#মায়ন্তী
#রাইদাহ_উলফাত_আনিতা
#পর্ব_১১
মায়াঙ্ক বলে উঠে মায়ন্তীইইই……
কি হলো টা কি আপনার চিল্লাচ্ছেন কেন? আমার নাম মায়ন্তী মায়ন্তীইইই নয়। আর আমি কানে বয়রাও নই।
মায়াঙ্ক এসে মায়ন্তীর দু’বাহু ধরে মায়ন্তী’কে ঝাঁকিয়ে বলে তুই কি শুরু করেছিস মায়ম্তী? কিসের বিয়ে বিয়ে খেলছিস?
কেন ভাইয়া আমি রাজিব ভাইয়া কে ভালোবাসি। ওনাকে বিয়ে করবো তাতে সমস্যা কি আপনার?
মায়ন্তী আমার সহ্যের সীমা পেরোলে কিন্তু খুব ভয়াবহ আকার ধারণ করব বলে দিলাম।
কি করবেন আপনি? আমি আপনাকে ভয় পাই নাকি?
ও তুই আমাকে ভয় পাস না। ঠিক আছে দেখব তুই কিভাবে বিয়ে করিস।
বলেই মায়াঙ্ক বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।
মায়ন্তী মনে মনে বলে ভাইয়া আবার খুব রাগ করলেন না। উনি যে উল্টো-পাল্টা করলে কি হবে?
মায়ন্তী এই মায়ন্তী ওকে ভয় পেলে নাকি?
রাজিব ভাইয়া কি যা তা বলেন ভয় পাবো কেন ওনাকে? উনি কি বাঘ না ভল্লুক?
ও আচ্ছা আচ্ছা। তাই বলো।
আচ্ছা মায়ন্তী আমি এখন যাই একটু পর মা-বাবা আসবেন। আন্টি-কাকীমনি এলাম।
মায়ন্তীর কিছুটা মন খারাপ হয়। রাজিবের বাবা-মা আসার কথা শুনে। মনে হচ্ছে ধীরে ধীরে অনেক দূরে হারিয়ে যাচ্ছে মায়ন্তী।
রানু রহমান বলে উঠলো -হ্যাঁ রাজিব চলে যাওতো বাপু।
————————————————————————-
দুপুর ২ টা বাজে রাজিব ওর মা-বাবাকে নিয়ে উপস্থিত হয়েছে। পুনরায় বাড়ির বড়’রা ডাইনিংয়ে উপস্থিত।
আয়ুষ্মান কেন জানিনা ব্যপার’টা বেশ ভালো ভাবেই নিচ্ছে। মীনাক্ষীর অনবরত চিন্তা হচ্ছে কি হতে চলেছে?
মায়াঙ্ক কি আদৌ মায়ন্তীর বিয়ে হতে দিবে?
ভাইজান আজ মঙ্গলবার আমরা আগামী শুক্রবারই বিয়ের দিন-তারিখ ফাইনাল করতে চাই আর কালকেই এনগেজমেন্ট।
কি বলছেন কি? এত তাড়াতাড়ি বিয়ে কেমনে সম্ভব। কেনাকাটা আছে আর্থিক দিক সব কিছু এরেঞ্জমেন্টের ব্যপার আছে? একসাথে বলে উঠলেন মায়ন্তী বাবা ও কাকু।
পিছন থেকে তখনই মায়াঙ্ক বলে উঠলো সবই সম্ভব বাবা। আমি সবকিছুর দায়িত্ব নিলাম। মায়ন্তীর কালকেই এনগেজমেন্ট হবে। তোমরা কোন চিন্তা করো না।
উপস্থিত সবাই মায়াঙ্কের দিকে তাকিয়ে আছে। এতক্ষণ মায়ন্তী কিছুটা দূরে দাঁড়িয়েই সবটা শুনছিল। মায়াঙ্কের কথা শুনে সবার সামনেই চলে এলো। কিছুক্ষণ আগেই মায়াঙ্ক রাগ করে বাসা থেকে বেড়িয়ে গেল। এখন কি সুন্দর এসে হেঁসে হেঁসে বলল বিয়ের দায়িত্ব নিবে। মায়ন্তীর কেমন যেন লাগছে। ভিতর টা ফেটে যাচ্ছে।
না পারছে মুখে কিছু বলতে আর না পারছে সইতে!
মায়াঙ্ক কি বলছিস কি পারবি সামলাতে? মায়ন্তীর বাবা মায়াঙ্ককে বলল।
কে কাকুমনি আমি পারব।
তাহলে আর কি বলার এখানেই পাকা কথা হইলো তাহলে। রাজিবের বাবা বললেন।
হ্যাঁ আঙ্কেল এখানেই পাকা কথা হইলো। রাজিব কংগ্রাচুলেশনস। ফাইনালি মায়ন্তী তোর হচ্ছে। কাল তোর এনগেজমেন্ট বলে কথা।
ধন্যবাদ মায়াঙ্ক। তুই না থাকলে কোন কিছুই সম্ভব হতোনা।
আরে আরে বলিস কি? আমি না থাকলেই তোর সুবিধা।
কি যা তা বলিস মায়াঙ্ক।
আরে রাখতো ও কিছুনা। মজা কর। আয়ুষ্মান এই আয়ুষ্মান কিরে তোর একমাত্র শালির বিয়ে। তুই কেন জানি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছিস? বলছিস না কিছু?
দেখ মায়াঙ্ক আমার কিছুই বলার নেই। আমি চাইবো মায়ন্তী যেখানে ভালো থাকবে সেখানেই বিয়ে হোক। লোক দেখাতে গিয়ে কষ্ট না পাক।
আরে আরে বলিস কি? তোর মায়ন্তী শালিকার তো ওর মনের মানুষের সাথেই বিয়ে হচ্ছে।
মায়াঙ্ক শোন আমি তোর সাথে এ ব্যপারে কথা বলতে চাইনা। বলেই আয়ুষ্মান চলে যায়।
এই যা এ আবার খেপে যায় কেন?
কিরে মীনাক্ষী তোর বোনের বিয়ে বলে কথা। যা রেডি হয়ে নে। আর ওকেও রেডি করাও শপিং করতে যাবো।
মায়ন্তী কিরে দাঁড়িয়ে আছিস যে। যা তাড়াতাড়ি মীনাক্ষীর সাথে রেডি হয়ে আয়।
মায়ন্তী অবাক হয়ে মায়াঙ্কের দিকে তাকিয়ে আছে। আসলে কি এই সেই মায়াঙ্ক ভাইয়া। মায়ন্তী ক্রমাগত নতুন করে চিনে যাচ্ছে মায়াঙ্ক’কে।
মায়ন্তী কিছু না বলে নিজের রুমে চলে যায়।
মা-কাকি মনি দুপুর হয়ে গেছে রাজিব’দের এখনো খাওয়াও নি?
আরে না মায়াঙ্ক বাবা আমরা খেয়েই এসেছি।
তাই বললে হয় আন্টি। আপনারা আমাদের বাড়ির ছোট মেয়ের হবু শ্বশুর-শ্বাশুড়ি আপনাদের আপ্যায়ন করা আমাদের কর্তব্য।
খাওয়া-দাওয়া শেষে যখন রাজিবেরা চলে যেতে নেয়। মায়াঙ্ক বলে কিরে রাজিব তুই যাচ্ছিস কেন?
তোর হবু বউয়ের শপিং কি আমি পছন্দ করে দিবো নাকি? যা ওকে রেডি করে নিয়ে আয়।
মায়াঙ্ক সত্যি বলছিস আমি যাবো?
তো মিথ্যা বলব কেন রে?
না মানে তুইতো আবার।
হয়েছে থাক আর বলতে হবেনা। তুই এখানে দ্বারা আঙ্কেল-আন্টিকে এগিয়ে দিয়ে আয়। আমি মায়ন্তী-মীনাক্ষী ও আয়ুষ্মানদের নিয়ে আসছি।
আচ্ছা যা।
——-****——-
এদিকে মায়ন্তী শুয়ে শুয়ে কান্না করছে। মায়াঙ্ক ভাইয়া আমি ভেবেছিলাম হয়তো আপনি বিয়েটা আটকাবেন। আমাকে অন্য কারো হতে দেখে আপনি সহ্য করতে পারবেন না। তাইতো সেদিন রাতে আমি রাজিব ভাইয়াকে ফোন করি। বলি যেন আমাকে বিয়ে করে নেয়। আর আপনার ব্যপারে সব কথাই বলি।
উনিতো নাটক করছেন সব কিছুই।
আপনি পারবেন আমার বিয়ে অন্য কারো সাথে হলে সহ্য করতে? ভাইয়া আমার যে আর ভালো লাগছেনা। সত্যি কি আপনি পারবেন?
মায়ন্তী এই মায়ন্তী কিরে দরজা খোল। রেডি হলি। তাড়াতাড়ি আয় শপিং করতে তো অনেক সময় লাগবে। রাজিব বাইরে তোর জন্য অপেক্ষা করছে।
বলে মায়াঙ্ক বার বার দরজা ধাক্কাচ্ছে।
হঠাৎ দরজা খুলে গেল।
সামনে মায়ন্তী দাঁড়িয়ে। কাজল-কালো চোখ গুলো পানিতে ছেয়ে আছে।
মায়াঙ্ক একদৃষ্টিতে মায়ম্তীর দিকে তাকিয়ে আছে।
হ্যাঁ মায়ন্তী কাঁদছে। ওর ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে। ইচ্ছে করছে এখনোই মায়াঙ্ককে নিজের সাথে মিশিয়ে নিতে। চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে –
ভাইয়া আমি তোমাকে ভালোবাসি, তোমাকে ছাড়া আমি আর কাউকে বিয়ে করতে চাইনা।
মায়ন্তীর চোখ কথা বলছে মায়াঙ্কের সাথে। কিন্তু মুখ কথা বলছে না।
মায়াঙ্ক মায়ন্তীর দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে চোখ ফিরিয়ে নেয়। বলে কিরে এখনো রেডি হসনি। বমি বাইরে আছি তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আয়। আর মীনাক্ষী কেও বলে যাচ্ছি তুই তাড়াতাড়ি আয়।
মায়ন্তী-মায়াঙ্কের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। পুনরায় দরজা বন্ধ করে নিজের পিঠ দরজার সাথে ঠেকিয়ে ধীরল ধীরে নিচে বসে কাঁদতে থাকলো।
না না আমি আর কাঁদবো না। বমি ভেঙে পড়বো না। আমি এতটাও দূর্বল নই।
বিকাল ৪টা নাগাদ ওরা সবাই শপিংমলে পৌঁছালো।
চলবে……………………………….