মায়াবতী পর্ব -১৬

#মায়াবতী
#পর্ব:১৬
#তানিশা সুলতানা

তন্নিকে নিয়ে অথৈ সোজা চলে যায় অর্ণবের রুমে৷ অর্ণব চেঞ্জ করছে। শার্ট খুলে টিশার্ট পড়তে যাচ্ছে তখনই হুরমুরিয়ে ঢুকে পড়ে ওরা। তন্নি অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। দৃষ্টি নামিয়ে ফেলে। অথৈ দাঁতে দাঁত চেপে অর্ণবের দিকে তাকিয়ে আছে।
অর্ণব দুই ভ্রু আড়াআড়ি ভাজ করে টিশার্ট পড়ে নেয়।

“তুই তন্নির সাথে এরকম কেনো করছিস?

বুকে হাত গুঁজে জিজ্ঞেস করে অথৈ।

” কেমন করছি?

বিছানায় বসে বলে অর্ণব।

“অসভ্যতামী
পবলেম কি তোর? কি চাইছিস তুই? তন্নি তোর লেভেলের না ভাইয়া। তোর কাছে হাত ধরা কিস করে মাছ ভাত হতে পারে কিন্তু তন্নির কাছে না।
অনেক মেয়ে আছে তোর লেভেলের। তুই তাদের খুঁজে নে। আমার তন্নির ধারে কাছেও আসবি না তুই।

রাগে চিল্লিয়ে বলে ওঠে অথৈ।

” অথৈ চিল্লাবি না। বস আমার পাশে।

অর্ণব ঠান্ডা গলায় বলে।

“তোর পাশে বসার মুড আমার নেই। তুই এতোটা বাজে হয়ে গেছিস? তোর

বাকিটা শেষ করার আগেই অর্ণব অথৈয়ের হাত ধরে টান দিয়ে পাশে বসিয়ে দেয়। অথৈ দাঁত কটমট করে তাকায় অর্ণবের দিকে।
তন্নি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

“তোর তন্নিকে আমি কিস করি নি। চুমু দিয়েছি। ও তো গাঁধা
কিস আর চুমুর মধ্যে পার্থক্য বোঝে ও?
চাপকে গাল লাল করে দেওয়া উচিৎ। স্টুপিট একটা।

তন্নির দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে অর্ণব।

” কেনো চুমু দিবি তুই? আমার তন্নি এসবে কষ্ট পেয়েছে। ও ভীষণ ভালো। তন্নি তোর বোন। নেক্সট টাইম কথাটা মাথায় রাখবি।

“সাটআপ অথৈ। কিসের বোন? আজাইরা
মাথা গরম করে দিবি না একদম।
অর্ণব রেগে যায়।

” কিসের মাথা গরম। তন্নি তোর বোনই। আমি আর তন্নি একই। তুমি তন্নিকে সরি বলবি এখন। আর বলবি তুই ভাই হিসেবে ওকে চুমু খেয়েছিস।

“আমি ওকে বাচ্চার মা মনে করে চুমু খেয়েছি। এন্ড নেক্সট টাইম আরও খাবো।

তন্নি নাক মুখ কুঁচকে মুখ বাকিয়ে নেয়। অথৈ বড়বড় চোখ করে তাকায়। রীতিমতো শকট খেয়ে গেছে৷

” মানে টা কি? নিধি আপু আর তোর বিয়ের ডেট ফিক্সড হয়ে গেছে।

“তো?

” তো মানে কি?
তুই তন্নির থেকে দূরে দূরে থাকবি ভাইয়া। ঝামেলা বাঁধাবি না বলে দিলাম।

আঙুল নারিয়ে বলে অথৈ।

“পসিবল না অথৈ। আমার চোখ পড়েছে তোর তন্নির ওপর। এখন ওকে আমি ছাড়ছি না। লাগবেই আমার।

সোজাসাপ্টা জবাব অর্ণবের। রাগ ওঠে অথৈয়ের।

” তুই কি ফাজলামো পেয়েছিস ভাইয়া? নিধি আপু

“নিধি আপু কি? তুই আর তোর তন্নি ঝামেলা পাকিয়েছিস। খুব দরকার ছিলো পাবলিশ করার? আমাকে কখনো জিজ্ঞেস করেছিস? ননসেন্স।
এবার ঝামেলা হবেই। তোদের দুজনকে বুড়িগঙ্গায় চু*বা*নি দিতে পারলে ভাল্লাগতো আমার।
তোকে কখনো বলেছিলাম আমি নিধিকে আমি বিয়ে করতে চাই?
আমারই ভূল তোকে মিট করানোই উচিৎ হয় নি।

হাতে ব্যান্ডেজ খুলতে খুলতে বলে অর্ণব।

” মানুষ রিলেশন করে বিয়ে

“জাস্ট সাট আপ অথৈ। টায়ার্ড আমি। রেস্ট দরজার।ডিস্টার্ব করিস না।

অথৈ থেমে যায়। তন্নির নজর অর্ণবের হাতের দিকে। ব্যান্ডেজ র*ক্তে ভিজে র*ক্ত গুলো শুকিয়ে গেছে। লোকটা কি আবারও ব্যাথা পেয়োছিলো?
অর্ণব খুলতেই পারছে না। শুধু টানাটানি করছে। এভাবে টানলে আবারও ব্যাথা পেতে পারে।

” আমি খুলে দিবো?

তন্নি ফট করে বলে ফেলে। অর্ণবের হাত থেমে যায়। সে তাকায় তন্নির দিকে। অথৈও ভ্রু কুচকে তাকায়৷
অথৈয়ের তাকানো দেখে তন্নি অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে।

“ওনার হাতে র*ক্ত। যেভাবে টানাটানি করছে আবারও ব্যাথা পেতে পারে।

মিনমিনিয়ে বলে তন্নি।

” ওকে এক্সকিউজ দেওয়ার কিছু নেই। আমাকে দেখার দায়িত্ব তোমারই। জলদি এসো।

অর্ণব সোজা হয়ে বসে বলে৷ অথৈ মুখ বাঁকায়।

“তন্নি তুই ওর ধারেকাছেও চাপবি না। ভাই মনে করে আজকের মতো একটু হেল্প কর।

তন্নি মাথা নারিয়ে অর্ণবের পাশে বসে পড়ে। অর্ণবের হাতটা নিজের কোলের ওপর রাখে।
অর্ণব একটু হাসে। তারপর অথৈয়ের দিকে চোখপড়তেই হাসি গায়েব হয়ে যায়।

” রোমান্টিক মোমেন্ট ইয়ার
আমাদের একটু প্রাইভেসি দে। কাবাবের হাড্ডি হয়ে বসে থাকলে আমরা এনজয় করবো কিভাবে?

অথৈ অর্ণবের চুল টেনে দেয়। তন্নি দাঁত কটমট করে তাকায়।

“শয়তান ছেলে।
আমার তন্নির দিকে তাকালে চোখ গে*লে দেবো তোর। আমার তন্নির জন্য আমি রাজপুত্র খুঁজে আনবো। তোর মতো বাঁদরের গলায় ঝুলতে দিবো না কি?

“একটা রিকশাওয়ালা ধরে আগে তোকে বিদেয় করতে হবে। নাহলে তুই আমাদের রোমান্স করতেই দিবি না।

ততখনে তন্নির ব্যান্ডেজ খোলা হয়ে গেছে।

“আপনাকে আমার একটুও পছন্দ না। আমার সাথে ফ্লার্ট করতে আসবেন না একদম।

বলেই তন্নি হনহনিয়ে চলে যায়। অথৈ ফিক করে হেসে ফেলে। অর্ণব দাঁত কটমট করে তাকিয়ে থাকে তন্নির চলে যাওয়ার দিকে।

” ভাইয়া প্লিজ আমার তন্নিকে ছেড়ে দে। সে এসব কম বোঝে। আমি নিজে তোকে আরও ভালো ভালো মেয়ে খুঁজে এনে দিবো প্রমিজ।
তন্নি কষ্ট পেলে আমিও কষ্ট পাই। প্লিজ

অর্ণব অথৈয়ের হাতের ওপর হাত রাখে।

“অথৈ দুই দিন হলো আমি ঘুমতে পারি না। কোনো কাজে মন বসাতে পারি না। আমি ঠিকঠাক খেতে পর্যন্ত পারি না।
আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি। ট্রাস্ট মি এরকমটা আগে কখনো হয় নি।
দেখ আমি কাটা হাতে ছুটে গেছি ওর বাড়িতে। আমি ওকে ছাড়া দুইটা সেকেন্ড থাকতে পারছি না।
কি করবো বল? কি হয়ে গেলো আমার?

অথৈ ভাইয়ের কথা শুনে অবাক হয়। এতটুকুও মিথ্যে বলছে না অর্ণব সেটা তার চোখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।

” কি চাইছিস তুই?

“ভালোবাসতে।

” অপেক্ষা করতে পারবি তিন বছর?
ওর বাবা বাড়ি না আসা পর্যন্ত ওকে বিয়ে দেবে না। তন্নির ভীষণ ইচ্ছে তার বিয়েটা ধুমধাম করে হবে।

“আমি অপেক্ষা করতে পারবো না।

” তাহলে নিধি আপুকেই বিয়ে করে নে। তন্নির চিন্তা বাদ দে।

বলেই চলে যায় অথৈ। অর্ণব শুয়ে পড়ে।

“তিন বছর অপেক্ষা করতে করতে আমি তো শহীদ হয়ে যাবে। মায়াবতী প্লিজ ডু সামথিং।

তন্নি অথৈয়ের রুমে বসে বই পড়ছে। আর্থি শুয়ে শুয়ে জামাইয়ের সাথে কথা বলছে। বেচারির কপাল। বিয়ের তিনদিন পরেই বর চলে গেছে লন্ডন। আসবে সামনে সপ্তাহে।

তখন অথৈ রুমে ঢুকে।

” তন্নি চল খাবি। দুপুরে তো কিছু খাস নি।

“পরে খাবো।

বইয়ে মুখ গুঁজেই বলে তন্নি।

” পরে না এখুনি। চল।
আপি তুইও চল।
একটু পরেই আংকেল চলে আসবে নিধি আপুকে নিতে। আমরা সবাই মিলে এক সাথে খাবো।

অনিচ্ছা সত্ত্বেও তন্নি যায়। অর্ণব চুপচাপ বসে আছে খাবার টেবিলে। নিধি আশা বেগমের সাথে টেবিলে খাবার এনে রাখছে।
তখন ওরা তিনজন চলে আসে।
আর্থি অর্ণবের পাশে গিয়ে বসে। অর্ণব অথৈকে চোখের ইশারায় তন্নিকে ওর পাশে বসাতে বলছে। অথৈ ভেংচি কেটে তন্নিকে নিয়ে অন্য পাশে বসে।

“নিধি আপু ভাইয়ার পাশে বসে পড়ো।

অথৈ বলে ওঠে। নিধি লাজুক হেসে অর্ণবের পাশে বসে। অর্ণব দাঁত কটমট করে তাকায় অথৈয়ের দিকে।
তন্নি আর অথৈ গল্প করতে করতেই খাওয়া শেষ করে।

খাওয়া শেষে দুজন চলে যায়। অর্ণব গাল ফুলিয়ে বসে থাকে। নিজের বোন এমন শত্রুতা করলে কেমন লাগে?

আজকে তন্নি আর অথৈ ছাঁদে আড্ডা দেবে এমনটাই ভেবে রেখেছে।
পাটি পপকন ল্যাপটপ বই সব নিয়ে দুজন বসেছে।

” হেই তন্নি

হঠাৎ ডাকে অথৈ তন্নি দুজনই চমকে ওঠে। পাশে তাকিয়ে দেখে পাশের ছাঁদ থেকে সাগর ডাকছে।

“আরে তুমি?

অথৈ হেসে বলে।

” এখানেই থাকি।
তোমাদের সাথে আড্ডা দিতে চাই। আসবো?

“হ্যাঁ এসো। আমি গেট খুলছি।

বলতে বলতে এক লাফে এই ছাঁদে বলে আসে সাগর। অথৈ তন্নি দুজনই ভয় পেয়ে যায়।

” আরে আরে এভাবে কেই আসে? পড়ে যেতে যদি?

অথৈ বলে।

“আরে রিলাক্স পড়ি নি।

সাগর এসে ওদের পাশে বসে পড়ে।।
তিনজন লুডু খেলতে থাকে। আজকে তন্নিকে একদম অন্য রকম লাগছে। সাগরের চোখই সরছে না তন্নির ওপর থেকে। মেয়েটার লম্বা চুল গুলো সাগরকে পাগল করে দিচ্ছে। মানুষের চুল এতো সুন্দর হয়?

অর্ণব দরজার পাশে দাঁড়িয়ে দেখছে।
আসলে এসেছিলো ওদের কাছে। কিন্তু সাগরকে দেখে এগোচ্ছে না।
খেলার এক পর্যায়ে অথৈয়ের ফোনে কল আসে। অথৈ কল রিসিভ করে অন্য দিকে চলে যায়। তন্নি তখন বই খুলে বসে।

” ভাইয়া আমাকে এই চ্যাপ্টারটা একটু বুঝিয়ে দিন।

সাগর মুচকি হেসে বোঝাতে থাকে।

“তন্নি তুমি আমার হবে?

সাগরের হঠাৎ প্রশ্নে থমথমে খেয়ে যায় তন্নি। অর্ণব আর সয্য করতে পারে না।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here