মান অভিমান পর্ব -২০ ও শেষ

#মান_অভিমান
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#২০_পর্ব
,
আমি যাবো নাহ আমায় ছাড়ুন নয়ত কিন্তু আমি এখানে চিৎকার করে মানুষ জড় করবো বলে দিলাম তারপর সবাই এসে আপনাকে গণ ধুলাই দিবে তখন বুঝবেন কেমন লাগে।

কর চিৎকার তোকে নিষেধ করছে কে, আর যখন মানুষ এসে তোকে বলবে যে তুই চিৎকার করছিস কেনো তখন কি বলবি যে আমার বর আমায় আদর করার জন্য নিয়ে যেতে চাইছে কিন্তু আমি যাবো না তাইতো??

আহ মেহরাব হচ্ছে কি রাস্তায় দাঁড়িয়ে কিসব কথা বার্তা বলছিস, যতই হোক এখানে তোর ভাবিও আছে একটু তো শরম কর। আর মাহি এসব কি হচ্ছে তুই এমন করছিস কেনো যাচ্ছিস না কেনো ওর সাথে।

আপনি সবকিছু জেনেও এটা কেনো বলছেন আর্দ্র ভাই,আর ওনি কি বললো যে আমাকে নাকি ওনার কোনো দরকার নেই আর পরের বউকে নিয়ে ওনি কি করবে তাহলে এখন কেনো আমাকে নিয়ে এমন টানাটানি করছে।

হ্যাঁ আমি তো ঠিকি বলেছি তোকে নিয়ে আমি কি করবো আমি তো আমার বউকে নিয়ে যাবো আর পরের বউ নিয়ে আমি কি করবো ছিঃ আমার এতো সুন্দর বউ থাকতে আমি পরের বউ এর দিকে নজর দিবো কেনো আল্লাহ পাপ দিবে।

মেহরাব এর কথা শুনে ইয়ানা তো মিঠমিঠ করে হাসছে সাথে আর্দ্রও আর মাহি ওদিকে রেগে ফায়ার হচ্ছে আর মনে মনে পণ করে আছে আজকে কিছুতেই ও মেহরাব এর সাথে যাবে না তাই শক্ত হয়ে হোটেলের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। অনেকক্ষণ হয়ে গেছে তবুও মাহি ওখান থেকে এক পাও নড়ছে না তাই দেখে মেহরাব চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে টুপ করে মাহিকে কোলে তুলে নিলো। আরে আরে কি করছেন কি নামান বলছি আমায়।

প্রশ্নই আসে নাহ, আর আমি এতোক্ষণে বুঝতে পারলাম তুই এখান থেকে নড়ছিলি না কেনো।

কেনো?? ভ্রু কুঁচকে বলল মাহি।

আসলে তুই আমার কোলে উঠে যেতে চাইছিলি তাই এমন করে এখানে দাঁড়িয়ে ছিলি আরে এটা তো মুখে বললেই হতো এতো লজ্জা পাওয়ার কি আছে। আর আর্দ্র ভাই আমার আমি গেলাম বল আর ভাবি দোয়া করবেন।

খারাপ লোক একটা,, বিরবির করে বলল মাহি।

হুমম তোমার বরই তো।
,,,
দুইটাই পাগল বলো??

হুমম একদম ঠিকি বলেছেন, মাহি তো এক পাগল আছেই সাথে মেহরাব ভাইও যোগ দিয়েছে।

আচ্ছা তুমি কিন্তু আজকে অফিসে যাওনি বাবা জিগাস করলে কি বলবা??

জানিনা, শুনুন না সামনে একটা ফুসকার স্টল আছে চলুন ফুসকা খাই, আর বিকেলে মাহি আর মেহরাব ভাইয়া আসলে সবাই মিলে অনেক মজা করবো আর ঘুরবো ঠিক আছে??

যথাআজ্ঞা মহারানি এবার চলুন আপনার ফুসকা আপনাকে ডাকছে। আর্দ্রর কথায় ইয়ানা মুচকি হেসে আর্দ্রর বাম হাতটা চেপে ধরে সামনে এগিয়ে গেলো তারপর দুজনে ফুসকার ওখানে গিয়ে ইয়ানা ফুসকা খেতে লাগল তবে অনেক বলেও আর্দ্র কে ফুসকা খাওয়াতে পারল না। ফুসকা খাওয়া শেষে একটু ঘুরে ইয়ানা চলে গেলো আর আর্দ্র ওর অফিসে চলে গেলো।

,,,,,,,,
মাহি আর ইয়ানা দুজনে যুক্তি করে একি রঙের শাড়ি পরে এসেছে আর মেহরাব আর আর্দ্র ও শাড়ি পরে এসেছে যদিও এখন বসন্ত নয় তবুও ওরা চারজনে যেনো বসন্ত উৎযাপন করছে। মাহি মেহরাব এর আর ইয়ানা আর্দ্রর হাত ধরে চারজনে একটা পার্কের মধ্যে পাশাপাশি হাঁটছে। ওই দেখুন ফুসকা আমি ফুসকা খাবো মেহরাব, সামনে ফুসকার স্টল দেখে মাহি মেহরাব এর হাত ঝাঁকিয়ে বলল।

পাগল নাকি একবার ফুসকা খেতে গিয়ে বউ হারাতে হারাতে আবার ফিরে পাইছি আবার ফুসকা খেতে গিয়ে আজীবনের জন্য বউ খোয়াবো নাকি এই ফুসকা আমার জানের কাল, তাই খবরদার ফুসকা খাওয়ার কথা একদম বলবি নাহ।

আহ মেহরাব ওমন করছিস কেনো আমার বোন যখন তোর কাছে ফুসকা খেতে চাইছে তখন তুই ফুসকা খাওয়াবি ওকে।

হুমমম তাহলে তো খাওয়াতেই হবে যতই হোক সুম্মন্ধি বলে কথা আসুন ম্যাম আপনার ভাই যখন বলে দিয়েছে তখন তো আমায় খাওয়াতেই হবে নয়ত আমার ঘাড়ে মাথায় থাকবে নাহ। অতঃপর সবাই মিলে ফুসকার ওখানে গিয়ে ফুসকা খেতে লাগল, আর্দ্র ইয়ানাকে আর মেহরাব মাহিকে খাইয়ে দিচ্ছে চারজনেই খুব হাসি খুশি সবাই হাসতে হাসতে পিছনে তাকাতেই দেখল আর্দ্রর দাদু রাগি চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।মেহরাব কেবলি মাহির মুখে ফুসকা দিতে যাচ্ছিলো তখনি দাদুকে দেখে ওটা আর মাহির মুখে দেওয়া হলো নাহ প্লেটে রেখে দিয়ে শুকনা ঢোক গিলে বিরবির করে বলল,, আগেই বলেছিলাম ফুসকা আমার জানের কাল।

,,,,,,,
ডয়িং রুমে প্রায় সবাই ওদের দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর ওরা চারজনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। সবাই জেনে গেছে যে আর্দ্রর সাথে মাহির নয় বরং ইয়ানার বিয়ে হয়েছে আর মাহির সাথে মেহরাব এর ইয়ানার মাও সেখানে উপস্থিত আছে সব কথা শুনে ওনি তো সটান করে ইয়ানার গালে একটা চড় মেরে অনেক বকাঝকা করেছে।প্রায় অনেকসময় পর দাদু মুখ খুলল, আচ্ছা আমার ভালবাসায় কোথায় কমতি ছিলো তোরা বলবি প্লিজ? এতো বছরে আজ প্রথম মনে হচ্ছে তোরা কখনোই আমায় ভালোইবাসিসনি বরং উপর উপর দেখিয়েছিস ভালোবাসিস কিন্তু ভিতরে ভিতরে আমাকে হয়ত পছন্দই করতি নাহ নয়ত এভাবে আমাকে ঠকাতে পারতি নাহ। আচ্ছা একবার কি আমায় বলতে পারতি নাহ নাকি তোরা আমি কি এতই খারাপ??

দাদু আমরা,,,

থাক তোদের আর কিছুই বলতে হবে নাহ সত্যি আমি খুবি খারাপ অনেক কথা বলে ফেলেছি আর কিছু বলবো নাহ মেহরাব তোর আর মাহির ডির্ভোস এর আবেদন টা করে ফেল আর আর্দ্র তোর টাও।

দাদু আমরা জানি তুমি অনেক কষ্ট পেয়েছো তবে আমার মনে হয় নাহ আমি ভুল কিছু করেছি ভালোবাসা ভুল নয় আর আমরা তো খারাপ কিছু করেনি বরং খারাপ কিছু করার আগেই বিয়ে করে নিয়েছি আর বিয়ে করাটা ভুল নয় দাদু,,, মেহরাব এর কথা শেষ না হতেই আর্দ্র বলল।

দাদু বিপদ যদি ভাগ্যে লেখা থাকে তাহলে হবেই এই ফুপাত মামাত ভাই বোন বিয়ে না করলে বিপদ হবে এটা নিতান্তই একটা কুসংস্কার তবে আমি বলছি না যে তুমি আমাদের খারাপ চাও তবে দাদু আমি ছোট বেলা থেকেই মাহিকে বোনের চোখেই দেখেছি তুমি বলো বোন কে বিয়ে করতাম কীভাবে আর আমি তো ইয়ানাকে ভালোবাসি তাহলে ওকে ছাড়া অন্য কাউকে কীভাবে বিয়ে করতাম আর এই বিয়ে টা হলে আমরা কেউই ভালো থাকতাম নাহ। আর আমি শুনেছিলাম বাবাও নাকি অন্য একজন কে ভালোবাসত কিন্তু শুধু তোমার খুশির জন্য অন্য কাউকে বিয়ে করেছে তবে বলছি নাহ যে বাবা ভালো নেই সময়ের সাথে সাথে বাবাও মাকে ভালেবাসে তবে বাবাকে আর আগের মতো হাসতে দেখেছো কখনো?? তুমিতো ভালে জানো দাদু বাবা হয়ত এখনো,,, আর্দ্র আর কিছু বলতে পারলো নাহ তার আগেই ওর গালে কেউ জোড়ে সরে একটা চড় মারল আর্দ্র পাশে তাকিয়ে দেখল আর কেউ নয় বরং ওর বাবা। তোর এতো সাহস কে দিয়েছে এই সব কথা বলার তোকে আমি বলেছি যে আমি অখুশি আছি?? আর্দ্র আর কিছু বলল নাহ গালে হাত রেখে চুপ করে থাকল।

আমি আর কোনো কথা শুনতে চাইনা তোমাদের ডির্ভোস হবে আর এটাই ফাইনাল।

,,,,,,,
বধু সাজে ইয়ানা আর্দ্রর কাধে মাথা রেখে ছাঁদে বসে দূর আকাশের চাঁদ দেখছে আর আর্দ্র ইয়ানার কমর চেপে ধরে নিজের সাথে জড়িয়ে রেখেছে হুমম অবশেষে ওদের বিয়েটা দাদু মেনে নিয়েছে প্রথমে দাদু অমত করলেও পরে মেনে নিয়েছে।

অবশেষে আমরা এক হতে পরলাম বলো দাদুর অভিমান টা শেষ মেষ ভাঙাতে পারলাম বলো।

হুমম ঠিক তাই এখন থেকে আগামী যে কদিন বেঁচে থাকবো এভাবেই আমার পাশে থেকেও। ইয়ানাও সায় দিয়ে আর্দ্রর বুকের মধ্যে লুকিয়ে পড়ল ওদিকে মাহি মেহরাব ও সেম অবস্থা।

,,সমাপ্ত,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here