মান অভিমান পর্ব -০৭

#মান_অভিমান
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#৭_পর্ব
,
আরে আংকেল একটু দেখে চলবেন তো এখনি তো পড়ে গিয়ে বেথ্যা পেতেন আর এই বয়সে পরে গেলে যেগুলো দাঁত অবশিষ্ট আছে তার একটা ও আর আস্তো থাকতো নাহ।

ওহ তোমাকে অনেক ধন্যবাদ আসলে কি বলতো যলদি করে আসতে গিয়ে হুচোট খেয়ে পরে যাচ্ছিলাম তুমি না ধরলে হয়ত পড়ে গিয়ে দাঁত ভাঙ্গত,, আসলে কি বলোত মানুষ না এখন ধীরে চলতে ভুলেই গেছে সবাই এখন সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে চলতে চাই এই জন্যই তো এতো বেশি বিপদে পড়ে যেমন এখন আমি পরলাম, আর হুচোট কেনো খাই তাহলে শোনো তোমাকে একেবারে প্রথম থেকে বলি হোচট মানুষ দুই ভাবে খাই যেমন কেউ উষ্টা খাই আবার কেউ উল্টে পরে যাই বুঝলে,, লোকটা এভাবে আরো কিছুক্ষণ বকবক করল আর্দ্র না পারছে যেতে না পারছে শুনতে, কেনো যে আগ বারিয়ে ওনাকে ধরতে গেলাম না ধরলেই ভালো হতো অন্তত ওনার এই হুচোট নিয়ে বকবক শুনতে হতো নাহ,, আর্দ্র দেখলো লোকটা বকবক করেই যাচ্ছে থামার কোনো নামই নেই অগত্যা আর্দ্র বলল, আংকেল আপনাকে ভিতরে ডাকছে।

ওহ আচ্ছা আমি তো ভুলেই গিছিলাম আচ্ছা শোনো তাহলে আমি তোমাকে পরে সব কিছু বিস্তারিত বলবো এখন যাই তাহলে।

যাক বাবা বাঁচা গেলো, এনার বকবক এর ঠেলায় আমি কি জন্য বাইরে যাচ্ছি সেইটাই ভুলে গেছি,, আর্দ্র মনে করতে করতে বেরোতে গিয়ে কারো মাথার সাথে টক্কা খেলো,, ওফ আজকে কপাল টাই খারাপ শুধু ধাক্কার পর ধাক্কা খাচ্ছি, কথাটা বলে আর্দ্র সামনে তাকিয়ে দেখে ইয়ানা সামনে দাঁড়িয়ে কপালে হাত দিয়ে কপাল ডলছে,, ওহ আপনি এই জন্যই তো বলি দিনে দুপুরে কে আবার আমার সাথে ধাক্কা খাবে আপনার তো আবার চোখ থাকতে অন্ধ।

এখন তো মনে হচ্ছে অন্ধ আমি নই আপনি,, কেননা এটা দিন দুপার নয় এখন সন্ধ্যা ওকে,, সরেন সামনে থেকে যত্তসব,, ইয়ানাকে পার করে আর্দ্র সামনে যেতেই দেখল একজন ভদ্র মহিলা দাঁড়িয়ে আছে, কি পবিত্র একটা মুখ একদম ফুলের মতো আর্দ্র কিছুক্ষণ মহিলাটির দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, আপনি??

আমার মা কেনো আপনার কোনো সম্যসা??

এনি আপনার মা?? দেখে তো মনে হচ্ছে নাহ,, এতো সুন্দর শান্ত শিষ্ট আর পবিত্র একজন এর মেয়ে হয়ে আপনি এতো বাঁচাল আর ঝগড়ুটে কেমনে হলেন বুঝলাম নাহ।

আপনি,,,ধ্যাত, আম্মু চলোত এনার সাথে কথা বলে সময় নষ্ট করার কোনো মানেই হয় নাহ,, ইয়ানা ওর মাকে নিয়ে ভিতরে চলে গেলো,, তারপর আর্দ্রর বাবার সাথে পরিচয় করায়ে দিলো সাথে বাড়ির বাকি সবার সাথেও পরিচয় করায়ে দিলো,, অনেক রাত পযন্ত অনুষ্ঠান হলো শেষে ইয়ানারা খাওয়া দাওয়া করে বাড়ির পথে রওনা হলো।পরদিন থেকে ইয়ানা অফিস জয়েন করল আর নিয়মিত অফিস যাওয়া শুরু করল।

১ সপ্তাহ পর।

মেহরাব রেডি হচ্ছে ও অনেক ভেবে চিন্তে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে আজকে মাহিকে ওর মনের কথাটা বলেই দেবে কেননা মেয়েটা ওকে অনেক ভালোবাসে আর এতো দিন তো ওকে ইগনোর করলাম কিন্তু তবুও ওর ভালোবাসা একটুও কমেনি বরং আরো বেড়েছে, আর আর্দ্র ঠিকি বলেছে মনের কথা মনে চেপে না রেখে বলে দেওয়াই ভালো নয়ত পরে আফসোস করতে হবে। মেহরাব রেডি হয়ে বাইরে বেরোতেই ওর মায়ের সামনে পড়ল,, ওহ তুই আমি তো তোর কাছেই যাচ্ছিলাম শোন আজকে একটু আমার সাথে মার্কেটে যাবি??

কেনো??

ওমা কেনো আবার জানিস নাহ? ভাবছি মাহির জন্য একটা আংটি আর একটা গলার হার বানাবো আর আর্দ্রর জন্য একটা আংটি আর একটা চেন , তোকে তো বলেছি কাকু(আর্দ্রর দাদু) আমাদের জন্য কত কিছু করেছে ভুলে গেলি কাকুর জন্যই তোর বাবা প্রায় মরতে মরতে বেঁচে গেছিলো, ওনাকে অবশ্য উপর থেকে অনেক শক্ত লাগে কিন্তু মনটা অনেক নরম আর অনেক বড় , নয়ত দেখ আমরা ওনার কে? কোনো রক্তের সম্পর্ক ছাড়াও ওনি তোকে কতটা ভালোবাসে শুধু ওনি কেনো ও বাড়ির সবাই তোকে কত ভালোবাসে তাই এমন কিছু করিস নাহ যাতে ওরা কষ্ট পাই। ময়ের কথা শুনে মেহরাব এর মনে মনে সব আশা ভেঙে গেলো অনেক কষ্ট হচ্ছে তবুও মনকে শক্ত করে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিলো।

আচ্ছা আম্মু আমরা বিকালে যাবো এখন আমি একটু আসছি আমার একটা কাজ আছে এই বলে মেহরাব চলে গেলো।
,,,,,,
নদীর পাড়ে হাতে আইসক্রিম নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মাহি কেননা মেহরাব ওকে এখানেই দাঁড়িয়ে থাকতে বলেছে কি যেন দরকারি কথা বলতে তাই,, মাহির ভাবনার মাঝেই ওখানে মেহরাব আসলো,,, সেই কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছি জানেন? পা বেথ্যা হয়ে গেছে আচ্ছা যাই হোক এখন বলেন কি বলার জন্য এখানে ডেকেছেন।

মেহরাব একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে নদীর মাঝে ছোট ছোট ঢেউয়ের দিকে তাকিয়ে বলল,, বিয়ে করবি আমায়??
,,,,,,,,
ইশান ক্লাসে যাওয়ার সময় দেখল একটা ছেলে অনুর হাত ধরে টানাটানি করছে আর অনু সেটা ছাড়াবোর চেষ্টা করছে, ইশান সেটা দেখে ভাবল হয়ত আজও কোনো নাটকের রিহার্সাল করছে তাই সেদিকে না গিয়ে আবার ক্লাসের দিকে যেতে গেলে অনু ডাক দিলো,, এই গাধা আমাকে বিপদে রেখে কোথায় যাচ্ছিস।

অনুর ইশান ডাক শুনে ইশান একবার দাঁড়িয়ে চারপাশে তাকিয়ে দেখে ভাবল, আমি দাঁড়ালাম কেনো আমার নাম তো আর গাধা নয় তাহলে আমি কেনো দাঁড়ালাম কথাটা বলে আবার হাঁটা শুরু করল, তখনি আবার অনু ডাকলো,, এই ইশান গাধা এদিকে আয় আর আমাকে বাঁচা বলছি। এইবার ইশান দাঁড়াল আর রেগে অনুর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল, এই তুই আমাকে গাধা বললি কেনো??

তো কি বলব দেখছিস না আমি বিপদে পরেছি তবুও আমায় না বাঁচিয়ে এভাবে গাধার মতো চলে যাচ্ছিস কেনো?? ছেলেটার থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলল অনু।

ধুর ছাতা সর তো সামনে থেকে কথাটা বলে ইশান ছেলেটাকে একটা ঘুষি মারল আর ছেলেটা ছিটকে দু তিন হাত দূরে গিয়ে মুখ ধুবরে পড়ল কিন্তু সেদিকে ওদের দুজনের কারোই নজর নেই ওরা তো ঝগড়া করতেই ব্যাস্ত।

তুই দেখলি যে আমি বিপদে পরেছি তারপরেও তুই আমায় বাঁচালি না কেনো?? না দেখার ভান করে ওভাবে চলে গেলি কেনো?? বল শীঘ্রই।

আরে আজব তো কালকে যখন হিয়া তোকে রেপ করছিলো,,

কিহ,,,??

আরে রাগ করছিস কেনো মানে আমি বলতে চাইছি যে কালকে যখন তোরা রিহার্সাল করছিলি তখন তো আমি সত্যি ভেবে হিয়া কে ঘুষি মেরেছি তার জন্য তো আমায় কত কথা শুনালি আর আজকে যখন ছেলেটা তোর হাত ধরে টানাটানি করছিলো আমি ভেবেছি যে আজকেও তোরা রিহার্সাল করছিলি তাই কিছু না বলে চলে যাচ্ছিলাম।

তাই বলে এভাবে আমায় একা একটা ছেলে সাথে রেখে চলে যাবি যদি আমার কিছু হয়ে যেতো,, অভিমানে মাথা নিচু করে বলল অনু।

ওলে লে আমার অনু টা বুঝি মান করেছে? থাক বাবু আর অভিমান করতে হবে না, আর তুই চাইলে আমি সব সময়ই তোর কাছে থাকতে রাজি আছি,, শেষের কথা টা ইশান অনুর কানের কাছে এসে লো ভয়েস এ বলল।
,,,,,,,
আজ এক সপ্তাহ পর ইয়ানা আজকে আবার আর্দ্রদের বাসায় কেননা আর্দ্রর বাবা একটু অসুস্থ তাই অফিস যেতে পারিনি কিছু দরকারি ফাইল এ সাইন করতে হবে এই জন্য নতুন ম্যানেজার ইয়ানাকে ফাইল সহ আর্দ্রদের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে আর্দ্রর বাবার থেকে সাইনটা করিয়ে নেওয়ার জন্য যদিও এখানে আসার কোনো ইচ্ছেই ছিলো না ইয়ানার, এখানে আসলেই ওই ইগো ওয়ালা লোকটার সাথে দেখা হবে,,, এই তো বাবুর নাম মনে করতেই বাবু এসে হাজির।

এই যে মিস বকবক বাবা আপনাকে উপরে বাবার রুমে যেতে বলেছে।

এই যে মিষ্টার ইগো ওয়ালা একটা কথা ভালো করে আপনার ওই মাথায় গেঁথে নিন আমার নাম মিস বকবক নই আমার নাম মিস ইয়ানা ওকে??

আপনিও একটা কথা আপনার ওই মোটা মাথায় গেঁথে নিন আমার নাম, ইগো ওয়ালা নয় আমার নাম আর্দ্র চৌধুরী ওকে, সরুন সামনে থেকে।

চলবে,,,,,??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here