মুখ ও মুখোশ পর্ব ৪

#ধারাবাহিক_রহস্য_গল্প
#মুখ_ও_মুখোশ
#পর্ব_৪

ইন্দ্র বলল, ঠিক আছে প্রবালবাবু আপাতত যা তথ্য পেলাম সেটা দিয়েই কাজ শুরু করি | পরে বিশেষ কোন বিষয় জানার দরকার হলে আপনাকে ফোন করে নেব | অরণ্যর কাছে আপনার নম্বর আছে তো ?
একদম একদম | কোনরকম ইতস্ততঃ করবেন না | দরকার মনে হলেই ফোন করে নেবেন …. যেভাবে হোক আমাকে অনামিকার খোঁজটা এনে দিন | আমি আপনার কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকব, প্রবাল বলে উঠল |
আপনার ম্যানেজার কতদিনের মধ্যে টিকিটের বন্দোবস্ত করতে পারবেন ?
ওটা নিয়ে একদম চিন্তা করবেন না ! আজ সোমবার তো বুধ-বৃহস্পতিবারের মধ্যেই টিকিট বুকিং হয়ে যাবে | আমার ম্যানেজার দিবাকর বেশ করিতকর্মা লোক |
অনেক ধন্যবাদ | প্রয়োজনে ফোন করব |
প্রবাল ফ্ল্যাটের করিডর দিয়ে লিফ্ট পর্যন্ত অরণ্য ও ইন্দ্রকে এগিয়ে দিয়ে গেল | বলল আমার গাড়ি নীচে দাঁড়িয়ে আছে আপনাদের ছেড়ে আসবে |
না, না, সে প্রয়োজন নেই | অরণ্যর গাড়ি আছে | আমরা নিজেরাই চলে যেতে পারব |
গাড়ি চালাতে চালাতে অরণ্য ইন্দ্রকে বলল, ভাই কেসটা কেমন বুঝছিস ?
তুই কি বুঝছিস সেটা আগে শুনি !
কেস খুবই গুরুতর | ভাই শপিং করতে না দেওয়ার জন্য কেউ ফ্লাইটে করে মুম্বই চলে যেতে পারে ? শপ্যাহোলিক নাকি ? আর এত রাগী কোনো মেয়ে হয় ? আর একটা সম্ভাবনার কথা মাথায় আসছে, যদি তুই রাগ না করিস তবেই বলব !
বলে ফেল ভাই ! অত ভেবে লাভ নাই !
আচ্ছা ওই প্রবাল দত্ত ওর বউকে মেরে কোথাও পুঁতে দেয় নি তো ! আর তারপর আমাদের কনভিন্স করাতে নাটক করছে | দ্যাখ কিছুতেই পুলিশেও খবর দিতে চাইছে না …..
আচ্ছা এবার আমায় একটা কথা বল, আমাদের দুজনকে কনভিন্স করিয়ে প্রবালের কি লাভ ? আদৌ কোন লাভ আছে কি?
তখন আমতা আমতা করে অরণ্যকে বলতেই হল না এতে প্রবালের কোন লাভ নেই |
আর একটা কথা মনে রাখিস, প্রবালবাবু বলছেন ওনার স্ত্রী ফ্লাইটে মুম্বই গেছেন | এয়ারপোর্টে গিয়ে চেক করলেই এই ইনফোটা ইজিলি পাওয়া যাবে | যদি উনি বউকে মেরে পুঁতে ফেলতেন তাহলে ফ্লাইট নয় বলতেন আমায় না বলে কোথায় জানি চলে গেছে ! যেখানে অনামিকার খোঁজ করাটা আমাদের পক্ষে মুসকিলই নয় ইম্পসিবল হয়ে পড়ত ! কি বুঝেছিস ?
অরণ্যর নিজের উপর খুব রাগ হচ্ছিল | ও নিঃশব্দে ঘাড় নাড়ল | ইন্দ্রের যুক্তি এক্কেবারে ঠিক |
সম্ভবতঃ পরশুর ফ্লাইটে আমাদের মুম্বই যেতে হবে | তার আগে আজ সন্ধ্যেবেলা আমাদের এই কমপ্লেক্সে আসতে হবে | কমপ্লেক্সের সেক্রেটারি ও বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানতে হবে অনামিকা ও প্রবালের সম্পর্কটা আদতে ঠিক কেমন ….

ঠিক সন্ধ্যেবেলা প্রবালের কমপ্লেক্সে ইন্দ্র ও অরণ্য পৌঁছে গেল | ইন্দ্র গেটে থাকা গার্ডকে জানাল ওরা এই কমপ্লেক্সে একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিতে চায় ও সেই জন্য এখানকার সেক্রেটারির সঙ্গে একবার কথা বলতে চায় |
বি কমপ্লেক্স, ফিফথ ফ্লোর, সেক্রেটারির নাম হল মিঃ গুপ্ত | ঠিক এই রাস্তা ধরে চলে যান | খাতায় এন্টিটা করে দেবেন |
অনেক ধন্যবাদ | ইন্দ্ররা গার্ডের দেখানো রাস্তা ধরে হাঁটা দিল | নির্দিষ্ট ফ্ল্যাট নম্বরে গিয়ে বেল বাজাতেই একজন ভৃত্যস্থানীয় লোক দরজা খুলে দিল | এই ফ্ল্যাটটাও প্রবালের ডুপ্লেক্সের মতো সাজানো | আমাদের বি- ব্লকে তিনটে ফ্ল্যাট খালি আছে… ফোর্থ, সেভেনথ, টেনথ ফ্লোরে, বলুন আপনি কোন ফ্ল্যাটটা ভাড়া নিতে চান ? আমি চাবি নিয়ে রেডি আছি, ফ্ল্যাট দেখে নিন | তারপর পেপারসের কাজ মিটে গেলেই আপনারা এখানে এসে থাকতে পারবেন | ইন্দ্র বুঝল গার্ড ওনাকে ইন্টারকমে ফ্ল্যাট রেন্টের ব্যাপারটা জানিয়ে দিয়েছে | ইন্দ্র বলল, দেখুন কিছু মনে করবেন না, আমি বাধ্য হয়ে মিথ্যে বলেছিলাম |
মানে ? আপনি ফ্ল্যাট ভাড়া নিতে চান না ? মিঃ গুপ্ত ইন্দ্রের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে রইল |
না, আপনি নিশ্চয়ই প্রবাল আর অনামিকা দত্তকে চেনেন ?
হ্যাঁ ওরা আমাদের সোসাইটিরই বাসিন্দা |
আসলে কি বলুন তো অনামিকা আমার বোন হয় | প্রবালের উপর রাগ করে এখন আমাদের বাড়ি গিয়ে উঠেছে | কি নিয়ে ঝগড়া জিজ্ঞেস করলেও কিছুতেই কোনো উত্তর দিচ্ছে না | আজকালকার মেয়ে বোঝেনই তো ! বেশি রাগ টাগ হলে যদি আবার আত্মহত্যা করে বসে ! বোঝেনই তো ! আর বোনের বরের সঙ্গে এই নিয়ে কথা বলা যায় বলুন ? যদি কিছু মনে করে ? এদিকে বোনের ভবিষ্যতের প্রশ্ন জড়িত ! তাই আপনার কাছে আসা |
এতক্ষণে ভদ্রলোকের কোঁচকানো ভুরু সোজা হল | একগাল হেসে বললেন, ও তাই বলুন | ওদের তো মাঝেমধ্যেই ঝগড়া হতো | দুজনে ঝগড়া করতে করতে একদিন তো ফ্ল্যাটের করিডর অবধি চলে এসেছিল | আপনার বোন ডিভোর্স দেবেনই আর বেচারা প্রবাল দত্ত ক্রমাগত কাকুতি মিনতি করছেন | মেয়ে মোমের দোহাই দিচ্ছেন | কিছু মনে করবেন না মশাই, আপনার বোনটি ভীষণ বদরাগি | আমি তো ওয়ার্নিং দিতে বাধ্য হয়েছিলাম যে, দ্বিতীয়বার এরকম হলে ওদের সোসাইটি ছেড়ে চলে যেতে হবে |
এরকম ওয়ার্নিং কেন স্যার ?
দেখুন এটা হাই ক্লাস সোসাইটি | এখানে যাঁরা থাকেন তাঁরা প্রত্যেকেই টপ মোস্ট পোস্টে রয়েছেন | তাই ঝগড়া ঝামেলা যা হয় নিজেদের ঘরে হোক, করিডর পর্যন্ত ব্যাপারটা পৌঁছলে আমায় হস্তক্ষেপ করতেই হয় |
অনেক ধন্যবাদ দাদা…..আমি বাড়ি গিয়েই বোনকে বোঝাচ্ছি যাতে ও প্রবালের কাছে ফিরে আসে !
সেটাই সবচেয়ে ভালো উপায় …….

সোসাইটির লোকজনকে জিজ্ঞেস করেও বেশি কিছু জানা গেল না | একে তো ওই হাইফাই সোসাইটির লোকজনেরা পাশের ফ্ল্যাটের লোকের তেমন কোন খবর রাখে না | তাও মহিলাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে অনামিকা সম্পর্কে কিছু তথ্য পাওয়া গেল | সবারই বক্তব্য, প্রবাল খুবই শান্ত স্বভাবের আর অনামিকা ভীষণই বদরাগী | শপিং, পার্লার, সাজগোজ, কিটি পার্টি এসব নিয়েই থাকে | এক কথায় পার্টি অ্যানিমাল | যদিও উচ্চবিত্ত মহিলা মহলে সবার গল্প খানিকটা একই…. তবুও অন্য মহিলার সমালোচনা করতে পারলে মেয়েরা বেশ খুশি হয়…. সেখানে নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্তে কোন ফারাক নেই | এদের কাছ থেকে ইন্দ্র জানতে পারল ইউনিসেক্স স্টার স্যাঁলোতে যাওয়ার পর থেকেই অনামিকা প্রবালের সঙ্গে অত্যন্ত খারাপ ব্যবহার করতে শুরু করেছিল |
প্রবালের পাশের ফ্ল্যাটের মিসেস শর্মা মুখ বেঁকিয়ে বলতে শুরু করলেন, আসলে পরীর মতো দেখতে ছিল তো ! তিন চারটে মডেলিংয়ের অফার পেতেই ধরাকে সরা জ্ঞান করছিল | প্রবালকে যে কত নাকানিচুবানি খাইয়েছে আপনার বোন | খালি কথায় কথায় ডিভোর্সের হুমকি দিত | এই তো একদিন ফ্ল্যাটের করিডরে অনামিকার হাতে পায়ে ধরে প্রবাল রুমে নিয়ে গেল | সোসাইটির সেক্রেটারি তো ওদের বলেছিল আর একবার এরকম হলে সোসাইটি ছেড়ে চলে যেতে হবে | ওই জন্যই বোধহয় আপনার বোন বাপের বাড়ি গিয়ে উঠেছে | নিজের বোনকে একটু বোঝান, বুঝলেন প্রবালের মতো ছেলে পেয়েছে বলে এ যাত্রা অনামিকা পার পেয়ে গেল …..
কেসটা কি বল তো ইন্দ্র ! আমার তো এসব শুনে প্রবালকে বেশ ইনোসেন্ট বলেই মনে হচ্ছে | বেচারা বউয়ের দিওয়ানা, অরণ্য বলল |
এত তাড়াতাড়ি কিছু প্রেডিক্ট করিস না ভাই , ইন্দ্র হাসল | আমাদের কাল সকালেই একবার ইউনিসেক্স স্টার স্যাঁলোতে যেতে হবে | তবে কি জানিস অরণ্য এ রহস্যের আসল সূত্র লুকিয়ে আছে মুম্বইতে | তাই আমাদের মুম্বই যাওয়া ছাড়া গতি নেই | যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মুম্বই যেতে পারলে ভালো হয় | অনামিকার মুম্বই পালানোর পিছনে আসল রহস্যটা কি আমাকে জানতেই হবে !
~ ( চলবে )

©️ অনিন্দিতা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here