#ভালোবাসি_বলে_দাও
#আরিশ❤আরু
#Suraiya_Aayat
12.
কফিটা ওনার হাতে দিয়ে চলে যেতে নিলেই উনি ডেকে উঠলেন,
‘এই মেয়ে শোনো। ‘
ওনার এই মেয়ে বলে পিছু ডাক শুনে আমি চোখ মুখ কুঁচকে নিলাম। ওনার কাছে গিয়ে মিনমিন করে বললাম,
‘হ্যাঁ বলুন! ‘
উনি ইশারায় আমাকে ঝুকে যেতে বললেন। আমি ওনার ইশারা পেয়ে খানিকটা ঝুকে যেতেই উনি আমার কপালে হাত ঠেকিয়ে তারপর হাত সরিয়ে নিলেন, আমি সোজা হয়ে দাঁড়াতেই উনি বলে উঠলেন,
‘ এখনো অবধি জ্বর নেই। জ্বর আসলে ওষুধ খাবে জলদি। এখন আমার সামনে চুপচাপ বসো। আমি যতখন না বলছি এখানেই বসে থাকো। ‘
আমি চোখ মুখ কাচুমাচু করে বললাম,
‘আর আপনার কথা না শুনলে কি করবেন? ‘
আমি কৌতুহলী হয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে রইলাম ওনার উত্তরের আশায়। উনি আমার দিকে স্বল্প তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলেন নিজের ফোনের দিকে। আমি বিরক্ত হয়ে বসে আছি, এখনো আমার ভেজা চুল শোকানো হয়নি, গলায় ওনার দেওয়া নীল রঙের স্কাফটা জড়িয়ে বসে আছি আর গায়ে পশম ওয়ালা সোয়েটার।
এই মুহূর্তে আমার নিজেকেই বাংলাদেশের বৃষ্টির দিনের ভাল্লুক মনে হচ্ছে। উনি বলে উঠলেন,
‘ আমার কথা না শুনলে থাপ্পড় দিবো। আর তুমি যদি আরও বেশি পানিশমেন্ট চাও তো আই হ্যাভ নো প্রবলেম। ‘
আমি জোরে বলতে লাগলাম,
‘হ্যাঁ আমার তো সরকারি গাল যে যখন খুশি ঠু/স/ঠা/স করে চ/ড় মারবেন। আগের বার ওই হিটলারি থা/প্প/ড় খেয়ে এখনো আমার দাঁতে ব্যা/থা! ‘
কথাটা বলতেই দেখলাম উনি গম্ভীর হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন, আমি ভাবলাম এই সুযোগে বেরিয়ে যাবো কিন্তু উনার দৃষ্টির হাব ভাবে আমি আর ওঠার সাহস পেলাম না। উনি এখনো আমার দিকে তাকিয়ে আছেন দেখে আমি আমতা আমতা করে বলে উঠলাম,
‘ ঠিক আছে ঠিক আছে। এভাবে তাকানোর কি হলো। আমি যাচ্ছি না কোথাও।’
উনি এবার চোখ ছোট করে করে তাকাতেই আমি ভয়ে চেয়ারে পা গুটিয়ে বসলাম। আর তোতলিয়ে বললাম,
‘এই আপনার কি এই ভরবিকালে জ্বিন ভূতে আসর করেছে? ঝাটা আনবো? ‘
কথাগুলো আমি এমনিই মজা করে বললাম না, ওনাকে এই মুহূর্তে দেখে আমার সুবিধার মনে হচ্ছে না। আমার এমন কথা শুনে উনি একটা ধমক দিতেই আমি কান চেপে ধরলাম। উনি বলতে শুরু করলেন,
‘এই মেয়ে ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করো না তুমি? রক্তে তো হিমোগ্লোবিন নেই। চোখ মুখ এমন ফ্যাকাশে হয়ে গেছে কেন? আর এক্সামের এক্সকিউজ দেবে না একদম। ‘
আমি অবাক হয়ে আমার হাত আর পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখলাম একবার। নিজেকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলাম তারপর কিছু না ভেবেই বললাম,
‘ মিথ্যা কথা। আমি ফরসা হয়ে গেছি আগের থেকে আর আপনি আমার মতো অতো ফরসা না বলে আপনার হিংসা হচ্ছে তাইনা? ‘
উনি কিছু বলতে গিমেও বললেন না। আমার এমন লজিকলেস কথার কোন উত্তর নেই ওনার কাছে। আমার খাতার পেজে একটা ওষুধের নাম লিখে দিয়ে বললেন,
‘ এটা মামুকে বলবে এনে দিতে। আর এক সপ্তাহ পর তোমার এইচএসসি, তার আগেই মাথা ঘুরে পড়ে গেলে খবর আছে। ‘
ওনার লিখে দেওয়া ঔষুধটার দিকে তাকালাম আমি, ওনার হাতের লেখা বুঝতে গিয়েই যেন আমার র/ক্তের অর্ধেক হিমোগ্লোবিন উবে গেল, আমি চোখ মুখ ফ্যাকাশে করে বললাম,
‘ এসব কি? ‘
উনি জবাব দিলেন না, কফিতে এক চুমুক দিয়ে বললেন,
‘যখন ডাক্তার হবে তখন বুঝবে এটা কি। এখন নো মোর বকবক, চুপ করে বসো। ‘
আমি বসে রইলাম ওনার সামনে, উনি ফোন ঘাটছেন। আমাকে এভাবে ওনার সামনে বসে রাখার সায়েন্স আমি আজও বুঝলাম না। তবে এটা নতুন নয়। উনি এমনটাই করেন, যতখন ইচ্ছা এভাবে আমাকে পুতুলের মতো করে ওনার সামনে বসিয়ে রাখেন। নিজেকে আমার তখনই একমাত্র এলিয়েন মনে হয়। না জানি আজকেও কতোখন এভাবে বসে থাকবো। এতোটা সময়ে একটা লম্বা ঘুম দেওয়া যেত কিন্তু তাতেও ব্যাটার আপত্তি।
এভাবে প্রায় দেড় ঘন্টা ওনার সামনে বসে রইলাম। ঘুমে চোখ আমার ছোট ছোট হয়ে আসছে। উনি ফোনটা নিজের পকেটে রেখে আমার দিকে তুড়ি মেরে আমার ঘুম ভাঙানোর চেষ্টা করে বললেন,
‘এই মেয়ে? ‘
আমি ঘুম ঘুম চোখে তাকালাম। উনি ভ্রু কুঁচকে বললেন,
‘ এভাবে চুপচাপ বসে থাকাও একটা ব্যায়াম বুঝলে।’
আমি মনে মনে ঝাঁঝিয়ে উঠে বললাম,
‘ লাগতো না আমার এমন ব্যায়াম। অভদ্র ছেলে! ‘
আমাকে চুপ থাকতে দেখে উনি বলে উঠলেন,
‘তা দেড় ঘন্টা ধরে কি কি ভাবলে শুনি? ‘
আমি চোখ মুখ উল্টে বললাম,
‘আপনি সত্যিই অনেক ইনটেলিজেন্ট। এই এতোটা সময় আমাকে দিলেন তার জন্যই বললাম। জানেন এই এতোটা সময়ে যে আপনাকে কতোগুলো কথা শুনিয়েছি হিসাব নেই। মাঝে মাঝে এমন করবেন আমার ভাল্লাগে আপনাকে মনে মনে কথা শোনাতে। ‘
আমার এমন কথা শুনেও উনি রেগে গেলেন না। হো হো করে হেসে উঠলেন। ওনার হাসাতে আমার ঘুম ভেঙে গেল। উনি আমার মাথায় হাত দিয়ে চুল গুলো এলোমেলো করে দিতেই চুলগুলো আমার মুখের ওপর ঝোপড়ির মতো আছড়ে পড়লো, আমি চোখ ছোট ছোট করে ওনার দিক চেয়ে আছি। উনি উঠে দাঁড়ালেন।
‘ ফার্স্ট এক্সামের দিন তোমাকে আর সানা কে আমি দিয়ে আসবো রেডি থেকো। আর এই কদিন মন দিয়ে পড়াশোনা করো। এটা মনে রেখো গোল্ডেন এ প্লাস না এলে বিয়ে দিয়ে দেবো পেট মোটা জামাই দেখে। ‘
আমি ওনার দিকে তাকিয়ে রইলাম। অবশেষে বলেই ফেললাম,
‘আপনার সাথে এক সপ্তাহ আমার দেখা হবে না। ‘
উনি কিছু বললেন না, শুধু বললেন,
‘ অল দা বেস্ট মিস টুইটুই! ‘
আমি ওনার দিকে চেয়ে রইলাম অপলক। অপেক্ষার সময়গুলো এতো দীর্ঘ হয় কেন?
/
আরিশ ভাইয়া আজ আসবেন না, এমনকি আমার এক্সামের আগেও উনি আসবেন না। খাবার সামনে রেখে আম্মু আমাকে হাজারো কথা শোনাচ্ছে তার মধ্যে কয়েকটা হলো,
‘আমাদের সময় আমরা অন্যের বইখাতা নিয়েও পড়ালেখা করেছি, ঝড় বৃষ্টি বন্যার মাঝেও স্কুল কলেজ গেছি, পায়ে হেটে কলেজ যেতাম রিকশা নিতাম না,তোমরা তো এখন চার চাকা ছাড়া যাও না।’
আমি আম্মুর কথায় মন দিয়ে শুনতে লাগলাম হঠাৎ করে ফিক করে হেসে বলে উঠলাম,
‘ তুমি তো দেখি বিদ্যাসাগরের নাতনি। ‘
আমার কথাতে আম্মু ধমক দিতেই বাবা এলেন আর আমার পাশে এসে বসলেন।
‘ হ্যাঁ তোর আম্মু তো এসব বলবেই কারন এগুলো তো মিথ্যা নয়। ‘
আমি বাবার দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকাতেই বাবা আমাকে আশস্ত করে বললেন,
‘ আরে এতো তাড়াতাড়ি হতাশ হয়ে যাস কেন মা পুরো কথা টা তো শোন।’
আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম,
‘হমম হমম হমম। ‘
‘ তোর আম্মুকে তো রোদ বৃষ্টি ঝড়ের মধ্যেও কলেজে আসতে হতো কারন আমার সাথে রোজ তো দেখা করতে হতো। তারপর অন্যর কাছ থেকে বই চেয়ে পড়তো কারন বই কেনার টাকায় সে ফুচকা খেয়েছে, শপিং করেছে। তোর আম্মু ছিল বিশ্ব ফাঁকিবাজ বুঝলি। ‘
বাবার এমন কথা শুনতেই আমি হো হো করে হেসে উঠলাম। আম্মু রাগে গজগজ করে উঠলো।
‘হ্যাঁ মেয়ের সামনেও আমার এমন বেজ্জাতি না করলে কি আর তোমার ভাত হজম হয়?’
কথাটা বলে আম্মু উঠে গেল। বাবা আর আমি মুখ চেপে হাসছি। আম্মু যেতেই দুজন সশব্দে হেসে উঠলাম। আমি বাবার বুকে মাথা রাখলাম। বাবা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে লাগলেন,
‘জানিস তো মা। তোর মা আমাকে খুব ভালোবাসতো আর এখনো বাসে। রোদ বৃষ্টি ঝড় যখন যে সময় আসতে বলতাম তখনই চলে আসতো, আমার খারাপ সময়েও তোর মা অনেক সাহায্য করেছে আমাকে। তার বইয়ের টাকায় সে আমাকে বই কিনে উপহার দিতো। তোর মায়ের অনেক ইচ্ছা ছিল স্বাবলম্বী হওয়ার, নিজের পায়ে দাঁড়ানোর, কিন্তু তোর নানাভাইয়ের জন্য আর হয়ে ওঠেনি সেটা। আমি যখন তোর মা কে বিয়ে করি তখন আমি বেকার। আমার পরিবার থেকে তোর মা কে সবাই মেনে নিয়েছিল। তোর ফুপি আর ফুপা অনেক খারাপ সময়ে আমাদের পাশে ছিল। তেমনি আরিশও। ছেলেটা সত্যিই খুব ভালো। ছেলেটা এক আকাশ সমান কাওকে ভালোবাসতে পারে। আমি ওর চোখে সে ভালোবাসা দেখেছি। সেই মেয়ে নিঃসন্দেহে ভাগ্যবতী।
আমি বাবার বুকে মাথা রেখে নিরবে সবটা শুনছি। আমার মাঝে মাঝে খুব জানতে ইচ্ছে হয়, কে সেই ভাগ্যবতী?
আমি চোখ বন্ধ করলাম।্যএকদিন আশরাফ চাচা আমাকে বলেছিলেন,
‘ভালোবাসা দিয়ে সব কিছু জয় করা যায়, শুধু মানুষটা ভালো হওয়া চাই যে ভালোবাসতে পারে নিঃস্বার্থ ভাবে।
বাবা আমার ভাবনা ভাঙিয়ে বললেন,
‘আমার মেয়েও একদিন এমন সৌভাগ্যবতী হবে। তাকে কি না ভালোবেসে পারা যায়? ‘
আমি শিউরে উঠলাম। বাবার কথার জবাবে কি বলবো আমার জানা নেই। আচ্ছা আমি কি কাওকে ভালোবাসি? আর ভালোবাসলেই বা কেমন অনুভুতি হয়?
#চলবে,,,, #ভালোবাসি_বলে_দাও
#আরিশ❤আরু
#Suraiya_Aayat
13.
টানা এক সপ্তাহ ধরে চোখ কান বুজে কেবল পড়াশোনা করেছি, সববিষয়ের সবরকম পড়া কভার করেছি। কাল রাতে টানা এক সপ্তাহ পর আরিশ ভাইয়া ফোন করেছিলেন। ওনার সাথে কথা বলতে ইচ্ছা না করলেও বলতে হয়েছে, রাগ হচ্ছিল তার একটাই কারন যে উনি টানা এক সপ্তাহ আমার কোন খোঁজ খবর নেননি। উনি কল কাটার আগ অবধি একটাই কথা বলেছেন যে,
‘ যদি গোল্ডেন এ প্লাস পাই তো আমি যা বলবো উনি আমার সেই কথাটা রাখবেন। ‘
আর কিছুর জন্য না হলেও আমার ওয়াইল্ডেস্ট ফ্যান্টাসি ওনাকে জানানোর জন্য হলেও আমাকে সেই সুযোগ হাসিল করতে হবে আর তার একটাই উপায় গোল্ডেন এ প্লাস।
সকাল সকাল হালকা কিছু ব্রেকফাস্ট করে বাবা আর আম্মুকে সালাম করে বেরিয়ে এলাম বাসা থেকে, গেটের কাছে আশরাফ চাচাকে দেখে ওনাকে সালাম করতে নিলেই উনি তার আগেই মাথায় হাত রেখে বললেন,
‘ভালো করে পরিক্ষা দিয়ো গো আরুমা নাইলে এই আরিশ বাবার কাছে তোমার খবর আছে। ‘
কথাটা শুনতেই আমি ওনার দিকে তাকালাম। উনি গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছেন আর আমার দিকে ড্যাপ ড্যাপ করে তাকিয়ে আছেন। ওনার এমন চাহনি দেখে আমার গলা শুকিয়ে এলো। আশরাফ চাচাকে সালাম করে ওনার সামনে এসে দাঁড়াতেই ওনার দিকে কাচুমাচু মুখ করে একবার মাথা নীচু করে নিলাম। উনি সানগ্লাসটা পকেটে পুরে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন,
‘কি হয়েছে?’
আমি ওনাকে সালাম করবো কি করবো না তা নিয়ে কনফিউজড। ওনার দিকে আর একবার তাকিয়ে নিয়ে আবার মাথা নীচু করে দিলাম। উনি বোধহয় বিরক্ত হলেন এবার। গাড়ির দিকে চলে যেতে নিলেই আমি বেশ তড়িঘড়ি করে বললাম,
‘এই আরিশ ভাইয়া দাঁড়ান। ‘
উনি দাঁড়িয়ে গেলেন, আমি ওনাকে সালাম করার জন্য নীচু হতে গেলেই উনি আমার হাত ধরে আমাকে আটকে নিলেন। আর ছোটখাটো ধমক দিয়ে বললেন,
‘ আমি বলেছি আমাকে সালাম করো? যখন সময় হবে তখন করবে এখন না। ‘
আমি ওনার দিকে ভ্যাবলার মতো করে বললাম,
‘ আবার কবে সময় হবে? এক্সামের সময়ই তো মানুষ সালাম করে। ‘
উনি আমার এমন কথা শুনে উত্তর দিলেন না কেবল হাত ধরে টেনে নিয়ে গাড়িতে সানার পাশে বসালেন। এই মেয়ের কাছে এই মুহূর্তে দুনিয়া ওলট পালট হয়ে গেলেও সে বুঝতে পারবে না কারন সে ভীষনরকম ভাবে মনযোগ দিয়ে পড়ছে। পরীক্ষার আগে আমার আর পড়তে ভালো লাগে না, না হলে সব ঘেটে ঘ হয়ে যায়। সানার পাশে বসে ওকে একটা গুতা দিয়ে বললাম
‘এই মেয়ে? ‘
আমার মুখে এই মেয়ে ডাক শুনে আরিশ ভাইয়া আমার দিকে লুকিং গ্লাসে একবার তাকালেন। আমি তা তোয়াক্কা না করে সানকে বললাম,
‘দোস্ত তুই তো আমার পিছনের পরের বেঞ্চ। আমি ডাকলে সাড়া দিবি। ‘
তৎক্ষণাৎ সানা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
‘হমম জানু।’
আমার সুখ বোধহয় ওনার সহ্য হয় না তাই উনি সানকে ধমক দিয়ে দমিয়ে দিলেন,
‘ওকে এক্সাম এ হেল্প করবি না তুই। আরু পাখি তুমিও সানাকে হেল্প করবে না। আর যদি রেজাল্ট খারাপ আসে তো দুজনেরই বিয়ে দিয়ে বিদায় করবো বাসা থেকে। ‘
আমরা দুজন ওনার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকালাম।
বেশ কিছুখন পর কলেজ এর সামনে এসে গাড়ি থামালেন উনি, আমরা দুজনে নামতেই দেখলাম আশেপালে কেও কেও তাদের প্রেমিকের হাত ধরে তো কেও আবার বাবা মায়ের সাথে দাঁড়িয়ে আছে। আমি আরিশ ভাইয়ার দিকে তাকালাম। এই মুহূর্তে উনি আমার আর সানার অভিভাবক। কিভাবে সামলান উনি এতো গুরুতর দায়িত্ব? নিজের হাতে আমার সব দায়িত্ব উনি তুলে নিয়েছেন, আমআর বাবা মা তাতে আপত্তি করেনি কখনো।
আমি ওনার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছি দেখে সানা পাশ থেকে চিমটি দিয়ে বিড়বিড় করে বলল,
‘দোস্ত পড়া ভুলে যাস না আবার ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে। ‘
আমার মতিভ্রম হয়েছে তা বুঝতে পারছি। ওনার থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে বললাম,
‘আমরা আসি? ‘
উনি মাথা নাড়িয়ে কেবল বললেন,
‘হমম। ‘
সানা আর আমি হাটতে শুরু করলাম তারপর কি মনে হতেই আমি আবার ওনার সামনে এসে দাঁড়ালাম। আমাকে ফিরে আসতে দেখে উনি বললেন,
‘ কোন ড্রামাটা করতে ভুলে গেছেন মিস ড্রামা কুইন? ‘
আমি মিনমিন করে বললাম,
‘অল দা বেস্ট বলবেন না? ‘
ওনার দিকে চোখ ছোট ছোট করে পিটপিট করে তাকাচ্ছি আমি। উনি কিছু জবাব দিলেন না, আমার মাথার ওপর পড়া একটা ছোট ময়লা উনি ফেলে দিতে দিতে বললেন,
‘ বলাটা কি ম্যান্ডেটারি? ‘
আমি চারবার ওপর নীচ করে মাথা নাড়িয়ে বললাম,
‘হমম। ‘
উনি আমার মুখের ওপর একটা ফু দিয়ে বললেন,
‘অল দা বেস্ট মিস টুইটুই। ‘
ওনার কথা শুনতেই আমি হেসে ফেললাম। আমি এক গাল হেসে ওনাকে বললাম,
‘ থ্যাঙ্কিউ নট। ‘
কথাটা বলে আমি কলেজে ঢুকলাম। আমি আর ওনার দিকে তাকালাম না।
উনিও হয়তো আমার এমন কাজকর্ম দেখে হাসছেন অথবা বলছেন,
‘মিস টুইটুই আপনি কবে বড়ো হবেন? ‘
/
আমি আর সানা এক্সাম হলে ঢোকামাত্রই আরিশ ভাইয়া চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, সেই মুহূর্তে রিকশা থেকে নেমে কারোর পরিচিত কন্ঠস্বর শুনে উনি থেমে গেলেন। পিছন দিকে তাকিয়ে দেখলেন ফারিন আপু। উনি এই কদিনেই ওনার চোখ মুখ এর করুন দশা করে ফেলেছেন তা ওনার চোখ মুখ দেখলে যে কেও সহজে বুঝতে পারবে। উনি আপুকে উপেক্ষা করে চলে যেতে নিলে আপু রিকশার ভাড়া মিটিয়ে ওনার কাছে দৌড়ে ছুটে গেলেন।
আমার জানালার ধারে সিট পড়ার দরুন আমি তাদের দুজনকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। তাদের দুজনকে একসাথে দেখলেই আমার বুকের ভিতর মোচড় দেয়। আমি মাঝেমাঝে তাকাচ্ছি আর চোখ সরিয়ে নিচ্ছি। এতখন আমি আরিশ ভাইয়ার দিক চেয়ে ছিলাম তবে হঠাৎ করে ফারিন আপুকে যে দেখতে পাবো এটা আশা করিনি। উনি খুব ভালো ভাবেই জানতেই যে আজ আমাদের এক্সামে আরিশ ভাইয়াই দিতে আসবেন। টিচার রুমে ঢুকতেই আমি চোখ সরিয়ে নিলাম সেদিক থেকে আর কিছু দেখা আর জানা হলো না আমার।
/
এক্সাম হল থেকে বেরিয়ে এলাম আমি আর সানা, আমাদের দুজনেই পরিক্ষায় ভালো হয়েছে। দুজনে এক্সাম দিয়ে ক্লান্ত। আরিশ ভাইয়া গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছেন ফ্রেশ মুডে যেন কিছুই হয়নি। আমার খুব জানতে ইচ্ছা করছে যে উনি ফারিন আপুকে কি কি বলেছেন কিন্তু আমি যে এক্সামের আগ মুহূর্ত অবধি তাদের দিকে তাকিয়ে ইছলাম সেটা জানলে উনি আর আমাকে আস্ত রাখবেন না তাই নিজেকেই নিজে বোঝালাম যে কিছু কিছু জিনিস না জানায় শ্রেয়। আরিশ ভাইয়া সানার থেকে সব খবরাখবর নিলেন, আমি দাঁড়িয়ে আছি সানার পাশে। উনি আমাকে কিছুই জিজ্ঞাসা করছেন না দেখে আমার রাগ হয়ে গেল। সানা গাড়িতে উঠলো, ওর পরে আমিও নিরবে গাড়িতে উঠতেই উনি আমার হাত ধরে আটকালেন।
‘দাঁড়াও। কোথায় যাচ্ছো? ‘
আমি ওনার দিকে অবাক হয়ে বললাম,
‘ কোথায় মানে। বাসায় যাবো। ‘
উনি আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে অন্যদিকে যেতে গেলেই আমি ভাবলাম উনি বোধহয় আমাকে রিকশায় তুলে দেওয়ার বন্দোবস্ত করছেন। আর সত্যি বলতে ঢাকা শহরের রাস্তাঘাট আমার কোনটাই চেনা নেই। আমি ঘাবড়ে গেলাম বেশ। উনি হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছেন। আমি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললাম,
‘ছাড়ুন আমি রিকশা করে যাবো না। ‘
উনি থেমে অবাক হয়ে চেয়ে বললেন,
‘মাথার ঠিক আছে? নাকি এস্কাম খারাপ হয়েছে তাই মাথা গেছে কোনটা? ‘
আমি কপট রাগ দেখিয়ে বললাম,
‘কে বলেছে আমার এক্সাম খারাপ হয়েছে হ্যাঁ? আপনি কি একবার ও আমার থেকে জানতে চেয়েছেন হু যে আপনাকে বলবো। বয়েই গেছে আমার। ‘
উনি আমার এমন কথা শুনে নির্বিকারে তাকালেন।
কিছু বললেন না পুনরায় হাত ধরে নিয়ে যেতে নিলেই আমি ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম। উনি হাত তো ছাড়লেন না বরং আরও আকড়ে ধরলেন। উনি আমকে নিয়ে একটা হাওয়াই মিঠাই ওয়ালার সামনে নিয়ে গিয়ে বললেন,
‘ যতগুলো নেবে নাও। ‘
আমি খুশি হয়ে গেলাম এক নিমেষেই। ওনার দিকে হাসিমুখে তাকিয়ে বললাম,
‘সবকটা নিই? ‘
উনি পকেট থেকে সানগ্লাসটা পরে বললেন,
‘ একদম না। অন্যদিন দেখা যাবে। আপাতত তুমি আর সানা যতগুলো খেতে পারবে যতগুলো নাও। ‘
‘কিন্তু আমি তো সবই খেতে পারবো। সবই নেওয়া উচিত আমার তাইনা? ‘
উনি বিরক্ত হয়ে হাওয়াই মিঠাই ওয়ালাকে বললেন,
‘মামা চারটে দেন তো। ‘
আমি নাচক করে বললাম,
‘এতো কিপ্টে কেন আপনি? এতো কম কেন? কম সে কম দশটা তো নেবোই।’
উনি মামাকে ইশারা করে দশটা দিতে বললেন।
উনি একে একে সবকটা হাওয়াই মিঠাই নিচ্ছেন। আমার ওনার সানগ্লাসটার দিকে নজর গেল। মনে মনেই ভেবে নিলাম যে ওটা আমাকেই মানাবে। যেই ভাবা সেই কাজ। ওনার চোখ থেকে চশমাটা খুলে নিয়ে নিজের চোখে পরতেই উনি বাকা চোখে তাকাতেই আমি বললাম,
‘কেমন লাগছে আমাকে? সুন্দর না? আমি জানি সুন্দর লাগছে। ‘
উনি হাওয়াই মিঠাই ধরে হাটতে হাটতে বললেন,
‘লেডি গাগা লাগছে পুরো! ‘
আমি হি হি করে হেসে উঠলাম। উনি সব হাওয়াই মিঠাই ধরে হাটছেন আর আমি একপাশ থেকে ওনার হাতটা ধরলাম। নিজেকে কেমন প্রধানমন্ত্রী ফিল হচ্ছে আর ওনাকে আমার বডিগার্ড। দূর থেকে দেখলাম সানা আমাদের ছবি তুলছে আর হি হি করে হাসছে। তা দেখে আমি ওনার হাতটা ছেড়ে দূরত্ব বজায় করে দাঁড়াতেই উনি বলে উঠলেন,
‘হ্যাপি মিস টুইটুই? ‘
আমি হেসে বললাম,
‘হমম হমম আমার হাওয়াই মিঠাই ওয়ালা। ‘
উনি বিড়বিড় করে বললেন, ‘মিস ড্রামা কুইন। ‘
#চলবে,,,,