ক্যাসিনো পর্ব -০৮

#ক্যাসিনো ©লেখিকা_মায়া

#পর্ব_৮

মেহমেত কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। মা বাবার সাথে এমন বিশ্বাস ঘাতকতা করতে তার বুকের পাঁজর গুলো যেন দুমরে মুচড়ে যাচ্ছে।

যদি খেলাই হেরে যায় তো সব শেষ। আর যদি জিতে যায় তাহলে হয়তো সব কিছু থেকে মুক্তি পেয়ে যেতে পারে।

মাথা অসহ্য ব্যাথাই ছিঁড়ে যাবে বুঝি এখনি। নিজের মনে ড্রাইভ করছে মেহমেত, আর নানান চিন্তা ভাবনায় ডুবে যাচ্ছে তার মন।কি করবে না করবে কিচ্ছু বোঝে উঠতে পারছে না। নিশান কে কেন জানি এসবে দোষ দিতে ইচ্ছে করছে না। নিশানের জায়গায় যদি সে থাকতো তাহলে হয়তো এর থেকে ভয়ংকর কিছু করে ফেলতো তার সাথে। কিন্তু এসবে মেহমেতের দোষটাই বা কোথায়। সে কি জানতো তার একটা ভুল কাজে এতো বড় একটা ক্ষতি হয়ে যেতে পারে । শুধু ক্ষতি ছিল এটা ??? শুধু ক্ষতি নয় এটা নিশানের জীবন টা ধ্বংস হয়ে গেছে। জীবন্ত কিংবদন্তি হয়ে রয়েছে যেন সে। কিন্তু মেহমেতের সাথে কি এমন করা ঠিক হচ্ছে??? সে তো তার ভুলের জন্য লক্ষ বার ক্ষমা চেয়েছিল।


“”
নূর মোহাম্মদ মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে, তার কেস টাকে মত খানি সহজ মনে হচ্ছিল। তার থেকে কেস টা আরো জটিল হয়ে উঠছে। সব মিলিয়ে আরো পরিবেশ টা ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছে। খুন হওয়া ব্যাক্তিদের বাসায় গিয়ে আশেপাশের মানুষের কাছে শুধু এতটুকুই জানা গেছে। প্রত্যেক ব্যাক্তি খুন হওয়ার পিছনের রহস্য হলো তাদের কোন এক জায়গা থেকে অনেক টাকা দেওয়া হচ্ছিল। এবং তাদের সারা জীবনের উপার্জন করা টাকার চেয়ে দ্বিগুণ। নূর মোহাম্মদের মতে অবশ্যই এটা কোন অসৎ কাজ ছিল। কেননা সৎ পথে উপার্জন করা টাকা লাখ পার হয়ে যেতো না। কি এমন কাজ হতে পারে??? আর এদের মত সাধারণ মানুষদের বা কেন সেই ক
অনাকাঙ্ক্ষিত কাজের সাথেই বা কেন জরানো হলো???

দুই টা জিনিস গত খুন হওয়া ব্যাক্তির জায়গায় থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। একটা ব্লেজারের বুতাম,একটা পায়ের জুতার ছাপ। এই গুলো পাওয়া গেছে খুন হওয়া জায়গা থেকে বেশ কিছু দূরে। আর সব থেকে বড় কথা হলো জুতার চিহ্ন তে নকশার কাজে AHK ব্রান্ডের জুতা, আবদুল হামিদ খানের ব্রান্ড।

কিন্তু এতো টুকু দিয়ে খুনি কে চিহ্নিত করা কি সম্ভব। AHK ব্রান্ডের জুতা তো এখন অনেক মানুষের পায়ে পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু আসল খুনি অব্দি কিভাবে পৌঁছাতে পারবে??

ক্লাবে গিয়েও খুব বেশি কিছু পাওয়া যায়নি। অবশ্য পাওয়া যাবেই বা কি করে?? কেউ কিছু বলতেই নারাজ।কাল অফিসার তমাল কে নিয়ে যাবে আবার সেই মধুবালা ক্লাবে। পুলিশের ভয়ে যদি মুখ দিয়ে কিছু বের হয়।




মরিয়মের কপাল জ্বরের তাপমাত্রায় আগুনের মত গরম হয়ে আছে। মাথার কাটা জায়গা টা চিনচিন ব্যাথা করছে। সারাদিন মুখে কিছু তুলতে পারেনি। মিহি মায়ের এমন হাল দেখে একটু পর পর কাঁদছে, অনেক জোর করে খাইয়ে দিয়েছেন তাকে। মিহির জ্বালাতন ও বেড়েছে। মেয়েটা দিন দিন কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে। নেহাল এসে মিহি কে নিয়ে গেছিল। ২_৩ঘন্টা থেকেই বাড়ি আসার জন্য কাঁদতে শুরু করে দিয়েছে। নেহালের মা অমিতা এসে মরিয়ম কে দেখে গেছে।বার বার বলছিল তাদের বাসায় যেতে নাহলে সেই আজ থেকে যাক এখানে। কিন্তু মরিয়ম হাসি মুখে বলেছে। তার কোন প্রয়োজন হবে না। জ্বর কমে যাবে। অযথা হয়রানি হওয়ার প্রয়োজন নেই। সামান্য জ্বর। তখন জ্বর কিছু টা কমেছিল। যার কারণে অমিতা চলে গিয়েছে। নাজিম এসে ঔষধ পত্র যা লাগে দিয়ে গিয়েছে। এবং ভাইয়ের জন্য অনেক আফসোস করেছে। নাজিম বার বার করে বললেন,আরিফা কে ফোন দিয়ে নাহয় কালকের মধ্যে চলে আসতে। কিন্তু মরিয়ম নাকোচ করে বলেছেন,মেয়েটা গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গেছে সেখানে এসব সামান্য জ্বরে তার খুশি টা নষ্ট করতে চায়না। আর মা বাবা কেও কিছুই বলতে দিতে চায়না। এখানে এসে যদি তাদের ছেলের এমন কান্ডকারখানা দেখে তাহলে তারা অনেক কষ্ট পাবে। কিন্তু কতদিন আর এভাবে তাদের থেকে সব কিছু লোকাবে?? ক্লাবে একবার যেতে চেয়েছিল মরিয়ম কিন্তু জ্বরের জন্য আর যাওয়া হয়ে উঠলো না। জ্বর কিছু টা কমলেই ক্লাবের উদ্দেশ্যে বের হবে ।
হাজার হাজার চিন্তাই কখন যে মরিয়ম গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে যায়।

মেহমেত বাসায় এসে দেখে সারা বাড়ি অন্ধকার।
রাত ২টা বাজতে চলেছে। মেহমেতের পেটের ভিতরে ক্ষুধায় নাড়িভুঁড়ি যেন জরো হয়ে আসছে। এক বার ভাবছে মরিয়ম কে ডাকবে আবার ভাবছে না ডাকবে না। তার পর হুট করে মনে হলো তার কপাল কেটে যাওয়ার কথা। একদিন পর বাড়িতে আসছে সে। মরিয়ম ও একবার ও কোন ফোন দেয়নি। আর দিবেই বা কেন??? আঘাত কি কম দিয়েছে সে। অবহেলাও গত কয়েক মাস ধরে কম হয়নি। ৬মাস আগেও তার জীবন টা ছিল ফুলের মত সুন্দর। ভালোবাসার কোন কমতি ছিল না পরিবারের। সব শেষ হয়ে গেল এক নিমেষে। কবে যে আবার সব স্বাভাবিক হবে??? অথবা কখনো কিছু স্বাভাবিক না হয়ে আরো অবনতি হয়???

নাহ মেহমেত আর ভাবতে পারছে না। তার খুব কষ্ট হচ্ছে। এসব ভাবনায় ক্ষুধা টাও উবে গেল। ঘরে গিয়ে লাইট জ্বালালো মেহমেত। মিহি এক পাশে শুয়ে আছে এলোমেলো হয়ে। আর মরিয়ম শুয়ে আছে গুটিসুটি হয়ে। মাথায় ব্যান্ডেজ। চোখ মুখ কেমন শুঁকে গেছে। পরির মত সুন্দরি মেয়ে টা আজ তার অবহেলায় নিজের চেহারাটার নূরানী হারিয়ে ফেলেছে। আস্তে আস্তে পায়ে মরিয়মের কাছে গিয়ে খাটের পাশে হাঁটু গেরে বসে পড়ল। আলতো হাতে মরিয়মের গায়ে হাত দিতেই আতংকে উঠে। এতো গরম । মেহমেত গলায় হাত দিয়ে দেখে পুড়ে যাচ্ছে যেন তার সারা শরীর। মরিয়ম কে অস্থির গলায় বার কয়েক ডাকলো মেহমেত কিন্তু মরিয়মের কোন সারা শব্দ নেই।
মেহমেত দৌড়ে গিয়ে বাথরুম থেকে ঠান্ডা এক বালতি পানি আনলো। জলপট্টি দেওয়ার জন্য বাটি নিয়ে আসল। মেহমেত মরিয়মের অবচেতন দেহটাকে কোলের মাঝে নিয়ে মরিয়মের মাথার ব্যান্ডিজ খুলে দিল। কপালের জায়গাটার ক্ষত এখনো আলগা হয়ে আছে। কি ভাবে কপালে পানি দিয়ে দিবে ভেবে পেল না সে। অবশেষে কাটাস্থান টা বাদ দিয়ে এক সাইটে জল পট্টি দিতে লাগল। এক বার ভাবছে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে আবার ভাবছে এতো রাতে মিহি কে একা রেখে কোথাও যাওয়া টা সম্ভব ও নয়।
আর এখন মিহি কে ডাক দিলে। ঘাবড়ে গিয়ে কান্না করতে পারে আর মেহমেত কে মিহি এখন এমনিতেই ভয় পায়।

একটু পর পর জলপট্টি দিয়ে দিচ্ছে মরিয়ম কে। সাথে হাতে পায়ে তেল মালিশ করছে। শরীরের তাপমাত্রা কিছুটা কমছে মনে হচ্ছে। কিন্তু মরিয়মের কোন জ্ঞান নেই। মেহমেতের চোখের কোণে বেয়ে পানি পড়ছে মরিয়মের এমন অবস্থার জন্য সে নিজে দায়ী। মেয়ে মানুষ হলে হয়তো এতক্ষণে হাউমাউ করে কেঁদে ফেললো।
শরীর বার কয়েক মুছে দিল মেহমেত।

ফজরের আজানের পর জ্বর খানিকটা কমে আসলো মরিয়মের। ক্লান্তি ভরা শরীর নিয়ে মরিয়মের মাথার কাছেই কাত হয়ে ঘুমিয়ে গেছেন মেহমেত।

সকালের সুন্দর সূর্যের সুরু আলো জানালা ভেদ করে মরিয়মের মুখে এসে পড়েছে। মাথা টা খুব ব্যাথা করছে। মিটিমিটি করে চোখ মেলে তাকালো মরিয়ম। সব যেন ঝাপসা লাগছে। আশেপাশে তাকিয়ে মাথার কাছে মেহমেত কে দেখে মরিয়মের চোখ জোড়া নিমিষেই ভিজে উঠলো। মাথায় হাত দিয়ে দেখে ভিজা কাপড়। মরিয়ম যা বুঝার বুঝে গেছে। মেহমেত এক হাতে ভোর করে শুয়ে আছে। মরিয়ম আস্তে আস্তে উঠতে গেলে দূর্বল শরীর নিয়ে উঠতে পারলো না। মৃদু আর্তনাদ করে উঠলো সে।

মরিয়মের আর্তনাদ মেহমেতের ঘুম আলগা হয়ে যায়। চোখ কুচলে তাকিয়ে বলে। কেমন লাগছে এখন??? জ্বর দেখি,মেহমেত মরিয়মের কপালে হাত দিয়ে দেখে জ্বর কিছু টা কমেছে।

কি হয়েছে বল আমায়!? কষ্ট হচ্ছে তোমার??
মরিয়ম শুকনো গলায় বলে সে বাথরুমে যাবে। তখন মেহমেত বললেন, আচ্ছা আমাকে ধরে উঠো। মরিয়ম তেমন পাত্তা দিলো না মেহমেতের কথায়। নিজেই আবার উঠার চেষ্টা করতে লাগলো এবং বলল আমার কারো সাহায্যের প্রয়োজন নেই, আমি একাই উঠতে পারবো। মেহমেত বুঝতে পারলো সে রাগ আর অভিমানে এমন করছে। আর এটা হওয়াটাও স্বাভাবিক ।

মরিয়ম কে তখন পাঁজাকোলা উঠিয়ে নিল মেহমেত। আর শক্ত গলায় বলল। আমি জানি তুমি কেমন পারবে।কাল রাতে জ্বরে অবচেতন ছিলে। শরীর দূর্বল। আগে সুস্থ হয়ে নাও তারপর কি একাই পারবে করো।

মরিয়ম মেহমেতের চোখের দিকে চেয়ে আছে। গত কয়েক মাস পর আগের সেই মেহমেতের আচারণ সে করছে।

চলবে _____????

সবাই পেজটা ফলো করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here