্দ্রা।

_ হ্যালো কে বলছেন?
_তন্দ্রা আমি দিহান।
_ দিহান তুমি? কই ছিলা তুমি? জানো কত কল দিয়েছি তোমায়? তোমার ফোন বন্ধ দেখে আমার কলিজা শুকিয়ে গেছে। আমি তো ভেবেই নিয়েছি সকালে তোমার বাসায় যাব।
_ সরি! আমার ফোন ভেঙে গেছে। আর তোমাকে আসতে হবে না দুইদিন পরে লুপার বার্থডে তখন আইসো।
_ ওকে।

অনেকক্ষণ হলো তন্দ্রার সাথে দিহান কথা বলছে। এরই মাঝে রুহান বেশ কয়েকবার দরজার পাশ দিয়ে হেটে গেছে আড়চোখে বার বার দিহানের রুমের দিকে তাকিয়েছে। দিহান বুঝতে পারছে রুহানের এই ছটফট করার কারণ এই মোবাইল ফোন। দিহান ফোন টা রেখে নাম্বার কেটে তার বোন দিয়াকে ডাক দেয়। দিয়া এসে ভাইয়ের পাশে এসে দাঁড়ালো। দিহান দিয়াকে বললো ”
_ লেখাপড়া কেমন চলছে তোর?
_ভালোই চলছে।
_ আম্মুকে বলে দিস লুপার বার্থডে তে তন্দ্রা আসবে।
_আচ্ছা।
_ এই ফোনটা রুহানের কাছে দিয়ে যাবি।
_ আচ্ছা।

দিয়া চলে যাওয়ার পরে দিহান চিৎ হয়ে খাটের মাঝামাঝি শুয়ে পরলো। তার মনের অস্থিরতা এখনো কমেনি। ভেবেছিল তন্দ্রার সাথে কথা বললে মনটা শান্ত হবে। কিন্তু না তার মন এখনো অস্থির। বার বার ওই মেয়েটার কথা মনে পড়ছে। আকস্মিক ভাবে তার বিয়ে হয়ে গেলো আবার বিয়ের পরে বউ কাবিননামা নিয়ে উদাও। এটা অস্থিরতার জন্য যথেষ্ট কারণ।

কিছুক্ষণ পরে হুড়মুড়িয়ে রুমে ঢুকলো দিশা,লুপা,ইশি তিনজন এসে তাকে ঘিরে বসে। ইশি তার বড় চাচ্চুর মেয়ে আর লুপা তার ছোট চাচ্চুর মেয়ে।
দিশা বলে,,,

_ভাইয়া তুই তন্দ্রা আপুকে আসতে বলছিস? জানিস বাবা কি করবে? তোদের বিয়েটা যে মেনে নিছে এটাই অনেক বুঝলি? এখন বিয়ের আগে বাড়িতে এন ঝামেলা করতে চাস?
_বিয়ের আগে হবে কেন আমি তো বিয়ে করে ফেলছি।
“ইশি কপালে চোখ তুলে বললো”
_কিইইইইই তুই বিয়ে করে ফেলছিস? দেখেছিস তোরা? আমি আগেই বলেছিলাম এই তন্দ্রা মেয়েটাকে আমার বেশি সুবিধের মনে হয়না।
_ওই চুপ কর তুই সব সময় শুধু তন্দ্রাকে নিয়ে বাজে কমেন্ট করবি না। আমি তোরে বলছি আমি তন্দ্রাকে বিয়ে করছি?
_তোরা ফাজলামো করছিস আর আমার টেনশন হচ্ছে আব্বু জানলে কি যে হবে। [দিশা]
_তোর এতো টেনশন কিসের শুনি? আর শুন কিছুদিন পরে তন্দ্রা এ বাড়ির বউ হবে তাই তন্দ্রার পুরো হক আছে এই বাড়িতে আসার।
ওদের কথার মাঝে লুপা বললো ”
_আমি অতশত বুঝিনা বাবা। আমি আমার বেস্টুকে কত কষ্ট করে আমার বার্থডেতে আসার জন্য রাজি করিয়েছি। এখন যদি তোমাদের তন্দ্রা চন্দ্রার কারণে আমার বার্থডে পার্টি দিতে মেজো আব্বু না বলে দেয় তাহলে কিন্তু আমি সবগুলার চুলে আগুন ধরিয়ে দিবো।
_তুই খোটা দিলি? তর বার্থডে বলে আমায় খোটা দিলি? ঠিক আছে আমি কালই একটা পার্টি দিচ্ছি।
_তুই কি উপলক্ষে পার্টি দিবি? [ইশি]
_আমার বিয়ের খুশিতে। (কিঞ্চিত রেগে বললো দিহান)
_আচ্ছা ওই তন্দ্রা বুচিকে বিয়ে করার জন্য এতো খুশি?
_Don’t call তন্দ্রা বুচি she is pretty!
_ওরে ইশি লুপা আমাকে কেউ একটু নীল রংয়ের মদ দে বইন খেয়ে মাতাল হই। [দিশা]
বোনের কথায় দিহান কিঞ্চিত রাগি স্বরে বললো”
_দেখ তোরা কিন্তু আমাকে নিয়ে মজা করছিস। আমি এমনিতেই টেনশনে আছি।
_তর আবার কিসের টেনশন? [দিশা]
_বউয়ের টেনশন। টুপ করে যে আকাশ থেকে পড়ে আমাকে বিয়ে করে ফুড়ুৎ করে উড়ে গেলো তার টেনশন।

দিহানের এমন কথায় হো হো করে হেসে উঠে ইশি দিশা ও লুপা। কথাটা সত্যি হলেও কেউ কথাটা সিরিয়াসলি নেয়নি।

চলবে…..।
চলবে……..।
রিচেক করিনি ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here