মুখোশের আড়ালে পর্ব ৫

#মুখোশের_আড়ালে
#পর্ব_৫
#Saji_Afroz
.
.
.
বাইরে থেকে মাত্রই এসে বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিলো উষ্ণ । শরীরের উপর অনেকখানি ধকল গিয়েছে । আজ তার বন্ধুর বিয়ে হয়েছে । বন্ধুর বিয়েতে তোলা ছবি আপলোড করার জন্য ফেবুতে ঢুকলো উষ্ণ । ‘ডানা কাটা পরী’ নামের আইডি থেকে রিকোয়েস্টটা চোখে পড়লো তার । আইডিটা দেখে অজান্তেই উষ্ণের মুখে হাসি চলে এলো । বিড়বিড় করে উষ্ণ বললো-
রুচির বড়ই অভাব ।
কেনো যেনো আইডিটা ঘুরে দেখতে ইচ্ছে হলো উষ্ণের ।
প্রোফাইলে ঢুকতেই কবিতাটি চোখে পড়লো তার ।
পড়তে থাকলো সে ———
যদি কখনো হারিয়ে যাই খুঁজবে আমায়?
চারিদিকে দিশেহারা হয়ে পাগল প্রেমিকের মতো?
দিনশেষে যখন উদ্দীপ্ত সূর্য অস্ত যাবে,
তখনও কি তুমি আমাকে খুঁজবে?
নাকি আর পাওয়া যাবে না বলে হাল ছেড়ে দেবে?
ঝিলমিল জ্যোৎস্না রাতে যখন পাখিগুলো নীড় থেকে বেরিয়ে উড়বে,
অনন্য জ্যোৎস্না বিরাজ করবে এ ভূবনে
তখন আমার হাতটুকু ছোঁয়ার জন্য হলেও কি তুমি আমাকে খুঁজবে না?
নাকি এভাবে আড়ালেই রাখবে চিরজীবনের জন্য?
.
কবিতার প্রতি আকর্ষণ রয়েছে উষ্ণের ৷ এটা অস্বীকার করার মতো কিছু নেই । তবে আজ সে কবিতার চেয়েও বেশি লেখার প্রতি আকর্ষিত হয়েছে । কেননা লেখাগুলো তার বড্ড পরিচিত । এই লেখা চিনতে ভুলতে করতে পারেনা সে । কিন্তু এটা কি করে সম্ভব?
শোয়া থেকে উঠে বসলো উষ্ণ ।
ঘামছে সে অনবরত ৷ এই শীতের মাঝেও পাখাটা ছেড়ে দিলো সে ।
কোথাও একটা ভুল হচ্ছে । সে যার কথা ভাবছে এই কবিতাটি তার লেখা হতেই পারেনা ।
খানিকক্ষণ রুমের মাঝে পায়চারী করলেও নিজের মনকে শান্ত করতে পারলোনা উষ্ণ । কাঁপাকাঁপা হাতে এক্সেপ্ট করে নিলো সে ডানা কাটা পরীর ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট । পুরো প্রোফাইল ঘেটেও একটা ছবি পেলোনা উষ্ণ । আইডিটাতেও তেমন বিশেষ কিছু নেই ৷ কে হতে পারে মেয়েটি? উষ্ণ কি মেসেজ দিবে নাকি অপেক্ষা করবে ওপাশ থেকে মেসেজ আসার?
কিছুক্ষণ ভেবে উষ্ণ মনস্থির করলো, সে মেসেজ দিবেনা ।
.
.
মোবাইল হাতে নিয়েই বসে ছিলো পৌষী । উষ্ণ ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করেছে দেখে বিছানা ছেড়ে এক লাফে উঠে পড়লো সে । দৌড়ে এসে ফাহাদের উদ্দেশ্যে বললো-
এক্সেপ্ট করেছে!
.
সন্দেহের ভাব নিয়ে ফাহাদ বললো-
দেখি মোবাইল?
.
পৌষী মোবাইল দেখিয়ে বললো-
এই যে দেখুন ।
.
ফাহাদ কি বলবে বুঝে উঠতে পারছেনা । পৌষী বললো-
আমি এখন চ্যাট করবো ।
-উষ্ণ এর সাথে?
-হু । নাকি এখন বলবেন, আমার মেসেজই সিন করবেনা ।
.
ফাহাদ কিছু বলতে যাবে তখনি পৌষী বললো-
করবে করবে! অবশ্যই করবে ।
.
পৌষী নিজের রুমের দিকে এগিয়ে গেলো ।
ফাহাদ পড়ে গেলো মহাভাবনায় । এমন একজন সেলিব্রিটি এই নামের আইডি এর রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করলোই বা কেনো!
কি হচ্ছে এসব?
.
.
ক্লান্ত শরীর নিয়েও রুমের মাঝে হাঁটাহাঁটি করছে উষ্ণ ।
আজ রাতে যেনো তার ঘুমই হবেনা!
এরইমাঝে ‘ডানা কাটা পরী’ আইডিটা থেকে মেসেজ এসেই গেলো-
কেমন আছো উষ্ণ?
.
দেরী না করে উষ্ণ রিপ্লাই করলো-
কে আপনি?
-বাহবা!
শুরুতেই কে আপনি!
-হুম । কেননা আমার এই প্রশ্নের উত্তর জানা ভীষণ প্রয়োজন ।
-তোমাকে নিশ্চয় তোমার ভক্তরাই মেসেজ দেয় ।
-কিন্তু আমার মনেহচ্ছে, আপনি আমার পরিচিত ।
-কি দেখে মনে হচ্ছে?
-হাতের লেখা ।
-পরিচিত কারো লেখার সাথে মিলে কি?
-হ্যাঁ ।
-মিলতেই পারে । অস্বাভাবিক কিছু নয় ।
-তাই বলে এতোটা মিল! আপনি কি কারো লেখা কবিতা নিজের প্রোফাইলে দিয়েছেন?
-না! আমার লেখাই এটা । আপনি কেনো এসব বলছেন?
-একটু অপেক্ষা করুন ।
.
উষ্ণ ড্রয়ার খুলে একটি পৃষ্ঠা বের করলো ৷ তাতে একটি কবিতা লেখা ছিলো । কবিতাটি নিজেও চোখ বুলিয়ে দেখলো সে । হ্যাঁ, পৃষ্ঠাটির লেখা ও ছবিটির লেখা দুটোই একই । কোনো পাথর্ক্য নেই । আর অপেক্ষা না করে পৃষ্ঠাটির ছবি তুলে পাঠিয়ে দিলো সে পৌষীকে ।
ছবিটি দেখেই পৌষীর দু’চোখ ছলছল করে উঠলো । উষ্ণ আজও রেখে দিয়েছে এটি!
তার মানে উষ্ণ তাকে ভুলেনি । কিন্তু এখন উষ্ণকে বুঝতে দেয়া যাবেনা কিছু ।
পৌষী রিপ্লাই দিলো-
হ্যাঁ! একদমই আমার লেখার মতো । আমিও হতবাক দেখে ।
.
হতাশ হয়ে উষ্ণ লিখলো-
হুম ।
-আপনি আমাকে পরী বলে ডাকতে পারেন ।
-হুম ।
-আমি কি বিরক্ত করছি আপনাকে?
-তা নয় । তবে সারাদিন শরীরের উপর ধকল গিয়েছে আজ । তাই ক্লান্ত ।
-ঠিক আছে আরাম করুন ।
.
এদিকে দরজায় উঁকি দিয়ে পৌষীর কার্যকলাপ দেখে চলেছে ফাহাদ ।
পৌষীর মনোযোগ সম্পূর্ণ মোবাইলে । তবে কি উষ্ণ মাহমুদ তার মেসেজের রিপ্লাইও দিয়েছে! কিন্তু কেনো?
.
.
পরেরদিন সন্ধ্যে ৬টার দিকেই অফিস থেকে বাসায় এলো ফাহাদ । আজ পৌষী তাকে ফোন করে তাড়াতাড়ি আসতে বলেছে ।
ফাহাদ ভেতরে প্রবেশ করেই পৌষীকে দেখে চমকে গেলো । লাল রঙের একটি শাড়ি পরে চুলগুলো খোলা রেখেছে, ঠোঁটে টকটকে লাল লিপস্টিক ।
ব্যস, এতোটুকুতেই মেয়েটিকে দারুণ লাগছে । তার দিকে পলকহীনভাবে তাকিয়ে আছে ফাহাদ । পৌষী বললো-
৫মিনিট সময় দিচ্ছি । তৈরী হয়ে আসুন । বের হবো ।
.
পৌষীর কথামতো তৈরী হতে গেলো ফাহাদ । জিজ্ঞাসাও করলোনা কোথায় যাচ্ছে তারা ।
.
.
গাড়ি থেকে নেমে বেশ বড়সড় একড়ি বাড়ি জমকালো ভাবে সাজানো দেখতে পেলো ফাহাদ । বাড়ির নামের দিকে চোখ পড়লো তার ।
পৌষীর দিকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো-
শান্তি নিবাস? কার বাড়ি এটি?
-একেবারে ভেতরেই ঢুকেই নাহয় দেখুন ।
.
মিয়াজ শেখ তার ছেলের জন্য অপেক্ষা করছেন । আজ তার জন্মদিন । যতোই ব্যস্ত থাকুক না কেনো তার ছেলে, বাবার জন্মদিনে অবশ্যই উপস্থিত হবে ।
বেশ জমকালো ভাবেই প্রতি বছর জন্মদিন পালন করেন তিনি । এ বছরেও এর ব্যতিক্রম হলোনা ।
পৌষী ও ফাহাদের দিকে চোখ পড়তেই তাদের দিকে এগিয়ে গেলেন মিয়াজ শেখ ।
পৌষী তার হ্যান্ড ব্যাগ থেকে একটি প্যাকেট বের করে, তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন-
শুভ জন্মদিন ।
-ধন্যবাদ লাল পরীটা ।
.
ফাহাদের সাথেও কথা বললেন মিয়াজ শেখ । ফাহাদ তাকে বুঝতে দিলোনা, সে জানেইনা তার জন্মদিন বা এখানে আসার কথা ।
মিয়াজ শেখ পৌষীর উদ্দেশ্যে বললো-
ওহ পৌষী! তোমার চুক্তিপত্র খুব দ্রুত পেতে চলেছো ।
-তাই! ধন্যবাদ ।
-তোমরা বসো । আমি একটু আসছি ।
.
মিয়াজ শেখ যেতেই ফাহাদ প্রশ্ন করলো-
কিসের চুক্তিপত্র?
-আমি খুব তাড়াতাড়ি কবিতার বই বের করতে চলেছি ।
-মানে!
-এতো অবাক হবার কি আছে!
-কিছু নেই? কখন কি হলো! চুক্তিপত্র নিয়ে তোমাদের কথা হলো কখন?
-যেদিন আমি প্রথম এখানে এসেছিলাম ।
-কখন এসেছো?
-কালই ।
-ঠিকানা কিভাবে পেলে?
-আপনি না বললেও আমাকে যে মিয়াজ শেখ ডেকেছিলেন আমি জানি ৷ আমার মনোযোগ টিভির দিকে থাকলেও আপনার কথা শুনে এটা আমি বুঝেছি । পরে আপনার ফোন ঘেটে ঠিকানা নিয়েছি মেসেজ থেকে । এরপর এখানে আসা । মিয়াজ শেখই আমাকে জন্মদিনের দাওয়াত করেছে । আপনাকেও নিকে আসতে বলেছেন তাই…
.
পৌষীকে থামিয়ে ফাহাদ বললো-
অনেক মেহেরবানি করেছো আমাকে সাথে এনে । এতো কিছু করে ফেললে আজও আমাকে না জানালেই চলতো ।
.
ফাহাদ রেগেমেগে পৌষীর পাশ থেকে সরে গেলো । পৌষীর চোখ গিয়ে আটকালো দরজার দিকে । কেননা ভেতরে এগিয়ে আসতে দেখলো সে উষ্ণকে ।
তাকে দেখে যেনো থমকে গেলো পৌষী । স্ত্রী হিসেবে ফাহাদের রাগ ভাঙানোর কথা হলেও সেদিকে খেয়াল নেই তার । উষ্ণকে দেখেই সে নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে রইলো । আর আপনমনে বললো-
আমার উষ্ণ!
.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here