মান অভিমান পর্ব -১৫

#মান_অভিমান
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#১৫_পর্ব
,
ডয়িং রুম ভর্তি মানুষের মধ্যে আর্দ্র কে দেখে এভাবে ইয়ানা নিজের ঠোঁট ঢেকে ফেলায় আর্দ্র একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলো কোনো মতে শার্টের বোতামটা লাগিয়ে নিচে এসে সোফায় বসে পড়ল। ইয়ানা এখনো আর্দ্রর দিকে তাকিয়ে এক হাত দিয়ে নিজের ঠোঁট ঢেকেই রেখেছে মাহি আর মেহরাব মিটমিট করে হাসতেছে, অনু ওখানে নেই চেঞ্জ করতে গিয়েছে। ভাবি আব না মানে ইয়ানা আপু আপনি ওখানে বসুন না বসুন আমি গিয়ে বরং বড় মামা কে ডেকে নিয়ে আসি??

আচ্ছা ঠিক আছে।

আরে তুমি আবার এসেছো তোমাকে দেখে আমি ভীষণ খুশি হয়েছি সত্যি কি মিষ্টি মেয়ে।

ভালো আছেন আন্টি?? বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল ইয়ানা।

আরে বসো বসো আমাকে দেখে তোমায় দাঁড়াতে হবে নাহ, তুমি এমনি এমনি তো আর আমাদের বাসায় আসার মতো মেয়ে না নিশ্চয়ই কাজের জন্য এসেছো?? তোমাকে কতবার বলেছি ছুটির দিনে বা সুযোগ পেলেই এখানে চলে আসবে, তোমাকে আমার অনেক পছন্দ হয়েছে আর কিছু না হোক দুজনে মিলে গল্প তো করতে পারতাম।

হ্যাঁ হ্যাঁ চলে আসবে তোমাকে আমি অনেক ভালো ভালো বিউটি টিপস দেবো তারপর দেখবে তোমার স্কিন ও আমার মতো সুন্দরী হয়ে যাবে, অবশ্য তুমি এমনিতেও অনেক কিউট।

আর্দ্রর ছোট কাকির কথায় ইয়ানা যেনো কী বলবে তা খুঁজেই পাচ্ছে নাহ তাই আমতা আমতা করছে তখনি আর্দ্রর মা বলল, আরে তুমি ওর কথায় কিছু মনে করো নাহ ও এমনি আর ছোট তুই এখনো এখানে বসে আছিস মুখটা ধুয়ে এসে যলদি রান্না ঘরে আয় কাজ আছে সারাদিন শুধু রুপ চর্চা আচ্ছা তোমরা বসো আমি বরং যাই ওকে।

দেখলি ভাই বড়মাও কেমন ভাবি মানে ইয়ানাকে পছন্দ করে ফেলেছে এখন যদি শোনে যে তুই ও ওকে পছন্দ করিস তাহলে তো নাচতে নাচতে তোদের বিয়ে দেবে।

তোর বাজে বকা বন্ধ করবি আর কি কখন থেকে ভাবি ভাবি করছিস আমি তোকে একবার ও বলেছি ওকে আমার পছন্দ আর আজকে যেটা হলো সেটা নিতান্তই একটা এক্সিডেন্ট ওকে।

তাহলে বলছিস ইয়ানাকে তোর অপছন্দ??

আমি মোটেও সেটা বলিনি ওকে।

মেহরাব আর আর্দ্র কে ফিসফিস করতে দেখে ইয়ানা কান খাঁড়া করে থাকল যদি কিছু শোনা যায় সেই আশায় কিন্তু না ওরা খুবি আস্তে আস্তে কথা বলছিলো আর এভাবে একা ওদের সামনে বসে থাকতে অনেক অসস্তি হচ্ছিল মাহি থাকলেও তাও কথা ছিলো কিন্তু সে তো ওকে এখানে একা রেখে চলে গেছে তাও গেছে তো গেছেই আসার নামে কোনো খোঁজই নেই। মেহরাব আর আর্দ্র কিছুক্ষণ ফিসফাস করে হঠাৎ মেহরাব উঠে দাঁড়িয়ে বলল, গাইস তোমরা কথা বলো আমি একটু আসছি, ইনজয় ব্রো শেষের কথাটা আস্তে করে আর্দ্রর কানে বলে মেহরাব চলে গেলো।
এবার যেনো ইয়ানা একেবারেই একা হয়ে গেলো যেমনটা বাঘের সামনে হরিণ থাকলে হরিণের যেমন অবস্থা হয় ইয়ানা অবস্থাটাও ঠিক তেমনি আশেপাশে তাঁকাচ্ছে আর বার বার হাত দিয়ে নিজের ঠোঁট টা মুছতেছে, কিন্তু আর্দ্রর কোনো ভাবান্তর নেই সে তো একমনে বসে ফোন টিপছে। আর্দ্র আড় চোখে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে দেখল ইয়ানা চোরের মতো কেমন এদিক ওদিক তাকাচ্ছে আর বার বার শুধু মুখে হাত দিচ্ছে আর্দ্র বুঝতে পারছে ইয়ানা হয়ত তখনকার ব্যাপার নিয়ে ওকে এখন ভয় পাচ্ছে তাই ইয়ানাকে সহজ করতে আর্দ্র বলল,, আসলে তখনকার জন্য সরি আমি বুঝতে পারিনি ওমন হবে আর আপনি এখানে নিশ্চিতে বসতে পারেন আমি ওতোটাও খারাপ ছেলে নয়।

আরে না না তখনকার ব্যাপার নিয়ে আমি কিছু মনে করিনি মানে ওটা তো জাস্ট একটা এক্সিডেন্ট আপনাকে সরি বলতে হবে না আর হ্যাঁ আপনি খারাপ ছেলে হয়ত নন কিন্তু ঝগড়ুটে তো অবশ্যই।

ইয়ানার কথায় আর্দ্র হেসে দিলো তারপর দুজনে টুকটাক কথা বলতে লাগল কাজের ব্যাপারে ওদের কথা বলার মাঝেই আর্দ্রর বাবা ওখানে আসলো আর ইয়ানার সাথে কাজ নিয়ে আলচনা করতে লাগল আর্দ্র বসে ফোন টিপছে আর ইয়ানা কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে আর্দ্রর দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছে, আর্দ্র ও ফোন টিপার মাঝে মাঝে ইয়ানার দিকে তাকাচ্ছে তবে সেটা ইয়ানা বুঝতে পারছে না, হয়ত এখান থেকেই প্রেমের জার্নিটা শুরু হবে।
,,,,,,,
কেটে গেছে আরো কয়েকটা মাস এই কয়েক মাসে আর্দ্র আর মেহরাব এর বিজনেস টা আগের থেকে আরো উন্নতি হয়েছে। ইয়ানা আর আর্দ্রর এখন ঝগড়া খুব কম হয়, কেননা এখন তারা খুব ভালো বন্ধু হয়ে গেছে ইয়ানা ও তার কাজের ফাঁকে ফাঁকে আর্দ্র কে কাজে সাহায্য করে। আর ওদিকে মাহি আর মেহরাব এর ভালোবাসা টাও আগের থেকে বেড়েছে বিয়ের পরে প্রেম,, অনু আর ইশান তো প্রেম কম ঝগড়ায় বেশি করে যাকে বলে খুনশুটিময় ভালোবাসা। ভালোবাসা শব্দ টা চার অক্ষরের হলেও এর গভীরতা অনেক কখন কার সাথে কার মনের মিল হয়ে যায় কেউ বলতে পারে নাহ, দুজন দুজনকে পছন্দ করে হয়ত ভালোওবাসে কিন্তু বলতে পারছে নাহ ওই যে শিওর নাহ, আদেও এটা ভালোবাসা নাকি ভালোলাগা এখনো কেউই বুঝেই উঠতে পারছে না। মেহরাব অনেকবার আর্দ্র কে বলেছে এটা ভালোবাসা ও নিজের অজান্তেই ইয়ানাকে ভালোবেসে ফেলেছে কিন্তু আর্দ্র সেটা বিশ্বাস করতে নারাজ তাই মেহরাব আর আর্দ্র কে কিছু বলে নাহ সবকিছু সময়ের উপর ছেড়ে দিয়েছে সময় হলে দুজন দুজনকে ঠিকিই বুঝতে পারবে।
মাহি আর ইয়ানা অনেকটা ফ্রী হয়ে গেছে তবুও মাহি ইয়ানার সাথে ভালোবাসার কথা বলতে পারে না কেননা যতই ফ্রী হোক হাজার হলেও বড় আপু বলে কথা।

আচ্ছা ইয়ানা আপু তোমার কখনো কাউকে ভালোলেগেছে??

হঠাৎ এই কথা বললে কেনো?? চায়ে চুমুক দিতে দিতে বলল ইয়ানা।

নাহ এমনি বললাম আর কি তোমার তো বয়স হচ্ছে বলো বিয়ে তো করাই লাগবে তাই জিগাস করলাম তোমার পছন্দের কেউ আছে কি না যদি না থাকে তাহলে আমরাই ছেলে দেখতাম কি বলো।

পছন্দের তো একজন আছে তবে সেটা ভালোবাসা নাকি ভালোলাগা ঠিক বুঝতে পারছি নাহ।

কিহ কিছু বললে আপু??

আব না না কিছু বলেনি আর কিসব ভুলভাল কথা বলছো এখন এই সব ভালোবাসা টাসা মাথা থেকে বার করে মন দিয়ে পড়ো এখনি তো সময় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার, মন দিয়ে পড়াশুনা করো তাহলেই তো জীবনে কিছু একটা করতে পারবে নয়ত পিছিয়ে পড়বে।

হুমম খুব চালাক তুমি কি সহজে কথা ঘুরিয়ে দিলে তবে আমিও থেমে থাকবো নাহ তোমার পেটের থেকে কথা বার করেই ছাড়বো,, আচ্ছা আপু তাহলে ওঠি যেতে হবে আর তোমার ও তো লাঞ্চ টাইম শেষ তাহলে যাও আর হ্যাঁ কালকে তো শুক্রবার বাড়িতে আসছো তো?? আমিও আসবো তারপর জমিয়ে আড্ডা হবে।

আচ্ছা দেখবোনে ।
,,,,,,,
তাহলে বুঝেছিস তো কি করতে হবে তোদের যেভাবে যেভাবে বললাম ঠিক তেমন তেমন করবি ওকে??
মাহি মেহরাব অনু আর ইশান চারজনের মাথা একসাথে করে চার জনই শলা পরামর্শ করছে ওরা বড়সর একটা প্লান করেছে কালকে ছুটির দিনে আর্দ্র ইয়ানার মনের মধ্যে কি চলছে সেটা জানতেই হবে তাই মাহি বলেছে অনু আর্দ্র কে নিয়ে রেস্টুরেন্টে যাবে আর এমন ভাবে বসবে যেনো অনুর মুখ দেখা না যায় তবে আর্দ্রর মুখ দেখা যাবে আর মাহি যেভাবেই হোক পটিয়ে ইয়ানাকে সেই একি রেস্টুরেন্টে নিয়ে যাবে তারপর দেখা যাবে আর্দ্র জন্য ইয়ানার মনে কি চলছে ওদের প্লান এর মাঝেই অনু বলে উঠল,, কিন্তু আমরা এতো কষ্ট করে আর্দ্র ভাই এর প্রেম করানো চেষ্টা করছি কেনো যেখানে মাহি আপুর সাথে আর্দ্র ভাই এর বিয়ে ঠিক হয়ে আছে।

অনুর কথায় এতোক্ষণ হাসতে থাকা মাহির মুখ নিমিষেই চুপসে গেলো হাজারো চিন্তা এসে মাথায় ভর করলো কিন্তু মেহরাব ঠিকি জানে আর্দ্র মাহিকে কি নজরে দেখে আর ওর মনে কি চলছে তাই মেহরাব অনুর মাথায় একটা গাট্টা মেরে বলল, এই তোকে এতো কথা বলতে কে বলেছে যা বলেছি তাই কর ওকে।

আর একটা গাট্টা মার ভাইয়া এই মেয়ের মাথায় ঘিলুর ঘ ও নাই সব সময় সব খানে শুধু ভুলভাল কথা বলে।

অনু রেগে ইশানকে কিছু বলতে যেতেই মেহরাব বলল, আচ্ছা তোদের ঝগড়া অফ কর আর ভালো করে কাজে মন দে কালকের প্লানটা যে ঠিকঠাক ভাবেই হয় ওকে আর মাহি এভাবে চুপ করে না থেকে প্লানটা যাতে ভালো ভালো সাকসেসফুল হয় সেটা ভাব।

হমম তাহলে আমাদের কালকের মিশন কি, আর্দ্র আর ইয়ানা আপুর মনের কথা জানা ওকে তাহলে সবাই মেলাও হাত, মেহরাব এর হাতে সবাই হাত মেলাল, ওদিকে আর্দ্র ইয়ানা এর কিছুই জানতে পারলো নাহ যে ওদের আড়ালে ওদের নিয়ে কতবড় মাস্টার প্লান করা হয়েছে।

চলবে,,,,,,??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here