মায়াবতী পর্ব -১৭

#মায়াবতী
#পর্ব:১৭
#তানিশা সুলতানা

অর্ণব সোজা গিয়ে তন্নির পাশে বসে পড়ে একদম গা ঘেসে। তন্নি সাগর দুজনই চমকে ওঠে। রাগে অর্ণবের হাত পা কাঁপছে। জোরে জোরে শ্বাস টানছে। ইচ্ছে করছে তন্নিকে দুটো চর বসিয়ে দিতে। কিন্তু সে তন্নিকে আঘাত করতে চায় না।
তাই খুব কষ্ট হাত দুটো নিয়ন্ত্রণ করেছে।

“অর্ণব ভাইয়া আপনি? কেমন আছেন? অনেক দিন পর দেখলাম।

সাগর হালকা হাসার চেষ্টা করে বলে।

” হুমম

অর্ণব শুধু এটুকুই বলে। তন্নির হালকা ভয় হচ্ছে। তখন সাগরের বাইকে বসেছিলো বলে ধরে এখানে নিয়ে আসলো। এখন কি করবে? আবার কথা বলার জন্য বাড়িতে দিয়ে আসবে? বাড়ি দিয়ে আসলে অবশ্য ভালোই হবে।

“ভাইয়া ভাবি কিন্তু মাশাআল্লাহ
আজকে দেখেছি। চাচা পরিচয় করিয়ে দিয়েছে।

সাগর বলে ওঠে।

” তন্নির থেকে দূরে থাকো।

অর্ণব লাল চোখে সাগরের দিকে তাকিয়ে বলে। সাগর ভ্রু কুচকে তাকায়। তন্নি বাঁকা চোখে এক পলক তাকায় সাগরের দিকে। আবার কি লাগাম ছাড়া কথাবার্তা বলে ফেলবে না কি?

“ভাইয়া ওকে পড়া বোঝাচ্ছিলাম। তাছাড়া এখানে অথৈও ছিলো। আপনি যেমনটা ভাবছেন তোমনটা না। আমি তন্নিকে ভীষণ রেসপেক্ট করি। কোনো বাজে মতলব আমার নেই। আমার অনুভূতি গুলো পবিত্র।

তন্নির চোখের দিকে তাকিয়ে বলে সাগর। অর্ণব দাঁতে দাঁত চেপে। হাতটা তন্নির হাতের ওপর রাখে। তন্নি চমকে তাকায় অর্ণবের দিকে।

” তোমার অনুভূতি কেমন এটা জানতে চাই নি। ও এখন আমার বাড়িতে আছে তার মানে ও আমার রেসপন্সিবিলিটি। আমার বাড়ির ছাঁদে কোনো পরপুরুষের সাথে কথা বলবে আমি এটা এলাও করবো না।
সো

সাগর অপমানিত হয়। বুঝতে পারে অর্ণব চলে যেতে বলছে। তন্নির দিকে তাকায়। মেয়েটা সারাক্ষণ চোখ নামিয়ে রাখে। একটু কি তাকানো যায় না? চোখের ভাষা বোঝার চেষ্টা করা যায় না?

“তন্নি যাচ্ছি।
কোনো দরকার হলে কল করবা। কাল কলেজে যাচ্ছো তো? দেখা হবে৷ আমি অপেক্ষায় থাকবো।

বলে তন্নির একটা বই নিয়ে সেখানে নাম্বার লিখে দেয় সাগর। তারপর তন্নির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে হাত নারিয়ে বাই চলে ছাঁদ টপকে চলে যায়।

এবার অর্ণব তন্নির হাতটা ভালো করে মুঠো করে ধরে। আরও একটু চেপে বসে দুরত্ব কমায়।

” পরপুরুষের সঙ্গে কিসের কথা তোমার? কতোবার বলবো তোমায়? আমি জেলাসি ঠেলতে পারবো না। সাহস কতো তোমার? আমার কথার অবাধ্য হও।

ধমক দিয়ে বলে অর্ণব। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। নাকের ডগায় ঘাম। চোখ দুটো লাল। তন্নির হাতটা আলতো করে ধরা হাতটা একটু শক্ত হয়ে এসেছে৷

“উউউনি আমার ফ্রেন্ড।

তন্নি শুকনো ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বলে।
সাথে সাথে অর্ণব তন্নির হাত ছেড়ে দেয়। নাম্বার লেখা বইটা খন্ডখন্ড করে ছিড়ে। ফেলে। নিজের চুল খামচে ধরে মাথা নিচু করে জোরে জোরে শ্বাস টানতে থাকে। তন্নি ভয়ে সিঁটিয়ে গেছে। লোকটা এমন কেনো?
অথৈ দৌড়ে আসে।

” ভাইয়া কি হয়েছে?

“তুই এখানে কি করছিস? এতোখন যা করছিলি তাই কর গিয়ে।

ধমক দিয়ে বলে অর্ণব। তন্নি অথৈ দুজনই কেঁপে ওঠে।

” খখালামনি কল করেছিলো।

অথৈ ভয়ে ভয়ে বলে।

“হুমম
যা কথা বল গিয়ে। চোখের সামনে থেকে সর।

অর্ণব অথৈয়ের হাত ধরে টেনে দরজার বাইরে রেখে দরজা বন্ধ করে দেয়। অথৈর চোখে পানি চলে আসে। তন্নি?
অর্ণব তন্নির কোনো ক্ষতি করে দেবে না তো?

তন্নি ভয়ে কাঁপছে। অর্ণব ফের এসে তন্নির পাশে বসে।

” আপনি এমন কেনো করছেন? এটা ঠিক না। সব সময় রাগ কেনো দেখান আমাকে?
রাগই যদি করবেন তাহলে আমাকে কেনো এনেছেন এখানে?

তন্নি এক বুক সাহস নিয়ে বলে ফেলে।
অর্ণব ছোট ছোট চোখ করে তাকায় তন্নির দিকে। অর্ণবের আকাশ সমান রাগ পানি করার জন্য তন্নির চোখ দুটোই যথেষ্ট।

“এখানে নিশ্চয় ওই ছেলেটার সাথে কথা বলানোর জন্য আনি নি।
তোমাকে এক কথা বারবার কেনো বলতে হয়? দুপুরে পইপই করে বললাম না? মামাতো খালাতো পাড়াতো বন্ধু যারা আছে কারো সাথে কথা না বলতে? বলেছিলাম তো।

ঠান্ডা গলায় বলে অর্ণব।

” কেনো কথা বলবো না? আমি মানুষ না? আল্লাহ আমাকে মুখ দিছে কথা বলার জন্য।

“কটামি করো আমার সাথে? একদম মে*রে মুখ ভে*ঙে দিবো তোমার। তারপর দেখবো কথা কি করে বলো। শয়তান

তন্নি ভেংচি কেটে অন্য দিকে ঘুরে বসে। অর্ণবের রাগ একেবারে গায়েব হয়ে যায়। এর ওপর রাগ করে থাকা যায়? তবুও মুখটা গম্ভীর করে রাখে।

” ইহহহ আমি কারো সাথে কথা বলবো না। আর নিজে যে নিধি আপুর সাথে কি না কি করে ছিহহ
আমও বলতেও পারবো না। সেটার বেলার কিছু না। আমারও ওতো রাগ থাকলে আমিও রেগে যেতাম। আকাশ কাঁপিয়ে ধমক দিতাম।

তন্নি বিরবির করে বলে। অর্ণব শুনে ফেলে। ঠোঁট টিপে হাসে।

“নিধি আমার হবু বউ। কি না কি তো করবোই। তোমার কি জ্বলে?

ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে অর্ণব।

” সাগর আমার ফ্রেন্ড। আমি কথা বলবোই।

বলেই এক দৌড় দেয় তন্নি।

“এই মেয়ে দাঁড়াও বলছি। তোমার মুখ ভা*ঙ*বো এখন আমি।

তন্নি দরজা খুলে দাঁড়িয়ে যায়। অর্ণবের দিকে পেছন ফিরে তাকায়।

” ভাবতেছি সাগরকে বিয়েটা করেই ফেলবো।

বলেই আবার দৌড় দেয়। অর্ণব কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে যায়।

“তোমার হা*ড্ডি গু*ড়ো করবো আমি। চিনো না তো আমায়।

তন্নির দৌড় দেখে অথৈও পেছনে দৌড় দেয়। একেবারে অথৈয়ের রুমে এসে থামে দুজন। তন্নি ঠাসস করে দরজা আটকে দেয়। তারপর দুজনই হাঁপাতে লাগে।

” কি করেছিস তুই?

অথৈ পেট ধরে খাটে বসে পড়ে বলে।

“বলছি সাগরকে বিয়ে করবো।

বলেই ফিক করে হেসে ফেলে তন্নি। অথৈও হাসে।

” সাগর ভাইয়া কিন্তু খারাপ না। তোর সাথে দারুণ মানাবে।

“তাহলে প্রেমটা করবো?

তন্নি ভাব নিয়ে বলে।।

” কেনো নয় অবশ্যই। আমি হেল্প করছি।

দুই বান্ধবী হাসতে থাকে।

🌷
ফজরের আজানের সময় ঘুম ভাঙে তন্নির। এটা প্রতিদিনকার স্বভাব। ওজু করে নামাজটা আদায় করে নেয়। তারপর চলে যায় অথৈয়ের বেলকানিতে। সকালে ঠান্ডা বাতাস মন প্রাণ সতেজ করে দেয়। গায়ে হাওয়া লাগতেই গা কেঁপে কেঁপে ওঠে।
মুহুর্তটা দারুণ। এবার এককাপ চা হলে জমে যেতো বেপারটা।
কতোখন ওভাবে দাঁড়িয়ে ছিলো জানা নেই তন্নির।
অথৈ এখনল ঘুমচ্ছে।
চারদিকে আলো ফুটে উঠতেই রুম ছেড়ে বের হয়। লম্বা চুল গুলো হাত খোঁপা করেছে৷ পাতলা ওড়নাটা গলায় ঝুলিয়ে দিয়েছে।

কিচেনে গিয়ে দেখতে পায় আশা বেগম টুকিটাকি কাজ করছে।

“গুড মর্নিং আন্টি

মিষ্টি হেসে বলে তন্নি।

” গুড মর্নিং

আশা বেগমও এক গাল হেসে বলে।

“কি করতে হবে বলো। আমি তোমায় হেল্প করছি।

” না না লাগবে না। তুই আমার পাশে বসলেই হবে।

“আন্টি কিছু একটা করি। বসে থাকতে ভালো লাগবে না।

” ঠিক আছে তাহলে অর্ণবের কফিটা করে দে। ছেলেটাে কফি না দেওয়া ওবদি উঠবে না।

তন্নি কাজে লেগে পড়ে। কফি বানানো শেষে আশা বেগমকে বলতেই সে বলে ওঠে

“মা একটু কষ্ট করে দিয়ে আসবি?

তন্নি মুখের ওপর না বলতে পারে না। হালকা মাথা নারিয়ে গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে যায়।
এতো সকালে অর্ণব ঘুম থেকে উঠবে না এটা তন্নির ধারণা। কফি নামিয়েই চলে আসবে।
এই মতলব এঁটে জোরে জোরে পা চালিয়ে অর্ণবের রুমের সামনে যায়। দরজা ভেড়ানো ছিলো। হালকা ছোঁয়া দিতেই খুলে যায়।
ধবধবে সাদা বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে আছে অর্ণব। ফর্সা পিঠটা দেখা যাচ্ছে। কোমর ওবদি কোম্বল টানা। এই গরমেও কেউ কম্বল নিয়ে ঘুমায়?
পাগলের বেপার সেপার
মনে মনে হাসে তন্নি।
টি-টেবিলের ওপর কফির মগ নামিয়ে চলে আসতে নেয়।
সাথে সাথে হাত ধরে ফেলে অর্ণব। তন্নি চোখ মুখ খিঁচে ফেলে।

” সাগরকে কি যেনো করবে তুমি?

তন্নির হাত ধরে টান দিয়ে খাটে বসিয়ে দিয়ে বলে অর্ণব। তন্নি শুকনো ঢোক গিলে। বাঁকা চোখে তাকায় অর্ণবের দিকে। লাজ লজ্জাহীন পুরুষ। একটা বাচ্চা মেয়ের সামনে উদাম গায়ে দিব্বি বসে আছে। এই তো ঘুমিয়ে ছিলো। এর ঘুম ভাঙলো কখন?

চোখ নামিয়ে হাত মোচড়ামুচড়ি করতে করতে বলে।
“হাত ছাড়ুন। হাত ধরাধরি ভালো লাগে না আমার।

” তাহলে কি ভালো লাগে তোমার? ঘেসাঘেসি?

হাত আরও একটু শক্ত করে ধরে বলে অর্ণব।
তন্নি কথা বলে না। চুপ করে থাকে।

“সাগরকে নিয়ে কি বলছো? সেটা আবার রিপিট করো।

” ব্রাশ করে আসুন।

অর্ণব তন্নির দিকে মুখটা এগিয়ে আনে।

“তুমি করেছো তো। তাতেই হবে। দুজনই ব্রাশ করলে টুথপেষ্ট কমে যাবে তো। একদিন তুমি করবে একদিন আমি করবো।

তন্নি নিজের মুখটা পিছিয়ে নেয়।

” এমন করছেন কেন?

অর্ণবের গালে হাত দিয়ে বলে তন্নি।

অর্ণব আরও একটু মুখটা এগিয়ে নিয়ে বলে।
“তুমি সাগরকে বিয়ে করবে তাই।

তন্নি মুখ ঘুরিয়ে নেয়।
“আরে বাবা করবো না বিয়ে। সরুন আপনি।

বাঁকা হেসে ছেড়ে দেয় অর্ণব। সোজা হয়ে বসে। তন্নি বুকে হাত দিয়ে শ্বাস টেনল উঠে যায়। দরজা ওবদি গিয়ে দাঁড়িয়ে যায়।

“করবোই

” তোমাকে তো আমি

অর্ণব উঠতেই তন্নি চলে যায়।

চলবে

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here