মান অভিমান পর্ব -০৪

#মান_অভিমান
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#৪_পর্ব
,
সূর্যটা প্রায় মাথার উপর ঘড়িতে হয়তো বা দুইটা ছুঁই ছুঁই কিংবা এর কম, একটা মোটা সোটা ফাইল বুকের সাথে চেপে ধরে হেঁটে চলেছে ইয়ানা, অনেক কষ্টে অর্নাসটা শেষ করে এখন বসে আছে কেননা এর পরে আর পরার টাকা নাই এখন কষ্ট করে ছোট খাটো একটা চাকরি যোগার করতে পারলেই শান্তি, তাতেই মা মেয়ের হয়ে যাবে, বাবা যদি এক্সিডেন্ট এ মারা না যেতো তাহলে হয়ত এতো কষ্ট সয্য করতে হতো না, তাতে কি আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে। হাঁটতে হাঁটতে নিজের গন্তব্য স্থানে পৌঁছে গেছে সকালে বাবার বসকে ফোন করেছিলাম এই আশায় যদি বাবার চাকরিটা কোনো রকমে আমায় দেওয়া যায় সেই জন্য, তো বস বলছে দুপুরের দিকে ওনার বাসায় যেতে সেই জন্যই আশা,, ফাইলটা ধরে কোনো রকমে কলিং বেলটা চাপলাম প্রায় অনেক সময় পরে একজন ভদ্র মহিলা এসে দরজাটা খুলে দিলো তারপর অমায়িক একটা হাসি দিয়ে বলল,, কাকে চাই??

কি সুন্দর সেই হাসি আমি একটা মেয়ে হয়ে ওনার হাসির প্রেমে পড়ে যাচ্ছি বয়স কালে ওনি হয়ত অনেক সুন্দরী ছিলো যাকে বলে চোখ ধাঁদানো সুন্দরী আচ্ছা ওনার কোনো ছেলে মেয়ে আছে না জানি ওরা কত সুন্দর ,, আমার ভাবনার মাঝেই ওনি আবার বলে উঠল ,, বললে নাতো কাকে চাই??

আব ইয়ে মানে বলছি যে এটা কি আশরাফ চৌধুরীর বাসা?? ওনি কি বাড়িতে আছেন একটু ডেকে দেওয়া যাবে??

ওনি এখন বাড়িতে নেই কিন্তু আর কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসবে তুমি বরং ভিতরে গিয়ে বসো।

জি আচ্ছা ঠিক আছে। মহিলা টি ইয়ানাকে নিয়ে বাড়ির মধ্যে চলে গেলো তারপর ইয়ানাকে সোফায় বসতে বলে ওনি রান্না ঘরের দিকে চলে গেলো ইয়ানা পুরো বাড়ি দেখতে লাগল বাড়িটা অবশ্য ভালোই বড়ো, হবেই তো বড়লোক মানুষ , ইয়ানা বসে নিজের কাগজ গুলো ঠিক করে টি টেবিলের উপর সাজিয়ে রাখছিলো তখনি পিছন থেকে কেউ বলল,, এই কে তুমি বাসার মধ্যে আসলে কীভাবে, এই তুমি কি চোর? না না চুন্নী?? তাহলে তো এখনি পুলিশকে ডাকতে হবে।

আচমকা কথা বলায় ইয়ানা চমকে গেলো পিছনে তাকিয়ে আরেকদফা চমকে গেলো কেননা যে কথাগুলো বলেছে সে স্বাভাবিক নয় মানে তার মুখে ফেসপ্যাক দেওয়া ওটা শুকিয়ে যাওয়াই কেমন যেনো ভয়ানক লাগছে। ইয়ে মানে আমি হলাম মানে।

কি মানে মানে করছো করবো পুলিশ কে ফোন দিনে দুপুরে চুরি করতে আসছো তাও আবার এতো ভালো পোশাক পড়ে ওমা আবার দেখছি সাথে কাগজপত্র ও আছে তা বলছি যে তুমি কি কোনো ডিগ্রি প্রাপ্ত চুন্নী??

মহিলার বলা কথায় ইয়ানা পুরাই শক হয়ে গেছে কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না তাই চুপ করে আছে, তখনি রান্নাঘর থেকে আগের মহিলা বার হয়ে এসে বলল, আরে কি করছিস মালতি ও চোর হবে কেনো ওতো তোর ভাই এর কাছে এসেছে হয়ত কোনো কাজের জন্য।

আহ আপু তোমাকে কতবার বলব আমার নাম মালতি নয় মধু মালতি আর ছোট্ট করে মধু মানে হানি,, আর এই মেয়ে এতোক্ষণ কথা বলোনি কেনো??

কিভাবে বলবে তোর মুখটা আয়নায় দেখেছিস পুরাই পেত্নী লাগছে আর কয়দিন পর মেয়ে বিয়ে দিবি এখনো এসব লাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিস লোকে কি বলবে।

কি বলো আপু প্যাকটা এরি মধ্যে শুকিয়ে গেলো?? তাহলে যাই ধুয়ে ফেলি নয়ত আবার আমার সুইট স্কিনটা নষ্ট হয়ে গেলো।

তুমি ওর কথায় কিছু মনে করো নাহ ও এমনি,, বলছি তুমি কি কিছু নেবে, চা কফি।

পানি, পানি লাগবে একদম ঠান্ডা পানি।

আচ্ছা তুমি এখানে বসো আমি এনে দিচ্ছি,। মহিলাটি ডাইনিং থেকে পানি এনে দিলো ইয়ানাকে,, কেবলি পানিটা খাবে বলে মুখের সামনে ধরেছে তখনি সিঁড়ি বেয়ে কাউকে নামতে দেখে সেই পানিটা আর খাওয়া হলো নাহ ফুরুত করে মুখ থেকে বেরিয়ে গেলো আর সাথে বেশম লাগা ফ্রী। আর্দ্র রুমে একটা মিটিং করছিলো আসলে বিদেশে ওর আর মেহরাব এর একটা রেস্টুরেন্ট আছে খুব বড় না হলেও মুটামুটি প্রায় লোকই চেনে সেটারই মিটিং করছিলো,, মিটিং শেষ করে বাইরে যাওয়ার জন্য কেবলি সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছিলো তখনি সোফায় ইয়ানাকে বসে থাকতে দেখে একটুর জন্য পড়ে যাওয়া থেকে বেঁচে গেলো।

এই মিস বকবক এখানে কি করছে,, দাদুর কাছে বিচার দিতে এসেছে নাকি রাতের ওই ব্যাপারটা নিয়ে।

এই মিস্টার ইগো ওয়ালা এখানে কি করছে কোনো ভাবে কি জানতে পেরে গেছে যে আমি এখানে চাকরির জন্য এসেছি আর চাকরিটা যেনো না পাই সেই জন্য সুপারিশ করতে এসেছে নাকি।

দুজন দুদিকে দাঁড়ায়ে কপাল কুঁচকে দুজনকে দেখছে আর মনে মনে নানা রকম আজগুবি ভাবনা ভেবে কথা বানিয়ে ফেলেছে।
,,,,,,,,,,৷,,,,,
তোর ভার্সিটি ছুটি হয়েছে আরো ১ ঘন্টা আগে তুই বাসায় না গিয়ে এখনো এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?? বাড়িতে জিগাস করলে কি বলবি? নিজেও বাসায় যাচ্ছিস না আর আমাকেও যেতে দিচ্ছিস নাহ মাঝখান থেকে আমার দিনের অর্ধেকটা নষ্ট করে দিলি।

আমি বাসায় যাবো নাহ এখানেই থাকবো আর আপনিও আমার সাথেই থাকবেন, আর মনে আছে তো রাতে দাদু সবাইকে ডেকেছে তাই আপনি একেবারে আমার সাথেই ও বাড়ি যাবেন,আর আমরা দুজন একবারে বিকেলে যাবো।

কখনোই নাহ আমাদের দুজনকে একসাথে যেতে দেখলে সবাই সন্দেহ করবে।

কেউ কিচ্ছু করবে বা বলবে নাহ আপনিই শুধু এক লাইন বেশি বোঝেন এখন চলুন তো আমার সাথে আমায় ফুচকা খাওয়াবেন।

মাহি তুই কিন্তু বেশি,,, মেহরাব কে আর কিছু বলতে না দিয়ে মাহি মেহরাব এর হাত ধরে টেনে নিয়ে রাস্তার উপাশে থাকা ফুচকা ওয়ালার কাছে নিয়ে গেলো,, মামা ঝাল ঝাল করে দু প্লেট ফুচকা দেন তো।

একদম না তোর খেতে ইচ্ছে হলে তুই খা আমার এসব অখাদ্য খাওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই।

কিহ বললেন আপনি?? আপনি বললেন টা কি আপনি কি জানেন এই ফুচকায় কতটা ভিটামিন আছে,, এটা যখন আপনি মুখের মধ্যে দিবেন তখন পুরো মুখটা ভরে যাবে তারপর আস্তে করে চোখটা বন্ধ করে চাবন দিবেন গালের মধ্যে টকটক ঝাল ঝাল লাগবে আহ কি সুখকর একটা মুহুর্ত আর আপনি কিনা এটা কে অখাদ্য বলছেন ছি মেহরাব ছি।

এই আমাকে এতো জ্ঞান দিতে হবে না তোর খেতে ইচ্ছে হলে তুই খা আর আমি তোর থেকে বড় তাই আমায় ভাই বলবি এর পর থেকে নাম ধরে ডাকলে দেবো একটা কানের নিচে।

নাহ ভাই ডাকবো না বরকে কি কেউ ভাই ডাকে আর আপনি আমার কোন জনমের ভাই শুনি।

কি বললি??

আব মামা ফুচকা হয়েছে?? হলে দিন তাড়াতাড়ি নয়ত বেঘোরে আমার প্রাণ টা যাবে। দু প্লেট ফুচকা নিয়ে মাহি মেহরাব এর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো ,, তোকে বললাম তো যে আমি ফুচকা খাবো না তার পরেও দু প্লেট আনলি কেনো??

আরে আমি কি আপনার খাওয়ার জন্য এনেছি নাকি এগুলো সবই আমি একাই খাবো এখন নেন প্লেটটা ধরুন তো,, মেহরাব প্লেটটা হাতে নিয়ে চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নিলো যে চেনা মানুষ কেউ আছে নাকি, কেউ দেখে যদি দাদু কে ভুলভাল কিছু বলে দেয় তাহলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। ওদিকে মাহি গপাগপ করে একটার পর একটা ফুচকা খেয়েই চলেছে লাস্টে দুইটা ফুচকা বাকি আছে ওটা মেহরাব কে দেখিয়ে বলল, নিন এই দুটো আপনার জন্য পটাপট করে খেয়ে নিন তো।

একদম না আমি মোটেও এগুলো খাবো নাহ।

দেখুন খেয়ে নিন কিন্তু তা না হলে কিন্তু আমি।

তুই কি??

তা না হলে আমি, আমি, এখানে চেঁচিয়ে বলবো যে আপনি আমায় চুমো খেয়েছেন।

কিহ?? এটা তো ডাহা মিথ্যা কথা আমি আবার তোকে চুমো খেলাম কখন?? আর তুই কি সবাইকে তোর মতো বোকা ভেবেছিস?? তোর কি মনে হয় তুই এসব বলবি আর সবাই তোর কথা বিশ্বাস করে নেবে??

হ্যাঁ নেবেই তো কেননা আমি মেয়ে, এখন ভাবুন এই ভরা রাস্তায় আমি যদি চেঁচিয়ে এই কথাটা বলি তাহলে কিন্তু আপনাকে এই অবেলায় গণ পিটুনি খেতে হবে,, এখন আপনিই ভাবেন পিটুনি খাবেন নাকি ফুচকা।

মেহরাব রেগে চোখ বড়বড় করে মাহির দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,, খুব বার বেরিছিস একবার তোকে বাগে পাই দেখাবো মজা।

মজা দেখাবেন নাকি খাজা খাওয়াবেন সেটা পরের ব্যাপার এখন তো ফুচকা দুটো খান,,, মেহরাব রাগে ফুসফুস করতে করতে একটা ফুচকা মুখে দিলো, কোনো রকম চিবিয়ে ওটা গিলে আরেকটা মুখে দিলো মুখেরটা শেষ হওয়ার পরেই অনেক ঝাল লাগতে শুরু করলো কেননা ওর এসব কিছু খাওয়ার অভ্যাস নেই তাই ঝালে চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে মেহরাব এর এমন শুসানো দেখে মাহি চারিদিকে একবার চোখ বুলিয়ে টুপ করে মেহরাব এর গালে চুমো দিয়ে দিলো এতে মেহরাব এর ঝাল না কমলেও চরম অবাক হয়ে মুখটা হা হয়ে গেছে।

চলবে,,,,,???

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here