মান অভিমান পর্ব -১৬

#মান_অভিমান
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#১৬_পর্ব
,
ওয়াশরুমের দরজার সাথে ইয়ানাকে চেপে ধরে রেখেছে আর্দ্র রাগে চোখ দিয়ে যেনো আগুন ঝড়ছে চোখ দিয়ে যদি কাউকে পুড়ানো যেতো তাহলে ইয়ানা এতোক্ষণে পুড়ে কয়লা হয়ে যেতো , ইয়ানা যতই সাহসী হোক তবে আর্দ্রর এহেন রুপ দেখে সব সাহস ফুস করে উবে গেছে তবুও ভেঙ্গে পড়লে চলবে নাহ শক্ত থাকতে হবে, রাগে দাঁত কিড়মিড় করেতে করতে বলল আর্দ্র, ছেলেটা কে ছিলো।

আরে আজব আমার জানা মতে ইশান তো ওনার ভাই হবে আর ওনিও তো ইশানকে ভালো করেই চেনে তাহলে আমায় জিগাস করছে কেনো আর ইশান এর সাথে আমায় দেখে এভাবে রাগই বা করছে কেন ইশান তো বয়সে আমার থেকে অনেক ছোট, ইয়ানার ভাবনার মাঝেই আর্দ্র আবার বলল,,কি হলো চুপ করে আছো কেনো বলো ওই ছোলেটা কে আর ও সাথে এতো কথা কিসের তোমার? এতোক্ষণ তো খুব কথা বলছিলে আর এখন আমার সামনে এসে সব কথা বন্ধ হয়ে গেলো?

তারমানে ওনি হয়ত ইশান এর মুখ দাখেনি তাই এমন করছে তবে আমি অন্য ছেলের সাথে কথা বললে ওনার কি ওনিও তো অন্য একটা মেয়ের সাথে গল্প করছিলো তার বেলায়,, আমি যায় সাথে কথা বলি না কেনো তাতে আপনার কি শুনি।

আমার কি তাই নাহ?? আর্দ্র রাগে ইয়ানাকে ছেড়ে পাশের দেওয়ালে একটা পাঞ্চ মেরে বলল, আমার কি মানে বোঝো না আরে আমারি তো সব কিছু।

ম মানে??

কি মানে আরে তুমি বোঝো তোমাকে অন্য কারো সাথে দেখলে আমার সয্য হয় না কেননা আমি, আমি তোমাকে ভালোবাসি ড্যাম ইট।

আর্দ্রর কথায় ইয়ানা তো পুরাই অবাক তবে মনে মনে অনেক খুশিও হয়েছে তবে একটা কথা মনে পড়ায় অনেক অভিমান হলো ওনি যদি আমাকেই ভালোবাসে তাহলে কিছুক্ষণ আগে ওই মেয়ের সাথে কি করছিলো।

কিছুক্ষণ আগে,,

আজকে শুক্রবার বিধায় আর্দ্র কথা মুড়ি দিয়ে ঘুমাচ্ছিলো তখনি অনু এসে আর্দ্র কে ঘুম থেকে উঠায় আর বলে আজকে ওকে নিয়ে ঘুরতে যেতে হবে, আর্দ্র প্রথমে রাজি না হলেও অনু জুরাজুরি করায় রাজি হলো তারপর আর্দ্র ফ্রেশ হয়ে অনুকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো, আর ওদের প্লান মতো মাহিও ইয়ানাকে ভুলভাল বোঝায়ে বাইরে নিয়ে যায়। অনু আর্দ্র কে বুঝায়ে একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে যায় আর এমন ভাবে বসে যেখানে আর্দ্র মুখ ভালো মতো বোঝা যাচ্ছে আর তার কিছুক্ষণ পর ইয়ানা আর মাহিও আসে মাহি এসে অনুর পিছনের সাইটের সিটে বসে আর ইয়ানা বসে মাহির সামনে সেখান থেকে আর্দ্র কে ভালো মতো দেখা যাচ্ছে , আর্দ্র ইয়ানাদের খেয়াল করেনি তবে ইয়ানা আর্দ্র কে অন্য মেয়ের সাথে দেখেই ভিতরে ভিরতে রাগে ফুঁসে, অনুও আর্দ্র কে এটা ওটা বলছে যাতে আর্দ্র ইয়ানাকে দেখতে না পাই।সুযোগ বুঝে মাহি ইয়ানাকে বলে চেয়ার থেকে উঠে কোথাও একটা চলে গেলো আর মাহি যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই ইশান এসে মাহির চেয়ারে বসল আর ইয়ানার সাথে কথা বলতে শুরু করলো। ইশান কে আসতে দেখে অনু আর বেশি কথা বললো না আর্দ্রর সাথে যার দরুন আর্দ্র ফোন টিপতে টিপতে আশেপাশে তাকাতেই দেখল ইয়ানা একটা ছেলের সাথে বসে গল্প করছে এটা দেখেই আর্দ্রর মাথা গরম হয়ে গেলো রেগে হাত মুঠো করে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে থাকল,, ইয়ানার খাওয়া শেষ তাই ও উঠে ওয়াশ রুমের দিকে যেতেই আর্দ্র ও উঠে ইয়ানার পিছে গেলো আর সেখানেই ওকে চেপে ধরল।

বর্তমান,,,

কি হলো চুপ করে আছো কেনো বলো ছেলেটা কে আর ওর সাথে তোমার কিসের সম্পর্ক।

তার আগে আপনি বলেন ওই মেয়েটা কে যার সাথে একটু আগে আপনি হেসে হেসে কথা বলছিলেন।

কেনো মেয়েটার সাথে আমি হেসে হেসে কথা বললে তাতে তোমার কি তোমার এতো জ্বলছে কেনো বাই এনি চান্স তুমি কি আমার পড়ে গেছো নাকি হুমম, দুষ্ট হেসে বলল আর্দ্র।

ম মোটেও না আমি জাস্ট এমনি জিগাস করলাম ওকে আর আপনি যদি না বলেন তাহলে আমিও বলবো নাহ ওই ছেলেটা কে হমম।।

আরে পাগলী ওটা তো অনু ছিলো আজকে শুক্রবার বিধায় ও বলল ওকে নিয়ে বাইরে আসতে ওর নাকি রুমে বসে থেকে বোর লাগছে তাই।

আর আমার সাথে তো ইশান ছিলো তবে ইশান এর আগে মাহি ছিলো কি জানি হঠাৎ করে কোথায় চলে গেলো আর মাহি যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই তো ইশান আসল।

কিহ তারমানে ওহ শিট তোমার কথা শুনে তো মনে হচ্ছে এগুলো আগে থেকেই পূর্ব পরিকল্পিত,

মানে।

মানে হলো আমরা সবাই মিলে প্লান করে এটা করেছি নয়ত আমরা তো জানতেই পারতাম না আমাগো আর্দ্র কাওরে এত্তো গুলা ভালো বাসে অঅঅঅঅঅঅঅ।

হুমম বাবা গো বাবা গো কত রাগ আমার সাথে ভাবি না মানে ইয়ানা আপু কে দেখে মনে হচ্ছিল যেনো আমাকে লবন মরিচ ছাড়ায় খেয়ে ফেলবে তা এতই যখন ভালোবাসো তখন আগে থেকে বলে দিলেই পারতা তাহলে আমাদের বুদ্ধি খাটায়ে এতো প্লান করা লাগত নাহ।

তোরা এখানে??

হুমম আমরা আর ভাইয়া তোমার তো আমাদের ধন্যবাদ দেওয়া উচিত কেননা আমাদের জন্যই আজকে তুমি আপুকে তোমার মনের কথা বলতে পারলে নয়ত তো মনে হয় এ জীবনে আর বলা হতো নাহ।

ওদের কথা শুনে ইয়ানা লজ্জায় পারছে নাহ মাটির নিচে চলে যেতে তবুও কোনো মতে নিজেকে সামলিয়ে বলল, আব তাহলে তোমরা থাকো আমি আসছি। কথাটা বলে ইয়ানা চলে যেতে চাইলে সবগুলা মিলে ইয়ানার পথ আটকিয়ে ধরে মাহি বলল, আপু মানে হলো ভাবি এতো লজ্জা পাওয়ার কি আছে আমরা আমরাই তো বলো কথাটা বলে মাহি আলতো করে ইয়ানাকে ধাক্কা দিলো আর ইয়ানা তাল সামলাতে না পেরে আর্দ্রর বুকে গিয়ে পড়ল, এটা দেখে মেহরাব চোখে হাত রেখে বলল,, আহ মাহি ভুলে যাস কেনো এটা তো রেস্টুরেন্ট আমাদের আর্দ্রর বেডরুম নয় এখানে কি আর সবার সামনে রোমান্স করা যায়।

হুম ঠিক বলেছিস ভাইয়া আমারও না কেমন জানি লজ্জা লাগছে কথাটা বলে ইশান হাত দিয়ে নিজের মুখটা ঢেকে নিলো।

লজ্জা লাগছে তাই না দাঁড়া ওখানে আজকে সব গুলার ক্লাস নেবো আমি, আমারই সাথে থেকে আমার নাকের নিচে দিয়ে এতো বড় প্লান আজকে সব কটার হচ্ছে ।

বারে এখন তো দেখছি উপকার করলেও মার খেতে হয়।

উপকার তোর পিঠের উপর দেবো দাঁড়া কথাটা বলে আর্দ্র ওদের দিকে এগিয়ে যেতেই ইশান অনুর হাত আর মেহরাব মাহির হাত ধরে দৌড়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে গেলো, আর ওদিকে ইয়ানা তো কোনো কথায় বলছে নাহ লজ্জায় এক কোণায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে, আর্দ্র ইয়ানার দিকে এগিয়ে গিয়ে ইয়ানার কানে কানে বলল, তা ম্যাম আপনার কি যাওয়ার ইচ্ছে নেই নাকি এখানেই থাকার প্লান করেছেন, তবে আপনি চাইলে আমি আপনাকে কোলে নিয়ে যেতে পারি কি বলেন করবো নাকি মানে কোলে?

ছিঃ কি খারাপ সরুন তো আমি হেঁটেই যেতে পারবো ওকে কাউকে কোলে নিতে হবে নাহ আল্লাহ আমার দুইটা পা দিছে।

আরে কিছু না করতেই খারাপ উপাধি পেলাম এর চেয়ে তো কিছু করার দরকার ছিলো তা করবো নাকি, এখানে বলো কেউ নাই দেখার মতো কিছু করলে কেউ দেখবে নাহ।

আপনাকে আমি,, হুট সরুন সামনে থেকে বদ পোলা একটা, কথাটা বলেই ইয়ানা মুচকি হেসে ওখান থেকে চলে গেলো আর আর্দ্র ওর নিচের ঠোঁট কাঁমড়ে ধরে হাসতে হাসতে ইয়ানার পিছে পিছে চলে গেলো।
,,,,,,,
সবাই সবার জীবনে তাদের প্রিয় মানুষ কে নিয়ে অনেক খুশি আছেই তবে বলে না সুখের সময় বেশি দিন থাকে নাহ এখানেও ঠিক তাই হলো, আর্দ্রদের বিদেশের হোটেলে একটু সম্যসা হওয়াই ওখানে কারো যাওয়া খুবি প্রয়োজন তাই কোনোদিক উপায় না পেয়ে মেহরাব কেই যেতে হলো, মেহরাব যাওয়ার দুইদিন পরেই আর্দ্র আর মাহির বিয়ের কথা উঠালো আর্দ্র দাদু এই সপ্তাহের মধ্যেই আর্দ্র আর মাহির বিয়েটা সেরে ফেলতে এর চেয়ে আর বেশি দেরি করা ঠিক হবে নাহ আর বিয়ের পরেও মাহি পড়াশুনা করবে আর এই বাড়িতে তো আর্দ্রর দাদুর কথায় শেষ কথা তাই কেউ কিছু বলল না সবাই রাজি হয়ে গেলো।

চলবে,,,,??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here