মান অভিমান পর্ব -০৬

#মান_অভিমান
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#৬_পর্ব
,
আর্দ্রর বাবার কথায় ইয়ানা মনে মনে প্রচন্ড ভাবে ভেঙ্গে পড়ল ওর শেষ আশাটাও পূরণ হলো নাহ এখন কি করবে ও একা ওর মাকে নিয়ে কোথায় যাবে মামারও তো ওতো প্রভাবশালী নয় যে ওদের দায়িত্ব নেবে , এসব ভেবে অনেক কান্না পাচ্ছিলো তবুও নিজেকে শক্ত করে বলল, ঠিক আছে স্যার আমি তাহলে আসছি।

আরে দাঁড়াও বসো এখানে আমার কথা এখনো শেষ হয়নি আমি বলতে চেয়েছি যে তোমার বাবার চাকরিটা তোমায় হয়ত দিতে পারবো নাহ, কেননা তোমার বাবা একজন বুদ্ধিমান এবং অনেক বিচক্ষণ একজন মানুষ ছিলেন, ওনি ওনার নিজের শ্রম আর মেধা দিয়ে ম্যানেজার পোস্ট এ আসতে পেরেছিলো ওনাকে তো আর এমনি এমনি এতোবড় একটা পোস্ট দেয়নি,, আর সে ক্ষেত্রে তুমি নিতান্তই এখন অনেক কম বয়সী আর তোমার তেমন অভিজ্ঞতা ও নেই তাই আমি বলছিলাম যে তোমার বাবার পোস্ট টা হয়ত আমি তোমায় দিতে পারবো নাহ তবে তোমার যোগ্যতা অনুযায়ী তোমাকে একটা পোস্ট অবশ্যই দিতে পারি হয়ত সেটা অনেক ছোট পোস্টে হবে তবে আমার তোমার উপর বিশ্বাস আছে তুমি তোমার বাবার মতো নিজের কাজ আর মেধা দিয়ে এই পোস্ট টা আদায় করে নেবে,, তোমার বাবা অনেক ভালো একজন মানুষ ছিলেন আমার অনেক কাছের কেউ ছিলো বলতে পারো বন্ধুর মতো তাই আমি তোমাকেও একটা সুযোগ দিতে চাই দেখি তুমি পারো কি নাহ।

আর্দ্রর বাবার কথা শুনে ইয়ানা অনেক খুশি হয়েছে ও ভাবতেও পারিনি চাকরিটা ও পাবে, লোকটা অনেক ভালো তবে একটু গম্ভীর,, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ স্যার আমি অবশ্যই নিজেকে আমার বাবার যোগ্য সন্তান হিসাবে গড়ে তুলার চেষ্টা করবো।

নো এখন আমি তোমার স্যার নই তুমি অফিসের বাইরে আমায় আংকেল ডাকতে পারো আর অফিসে তো স্যার,।

ঠিক আছে স,,নাহ আংকেল তাহলে আমি এখন যাই??

হুমম, আর শোনো সন্ধ্যায় আমাদের বাসায় একটা অনুষ্ঠান আছে আমি চাই তুমি তোমার মা কে সাথে নিয়ে আসো তাহলে আমি অনেক খুশি হবো।

অবশ্যই নিয়ে আসবো আংকেল আপনি বলেছেন আর আমি সেটা শুনবো না এটা আবার হয় নাকি, আমি ঠিক সময়ে মা কে নিয়ে চলে আসবো।
,,,,,,
আমি চাইছি আজকে আমাদের বাড়িতে সন্ধ্যায় একটা ছোট খাটো অনুষ্ঠানের ব্যাবস্হা করতে আর তোমরা সেটার আয়োজন করবে ঠিক আছে।

সেটা না হয় বুঝলাম কিন্তু অনুষ্ঠান টা কিসের জন্য দাদু??

আমি চাই আর্দ্র আর মাহির বিয়েটা যেনো তাড়াতাড়ি হয়ে যায় এই জন্য আজকে সন্ধ্যায় সবার উদ্দেশ্য তোমাদের বিয়ের কথাটা জানিয়ে দেবো।

দাদুর কথা শুনে মেহরাব এর মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেলো, এতোক্ষণের হাসি হাসি মুখটা মহুর্তেই গোমরা হয়ে গেলো, সেটা আর্দ্র খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পেরেছে তাই ওর দাদুকে বলল,, আচ্ছা দাদু তুমিই তো একটু আগে নিচে ওই মেয়েকে কত ভালো ভালো কথা বলে আসলে যে মেয়েদের পড়াশুনা করা উচিত আর আমার জানা মতে মেয়েটা অর্নাস শেষ করে ফেলেছে, কিন্তু সেই হিসাবে মাহি তো কেবল তৃতীয় বর্ষে আর আল্লাহ না করুক আমার সাথে বিয়ে হওয়ার পর যদি আমার কিছু হয়ে যাই তাহলে তো মাহিকে সেই ওর বাবার ঘাড়েই বসে খেতে হবে আর ওর তো কোনো ভাইও নেই যে ওদের সংসার এর হালটা ধরবে, ওকেই তো সব করতে হবে, কিন্তু ও যদি পড়াশুনা শেষ না করে বিয়ে করে তাহলে তখন কি হবে??? তবে তুমি যখন সিদ্ধান্ত নিয়েছো তখন সব কিছু ভেবেই নিশ্চয়ই নিয়েছো তাই নাহ?? ঠিক আছে তাহলে আজকে আমাদের বিয়ের কথাটা সবাইকে জানাই দিও আর তারিখ তাও।

আর্দ্র কথা শুনে ওদের দাদু ভাবনায় পড়ে গেলো সত্যি তো এভাবে তো কখনোই ভেবে দেখা হয়নি আর্দ্র তো ঠিকি বলেছে,, অনেক্ক্ষণ ভেবে আলতাফ চৌধুরী বলল,, তাহলে বরং তোদের বিয়েটা আরো এক বছর পিছিয়ে দিই আর ততদিনে তো মাহির অর্নাস টাও শেষ হয়ে যাবে কি বলিস?

সত্যি দাদু?? তুমি একদম ঠিক কথা বলেছো আজকে তাহলে শুধু অনুষ্ঠান টা হোক বিয়েটা না হয় আরো এক বছর পরেই হলো ততদিনে আমরাও আরো ভালো পজিশনে যেতে পারবো কি বলো??

হুমম তাহলে এই কথায় থাকলো এখন যা অনুষ্ঠান এর ব্যাবস্হা কর।

আরো একটা বছর সময় পেয়ে গেলি, এক বছর কিন্তু অনেকটা সময় মেহরাব এখনো সময় আছে নিজের মনে কথাগুলো বলে দে প্রকাশ কর, আমি জানি তুই অনেক চাপা স্বভাবের আর এটাও জানি তুই কেনো মাহিকে মেনে নিতে পারছিস না,, তবে একটা জিনিস কি জানিস নিজের ভালোবাসা কে ধরে রাখতে শেখ নয়ত হারিয়ে গেলে পরে হাজার খুঁজলেও পাবি না,,, কথাগুলো বলে আর্দ্র চলে গেলো, আর মেহরাব ওখানে দাঁড়িয়েই আর্দ্রর বলা কথা গুলো ভাবতে লাগল, তাহলে কি আর্দ্র সবটা জেনে গেলো??
,,,,,,
ইশান হলো মেহরাব এর ছোট ভাই কেবলি ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে ক্লাস থেকে বার হয়ে হেঁটে যাচ্ছিলো,,, এখান থেকে আবার সোজা আর্দ্র ভাইদের বাসায় যেতে হবে ওখানে আবার অনুষ্ঠান আছে,, শিস দিতে দিতে ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে এক হাত দিয়ে ব্যাগ ধরে রেখেছে আর আরেক হাত পকেটে দিয়ে হেঁটে আসছিলো তখনি দেখলো থিয়েটার রুমে একটা ছেলে একটা মেয়েকে রেপ করার চেষ্টা করছে, ইশান যলদি গিয়ে দরজার সামনে গিয়ে দেখলো মেয়েটা আর কেউ নাহ আর্দ্রর চাচাত বোন অনু ইশান ব্যাগটা ফেলে দিয়ে হিরোর মতো দৌড়ে গিয়ে অনুর উপরে থাকা ছেলেটাকে একটা ঘুষি দিয়ে নিচে ফেলে দিলো আর নিচে পরে থাকা অনুকে ধরে তুলে বলল,, তোর কিছু হয়নি তো??

ইশানের এমন কাজে অনু রেগে গিয়ে বলল, এটা কি হলো তুই ওকে মারলি কেনো??

আরে আজব পাবলিক তো আমি তোর উপকার করলাম আর তুই আমাকে ধন্যবাদ না দিয়ে উল্টে ঝাড়ি মারছিস , ,বাহ কি যুগ আসলো ভাবা যাই।

ওই তোদের ঝগড়া শেষ হলে দয়া করে আমাকে এখান থেকে উঠা কমরটা তো মনে হয় ভেঙেই গেছে।

পিছন থেকে মেয়েলি কন্ঠ শুনে ইশান পিছনে তাকিয়ে দেখলো ও যাকে ছেলে মনে করে ঘুষি দিয়েছিলো আসলে সে ছেলে নয় বরং ওদের ফ্রেন্ড হিয়া,,, অনু গিয়ে যলদি করে হিয়াকে নিচে থেকে তুলে দাঁড় করালো হিয়া কমরে হাত রেখে কোনো রকমে দাঁড়ালো,।হিয়া তুই?? আর তুই ছেলের পোশাক পরে কি করছিলি?? আর অনুর সাথেই বা কি করছিলি??

তুই কি গাধা? ভালো করে তাকিয়ে দেখ এটা থিয়েটার রুম আর আমরা নাটকের রিহার্সাল করছিলাম মাঝখান থেকে তুই এসে সব পন্ড করে দিলি, সব খানে হিরোগিরি দেখানো শুধু।

অনুর কথায় ইশান যেনো বোকা বনে গেলো তারপর ভালোকরে তাকিয়ে দেখলো সত্যি এটা থিয়েটার রুম ইশান কেবলা মার্কা হাসি দিয়ে নিচে থেকে ব্যাগটা কাঁধে তুলে নিয়ে যাওয়ার আগে বলল,, ওহ সরি সরি গালর্স আমি বুঝতে পারিনি, তোরা রিহার্সাল কর আর হিয়া তুই ভালো করে অনুকে রেপ কর না মানে রিহার্সাল কর,, ওকে? এই বলে ইশান কোনো মতে ওখান থেকে চলে গেলো আর হিয়া কমরে হাত রেখে দাঁত কিড়মিড় করে ইশান এর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকল।
,,,,,,,,,
পুরো বাড়ি সাজিয়ে এখন আর্দ্র মেহরাব আর ইশান রেডি হতে গিয়েছে ওরা তিন জনই রেডি হয়ে নিচে নামল, ডয়িং রুমে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলো তখনি মাহি আর অনু হাসাহাসি করতে করতে সিড়ি দিয়ে নামছিলো কথা বলতে বলতে মেহরাব আর ইশান সিঁড়ির দিকে তাকাতেই ওদের চোখ আটকে গেলো মনে হচ্ছে মানুষ রুপি কোনো পরী নামছে,, অনু আর মাহি এসে ওদের পাশে দাঁড়ালো,, শোন না অনু তোকে না আজকে পুরাই৷

কি কি বল না বল।

তোকে না আজকে পুরাই পেত্নী লাগছে একটু কম সাজতে পারিসনি মনে হচ্ছে সারা মাসের ময়দা একদিনেই মুখে দিয়েছিস ।

মোটেও না আমি জানি আমায় যথেষ্ট সুন্দর লাগছে আসলে কি বলতো আমায় অনেক সুন্দর লাগছে তো তাই তোর হিংসে হচ্ছে বুঝি তো আমি হিংসুটে ছেলে কোথাকার।

মাহি চুপিচুপি গিয়ে মেহরাব এর পাশে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে বলল, আমায় কেমন লাগছে??

অতুলনীয় যার কোনো তুলনা হয় না এটা বলে মেহরাব ওখান থেকে চলে গেলো আর মাহি হ্যাঁ করে দাঁড়িয়ে থাকল মেহরাব হঠাৎ করে কি বলল সবটা ওর মাথার উপর দিয়ে গেছে।

আর্দ্র কিছু একটা দরকারে তড়িঘড়ি করে দরজা দিয়ে বাইরে যাচ্ছিলো তখনি কারো সাথে ধাক্কা খেলো তবে সামনের জন হয়ত পড়ে যাবে তাই আর্দ্র কোনো কিছু না ভেবে তার কমর শক্ত করে চেপে ধরল।

চলবে,,,,,,,??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here