ভালোবাসি প্রিয় পর্ব ২৩+২৪

#ভালোবাসি_প্রিয়
#পর্ব_২৩
#সুলতানা_সিমা

শাড়ী পরিহিতা সে অরিনের দিকে নাইফটি ছুঁড়ে মারল। অরিন তৎক্ষনাৎ সরে গেল নাইফ গিয়ে দেয়ালে লাগল। নাইফ টা এত ধারালো যে দেয়ালে গেথে গেছে। অরিন ভয়ে থরথর করে কাঁপতে লাগল। জানালা দিয়ে আসা চাঁদের মৃদু আলোতে দেখল সেই মাক্স পরা নারীকে। যে তাকে এই পর্যন্ত্য নিয়ে এসেছে। অরিন বুঝতে পারছে না কী করেছে সে কেন হঠাৎ তাকে এভাবে মারতে এসেছে। অরিন ভয়ে পা পিছাতে পিছাতে কাঁপা গলায় বলল”

_ক্ক ক্ক কি ক হ হ হয়েছে।” দেয়াল থেকে নাইফ তুলে অরিনের বুক বরাবর মারতে আসলো। অরিন সরে গেল খুপটা গিয়ে ড্রেসিং টেবিলের উপর পড়ল। একটুর জন্য অরিনের লেগেই যেত। আবার সে অরিনের দিকে তেড়ে গেল। অরিন দৌড়ে দরজার সামনে যায় ছিটকিনি খুলে ফেলে দরজা খুলার আগেই অরিনের চুলের মুঠি ধরে অরিনকে ঘুরিয়ে অরিনের পেট বরাবর মারে অরিন দু হাত দিয়ে ওর হাত ধরে আটকে ফেলে। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে অরিন তাকে একটা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে যাবে তখনই অরিনের দিকে নাইফ ছুঁড়ে মারল। নাইফ অরিনের হাতে লেগে গিয়ে ছিটকে পড়ে ফ্লোরে। অরিন আহহহহহ বলে আর্তনাদ করে ওঠে। ও এসে অরিনের গলা টিপে ধরে অরিন গলা ছাড়াতে ছটফট করতে লাগে। অরিনের চোখ থেকে দুফোঁটা জল গড়িয়ে পরল। শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে এমন সময় দরজা খুলে এসে লারা ঢুকে। লারাকে দেখে মাক্স পড়া মানুষটি অরিনকে ছেড়ে দৌড়ে পালাতে চায় লারা খপ করে হাত ধরে ফেলে। অরিন সাহস পেয়ে মাক্স খুলতে যায়। কিন্তু ওই মাক্স পড়া সে তাদের ধাক্কা দিয়ে ফেলে দৌড়ে বেরিয়ে যায়। ধাক্কা খেয়ে অরিন গিয়ে খাটের সাথে বাড়ি খায়। লারা ছিটকে পড়ে ফ্লোরে। লারা ওঠে দৌড় দেয় ওর পিছু দরজার ছিটকিনির সাথে শাড়ির আঁচল লেগে যায়। লারা দুইতিন টান দেয় কিন্তু খুলেনা পড়ে প্যাচ ছাড়িয়ে বেরিয়ে আসে। ততক্ষণে মাক্স পরিহিতা উধাও হয়ে যায়। লারা পরিবারের সবাইকে খুঁজতে লাগে। সবাই যে যার রুমে আছে সবার রুমের দরজা বন্ধ লারা অরিনের রুমে দৌড়ে আসে। অরিন এখনো ফ্লোরে পড়ে আছে চোখ মুখ খিঁচে নিজেকে শক্ত করতে চেষ্টা করছে। লারা অরিনকে তুলে এনে খাটে বসাল। তারপর নিজের রুমে এসে ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে অরিনের রুমে গেল তারপর তার মাথায় হাতে ব্যান্ডেজ করে দিল। অরিন চুপচাপ বসে আছে লারাকে সে এতটা ভালো বলে মনে করেনি আসলে লারা অনেক ভালো একটি মেয়ে নাহলে কী এভাবে তাকে হেল্প করত?

দুজন অনেকক্ষণ চুপচাপ বসে থাকল। নিরবতা ভেঙে লারা বলে ওঠল”
_তাহলে তুমিও তার শিকার?” অরিন অবাক হয়ে তাকালো। লারা কিঞ্চিৎ হেসে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল”
_যখন প্রথম তোমাদের বিয়ের কথা শুনলাম তখনই বুঝে গেছিলাম। যে শিকারী আমাকে শিকার করেছে সে তোমাকেও শিকার করেছে। নয়তো তোমার মতো একটা সহজ সরল বোকা মেয়ে কেন কাউকে এভাবে বিয়ে করবে? সবাই ভাবছে তুমি তাদের সম্পত্তি দেখে লোভ সামলাতে পারনি তাই এভাবে বিয়ে করেছ। কেন জানি আমি এটা ভাবতে পারিনি আমার বার বার মনে হয়েছিল তুমিও এই মাক্স পরিহিতার শিকার।

_আপনিও?
_হুম। আমার বাবা আমার জীবন আমার সব কিছু ওই ব্ল্যাকমেইলারের হাতে। তাইতো অর্ধনগ্ন অবস্থায় একটা পর পুরুষের সামনে শুয়ে থাকতেও দ্বিধা হয়নি আমার। [এইটুকু বলে গলা ধরে আসে লারার] খুব হাসি খুশিতে জীবন চলছিল আমার। হঠাৎ করে একদিন আমার নাম্বারে একটা কল আসে আমাকে বলে আমি যদি তার কথা মতো কাজ করি আমাকে অনেক টাকা দিবে আমি না বলে দেই। কিন্তু ও থামেনি এভাবে কল আসতেই থাকে। একদিন বলে আমার বাবা নাকি তার কাছে আছে আমি বললাম বাবা তার ঘরেই আছে সে বিদ্রুপের হাসি দিয়ে বলে আগে তো দেখে নে কোথায় তর বাবা? আমি দেখি গিয়ে সত্যি আমার বাবা নেই। আমি চিৎকার দিয়ে কাঁদি আমার বাবাকে ডেকে কিন্তু আমার বাবা আসেনা। আমি মামলা করতে চাই ও বলে মামলা করলে নাকি আমার বাবাকে মেরে দিবে। আমাকে এতিম করে দিবে।” বলেই ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে লারা। অরিনের খুব কষ্ট হচ্ছে। সে জানে এই কষ্ট টা কেমন একই কষ্ট তো তাকেও খুঁড়ে খুঁড়ে খাচ্ছে। লারা চোখের পানি মুছে বলল”

_তুমি কেন এসব সয্য করছো?” অরিন তাচ্ছিল্য হেসে বলল”
_হয়তো খুব বোকা তাই।” লারা অরিনের হাতের উপর হাত রেখে বলল”
_আমি তোমার মতোই অসহায়। আমরা দুজন একি পথের সাথী। একজনের শিকার আমরা। লড়তে হলে আমাদের দুজনকে এক হয়ে লড়তে হবে। তাই বন্ধু ভেবে আমায় সব কিছু বল প্লিজ।
_বললাম না বোকা আমি।
_উঁহু তুমি বোকা নও। তুমি অনেক বুদ্ধিমতী। [একটু থেমে] আচ্ছা তোমাকে সে মারতে চায় কেন?
_প্রথমে শুধু বলছিল বিয়ে করতে। এতকিছু করতে হবে আমি জানতাম না নয়তো নিজেকেই বলি দিয়ে দিতাম। তারপর বলল আমি যেন বউয়ের দাবী নিয়ে আসি। না বলেছিলাম বলে আমাকে অনেক টর্চার করে আমি সয্য করে নেই। কিন্তু সে আমায় হুমকি দেয় আমি না আসলে সে নাকি দিহানকে মেরে দিবে। দিহান মানুষটাকে মনের অজান্তেই ভালোবেসে ফেলেছি। উনাকে নিজের স্বামী বলে মানি। হোক না সে ক্ষনিকের জন্য তবুও তো স্বামী সে তাই চাইনি উনার ক্ষতি হোক। কাজ ছিল শুধু এই বাড়িতে এসে আমি এই বাড়ির লোকদের অপমান করাব তারপর চলে যাব। কিন্তু আমি চলে যাইনি। তাই আমাকে মারতে চায় কেন চায় তা জানিনা।
_তুমি কখনো দেখেছো তাকে?
_উঁহু সব সময় মাক্স পড়ে বা বোরকা পড়ে এসেছে আমার সামনে। কখনো মুখে কিছু বলেনি যা বলেছে সব কাগজে লেখে বা মেসেজ দিয়ে।
_আমার মনে হয় এইসব কিছু যে করছে এবং করাচ্ছে সে এবাড়ির ও কেউ।
_হুম আমারও তাই মনে হয়। কিন্তু কে সে? আর কেনই বা এমন করাচ্ছে? আমার কাউকেই সন্দেহ হয়না।
_আমার তো অনেকজন কে সন্দেহ হচ্ছে। আপাতত আমি কালপ্রিটকে নয়। জানতে চাই মিহান কার সন্তান ছিল।
_মিহান?
_হুম মিহান। এই বাড়ির ছেলে ছিল সে। তার সাথে আমার দু বছরের সম্পর্ক ছিল। সে নাকি তার মায়ের হাতে খুন হয়েছিল।
_একটা মা কেন তার সন্তান কে মারবে?
_জানিনা আমি জানতে চাইও না। এই বাড়িতে এসেছিলাম আমি এ বাড়ির সম্মান নষ্ট করতে কিন্তু যাব আমি একটা খুন করে। আর সেই খুনটা হবে মিহানের মায়ের।” লারার কথায় অরিন আঁতকে উঠল। লারাকে এখন ভয়ানক লাগছে দেখতে। চোখ দিয়ে যেন আগুন বের হচ্ছে। অরিন বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে এসব মাঝে মাঝে অরিনের মনে হয় সে পাগল হয়ে যাবে। এদিকে সে আছে কে এসব করছে সেই চিন্তায় আর লারা কিনা কাউকে খুন করার চিন্তা করছে? চোখটা মুছে লারা তার ঘরে চলে গেল। অরিনের কানে শুধু বাজতেছে “এই বাড়িতে এসেছিলাম আমি এ বাড়ির সম্মান নষ্ট করতে কিন্তু যাব আমি একটা খুন করে। আর সেই খুনটা হবে মিহানের মায়ের।” অরিনের ভয় হচ্ছে কী হবে আগামীতে সেটা ভেবে তার দম বন্ধ হয়ে আসছে।

___________________

দিহান রাত ১০টায় বাসায় আসল। সন্ধ্যার দিকে তন্দ্রার মা ফোন দিয়ে বলেন তন্দ্রা নাকি সুইসাইড করতে যাচ্ছিল। শুনে দিহানের হসপিটাল যায়। সেখানে যাওয়ার পরে তন্দ্রার মা দিহানের হাত ধরে বিলাপ করে কান্না করে বলেন। সে যেন তন্দ্রাকে বাঁচায়। তন্দ্রা নাকি দিহানকে ছাড়া মরে যাবে। তন্দ্রার প্রতি দিহানের কোনো কালেই কোনো টান ছিল না। যেটুকু ছিল সেটা শেষ হয়ে গেছে অরিনের সাথে মা মেয়ের এমন ব্যবহার দেখে। দিহান উনাকে কিছু বলেনি শুধু শান্তনা দিয়ে বলেছে কাঁদবেন না সব ঠিক হয়ে যাবে। উনি বার বার দিহানকে মিনতি করে বলেছেন উনার মেয়েকে যেন দিহান ছেড়ে না দেয়। দিহান কী করবে বুঝতে পারছেনা অরিন মেয়েটা যে অনেক অসহায় এটা তার জানা হয়ে গেছে। আর তাছাড়া অরিনের প্রতি তার আলাদা একটা টান আছে অরিনকে ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে পারেনা সে। অরিনের জন্য তাদের পরিবারের সম্মান নষ্ট হয়েছে জেনেও সে অরিনকে অপরাধী ভাবতে পারেনা। নীল হয়তো ঠিকই বলেছে সে অরিনকে ভালোবাসে।

দিহান ফ্রেশ হয়ে আগে অরিনের রুমের দিকে যায়। দরজা নক করে অরিন এসে দরজা খুলে দেয়। অরিনের মাথা হাতে ব্যান্ডেজ দেখে দিহান হন্তদন্ত হয়ে বলল”

_অরিন কী হয়েছে তোমার? তোমার মাথায় হাতে ব্যান্ডেজ কেন? তুমি ঠিক আছো তো?” দিহানের এসব দেখে অরিন কিঞ্চিৎ হেসে উঠে তারপর বলে”
_আমি ঠিক আছি।” দিহান কিঞ্চিৎ ধমকের স্বরে বলে”
_কতটা ঠিক আছো সেটা তো দেখতে পাচ্ছি। বল কীভাবে হল এগুলা?
_আসলে পড়ে গিয়েছিলাম।” দিহান অরিনের দিকে তাকালো। অরিন যে মিথ্যে বলছে সেটা দিহানের বিশ্বাস। দিহান অরিনের দুগাল তার দুহাতের মুঠোয় ভরে নিল। অরিনের মুখটা তুলে একদম তার কাছাকাছি গিয়ে চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করল”

_কী লুকাচ্ছ অরিন? কেন লুকাচ্ছ? তুমি ভালো নেই অরিন আমি জানি। বল কী হয়েছে? কেন চুপ করে থাকো বল?
_যদি বলি আপনাকে ভালোবাসি তাই?” দিহান অরিনকে ছেড়ে ছিটকে সরে গেল। অরিনের মুখে এই কথাটা শুনলে তার অন্য রকম ফিল হয়। কেমন যেন বুকে ধুকধুক শব্দ করে। দিহান গলাটা একটু ঝেড়ে বলল”

_উহুম,,,দেখ অরিন কথা ঘুরাবা না আমি যা বলছি তার উত্তর দাও।
_কিছু হয়নি বললাম তো পড়ে গেছিলাম।” দিহান কপাল কুঁচকে কী যেন ভাবল তারপর বলল”
_খাইছো?
_হুম। লারা আপু ভাত দিয়ে গেছিল।
_ওকে।” দিহান চলে গেল। ইচ্ছে করেই অরিনকে একা ছেড়ে দিচ্ছে। যদিও ভয় লাগছে অরিনের ক্ষতি হয়ে যায় কিনা এটা ভেবে তবুও একা ছাড়তে হচ্ছে। খেয়েদেয়ে রুমে চলে গেল দিহান। আজ ঘুমাবে না আজ জেগে থাকবে অরিনের রুমে কে যায় সেটাই সে দেখবে। রাত তিনটা পর্যন্ত দিহান জেগে থাকে। অরিনের রুম থেকে একটু দূরে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকে সে। রাত ৩:৩০ তখন একটা ছায়া এগিয়ে আসতে দেখল। দিহান চুপটি করে দাঁড়িয়ে থাকল। আজ সে ধরবেই কে এই কালপ্রিট সেটা সে জানতে চায়। দিহান আগ্রহী চোখে তাকিয়ে তাকলো। কিন্তু যখন সে ছায়ার মানুষটি দেখল তখন সে ৪৪০ ভোল্টের শকড খেল। এ কাকে দেখছে সে? এ তো,,,,
#ভালোবাসি_প্রিয়
#পর্ব_২৪
#সুলতানা_সিমা

_আম্মু? তারমানে আম্মু কী সেদিন অরিনকে টর্চার করেছিল আর আজও? কিন্তু কেন?” দিহানের মা অরিনের রুমে ঢুকলেন দিহান দৌড়ে গেল অরিনের রুমের দিকে। দিহান হুড়মুড়িয়ে রুমে ঢুকতেই দিহানের মা ভূমিকম্প হওয়ার মতো কেঁপে ওঠলেন। দিহানকে দেখে যে তিনি ভয় পেয়েছেন তা উনার চেহারা দেখে বুঝা যাচ্ছে। উনার ঘাবড়ে যাওয়া দেখে দিহানের সন্দেহের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। খাটের দিকে তাকিয়ে দেখল অরিন ঘুমিয়ে আছে। মাথায় ব্যান্ডেজ করা ঘুমন্ত অরিনকে একদম নিস্পাপ লাগছে। দিহান তার মায়ের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকাল তারপর বলল”

_এই রুমে কেন এসেছো?
_আগে বল তুই কেন এখানে?
_প্রশ্নটা আগে আমি করেছি আম্মু।
_আমি ওকে দেখতে এসেছি।
_যে মেয়েকে তুমি দুচোখে দেখতে পারনা তাকে দেখতে তুমি রাত তিনটায় দেখতে তার রুমে এসেছো?
_হ্যাঁ এসেছি। কারণ সন্ধ্যায় যখন সে আমার রুম মুছতে গেছিলো তখন তাকে অসুস্থ লাগছিল। আমার বার বার মনে হচ্ছে একবার দেখে আসি তাই দেখতে আসছি। এখানে তুই কেন,,,,”দিহান তার মায়ের পুরো কথাটা শুনার আগে চেঁচিয়ে বলে ওঠে”
_Just shut up আম্মু। তুমি অরিনকে দিয়ে রুম মুছিয়েছ? বাসায় সার্ভেন্ট ছিলনা? নাকি মনের ক্ষোভ মিটিয়েছ ওকে কাজ করিয়ে?

দিহানের চেঁচামেচিতে ঘুম ভেঙে যায় অরিনের। চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে দিহান আর তার মা দাঁড়িয়ে আছেন অরিন লাফ দিয়ে ওঠে বসে। টেবিলের উপর রাখা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত চারটা ছুঁইছুঁই। অরিনের মনে অজানা ভয়। এতরাতে তার রুমে এদের দেখে সে ঘাবড়ে যায়। অরিন কিঞ্চিৎ কাঁপা গলায় দিহানকে জিজ্ঞেস করলো”

_ক্কী কী হ হয়েছে?
_shut up you idiot! একটা কথা বলবানা তুমি। বলছিলাম না চুপচাপ রুমে বসে থাকবে।
_রুমে কেন থাকবে? ওকে কী এখানে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে খাওয়ানোর জন্য রাখা হইছে?” দিহান আগের থেকে গলা কিঞ্চিৎ গলা উঁচিয়ে বলে”
_আপাতত তুমি নিজের রুমে যাও। ও এখানে কীভাবে থাকবে না থাকবে সব কিছু আমার কথাতে হবে।
_এসব কী বলছেন আপনি?
_তুমি চুপ করো। কী হলো যাওনা কেন?
_বাহ এই রাস্তার মেয়ের জন্য তুই আমার সাথে বড়ো গলায় কথা বলছিস?
_হ্যাঁ বলছি। ও রাস্তার মেয়ে হোক আর যাই হোক ও আমার বিয়ে করা স্ত্রী। “অরিন মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিল দিহানের কথাটা শুনে মাথা তুলে তাকাল। মনে খুশির ঢেউ ওঠল। দিহান তাকে নিজের স্ত্রী বলে দাবী করছে? অরিনের চোখটা ছলছল হয়ে এল। সুমনা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বললেন”

_স্ত্রী? কেমন স্ত্রী? রাস্তা ঘাটে যাকে তাকে বলে বসে আমায় বিয়ে করবে কিনা? এমন প্রস্টিটিউট মেয়েকে স্ত্রী বলে দাবী করতে লজ্জা করেনা?” সুমনা চৌধুরীর কথা শুনে দিহানের আরও রাগ বেড়ে যায়। এই কথাটা যদি তার মা না বলে অন্যকেউ বলতো তাহলে সে তার মাথা ফাটিয়ে দিত। রাগে দিহান ড্রেসিং টেবিলের সামনের টুলটা তোলে জোরে আছাড় মারল। টুল ফ্লোরে পড়ার শব্দে অরিন কেঁপে ওঠে। সুমনা রক্তিম চোখে তাকিয়ে আছেন দিহানের দিকে। দিহান দুদিনের একটা মেয়ের জন্য উনার সাথে এমন ব্যবহার করছে? রাগে উনার ইচ্ছে করছে দিহানের গালে টাসিয়ে থাপ্পড় দিতে। অরিন মাথা নিচু করে ঠোঁট কামড়ে কেঁদে উঠে । দিহান অরিনের কান্না দেখে তার বুকটা ছেৎ করে ওঠল। এভাবে অরিনকে ভুল বুঝে সবকিছু বলে দেওয়া তার ঠিক হয়নি। দিহান তার মাকে বলল”
_ওগুলা মিথ্যে ছিল। রাগের মাথায় আমি বানিয়ে বলছিলাম।
_সেটা যাইহোক আমি কোনোদিন এই মেয়েকে এই বাড়ির বউ হিসাবে মেনে নিবনা।” দিহানের মা কথাটা বলে কটকট শব্দ করে চলে গেলেন। দিহানের ইচ্ছে হচ্ছে নিজের মাথার সব চুল ছিড়ে ফেলতে কেন যে শুধু শুধু এতো কিছু সবাইকে বলতে গেছিল। অরিন কেঁদেই যাচ্ছে দিহান অরিনের চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে”

_সরি অরিন আম্মুর হয়ে আমি ক্ষমা চাইছি আম্মুর কথায় আঘাত পেয়না প্লিজ।
_উনার সাথে এমন আচরণ করা ঠিক হয়নি আপনার। উনি আপনার মা হন।
_হুম। তুমি ঘুমাও আর দরজা বন্ধ করে ঘুমাবে।” দিহান চলে যাওয়া ধরে কিন্তু দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে কী যেন ভাবে তারপর দরজা বন্ধ করে আবার ফিরে আসে। অরিন কিছুটা অবাক হয়ে বলে”

_কী ব্যাপার দরজা বন্ধ করে আসলেন যে?” দিহান একটা শয়তানি হাসি দিয়ে অরিনের দিকে পা বারিয়ে তার দিকে এগুতে এগুতে বলল”
_ভাবছি বিয়ে হয়েছে অনেকদিন হয়ে গেল এবার বাসরটা সেড়ে নেওয়া যাক।” অরিন আঁতকে উঠল। ভয়ে নাকি অন্য কোনো কারণে তার হার্ট বিট বাড়তে লাগল। অরিন শুকনো একটা ঢোক গিলে পিছাতে লাগল দিহান তার দিকে এগুতে থাকল। পিছাতে পিছাতে অরিন দেয়ালে সাথে আটকে গেল। দিহান অরিনের দুপাশে হাত দিয়ে অরিনকে তার হাতের বেরিতে আটকে দিল। তারপর মৃদু স্বরে বলল”

_মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত। যাও আরও পিছাও।

অরিন দিহানের দিকে চোখ তুলে থাকাল। দিহান নেশা ভরা চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। অরিনের চোখ আটকে গেল দিহানের চোখে। দিহানের চোখ অনেক সুন্দর এই চোখ গুলা যেন তাকে অনেক কিছু বলছে শুধু সে বুঝতে পারছেনা। দিহানের নরম নিঃশ্বাস অরিনের নাক মুখ ছুঁয়ে যাচ্ছে। দিহান চোখ জোড়া নেমে আসল অরিনের ঠোঁটের দিকে। অরিনের ঠোঁট কিঞ্চিৎ নড়ে ওঠল দিহানের খুব লোভ হলো একবার নিজের দখলে এই ঠোঁট জোড়া নিতে তীব্র ইচ্ছা জাগলো। দিহান অরিনের ঠোঁটের দিকে দৃষ্টি রেখে তার ঠোঁট এগিয়ে নিল অরিন চোখ বন্ধ করে ফেলল। তার দম যেন আটকে আসছে। দিহানের ছোঁয়া পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে থাকে সে। যেমনই হোক দিহান তার স্বামী তাও সে দিহানকে ভালোবাসে দিহানের প্রতি তার এমন ইচ্ছে থাকা অস্বাভাবিক কিছু না। কতবার যে কল্পনায় দিহানের ঠোঁট জোড়া ছুঁয়েছে সে সেটা তার নিজেরও হিসাব নাই। আজ সত্যি সত্যি সে দিহানের ঠোঁটে ডুব দিবে হার্ট বিট তো তার বাড়বেই। কিন্তু এতক্ষণ ধরে দিহান ছুঁয়ে দিচ্ছেনা কেন? দিহান কী তার দিকে তাকিয়ে আছে নাকি অন্য কিছু। অরিন এসব ভাবছিল দিহান তখন গলা ঝেড়ে কেশে ওঠল। অরিন আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকাল। এ কী দেখছে সে দিহান খাটে বসে একটা বই নিয়ে ওটা উল্টে পাল্টে দেখছে। অরিনের কপাল কুঁচকে গেল। রাগ হচ্ছে তার,এত নিরামিষ কেন এই হনুমান?

_আমি কিন্তু অতটা খারাপ ছেলে না।” অরিন কিঞ্চিৎ লজ্জা পেল। দিহান আবার বলল”
_আচ্ছা বাদ দাও ঘুমিয়ে পড়ো। আমি সোফাতে ঘুমাব।
_ওমা এখানে কেমনে? এটা তো সিংগেল সোফা।
_তারমানে তুমি আমাকে খাটে ঘুমাতে বলছো।
_তা কেন বলব আপনার রুমে যান।
_জ্বিইইই নায়ায়ায়া। আপনার মতো গাধিকে একা রেখে যাচ্ছিনা। আমি সোফাতেই থাকতে পারবো।
_কিন্তু,,,
_চুপচাপ ঘুমাও নয়ত টুলের মতো আছাড় দিয়ে ফেলব।” অরিন আর কথা বাড়াল না চুপচাপ শুয়ে পরল। দিহানও সোফাতে বসে হিসাব মিলাতে লাগল যেদিন অরিনের গলায় মারের দাগ ছিল ওই সময় তার পরিবারের সবাই কে কখন কোথায় ছিল। তার মা সত্যি বলছে নাকি মিথ্যে বলছে? আসলেই কী তাকে দেখতে আসছিলো নাকি অন্য কিছু?

__________________________

in India

ফোনের তীক্ষ্ণ রিংটোনে ঘুম ভেঙে গেল নীলের। চোখ বন্ধ রেখে হাতড়ে ফোন বালিশের নিচ থেকে বের করল। নাম্বার না দেখেই কল রিসিভ করে ঘুম ঘুম কণ্ঠে হ্যালো বলল। ফোনের ওপাশ থেকে কোনো সাড়াশব্দ নেই। নীল টাইম দেখে নিল ৫টা বাজে, এত সকাল কে কল দিল? নীল আবার বলল”

_হ্যালো।
_নীল ভাইয়া?” খুব চেনা একটা কণ্ঠ শুনে নীল লাফ দিয়ে উঠে বসল। নাম্বার টা দেখল বাংলাদেশ থেকে কল এসেছে। নীলের হার্ট বিট বেড়ে যেতে লাগল। সে ঠিক শুনছে তো? আসলেই কী এই মানুষটা থাকে ফোন দিয়েছে? কিন্তু নাম্বার পাবে কই?
_হ্যালো। ” ফোনের ওপাশ থেকে আবারও সেই গলা ভেসে আসতেই নীল নিজেকে একটু সামলে নিয়ে বলল”

_হ্যাঁ ক্ক ক্ক কে বলছেন?
_আমি লুপা বলছি। ” নীল চোখ খিঁচে লম্বা একটা দম ছাড়ল সে চিনতে ভুল করেনি। এই কণ্ঠ তার কানে গেঁথে আছে। যদিও সে লুপার সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা ফোনে কথা বলতো না তবুও তার মন থেকে লুপার স্বর চেহারা কোনো কিছুই ক্ষনিকের জন্যেও মুছে যায়নি।
_হ্যালো নীল ভাইয়া শুনছেন?
_হুম। কে কে কেমন আছো লু লুপা।
_আছি। আপনাকে কিছু বলতে চাই একবার দেখা করবেন?
_কী বলতে চাও বলো।
_ একবার আমাদের বাসায় আসবেন? ” নীল কেন জানি না বলতে পারলো না।
_হুম। অপেক্ষা করতে পারবে আমি তো দেশে নেই।
_হুম জানি।
_কে বলছে?
_শাওন ভাইয়া।
_ভালো আছো লুপা?
_হুম। আপনি?
_আমিও।
_রাখছি তাহলে।
_ওকে।” লুপা ফোন কেটে দিলো। নীল এতোদিন ভেবেছিল যদি লুপার সাথে ভুল করেও কখনো দেখা হয়ে যায় তাহলে সে লুপাকে এড়িয়ে চলবে। কিন্তু সে পারেনি কীভাবে পারবে লুপাকে যে সে অনেক বেশি ভালোবাসে।

_____________

লারা ঘুম থেকে উঠে দেখল জিহান তার উপরে হাত পা চড়ে ঘুমিয়ে আছে। লারার খুব লজ্জা লাগল জিহানের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখল জিহান বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। ঘুমের মধ্যে জিহানকে দেখতে একদম নিস্পাপ লাগছে। কে বলবে এই ছেলে এত রাগী? জিহানের বুক লারার মুখের সামনে একদম লেগে আছে লারার মনের তীব্র ইচ্ছা ধমাতে না পেরে সে জিহানের বুকে চুমু খেয়ে ফেলল। চুমু খেয়ে সে নিজেই লজ্জায় পড়ে গেল। আস্তে আস্তে জিহানের হাত পা সরিয়ে সে খাট থেকে নেমে আসল। বাইরে আসতেই থ মেরে দাঁড়িয়ে গেল। রাতে সেই মাক্স পরিহিতা রুম থেকে বেরিয়ে আসার সময় দরজার সামনে আসতেই বাইরের আলোয় স্পষ্ট দেখেছিল সে শাড়ীটা হলুদ রংয়ের ছিল। আর এখন হলুদ রংয়ের এই শাড়ী পড়ে আছে এই বাড়ীরই কেউ?

চলবে……।
চলবে,,,।

মন ভালো নেই কী লেখছি নিজেই জানিনা। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন প্লিজ।

গঠনমূলক মন্তব্য আসা করছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here