ভালোবাসি প্রিয় পর্ব ২২

#ভালোবাসি_প্রিয়
#পর্ব_২২
#সুলতানা_সিমা

সকালে ঘুম থেকে উঠে সায়রা চৌধুরী [লুপার মা] কিচেনের দিকে পা বাড়ালেন। সারারাত ক্ষিধায় পেট চোঁ চোঁ করছিল। ক্ষিধা থাকলে আবার ঘুমেও ধরেনা। বাড়িতে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে সবার মন মেজাজ খারাপ হয়ে আছে। তাই ক্ষিধা থাকলেও বাড়ির ছোট বউ হিসাবে সবার সাথে সাথে উনাকেও না খেয়ে থাকতে হয়েছে। অবশ্য খেলে কেউ কিছু বলত না।

উনি একটু অন্য রকম সব সয্য করতে পারলেও ক্ষিধা ওনার সয্য হয়না। কিছু না কিছু একটা মুখে তাকতে হয় উনার। সারাক্ষণ মুখ খাই খাই করে। সায়রা চৌধুরী কিচেনে এসে দেখলেন উনার বড় জা অনেকরকম রেসিপি বানিয়েছেন। চেহারায় খুশির আমেজ। সায়রা এগিয়ে এসে বললেন”

_বড় ভাবি তুমি কেন এই ঠান্ডার মধ্যে ওঠতে গেলা? আমরা বানিয়ে নিতাম।” জিহানের মা একটু রাগি লুকে তাকালেন সায়রার দিকে। পরক্ষণে সাথে সাথে মুখে হাসির রেখা টেনে বললেন”
_আমার জিহান এসেছে তার বউ এসেছে। বউমা এই বাড়িতে নতুন এলো থাকবেই বা আর কদিন? ছেলের সাথে তো চলেই যাবে আদরযত্নের একটা ব্যাপার স্যাপার আছে না?
_জিহান আব্বু এসেছে? তাও বউমাকে নিয়ে? কই আমরা তো জানিনা কখন এল?
_রাতে এসেছে। আমিও তো সকালে জানলাম। ভাবলাম তোমরা ঘুম থেকে উঠে নাও তারপর জানাবো।
_অহ।” সায়রা চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলেন। জিহানের মা হাসি হাসি মুখে কাজ করছেন। যেন ফুর্তিতে উনার ভেতর ফেটে যাচ্ছে৷ সায়রা কিঞ্চিৎ কপাল কুঁচকে ফেললেন। বাড়িতে এতবড় একটা ঘটনা ঘটে গেল আর উনি এভাবে খুশিতে গদগদ করছেন? বিয়ের মত বিয়ে হয়নি আবার এই ছেলের বউ নিয়ে কি আহ্লাদ মনে হচ্ছে যেন তিনি নিজ হাতে ছেলেকে বিয়ে করিয়েছেন।

_একটা লাড্ডু খেয়ে দেখ কেমন হইছে।” জিহানের মায়ের বলতে দেরি হল সায়রার খপ করে লাড্ডু মুখে ঢুকাতে দেরি হলনা। ক্ষিধায় পেট চোঁ চোঁ করছে আপাতত যা খেতে দিবে তাই উনার পেটে যাবে। লাড্ডুটা শেষ করে সায়রা বললেন”
_ভাবি এত মজা হইছে লাড্ডু এটা খেলে তো বউমা তোমার পায়ে চুমু খাবে।
_হাত দিয়ে বানালাম পায়ে চুমু খাবে কেন?
_ওমা। পা না থাকলে কি তুমি কিচেনে হেঁটে আসতে পারতা? পা আছে বলেইতো হেঁটে এসে এতো মজার লাড্ডু বানিয়েছ।
_সত্যি মজা হয়েছে?
_নিজেই একটা খেয়ে দেখো না।”

যারা আমাদের রান্নার প্রশংসা করে তাদের খাওয়াতে কিন্তু আমরা একধাপ এগিয়ে থাকি। জিহানের মাও পিছিয়ে নেই সামনে থেকে একটা প্লেট নিয়ে তাতে সব রেসিপি গুলা থেকে একটু একটু তুলে দিয়ে সায়রার হাতে দিয়ে বললেন” নে এগুলা টেস্ট কর।” বলে তিনিও একটা লাড্ডু নিয়ে মুখে পুড়লেন। কেমন যেন তিতা তিতা লাগছে উনার কাছে। যত চিবুচ্ছেন তত তিতা বাড়ছে। সায়রাকে বললেন”

_কিরে তিতা তিতা লাগে কেন?
_কই আমি খেলাম তিতা তো লাগেনি।
_এই দেখ এটা থেকে একটু খেয়ে দেখ।” উনি সায়রার মুখে একটু দিলেন আসলেই তিতা। ক্ষিধার জ্বালায় তিতা মিটা কিছুই টের পাননি উনি। আপাতত মিষ্টি বলে চালিয়ে দিলেই হল। সায়রা বললেন”

_ভাবি তিতা না তো মিষ্টিই লাগছে।
_কি বলিস আমার কাছে তো তিতা লাগছে।
_তুমি এক কাজ কর মুখে ঢুকিয়ে চোখ বন্ধ করে চিবুও দেখবে মিষ্টি লাগছে।” সায়রার কথা মত উনি চোখ বন্ধ করে চিবাতে লাগলেন। সায়রা মন ভরে এগ ফ্রাই স্যান্ডুইচ খাচ্ছেন এই খাবারটা উনার অনেক পছন্দের। দুজনই চোখ বন্ধ করে চিবুচ্ছেন তখনই কিচেনে দিহানের মায়ের আগমন। এভাবে দুজনকে খেতে দেখে উনি কপাল কুঁচকে ফেলেন। বাসার সব মানুষ উপোস আছে এদিকে উনারা পেট পুড়ে খাচ্ছেন। কিছু না বলে আবার চলে যান উপরে। অরিনের রুমের দরজা খুলে দেখলেন অরিন তোশকের উপর ঘুমিয়ে আছে। দিহানের মা ডাক দিলেন”

_এই মেয়ে ওঠো।” উনার এক ডাকেই অরিন লাফ দিয়ে উঠে বসল। সুমনা চৌধুরীকে দেখে একটা ঢোক গিলল অরিন। ভয়ে পেয়ে গেছে বোধহয়। এত পাতলা ঘুম অরিনের অবাক হলেন সুমনা। ককর্শ গলায় বললেন”

_ এবাড়িতে কী তোমাকে বসে ঘুমিয়ে খাওয়ানোর জন্য রাখা হইছে? কাজগুলা কে করবে? আমি? যাও কিচেনে যাও।”বলেই তিনি চলে গেলেন। অরিন ফ্রেশ হয়ে নিচে গেল। যাওয়ার সময় আঁড়চোখে একবার দিহানের রুমের দিকে তাকাল রুমের দরজা এখন বন্ধ হয়ত ঘুমাচ্ছে। রাতে কিভাবে যে ভালোবাসি বলছিল সে আল্লাহই জানেন এখন তো দিহানের কথা ভাবতেই ভয় লাগছে। অরিন কিচেনে গিয়ে দেখল লুপার মা তার বড় মা কি কি বানাচ্ছেন আর দিহানের মা একটা বোলে ময়দা ঢালছেন। অরিন কি করবে সে বুঝতে পারছে না। অরিনকে দেখে লুপার বড় মা কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করলেন”

_তুমি এখানে কেন?” অরিন কিছু বলল না মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকল। লুপার মা এসে অরিনের হাত ধরে তাকে তাদের পাশে দাঁড় করিয়ে বললেন”

_আমরা কী কী বানাই তুমি দেখ। কদিন পরে কিন্তু তোমাদের হাতেই সব থাকবে।” দিহানের মা সায়রার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকালেন। এই মেয়ের কারণে উনাদের সম্মান নষ্ট হয়েছে এই মেয়ের সাথে এতো আহ্লাদ করার কী আছে? সুমনা চৌধুরী অরিনের সামনে টাস করে বোল রেখে ককর্শ গলায় বললেন”

_নাও রুটি বানাও।” এত এত রেসিপি থাকতে রুটি কেন তা অরিনের মাথায় আসছেনা। অরিন কোনো প্রশ্ন না করে নিজের কাজে মন দিল। রুটি বেলতে লাগল তখন আবার ককর্শ গলায় সুমনা বলে ওঠলেন”
_রুটি যেন গোল হয়।” অরিন বেলতে লাগল। তার হাতে অনেক ব্যথা জমে আছে। বেলতে কষ্ট হচ্ছে কিন্তু কিছুই করার নেই। তার কপালে তো সুখ নাই।

আস্তে আস্তে বাড়ির সবাই ঘুম থেকে ওঠে গেল। লারা জিহানও ওঠল। লারার সাথে সবার পরিচয় করিয়ে দিল জিহান। লারা যথেষ্ট সুন্দরী। সবারই তাকে অনেক পছন্দ হয়েছে। লারা কিচেনে যেতে চায় জিহানের মা নিষেধ করেন কিছুতেই কোনো কাজে হাত দেওয়া যাবে না। সবাই এসে টেবিলে বসল কারো মুখে কোনো কথা নেই সবার মাঝে একটা গম্ভীর ভাব। জিহানের মা সব রেসিপি গুলা এনে টেবিলে রাখলেন। এসব দেখে হানিফ চৌধুরী উনার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন”

_আমি কী এগুলা খাবো?
_না না রুটি বানানো হয়েছে। নিয়ে আসছি।” সুমনা কিচেনে গেলেন গিয়ে দেখলেন অরিন এখনো রুটিই বেলছে। উনার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। ইচ্ছে করছে অরিনের গালে টাসিয়ে কয়েকটা থাপ্পড় দিতে। অরিনের হাত থেকে ছোঁ মেরে সবকিছু নিয়ে নিজেই রুটি বেলতে লাগলেন। উনার চেহারায় বিরক্তির চাপ। টাস টাস করে জিনিস পত্র নাড়ছেন আর ঠোঁট নাড়িয়ে কি সব বকবক করছেন। অরিন চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকল। রুটি বানিয়ে তিনি চলে গেলেন রুটি নিয়ে। একটু পরে সুমনা একটা প্লেটে দুটি রুটি একটা ডিম ভাঁজা নিয়ে এসে অরিনকে দিয়ে চলে গেলেন। প্লেটটা রাখার সময় টাস করে রেখে গেলেন। অরিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুটি ছিড়তে লাগলো। টুপ করে একফোঁটা জল গড়িয়ে পরল প্লেটের উপর।

নাস্তা শেষে লুপা তার রুমে যাবে তখন দেখল রুহান আর দিয়া ঝগড়া করছে। লুপা এগিয়ে গিয়ে বলল”
_কী রে ঝগড়া করছিস কেন?” দিয়া মুখটা কাঁদোকাঁদো করে বলল”
_আপু ও আমায় বুচি ডাকে।” লুপা রুহানের মাথায় চাপড় দিয়ে হাসি মুখে বলল”
_ওই তুই ওকে বুচি ডাকিস কেন? ও আমাদের সবার থেকে কিউট।
_আপু তুমার ওকে কোন দিক থেকে কিউট মনে হচ্ছে? তাকিয়ে দেখ ওর তো নাক বুচা।” রুহানের কথাটা শুনে লুপার ভেতরটা ধুক করে ওঠল। লুপার হাসি মুখে নেমে আসল বিষন্নতা। সাথে সাথে তার কানে বাজল। “শাওন তোর ওকে কোন দিক থেকে কিউট মনে হয় রে? তাকিয়ে দেখ ওর তো নাক বুচা।” লুপার বার্থডেতে যখন শাওন তাকে হ্যাপি বার্থডে কিউটি বলছিল নীল তাকে এই কথাটা বলছিল। লুপা মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে চোখে নীলের সব দুষ্টুমি গুলা ভেসে ওঠছে। লুপার সামনে রুহান আর দিয়া তুমুলযুদ্ধ করছে বালিশ ছুঁড়াছুঁড়ি বই খাতা কলম যা হাতে পাচ্ছে তা একজন আরেকজনের উপর ছুঁড়ে মারছে। সেদিকে লুপার খেয়াল নেই তার মন নীলের স্মৃতিতেই আটকে আছে। রুহান দিয়াকে বালিশ ছুঁড়ে মারল সেটা এসে লুপার ওপর পড়ল লুপা কিঞ্চিৎ চমকে উঠে। আর একমূহুর্ত না দাঁড়িয়ে চলে যায় নিজের রুমে। নীলকে সে ভালোবাসেনা তবুও নীলের কথা এত কেন মনে পড়ে। কেন জানি মনে হয় নীল চলে যাওয়ার পর থেকে তাদের সব আনন্দ ফুর্তি সব চলে গেছে। যতদিন নীলের দেখা নেই ততদিন শাওনেরও দেখা নেই কি অদ্ভুত শাওওনকে সে ভালোবাসে তবুও তাকে এত মিস করছে না যতটা নীলকে করছে।

নাস্তা করে একে একে সবাই ওঠে গেল। জিহান আর লারা এখন টেবিলে আছে। একটুপরে জিহানও ওঠে গেল শুধু লারা রইল। অরিন একে একে টেবিল থেকে সব কিছু গুছাতে লাগল প্রথম দুএকবার প্লেট নেওয়ার সময় খেয়াল করল লারা কিভাবে যেন তাকাচ্ছে অরিন তার মতই কাজ করতে থাকল। এই লারা মেয়েটাকে তার পছন্দ হয়নি কেমন যেন ডাইনি রাক্ষসীর মতো লাগছে। তার মহীনি আপু টিকই বলে কিছু কিছু সুন্দরী মেয়েরা অনেক অহংকারী হয়। যেমন এই লারা মেয়েটা।

________________________

দিহান একটা বিষয়ে নিশ্চিত যে অরিন যা করছে তা বাধ্য হয়ে করছে।দিহান একা একাই হিসাব মিলাতে লাগল। অরিন যেদিন তাদের বাসায় আসে তখন তার ঠোঁটে রক্ত জমে ছিল তার মানে কেউ অরিনকে মেরেছিল। ওইদিন দিহানের বড়মা ও ছোট আম্মু আর তার মা মিলে নীলদের বাসায় গেছিল আসার সময় তিনজনকে বাসায় আসতে বলে সে নীলকে খুঁজতে লাগে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ওই সময় তার মা,বড়মা এবং ছোট আম্মু বাসায় আসার আগে কেউ কোথাও গেয়েছিল নাকি সোজা বাসায় আসছিল। এটা তো নিশ্চিত যে দিহানেরই বাসার কেউ এইসব করাচ্ছে। নয়তো বাইরে থেকে কে আসবে অরিনের গলা টিপে ধরতে? নীল থাকলে এতকিছুর সমাধান খুব তারাতাড়ি হয়ে যেত। কিন্তু নীল যে কই গেল আল্লাহ জানে।

আর লারা মেয়েটাকে সবার কাছে স্বাভাবিক লাগলেও। দিহানের কাছে মোটেও তা লাগছেনা। দিহান একটা জিনিস খেয়াল করেছে লারা কেমন জানি তীক্ষ্ণ চোখে সবার দিকে তাকিয়ে তাকে যেন তার এ চোখ দিয়ে সে সবাইকে খুন করে ফেলবে। লারা অরিনের দিকেও এভাবে তাকিয়ে তাকে। জিহান বলছে সে নাকি লারাকে নিজের ইচ্ছায় পছন্দ করে বিয়ে করেছে। তাই জিহানকে এসব বলেও লাভ নেই বিশ্বাস করবে না।

দিহান নিজের রুমে পায়চারি করছিল তখন অরিনের ফোন বেজে উঠল। কাল অরিনের লাগেজ দেওয়া হয়েছে তার রুমে কিন্তু ফোনটা এখনো দিহানের কাছেই রয়ে গেছে এটা ইচ্ছে করে রেখেছে সে। এটা দেখার জন্য অরিনকে কেউ ফোন দেয় কিনা। কিন্তু না কেউ ফোন দেয়নি আজ ফোন আসায় দিহান দৌড়ে গিয়ে ফোন হাতে নিল। মহীনি আপু নামে সেভ করা। দিহান কল রিসিভ করবে নাকি করবে না এটা ভাবতে ভাবতেই কল কেটে গেল। কল ধরাটা ঠিক হবেনা মনে করে ফোন নিয়ে সে গেস্ট রুমের দিকে পা বাড়াল।

কাল দিহান অরিনকে সার্ভেন্ট রুম থেকে গেস্ট রুমে এনে রাখিয়েছে এ নিয়ে অবশ্য তাকে সবার কথা শুনতে হয়েছে তবে তার কিছু যায় আসে না। একটা মানুষকে এভাবে কষ্ট দেওয়া তার ভালো লাগেনা। দিহান ফোন নিয়ে অরিনের রুমে একটা উঁকি দিল অরিন রুমে নেই। সেই যে দুদিন আগে অরিন তাকে ভালবাসি বলেছিল সেই থেকে আজ দুইদিন হল অরিনের সামনে আসেনা। সার্ভেন্ট দিয়ে লুকিয়ে অরিনের খাবার দিয়ে পাঠায় নিজে আসেনা। এখন আসলো তো অরিনের দেখা নাই। চারিদিকে তাকিয়ে খুঁজল অরিনকে। ডান পাশে তাকিয়ে দেখল অরিন তার মায়ের রুমের দিকে যাচ্ছে দিহান বড় বড় চোখ করে তাকাল। সাদা কামিজ পড়েছে অরিন পিছন দিক রক্তে লাল হয়ে আছে। আজব এই মেয়েটা কী পিরিয়ডের ডেট মনে রাখতে পারেনা। দিহান ডাক দিতে যাবে তখনই রুম থেকে হানিফ চৌধুরী বেরিয়ে আসলেন। অরিন তার মত করে হেঁটে যাচ্ছে দিহান কি করবে ভেবে পাচ্ছে না হানিফ চৌধুরী আগে আগে হেঁটে যাচ্ছেন অরিন পিছে পিছে। এ মেয়েটা কি টের পাচ্ছে না পিরিয়ড হইছে যে। দিহান অরিনের রুমে ঢুকে কিছু একটা খুঁজল। কিছু না পেয়ে ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে ক্লিপ নিয়ে সেটা অরিনের উপর ছুঁড়ে ফেলল। কিন্তু দূর্ভাগ্যবসত সেটা অরিনের উপর না পড়ে পড়ল গিয়ে তার বাবার পাছার উপর। সাথে সাথে হানিফ চৌধুরী পাছায় হাত দিয়ে পিছনে থাকালেন। অরিন থ মেরে দাঁড়িয়ে আছে। বাঁকা হয়ে উনার পাছায় ধরার দৃশ্যটা দেখে অরিনের হাসিতে পেট ফেটে যাচ্ছে কিন্তু হাসতে পারছে না। হানিফ চৌধুরী গম্ভীর মুখ করে আবার নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালেন। দিহান দৌড়ে গিয়ে অরিনকে কোলে তুলে নিল অরিন চিৎকার দিতে যাবে দিহানকে দেখে শকড হয়ে হা হয়ে থাকল। অরিনকে নিয়ে রুমে এসে দিহান কোল থেকে নামাতেই অরিন কিঞ্চিৎ রেগে বলল”

_আপনার কী মাথায় ঘিলু নাই? এভাবে কোলে নিতে লজ্জা করেনা?” দিহান অরিনের দিকে তেড়ে এসে অরিনকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বলল”

_চোখে চোখ রেখে ভালোবাসি বলতে পারো তখন লজ্জা করে না। আর কোলে নিলেই লজ্জা লাগে? এত যখন লজ্জা তাহলে পিরিয়ডের ডেট মনে রাখনা কেন?”

দিহানের কথা শুনে অরিনের চোখ বড় বড় হয়ে গেল। দিহান অরিনকে ছেড়ে বলল” যাও ড্রেস চেঞ্জ কর।”অরিন একটুও নড়লো না লজ্জায় তার মাটির নিচে ঢুকে যেতে ইচ্ছে করছে। দিহান বুঝতে পারল অরিন লজ্জা পাচ্ছে সে চলে যেতে লাগল। দরজার সামনে গিয়ে পিছন ফিরে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো “প্যাড আছে?” অরিন আগের মতই মাথা নিচু করে চুপ থাকল। দিহান বলল”
_এখানে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকো আমি প্যাড নিয়ে আসছি।” দিহান প্যাড আনতে গেল আর অরিন লজ্জায় একদম লাল হয়ে গেল। ছিঃ আজ এভাবে তাকে লজ্জা পেতে হল? দিহান প্যাড নিয়ে এসে দেখল অরিন আগের মতই দাঁড়িয়ে আছে ১০মিনিটেই চলে এসেছে দিহান। অরিনের হাতে প্যাড দিয়ে বলল” যাও ওয়াসরুমে যাও।” অরিনের এখন এমন মনে হচ্ছে মাটি ফাঁক হবে সে মাটির নিচে ঢুকে যাবে। ওড়না দিয়ে পিছন দিক ঢেকে ওয়াসরুমে গেল। অনেকক্ষণ পরে বেরিয়ে আসল। দিহান খাটে বসে আছে দেখে চিন্তিত মনে হচ্ছে। লজ্জায় দিহানের সামনে যেতে ইচ্ছে করছেনা অরিনের। পা টিপে টিপে বেরিয়ে যেতে লাগে তখনই দিহান বলে ওঠে”

_ওই কই যাও?
_জ্বি কাজ আছে।
_চুপচাপ খাটে এসে শুয়ে থাকো কোনো কাজ করার দরকার নাই।” অরিন নড়ল না। দিহান অরিনের সামনে গিয়ে বলল”
_যতদিন সুস্থ হবে না ততদিন কোনো কাজে হাত দিবে না। এটা আমার অনুরোধ নয় আদেশ। যাও চুপচাপ বসে থাকো। কে কি বলে সেটা আমি দেখে নিব।” বলেই দিহান চলে গেল। বিয়েটা যেভাবেই হোক অরিন দিহানকে মনে প্রাণে স্বামী বলে মানে তাই সে তার স্বামীর আদেশ অমান্য করতে পারবেনা।
#ভালোবাসি_প্রিয়
#বোনাস_পার্ট
#সুলতানা_সিমা

দুপুরে কিচেনে আসেনি অরিন। তা দেখে দিহানের মায়ের মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। এমনিতেই রাগ জমে আছে অরিনের প্রতি। কিন্তু দিহান বাসায় আছে বলে কোনো কথা বলেন নি তিনি। সেদিন অরিনের রুম বদল করায় যখন তিনি দিহানকে কথা শুনিয়েছেন দিহান মুখে মুখে তর্ক করেছে। তাই দিহানের সামনে কিছু বলবেন না। সবার সামনে সন্তান তর্ক করলে বাবা মায়ের লজ্জা লাগে। রাগ ঝাড়তে না পেরে সারাদিন চেহারাকে এমন করে রাখছেন যেন কেউ কথা বলতে গেলেই তাকে ছোবল দিবেন। সন্ধ্যায় দিহান বাসার বাইরে যায়। সুমনা চৌধুরী এক মিনিটও দেরি করেন নি হনহন করে হেঁটে যান অরিনের রুমে। অরিন ঘুমাচ্ছিল ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে পানির বোতল নিয়ে পুরো বোতলের পানি অরিনের উপর ঢেলে দিলেন অরিন লাফিয়ে ওঠল।

তল পেটের তীব্র ব্যথায় চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছিল তার সাথে কোমরেও ব্যথা তাই চোখ বন্ধ শুয়ে ছিল। আচমকা এভাবে ওপরে পানি পড়ায় ভয় পেয়ে যায় সে। সুমনা অগ্নি রূপ ধারন করেছেন। এমন ভয়ংকর রূপ দেখে অরিনের ভয় আরও বেড়ে যায়। ভয়ে থরথর করে কাঁপতে থাকে সে। দিহানের মা চেঁচিয়ে বলেন”

_শান্তির ঘুম ঘুমানো হচ্ছে? বাসায় যে এত এত কাজ আছে এগুলা করবে কে? আমার রুম মুছার কথা বলছিলাম না তোমায়। মুছছিলে? ” অরিন কাঁপা কাঁপা গলায় বলল”
_জ্ব জ্ব জ্বি আ আমি যা যাচ্ছিলাম ত তখন,,,।” আর বলতে পারেনা অরিন। কী বলবে তখন তো দিহান তাকে কোলে তোলে রুমে নিয়ে আসছিল। দিহানের মা বললেন”
_তখন তোমার মন চাইল আরামে ঘুম দিবে আর তুমি চলে আসল তাইতো?” অরিন ভয়ে দ্রুত না সূচক মাথা নাড়াল। চোখ ভর্তি পানি তার যেন পলক পড়লেই গাল ভিজে যাবে। দিহানের মা বললেন”
_আসো রুম মুছে দাও। যত্তসব।” বলে কটকট শব্দ করে চলে গেলেন তিনি। অরিন চোখের পানি ফেলতে থাকল। সারাজীবন ভাবত সে সৎ মাকে নিজের মা বানাতে পারেনি তো কী হইছে নিজের শাশুড়ী কে মা বানাবে। মায়ের অভাব শাশুড়ী কে দিয়ে পূরণ করবে। কিন্তু এ কী রইল তার ভাগ্যে? চোখের পানিটা মুছে আস্তে আস্তে পা বাড়াল দিহানের মায়ের রুমের দিকে। দুপুরে দিহান সার্ভেন্টকে দিয়ে ভাত পাঠিয়ে দিছিল। সাথে একটা চিরকুট ছিল সেখানে লেখা “বাইরে বের হইয় না।” হয়তো এখন বাইরে দেখলে দিহান রাগ করবে কিন্তু তারই বা কী করার আছে।

অরিন রুম মুছতে লাগল। একটু মুছতেছে তো একটু পরপর তলপেট চেপে ধরছে ঝরঝর করে চোখ থেকে পানি পড়ছে। পেটের ব্যথায় অরিনের ইচ্ছে করছে ফ্লোরে গড়াগড়ি করে কান্না করতে। কোনো রকম রুমটা মুছে অরিন নিজের রুমে এসে পেটে চেপে ধরে খাটের মাঝামাঝি শুয়ে পরল। কিছুক্ষণ পরে দিয়া অরিনের পাশে এসে বসে বলল”
_ভাবী।” ভাবী ডাক শুনে মুখ তুলে তাকাল অরিন। দিয়া তার দিকে তাকিয়ে আছে। দিয়ার মুখে ভাবী ডাক শুনে এত ভালো লাগছে কেন তার? অরিন ওঠে বসে বিস্মিত হয়ে তাকাল দিয়ার দিকে। দিয়া তার তুলতুলে নরম হাত দিয়ে অরিনের চোখের পানি মুখে দিল বোতল হাতে নিয়ে দেখল পানি নাই গ্লাসে একটু পানি আছে ওইটা নিয়ে অরিনের দিকে একটা ট্যাবলেট বাড়িয়ে দিয়ে বলল”

_এটা খেয়ে নাও ভাবী পেট ব্যথা কমে যাবে।” দিয়ার মুখের ভাবী ডাকের কাছে তার পেট ব্যথা তুচ্ছ হয়ে গেল। অরিনের মনে অন্যরকম একটা অনুভূতি হচ্ছে। সুখ সুখ লাগছে। দিয়া ট্যাবলেট অরিনের মুখে ঢুকিয়ে দিল। অরিন খেয়ে নিল। দিয়া বলল”

_আম্মুর কথায় রাগ করনা ভাবী। আমার আম্মু এমন না গো কিন্তু ওই যে তোমার ওপর রেগে আছে।
_আমি তোমাদের সম্মানটা নষ্ট করে দিলাম তাইনা দিয়া?
_না ভাবী এভাবে ভেবনা তোমার কোনো দুষ নেই।
_সবাই তো তাই বলে।” বলতে না বলতেই অরিনের চোখ থেকে টুপ করে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পরল। দিয়া চোখের পানিটা আবার মুছে দিল। তারপর বলতে লাগল”

_আমার তিন আম্মু তিন রকম। আমার আম্মু খুব রাগী। অল্পতেই রেগে যান। যার ওপর রাগেন তাকে আর দেখতেই পারেন না। আর বড় আম্মু উনি খুব দ্বায়িত্ববান কাউকে আদর যত্ন করতে উনি কোনো ক্রুটি করেন না। সব সময় সবাইকে ভালো বুদ্ধি দিবেন ভালো কাজ করবেন ভালো কাজ করতে আদেশ করবেন। কিন্তু হটাৎ যখন রেগে যান তখন যেন একদম বধলে যান একদম হিংস্র হয়ে যান। আর ছোট আম্মু উনি একদম সহজ, সরল, চঞ্চল,মিশুক আর সাজগোজ প্রেমি। অল্পতেই সবার সাথে মিশে যান। কে কী করল কে কোথায় গেল কার সাথে কার ঝগড়া লাগল এটা খুঁজেন না। উনি সবার সাথে চলতে পছন্দ করেন। সব থেকে বেশি পছন্দ করেন নিজের প্রশংসা নিজে করতে।”

এইটুকু বলেই দিয়া থামল অরিন দিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। এত মিষ্টি একটা মেয়ে সে যে নিজেই মিশুক সেটা কী সে জানে। এত ভালো কেন এই মেয়েটা একদম দিহানের মত হয়েছে। দিয়ার হাতে নেইল পলিশ লাগানো অরিনের বুকটা ধুক করে ওঠল। তানভীর কথা মনে পড়ে গেল। তানভীও এভাবে নেইল পলিশ লাগাতো। হোক তানভী তার সৎ বোন কিন্তু সে তো নিজের বোনের মতই ভাবে তানভীকে। কে জানে সবাই কেমন আছে। বোন হয়েও বোনের বিয়েটা ভেঙে দিল সে। আল্লাহ কী কোনোদিন তাকে ক্ষমা করবেন?

_ভাবী কি ভাবো গো?” দিয়ার ধাক্কায় অরিনের ভাবাচ্ছেদ হয়। বুক ছিড়ে আসা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মুখে হাসির রেখা টেনে বলে”

_তুমি একদম তোমার ভাইয়ের মতো হয়েছ। যেমন দেখতে অনেক মিষ্টি তোমাদের মুখের কথা শুনতেও অনেক মিষ্টি লাগে। তুমি দেইখ তোমার বর তোমায় অনেক আদর করবে। “অরিনের কথা দিয়া লজ্জায় লাল হয়ে গেল। লজ্জায় লাল হয়ে দিয়া বলল”
_দূর ভাবী তুমিও না। আমি আসছি।

লজ্জায় চলে গেল দিয়া। অরিন একা একাই হেসে ওঠল। আসলে সত্যি সত্যি অরিনের পেট ব্যথা কমে গেছে। মনে হয় অষুধে নয় দিয়ার ভাবী ডাকে সে সুস্থ হয়ে ওঠেছে। তার ননদ এত মিষ্টি ভেবেই ঠোঁট কামড়ে হেসে ওঠে অরিন। তখনই তার রুমের লাইট নিভিয়ে দেয় কেউ। অরিন তৎক্ষনাৎ পিছন ঘুরে তাকাল। কিঞ্চিৎ আলোতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে শাড়ি পড়া কেউ একজন এক হাতে দরজা লক করে দিচ্ছে। অন্য হাতে তার নাইফ ধরে আছে। অরিন ভয়ে চিৎকার দিতে যাবে তখনই,,,,,,,,,

চলবে,,,,,,,,,,।
চলবে….।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here