ভালোবাসি বলে দাও পর্ব -২০+২১

#ভালোবাসি_বলে_দাও
#আরিশ❤আরু
#Suraiya_Aayat

২০+বোনাস পর্ব.

এডমিশন নিয়ে বার হওয়ার পরপরই শুরু হলো আরিশ ভাইয়ার বিশ্ব বিখ্যাত সব বানী-
‘ঠিক মতো পড়াশোনা করবে। ‘

‘বেশি লাফালাফি ছটফট করবে না। ‘

‘পড়াশোনায় সিরিয়াস হও দুজনেই। ‘

‘ডিএমসি তেই চান্স পাওয়া লাগবে দুজনকেই। ‘

‘পড়ার সময় বাড়াতে হবে। মেইন টার্গেট এ ফোকাস করতে হবে। ‘

ওনার এতো আজাইরা কথা আমি আর সানা কানের একপাশ দিয়ে প্রবেশ করাচ্ছি আর এক পাশ দিয়ে তাদের বহির্গমন করাচ্ছি।
আমি আর সানা সরস্পরের হাত ধরে আছি আর উনি পাশাপাশি হাটছেন। ওনার এই মহামূল্যবান ভাষন থামাথামির নাম নেই দেখে আমি কথার মাঝে বাধা দিয়ে বলে উঠলাম,
‘ কই সবকিছুর মাঝে এটা তো বললেন না যে ভালো করে পড়াশোনা না করলে রিকশা ওয়ালার সাথে বিয়ে দিয়ে দেব। ‘

কথাটা শোনার পরপরই আরিশ ভাইয়া থেমে গেলেন যেন ওনার পা দুটো কেও আটকে নিয়েছে। এমন গম্ভীরতার মাঝে সানা হঠাৎ হো হো করে হেসে উঠলো আর আমি ওনার মুখ এর দিকে তাকালাম। উনি আমার দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। আমার আর বোঝা বাকি রইলো না যে এই কথাটা অন্তত ওনার সামনে বলা উচিত হয়নি। অপরদিকে সানার হাসিতে আমার কান ফেটে আসার উপক্রম। উনি কিছু বলছেন না, আমি বুঝলাম এটা মটেও উপযুক্তকর পরিস্হিতি নয় আমার জন্য। আমার সময় থাকতে থাকতে এখান থেকে কেটে পড়া উচিত। আমি সানার হাত ছেড়ে আর ওনার সেই অগ্নিদৃষ্টির ভয়াল তাপমাত্রার সীমারেখার বাইরে যাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে গাড়ির দিকে হাটা দিলাম।
সানা এখনো হেসেই চলেছে তা আমার কানে ভেসে আসছে। আর উনি ঠিক কিভাবে এখনো আমার দিকে তাকিয়ে আছে আমার জানা নেই। আমি গাড়িতে এসে বসে রইলাম চুপ করে, আজকে উনি যদি আর কোনপ্রকার চড় মারেন তো ওনার সাথে আমি আর থাকবো না কোনমতেই না।

কথাটা মনে মনে ভাবতে ভাবতে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছি, পাশে সানা এসে বসলো, সে এখনো খুট খুট করে হাসছে। উনি ড্রাইভিং সিট এ বসলেন আর রাসভারী কন্ঠে বলে উঠলেন,
‘ আমাকে কি তোমাদের ড্রাইভার মনে হয়? ‘

ওনার কথা শুনে আমি বুঝলাম না যে উনি ঠিক কি বোঝানোর চেষ্টা করছেন। বেশি বুঝতে যাওয়ার চেষ্টা করতেই উনি আমাকে উদ্দেশ্যে করে ধমক দিয়ে বললেন,
‘সামনে এসে বসো। ‘

আমি সানার দিকে তাকালাম, সে আমাকে সময় নষ্ট না করে যাওয়ার জন্য বললো। আমি দ্রুত নেমে গিয়ে তার পাশে গিয়ে বসলাম। করুন স্বরে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। উনি আমার দিকে না তাকিয়েই বললেন,
‘কি হয়েছে, এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? ‘

‘আপনি আমাকে মাঝ রাস্তায় গাড়ি থেকে ঠেলে ফেলে দেবেন না তো? ‘

উনি গাড়ির স্টার্ট দিয়ে দ্রুত স্পিড বাড়াতেই আমি টলমল হয়ে গেলাম। সিটবেল্ট বাধা নেই আমার, উনি যেভাবে চালাচ্ছেন তাতে মুখে না বললেও এভাবে সিটবেল্ট ছাড়া বসলে আমি এমনিই পড়ে যাবো। আমি সিটবেল্ট লাগাতে লাগাতে বিড়বিড় করে উঠলাম,
‘এমন রেকলেস ড্রাইভিং করার জন্য আপনাকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিতে চাওয়া আমার নিষ্পাপ মন। ‘

কথাটা বোধহয় উনি শুনতে পেলেন আর বললেন,
‘থাপ্পড় খেতে না চাইলে মুখ বন্ধ রাখো। আজাইরা কথা কিভাবে বলো এতো? ‘

আমি চুপ হয়ে গেলাম ওনার কথা শুনে। উনি কখন ভালো মুডে থাকেন আর কখন ওনার মুডের ওপর কে পেট্রোল ডিজেল ছড়িয়ে আগুন লাগিয়ে দেন তা আমার জানা নেই।
সানা ফিকফিক করে হাসছে, আমার মতো একটা অসহায় মেয়ের ওপর। মাঝে মাঝে আমার প্রশ্ন হয় যে এই পৃথিবীতে মনুষত্ব নামের জিনিসটা কি চিরতরে উঠে গেল নাকি?

/

না উনি কোন কথা বলছেন না আমি কোন কথা বলতে পারছি, সানা মোবাইলের মাঝে ঢুকে আছে তাই সেও কথা বলতে নারাজ। এই পরিবেশে আমার একটা গানের কথাই মনে আসছে ভীষনরকম,
‘Such a boring day….
such a boring people… ‘

কিন্তু এই গানটা এখন ওনার সামনে গাইলে উনি বোধহয় সত্যিই আমাকে মাঝ রাস্তায় গাড়ি থেকে নামিয়ে দেবেন। আচ্ছা উনি যে খুবই বোরিং একটা মানুষ সেটা কি ওনার মেনে নিতে কষ্ট হয়?
এমন পরিবেশ আমার কেবল ঘুম পায়, আমি চোখটা বন্ধ করে গাড়ির সিটের সাথে মাথা এলাতেই দেখলাম উনি স্লো মোশন এ গাড়ি চালাতে শুরু করলেন। আমি যতদূর জানি এরপর আমরা শপিং মলে যাবো আর এতো এতো শপিং করবো।
শপিং মল এলে উনি নিশ্চয়ই আমাকে ‘এই মেয়ে’ বলে ধমক দিয়ে হলেও ডাকবেন। কথাটা ভেবে একটা আরামের ঘুম দিতে লাগলাম। কত সেকেন্ড, কত মিনিট বা কত ঘন্টা আমি ঘুমিয়েছি আমার মনে নেই, চোখ খুলে কাওকে দেখতে না পেয়ে আমি চমকে উঠলাম। একপ্রকার থতমত খেয়ে গেলাম আমি। ঘুমের ঘোরে থাকার দরুন এমনিতেই চোখ ছোট ছোট হয়ে আছে তারপর বাইরের তীব্র রোদ, যদিও গাড়িতে এসি বিদ্যমান।
আমি আমার পাশে, পিছনের দিকে সব জায়গায় ৯০ ডিগ্ৰি আর ১৮০ ডিগ্ৰিতে চাওয়াচাইয়ি করলাম, তাদের দুজনকে কোথাও দেখতে পেলাম না আমি। তারপর বাইরের দিকে তাকাতেই দেখি লেখা আছে,

‘Metro Shopping Mall, Mirpur Rd, Dhaka 1209’

আমি ধড়ফড় করে উঠে পড়লাম তা দেখে। তাহলে কি আমার সন্দেহ টাই ঠিক? ওনারা কি আমাকে এখানে রেখেই একা একা শপিং করতে চলে গেছেন।
আমি জনি যে উনি জাতীয় অভদ্র। কিন্তু সানা সে তো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড, সে কি করে আমাকে একা রেখে চলে যেতে পারলো? কথাটা ভাবতেই আমি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলাম। আমার চোখের ঘুম উড়ে গেল নিমেষেই। দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম আমি, এতখন এসির বাতাস খেয়ে এখন বাইরের চড়চড়ে রোদে দাঁড়াতেই মনে হলো কেও গায়ে গরম পানি ঢেলে দিয়েছে। এত ভাবাভাবির সময় নেই আমার। আমি পা চালিয়ে মলের দিকে যেতে লাগলাম। আমার সাথে এমন ব্যাভিচার আমি সহ্য করবোনা কোনভাবেই, ওনাকে কল করলাম দুইবার উনি ধরলেন না আর সানার ফোন নেটওয়ার্কের বাইরে। আমার রাগ হচ্ছে ভীষনরকম। শপিং মলে ঢুকতে যাবো তখনি আম্মুর এক ফ্রেন্ডের সাথে দেখা। উনি আমাকে দেখামাত্রই উচ্ছাসিত হয়ে চেঁচিয়ে বললেন,
‘আরে তুমি আফসানার মেয়ে আরু না? মাশাআল্লাহ কি সুন্দর হয়ে গেছ দেখতে? ‘

আমার মাথায় এমনিতেই রাগে দাওদাও করছে তারপর ওনার এমন কথা শুনে অবাক হওয়ার ভান করে বললাম,
‘ কেন আন্টি আমি আগে কি খারাপ দেখতে ছিলাম। ‘

উনি হেসে আমার গালে চুমু দিতেই আমি হাত দিয়ে ওনার চুমু মুছে নিলাম। উনি বললেন,
‘ আরে তা কেন হতে যাবে। তুমি আগে তো আরও বেশি গোলগাল ছিলে, এখন একটু ওজন কমিয়েছো মনে হচ্ছে। তাও মুখটা দেখলে মায়ায় পড়ে যায়। ‘

আমার মনটা অস্থির হয়ে আছে শপিং মলে ঢোকার জন্য আর এদিক আমার আম্মুর কোন কস্মিনকালের বান্ধবী উনি এই মুহূর্তে আমার পথ আটকে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই বললেন,

‘ তোমার মনে আছে তুমি যখন ছোট বেলায় আমাদের
বাড়িতে আসতে তখন আমার ছেলে রাহানের সাথে কতো খেলা করতে। ‘

আমি শুনে একটু অবাকও হলাম বটে। আমার যতদূর মনে আছে আরিশ ভাইয়া আমার আশেপাশে উনি ব্যাতিত কাওকে আসতেই দিতেন না তাহলে এর মাঝে ওনার ছেলে রাইহান এলো কি করে।
আমাকে কল্পনার জগত থেকে বার করে এনে বললেন,
‘তোমার হয়তো মনে নেই, আর না থাকারই কথা। অনেকদিন তোমাদের বাসায় যাওয়া হয় না। ‘

আমি ওনার দিকে তাকিয়ে মিথ্যা একটা হাসি দিয়ে বললাম,
‘আমাদের বাসায় যাবেন, আম্মু খুশি হবে। আচ্ছা আমি এখন আসি আন্টি, আমার দেরি হচ্ছে। ‘

আমি যেতে নিলেই উনি আমার হাত ধরে বললেন,
‘ওমা একা যাবে নাকি? কেও আসেনি তোমার সাথে? ‘

ওনার এমন কথা শুনে মনে হলো যে বলেই ফেলি যে আমি একা এসেছি কারন আরিশ ভাইয়া আর সানা তো আর আমাকে তাদের সাথে নিয়ে যাননি।
আমি হাসতে হাসতে বললাম,
‘ জ্বি না আন্টি আমি একাই এসেছি। ‘

উনি এবার আমার হাতটা আরও শক্তপোক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললেন,
‘আচ্ছা তাহলে চলো আমিও তোমার সাথে শপিং এ যায়, তারপর তোমার সাথে তোমার আম্মুর সাথে দেখা করে আসবো। ‘

ওনার কথা শুনে আমি বুঝে উঠতে পারলাম না যে আমি নিজেই বিপদ ঘিড়ে টেনে আনলাম নাকি বিপদ নিজেই আমার ঘাড়ে এসে চাপলো। তাছাড়া শপিং করার মতো কানাকড়িও আমার কাছে নেই। আমি কিন্তু কিন্তু করলেও উনি শুনবেন না তা আমি ভালোই বুঝতে পেরেছি অতঃপর ওনার সাথে যাওয়া ছাড়া আর উপায় দেখলাম না। বাধ্য হয়ে ওনার সাথে মলের ভিতর ঢুকলাম। ওনার একহাত জুড়ে ইতিমধ্যেই জামাকাপড়ের ব্যাগে পরিপূর্ণ আর একহাত দিয়ে আমার বাম হাতটা জাপটে ধরে আছেন যেন আমি জেলের আসামী, উনি হাত ছাড়লেই আমি পালিয়ে যাবো।

থার্ড ফ্লোরে গেলাম আমি, সেখানে লেডিস ক্লোথ এর বেস্ট কালেকশান। কিছু কেনার জন্য না, আরিশ ভাইয়া আর সানকে খোঁজার জন্য। এদিক ওদিক জামাকাপড় দেখার ভান করছি আর ওনাদেরকে খোঁজার চেষ্টা করছি। উনি এখনো আমার হাত ছাড়েননি। আমি এটা পছন্দ না ওটা পছন্দ না বলে কোনরকম সময় পার করার চেষ্টা করছি কিন্তু উনি শোনার বান্দা না, উনি না পেরে বলেই উঠলেন,
‘আরে কিছু তো একটা নাও, অত সুন্দর সব জামা গুলো তোমার একটাও পছন্দ হচ্ছে না? ‘

আমি বুঝলাম উনি খানিকটা হলেও ব্যাথিত আম্মুর সাথে দেখা কথার জন্য। আমি কিছু পছন্দ করছিনা দেখে উনি নিজেই একটা জামা আমার গায়ের মাপ নিয়ে বললেন,
‘বাহ এটা তোমাকে বেশ মানাচ্ছে। তুমি এটা নাও। ‘

আমি না করবো কিন্তু উনি শুনলেন না। আমার হাত ধরে কাউন্টারের কাছে নিয়ে গেলেন। এতোটা সময়ে আরিশ ভাইয়া আর সানাকে একটিবারের জন্যও দেখলাম না আমি, আমি একা থাকলে বোধহয় এতখনে তাদের হদিশ লাগাতে পারতাম। কাউন্টারে গিয়ে আমার বুক এর ভিতর ধুকধুক করতে লাগলো, কারন আমার কাছে টাকা নেই। জামাটার দাম সাড়ে চার হাজার। আমি ব্যাগ থেকে টাকা বার করার ভান করতে নিলেই আন্টি বললেন,
‘আরে দূর বোকা মেয়ে, তোমাকে টাকা দিতে কে বলেছে। আমি দিচ্ছি। তোমার আঙ্কেলের কার্ড আছে না! আর কি চাই। বিয়ের জামাইয়ের কার্ডটা দখলে নিতে পারলেই কেল্লাফতে। তোমাকেও বলে রাখলাম কথাটা। ‘

এতখন পর আন্টিটাকে আমার বেশ কিউট মনে হতে লাগলো, আমি হেসে ফেললাম ওনার এমন কথাতে। উনি আমাকে নিয়ে বাইরে এলেন, হয়তো রিকশা ধরবেন কারন ওনার বাড়ি মিরপুরের কাছেই। আমি বাইরে যেতেই দেখলাম আরিশ ভাইয়া আর সানা গাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। আমাকে আন্টির সাথে দেখে উনি ভ্রু কোঁচকালেন, আন্টিকে ইশারা করে বললাম,
‘আন্টি উনি আমার ভাইয়া। আমাকে নিতে এসেছেন মে বি। আপনি আমাদের সাথেই চলুন। ‘

আমি ভাবলাম উনি কিন্তু কিন্তু করবেন কিন্তু উনি কিছু বললেন না সহজেই রাজি হয়ে গেলেন। আমি আরিশ ভাইয়ার সামনে যেতেই দেখলাম উনি রিল্যাক্স হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। আন্টিটা তার চোখ এর সানগ্লাস মাথায় তুলে বললেন,
‘ তুমি তো আরুর ভাইয়া তাইতো? ‘

আরিশ ভাইয়া একবার আমার দিকে গম্ভীর ভাবে তাকিয়ে তারপর ওনাকে মৌন স্বরে বললেন,
‘হমম।’

উনি আমাকে চমকে দিয়ে বললেন,
‘ আরুর মা আমার ফ্রেন্ড। আরুকে আমার ভীষন ভালো লাগে। তা বোনের বিয়ে দেবে না? ‘

ওনার কথা শুনে আমি ছ্যাত করে ওনার হাতটা ছেড়ে আরিশ ভাইয়ার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম যাতে উনি কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারেন যে আমরা বিবাহিত। এমনিতেই সকালে সেই ঘটনার পর থেকে উনি রেগে আছেন। তবে আমাকে আকাশে ছুঁড়ে আরিশ ভাইয়া আন্টিকে বললেন,
‘ভালো একটা উকিল খোঁজেন যে ভালো ঝগড়া করতে পারে, নিশ্চয়ই বিয়ে দেবো। ‘

কথাটা বলে দরজা খুলে দিয়ে আমাকে ইশারায় উঠতে বললেন। আমার হাত কাঁপছে উনি এসব কি বললেন যে ডক্টর পেলে আমার বিয়ে দেবেন। উনি যে রেগে আছেন তা বুঝতে বাকি নেই। সানা পিটপিট করে হাসছে। আন্টি গাড়িতে উঠে বললেন,
‘কিন্তু আমার ছেলে তো বিজনেস করে। ‘

আরিশ ভাইয়া শুধু বললেন,
‘বলুন ওকালতি শিখতে। ‘

আমি দমে গেলাম নিমেষেই। সাথে সবাই চুপ।

আমায় বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে আরিশ ভাইয়া বাসার দিকে গটগট করে হাটতে লাগলেন। আন্টি আর সানা পিছন পিছন আসছেন। শপিং এর পর এমনিতেও উনি আম্মুর সাথে আমাকে দেখা করতে আনতেন সেটা আমি জানতাম কিন্তু এর মধ্যে এতো কিছু হয়ে যাবে আমি সত্যিই ভাবিনি। আন্টি আম্মুকে দেখে খুশিতে গদগদ হয়ে গেল। আমি আর সেখানে নেই। আমি সিঁড়ি বেয়ে উঠতে লাগলাম আর শুনলাম যে আম্মু আরিশ ভাইয়াকে দেখিয়ে বলছেন,
‘ওটা আরিশ। আমাদের জামাই। কালকে ওদের বিয়ে হয়েছে। ‘

আন্টির মুখ এর রিয়েকশান দেখার সময় এই মুহূর্তে আমার কাছে নেই। আমি দৌড়ে রুমের দিকে ছুটলাম আর দেখলাম আরিশ ভাইয়াও আমার পিছন পিছন আসছেন। আমি রুমে ঢুকে দরজা দিতে নিলেই উনি তার আগেই ঢুকে রুমের দরজা দিয়ে দিলেন। উনি দরজায় হেলান দিয়ে হাতে হাত ভাজ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। ওনার এ দৃষ্টি বোঝার ক্ষমতা আমার নেই। তবে আজ আমার কি হবে আমার জানা নেই।

#চলবে,, #ভালোবাসি_বলে_দাও
#জামাই_বউ
#Suraiya_Aayat

21.

আমি দরজা বন্ধ করবার পূর্বেই উনি দরজা আটকে নিজে প্রবেশ করলেন আর দরজা বন্ধ করে দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন হাতে হাত ভাজ করে। আমি খানিকটা চমকে গেলাম ওনার এমন কাজকর্মে। বুঝলাম যে আজ আমার রক্ষে নেই। আমি দু এক কদম পেছাতেই উনি বেশ নরম কন্ঠে বললেন,
‘আমি তোমার ভাইয়া? ‘

ওনার এমন প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে কী আছে? থাকলেও তার উত্তর আমার জানা নেই। আমি আমতা আমতা করে বললাম,
‘হমম, তা নয় তো কি। আপনি তো আমার ভাইয়াই! আরিশ ভাইয়া। ‘

উনি আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললেন,
‘ তুমি ওনাকে বলোনি তুমি ম্যারিড?’

ওনাকে এগিয়ে আসতে দেখে আমার কাঁপাকাঁপির মাত্রা ক্রমশ বাড়তে লাগলো। আমিও ওনার সমান গতিতে কয়েক কদম পেছাতে লাগলাম, আমি জানি একটা সময় আমার দেওয়ালে পিঠ ঠেকবে কিন্তু তার আগেই আমি পালাবো উনি ধরতে পারবেন না।
আমি তোতলাতে তোতলাতে বললাম,
‘নাহ বলিনি। কেন বলবো? আপনি আর সানা দুজনেই আমাকে রেখে একা শপিং করতে চলে গেছিলেন তো আমি কেন বলবো? উনি তো আর আপনাদের মতো না, উনি আমাকে একটা চার হাজার টাকা দিয়ে জামা কিনে দিয়েছেন। ‘

কথাটা বলতেই আরিশ ভাইয়া আমাকে আর পেছাতে দিলেন না, উনি আমার হাতটা ধরে ওনার কাছে টেনে নিতেই আমি হুমড়ি খেয়ে ওনার ওপর পড়লাম কিন্তু উনি নিজেকে এবং আমার ভর সামলে নিলেন। আমি ওনার বুকের কাছে এসে জড়োসড়ো হয়ে এলাম, উনি ওনার দু হাত দিয়ে আমার কোমরে হাত দিয়ে জড়িয়ে রইলেন। আমার সর্বাঙ্গ শিউরে উঠলো, পারলে কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে য়ায়। উনি কিছু বলছেন না, তবে আমি অনুভব করলাম ওনার হাতটা কোমর ছাড়িয়ে আমার পিঠকে স্পর্শ করছে। আমি জানি আমি নড়াচড়া করলেই উনি রেগে যাবেন, উপায়ন্তর না পেয়ে আমি চুপচাপ স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে ওনার স্পর্শ গুলোকে অনুভব করতে লাগলাম।
ওনার শ্বাস ওঠানামা করছে অনবরত তা আমার মুখ এর ওপর আছড়ে পড়ছে। আমার বুকের ভিতর এক অজানা ভালো লাগা খারাপ লাগার মিশ্রিত স্রোত বয়ে যাচ্ছে একনাগাড়ে। আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই উনি আমার মাথার খোঁপাটা একটানে খুলে দিতেই আমি জড়ো হয়ে গেলাম যেন। উনি আমাকে যতোটা নিজের কাছে টানা যায় ঠিক ততোটাই কাছে টানলেন। আমি আমতা আমতা করে বললাম,
‘আরিশ ভাইয়া আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। ছাড়ুন। ‘

আমার কথা ওনার কানে কতোটা গেল আমার জানা নেই, তবে ওনাকে আমার একদম স্বাভাবিক লাগছে না, আরিশ ভাইয়ার এমন রুপ আমি কখনো দেখিনি। উনি আমার কানের কাছে মুখ এনে বললেন,
‘ডোন্ট ক্রিয়েট এনি ডিস্কারবেন্স আরুপাখি! ‘

ওনার এমন কথাতে ভয়ে আমার বুক ধুকধুক করতে লাগলো, নিজের হৃদস্পন্দন যেন আমি নিজেই শুনতে পাচ্ছি। উনি এক আলাদাই ঘোরের মধ্যে বিরাজ করছেন। তারপর মিনমিন করে বলে উঠলেন,
‘ বলো আমি তোমার কে? ‘

আমি শুকনো ঢোক গিলে বললাম,
‘জামাই, আপনি আমার জামাই। ‘

‘কথাটা মনে থাকবে? ‘

‘জ্বি, জ্বি মনে থাকবে। ‘

কথাটা বলে আমি এমন পরিস্থিতির সমাপ্তি ঘটাতে চাইলেও উনি তা করলেন না, আমি সরে আসতে নিলছি উনি আমার কপালে ঠোঁটের আলতো স্পর্শ দিলেন, আমি দৃষ্টি সংযত করে রইলাম। কপাল ছুঁয়ে উনি আমার দু গালে ঠোঁটের স্পর্শ দিতেই আমি বললাম,
‘ আরিশ ভাইয়া নীচে আম্মু হয়তো ডাকছে। ‘

আরিশ ভাইয়া ডাক শুনে উনি চোখ মুখ কোঁচকালেন, আমি বুঝলাম আমি পুনরায় বেফাস কথা বলে ফেলেছি।
উনি ভ্রু কুঁচকে বললেন,
‘আবার ভাইয়া? ‘

আমি হড়হড়িয়ে বললাম,
‘ ভুল হয়ে গেছে, আর হবে না। জামাই, আমার জামাই। ‘

উনি এতো সহজে দমে যাওয়ার পাত্র নন, উনি বললেন,
‘ ইউ সুড হ্যাভ আ পানিশমেন্ট। ‘

আমি কি বলবো আমি বুঝতে পারছি না, তবে চোখ মুখ বন্ধ করে রইলাম আমি, নাহলে ওনার কাছেই আজ আমি ঘায়েল হয়ে যাবো।
আচমকা উনি আমার ঠোঁটে আলতো করে ঠোঁটের স্পর্শ দিয়ে দূরে সরে এলেন। আমি সরে এলাম ওনার থেকে। চোখ খুলে তাকিয়ে দেখলাম উনি হাসছেন মুচকি মুচকি। তাতে আমি লজ্জায় শেষ।
উনি আমার মাথার চুলগুলো এলোমেলো করে বললেন,
‘বেশি দূরে যাওয়ার চেষ্টা করবে না আমার থেকে নতুবা এতো বেশি কাছে টেনে নেব সে সহ্য করা মুশকিল হয়ে যাবে। ‘

কথাটা বলে উনি ব্যালকনিতে চলে গেলেন। আমি ঠোঁটে হাত দিয়ে স্পর্শ করলাম, আমার শরীরটা কেমন জানি আনচান আনচান করছে। ওনার এমন রুপ আমি কখনো দেখিনি। আমি ওনার দিকে পিছু ফিরে একবার তাকালাম, দেখলাম উনি ফোনে কথা বলছেন কার সাথে। আমি আর সেদিকে তাকালাম না, দৌড়ে নীচে নেমে এলাম। ওনার কাছে আর কিছুখন থাকলেই আমি ওনাতে ঘায়েল হয়ে যেতাম। কথা গুলো ভাবলেই লজ্জায় আমি লজ্জাবতীর মতো কুঁকড়ে যাচ্ছি। নীচে যেতেই দেখলাম আন্টি এখন সানাকে নিয়ে পড়েছেন। ওনার হাব ভাবে মনে হচ্ছে পারলে ওনার ছেলের সাথে এক্ষুনি তার বিয়ে দিয়ে দেন। আমি দেখছি আর হাসছি। মনে মনে ভাবছি ‘ বেচারি সানাজান আব তেরা কইয়া হোগা। ‘

/

উনি দুপুর বেলা বাসায় ফিরে যেতে চাইলেই আম্মু ওনাকে যেতে দিলেন না। তিনি নতুন জামাই তাই জামায় আদর না করলে সেটা বেমানান হয়। কথাটা ভেবে বেশ জোরজবরদস্তি ভাবেই ওনাকে রাখা হয়েছে। উনি সেই সকাল থেকে আমার রুমটা দখল করে বসে আছেন যা আমার মোটেও পছন্দ হচ্ছে না। সানা আম্মুর সাথে গল্পগুজব করছে। তার আমার আম্মু সাথে আমার থেকেও বেশি মিল। আমার যদি কোন ভাই থাকতো তাহলে তার সাথে সানার বিয়ে দিয়ে আমার ভাবী করে রাখতাম। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে আমার রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম আমি। তারপর বেশ নবাবী একটা ভাব নিয়ে রুমে ঢুকলাম, উনি একবার আমার দিকে তাকিয়ে ফোনের দিকে চোখ ফিরিয়ে নিলেন। ওনাকে আমার বেডে শুয়ে থাকতে দেখে আমি বলে উঠলাম,
‘আপনি আমার বেডে কেন? গেস্ট রুমে যান। ‘

উনি বাকা চোখে তাকিয়ে বললেন,
‘আচ্ছা আমি তোমার কে? ‘

আমি ওনার ইশারা বুঝতে পেরে চোখ মুখ কুঁচকে বললাম,
‘জামাই! ‘

ঝগড়া শুরু করার পূর্বেই ঝগড়ার সমাপ্তি। আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,
‘হয়েছে হয়েছে। আর হিসাব বোঝাতে হবেনা। ‘

উনি মুচকি হেসে ফোনের দিকে মনোনিবেশ করে হঠাৎই বলে উঠলেন,
‘ তোমার ওয়াড্রবে তোমার জামা রাখা আছে, দেখো পছন্দ হয় কি। পছন্দ না হলেও কিছু করার নেই। ‘

আমি চোখ বাকা করে ওয়াড্রব এর দিক এগোতে থাকলাম। তা খুলতেই দেখলাম বেশ কয়েকটা জামা কাপড়ের ব্যাগ। পুরোপুরি না দেখে অল্প অল্প দেখলাম সেগুলো। আমার পছন্দ হয়েছে বেশ কিন্তু ওনার সামনে তা প্রকাশ করা যাবে না না হলে উনি নিজে ভাব নিতে শুরু করবেন। কথাটা ভেবে আমি বললাম,
‘খারাপ না ভালোই। ‘

মনে মনে ভেবে খুশিও লাগছে যে আমাকে না নিয়ে গেলেও আমার পছন্দ মতো সব কিছু এনেছি। বিড়বিড় করে বললাম,
‘সাধে কি আপনাকে আলাদীন বলি! ‘

কথাটা উনি শুনতে পেলেন না। আমি কথাটা বলে বেরিয়ে যেতে নিলেই উনি বললেন,
‘কোথায় যাচ্ছো তুমি? ‘

‘নীচে। আশরাফ চাচার কাছে। ‘

উনি ফোনটা রেখে আমার দিক মনোনিবেশ করে বললেন,
‘ তা কেন শুনি?চাচা নাকি তার প্রেমের গল্প বলে তোমাকে।’

আমি ওনার দিক মুখ ভাঙচি দিয়ে বললাম,
‘অন্নেক ভালো চাচা। আপনার মতো নিম পাতার ফ্যাক্টরি নয় সে। ‘

কথাটা শুনতেই উনি আমার কাছে এসে আমার গা ঘেষে দাঁড়িয়ে বললেন,
‘ এখন কিন্তু আমরা হাসবেন্ড ওয়াইফ সো। ‘

ওনার কথার ইশারা বুঝতে পেরে আমি ছ্যাত করে ওনার থেকে দ্রুত সরে এলাম। আজকাল উনি কি একটু বেশিই লুচ্ছামি করছেন নয় কি?
আমি আমতা আমতা করে বললাম,
‘ ঠিক আছে ঠিক আছে। আপনি জামাই আর আমি বউ। এতো বার মনে করানোর কি আছে? ‘

উনি আমার দিকে নীচু হয়ে খানিকটা ঝুকে বললেন,
‘আমি অন্যকিছু বোঝাতে চাইছি। এক্সপ্লেইন করবো? ‘

উনি আরও কিছু অশ্লীল বলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তার পূর্বেই আমি ওনার মুখ চেপে ধরে বললাম,
‘মুরব্বি হয়ে আমাকে এসব শেখাচ্ছেন। তওবা তওবা। আপনি থাকেন আমি আসছি। ‘

কথাটা বলে কোনরকম ওনাকে পার করে আমি সেখান থেকে দ্রুত সরে এলাম। আজকে ওনার মাঝে এতো রোমান্টিকতা আমার হজম হচ্ছে না। আমি আমার পিছন পিছন আর একটা পায়ের আওয়াজ শুনলাম। পায়ের আওয়াজ শুনে আমি দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে নামতে নিলেই সেই পায়ের আওয়াজ টাও বেড়ে গেল। আমি পিছন ঘুরে তাকাতেই দেখি উনি আমার দিকে তাকিয়ে হাসছেন।
‘আপনি কিন্তু আজকে আমাকে একটু বেশিই জ্বালাচ্ছেন।’

উনি আমার পাশে এসে আমার কাধে একহাত ঝুলিয়ে বললেন,
‘ বউ ছাড়া মন আমার কেমন কেমন করে! ‘

আমি একটা ঢোক গিলে ওনার হাত সরিয়ে বললাম,
‘আজ আপনি কিছু খেয়েছেন? এমন করছেন কেন? অন্যদিন তো হিটলার গিরি করেন তাহলে? ‘

আমার এমন কথা শুনতেই উনি আমাকে কোলে তুলে নিলেন। আমি টাল সামলাতে না পেরে ওনাকে আঁকড়ে ধরলাম।
উনি রুমের দিকে যেতে যেতে বললেন,
‘আজ আপনি শেষ মিস টুইটুই। ‘

ওনার চোখ মুখ আলাদাই কথা বলছে, ওনার মুখে এক হিটলারী হাসি! আজ আমি সত্যিই শেষ।

#চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here