ভুলবোঝার শেষপ্রান্তে পর্ব ৫

#ভুলবোঝার_শেষপ্রান্তে🥀
#ওয়াজিওয়াত_লাবিবা_ওয়াহিদ
#পার্ট_০৫
.
🍁
.
আমি নিজেকে সামলে কিছুটা বিরক্তি ভাব নিয়ে বললাম,

আমি- কোনো কিছুই দেখছি না দয়া করে কফিটা নিয়ে আমায় উদ্ধার করুন।

আফ্রাজ- ওহ ঠিক আছে নিলাম।

বলেই আমার হাত থেকে কফি টা নিয়ে এক চুমুক দিলো।

আফ্রাজ- ইয়ায়ায়াক এইটা কোনো কফি হলো কি জঘন্য স্বাধ।

আমি- মানে কি জঘন্য কেন হবে?

আফ্রাজ- তুমি তাহলে খেয়ে দেখো কেমন কফিটা।

আমি- ঠিক আছে দিন।

বলেই আমি কফিটা নিয়ে এক চুমুক দিয়ে দেখলাম কেমন।

আমি- কই সব তো ঠিকই আছে।

আফ্রাজ- কই দেখি।

বলেই কফির মগ টা একপ্রকার কেড়ে নিলো। তারপর আমি যেদিক দিয়ে খেয়েছি ঠিক সেই সেই জায়গা তেই ঠোট বসালো। হনুমান টার এরূপ কান্ডে আমি বিষম খেলাম। আফ্রাজ তাড়াতাড়ি আমায় বসিয়ে পানি খাওয়ালো। আমিও ঢকঢক করে পুরো গ্লাস খেলাম।

আফ্রাজ- কি হলো এমন হলো কেন?

আমি- কি.. কি.. কিছু না নিচে আসুন আম্মু ডাকছেন।

আফ্রাজ- ওকে।

বলেই একটা টিশার্ট পড়ে আমার সাথে নিচে আসলো। তারপর একসাথে ব্রেকফাস্ট করলাম।

এভাবেই দিন কাটতে থাকে। আফ্রাজের পাগলামি আমায় খুব করে তার কাছে টানে। সারাক্ষণ ঝগড়াঝাঁটি খুনশুটি ভালোবাসায় ভালোই কাটছে দিন গুলো। আফ্রাজ আমায় তেমন টর্চারও করে না। রানির মতো রেখেছ আমায়। সত্যি আমি খুব লাকি আফ্রাজের মতো এতো দায়িত্বশীল স্বামী পেয়ে। তাকে কিছু না বললেও সে আমার মনের কথা বুঝতে পারে এমন অবস্থা।

একদিন,

আমি লিভিং রুমে বসে বসে মেগাজিন পড়ছিলাম আর শাশুড়ি মায়ের সাথে গল্প করছিলাম এমন সময়ে শাশুড়ি মা বলে ওঠে,

আম্মু- আচ্ছা মাইরা আমাদের রিদের জন্য মায়া কেমন হবে?

রিদ নাম টা শুনতেই আমি বিষম খেলাম। শাশুড়ি মা তাড়াতাড়ি আমায় পানি দিয়ে বললো,

আম্মু- কি হলো বউমা এমন কাশি উঠলো কেন তোমার?(অবাক হয়ে)

আমি- না মানে এমনি আচ্ছা রিদ কে?(জেনেও না জানার ভান করে)

শাশুড়ি আম্মু হেসে বলে,

আম্মু- দেখো মেয়ের কান্ড এবাড়ির বউ হয়ে দেবরের খবর জানেনা।

আমি- মা.. মা.. মানে?

আম্মু- আমার দুই ছেলে বড় জন আফ্রাজ আর ছোট ছেলের নাম রিদ। এখন কিছু কাজে দেশের বাইরে আছে তাই তোমাদের বিয়েতে এটেন্ড করতে পারেনি। আর আফ্রাজের অবস্থা দেখো সে তার ছোট ভাইয়ের কথা কিভাবে তোমায় না বলে থাকতে পারলো বলো তো?

আমি-(এর মানে কি বাড়ির কেউ জানেনা রিদ ভাইয়া মারা গেছেন? নাকি আফ্রাজ লুকিয়েছে সবার কাছ থেকে?)

আম্মু- কি বউমা কিছু বললে না যে?

আমি- না মানে ওনার সাথে যোগাযোগ হয়না?

আম্মু- হ্যা হয়তো আজ সকালে দেখলে না কারো সাথে কথা বলছি? সেটা তো আমার ছোট ছেলে রিদই ছিলো।

আমি এই কথা শুনে যেনো আকাশ থেকে পড়লাম। চরম অবাকের কারণে মুখ ফস্কে বলে ফেললাম,

আমি- ভাইয়া তাহলে বেঁচে আছেন?

আম্মু- বেঁচে আছেন মানে?(ভ্রু কুচকে)

আমি- না এমনি বললাম। তাকে তো দেখা হয়নি দেখতে পারি?

আম্মু- হ্যা অবশ্যই।

বলেই আম্মু ফোন থেকে বের করে একটা ছবি দেখালেন। ছবিটার উপরে ডেট দেওয়া ২-৩দিন আগের। এটা কি করে সম্ভব? ভাইয়া না মারা গেছে আরও মাস কয়েক আগে? তাহলে তার রিসেন্ট ছবি টা কি করে ২-৩ দিন আগের হয়? নাহ মাথা ঝিম ধরে আছে। সব কিছুই কেমন যেনো রহস্যময়ী লাগছে। না না সব জানতে হবে আমায় যে করেই হোক। সেদিন কি হয়েছে তার পরে কি হয়েছে সব জানতে আমাকে হবেই।

আম্মু- কি হলো মাইরা আবার কোন ভাবনায় ডুব দিলি পছন্দ হয়নি তোর আমার ছেলেকে?

আমি- না আম্মু তেমন কিছুই নয়। তোমার দুই ছেলেই তো রাজপুত্র মাহ শা আল্লাহ।

আফ্রাজ- শেষ পর্যন্ত স্বীকার করলে আমি রাজপুত্র?

আফ্রাজের হঠাৎ এমন কথায় কি করবো কি বলবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। শাশুড়ি আম্মু তো হেসে দিয়েছে। আমি লজ্জায় একেবারে মাথা নিচু করে ফেলেছি। আসলেই লজ্জার বিষয় শাশুড়ি মায়ের সামনে যদি কেউ হঠাৎ এমন টা বলে তখন কেই বা লজ্জায় পড়বে না?

আমার অবস্থা দেখে শাশুড়ি আম্মু হাসি থামিয়ে বলে,

আম্মু- হয়েছে হয়েছে আর লজ্জা পেতে হবে না। পুরো লাল হয়ে গেছে আমার মেয়ে টা লজ্জায়। ওই তুই এখানে কেন এলি হে?

আফ্রাজ- বারে…বিয়ের এতো মাস হয়ে গেলো একবারও মুখ ফুটে বলেনি আমি কেমন দেখতে। আজই প্রথম বললো ফিলিংস টা কেমন সেটা তুমি বুঝবে না।

আম্মু- তোর ফিলিংস বোঝার কোনো দরজার নেই আমার। পরে বললে কি হতো হুম? দেখছিস না আমি এখানে উপস্থিত? সব জায়গায় সব কিছু বলতে হয়না।

আফ্রাজ- ঠিক আছে আর কিছু বলবো না তোমরা কথা বলো।

বলেই আফ্রাজ উপরে চলে যায়। আমি এখনো চুপচাপ মাথা নিচু করে আছি। আরো কিছুক্ষণ কথা বার্তা বলে উপরে রুমে চলে যাই। গিয়ে দেখি আফ্রাজ চুপচাপ ল্যাপটপ এ কি যেনো করছে। আমি ভাবছি এখন কি প্রশ্ন করবো কি করবো না। প্রায় ১০মিনিট ভাবলাম। আমায় এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আফ্রাজ ল্যাপটপ এর দিকে তাকিয়ে বলতে লাগে,

আফ্রাজ- কি হলো ওভাবে খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে আছো কেন? কিছু বলবা? বললে বলো আমি পালিয়ে যাচ্ছি না।

আমি- এই আপনি সবসময় ৬লাইন বাড়িয়ে কথা বলেন কেন বলেন তো?

আফ্রাজ- কই ৬লাইন বাড়িয়ে বললাম?

আমি- কাজের কথার খবর নাই সবসময় আজাইরা কথা বলে কান খেয়ে ফেলেন।

আফ্রাজ- এই আমি কোনটা কাজের কথা বলিনি বলোতো?

আমি- রিদ ভাইয়া বেচে আছেন মারা যায়নি জেনেও কি করে আমার উপর মিথ্যা অপবাদ দিলেন আপনি?

আফ্রাজ আমার কথায় যেনো শকড হয়। কিছুক্ষণ চুপ থেকে কি যেনো ভাবে। আমি তো ননস্টপ প্রশ্নের উপর প্রশ্ন করেই যাচ্ছি।

আমি- কি হলো কোনো জবাব নেই কেন উত্তর দিন আমায়? লজ্জা লাগলো না আমার উপর এরকম দোষ চাপাতে?(ঘৃণা মিশ্রিত কন্ঠে)
,
,
,
,
,
চলবে❤️

(এখন সকম ধরণের রহস্য ফাস হবে। সব জানার পরে কি মাইরা আফ্রাজ কে মেনে নিবে? সেদিন কি ঘটেছিলো যার জন্য আফ্রাজ মাইরা কে খুনি দোষারপ করেছিলো?)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here